Ajker Patrika

‘চোখের সামনেই মারা গেল আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু’

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২২ জুলাই ২০২৫, ১২: ৪৩
মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষার্থী ফারহান হাসান। ছবি: বিবিসি
মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষার্থী ফারহান হাসান। ছবি: বিবিসি

বন্ধুদের সঙ্গে হাসিমুখে শ্রেণিকক্ষ ত্যাগ করার একটু পরই বিকট শব্দ শুনতে পান ফারহান হাসান। দেখতে পান, একটি বিমান তাদের স্কুল প্রাঙ্গণে বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৭ জন নিহত হয়েছেন। বিবিসিকে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এই ছাত্র বলেন, ‘আমার চোখের সামনে জ্বলন্ত বিমানটি এসে পড়ল।’

রাজধানী ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ফুটেজে দেখা যায়, বিমানটি একটি দোতলা ভবনের ওপর আছড়ে পড়ার পর সেখানে বিশাল অগ্নিকাণ্ড ও ঘন ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। এই দুর্ঘটনায় ১৭০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এফ-৭ বিজিআই মডেলের বিমানটি দুপুর ১টার কিছুক্ষণ পর প্রশিক্ষণ উড্ডয়নের সময় যান্ত্রিক ত্রুটির শিকার হয়। নিহতদের মধ্যে বিমানটির চালক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামও রয়েছেন।

ফারহান বলেন, ‘আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু, যার সঙ্গে আমি পরীক্ষা কেন্দ্রে ছিলাম, সে আমার চোখের সামনে মারা গেল।’ তিনি আরও বলে, ‘আমার চোখের সামনে...বিমানটি ঠিক তার মাথার ওপর দিয়ে গেল। অনেক অভিভাবক ভেতরে দাঁড়িয়ে ছিলেন, কারণ ছোট বাচ্চারা স্কুল ছুটির পর বের হচ্ছিল...বিমানটি অভিভাবকদের অনেককেও সঙ্গে নিয়ে (মারা যাওয়া অর্থে) গেছে।’

কলেজের শিক্ষক রেজাউল ইসলাম বলেন, তিনি বিমানটিকে সরাসরি ভবনের ওপর আঘাত করতে দেখেছেন। আরেক শিক্ষক মাসুদ তারেক রয়টার্সকে বলেন, তিনি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তিনি বলেন, ‘যখন আমি পেছনে তাকিয়েছিলাম, তখন শুধু আগুন আর ধোঁয়া দেখেছিলাম...এখানে অনেক অভিভাবক ও বাচ্চা ছিল।’

জনবহুল আবাসিক এলাকায় দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ পরই বহু মানুষ ঘটনাস্থলে ভিড় করে। উৎসুক জনতা আশপাশের ভবনের ছাদেও উঠে দুর্ঘটনার দৃশ্য দেখার চেষ্টা করে। চারদিকে ছোটাছুটির মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স ও স্বেচ্ছাসেবকেরা আহত এবং নিহতদের উদ্ধারের চেষ্টা চালান। অন্তত ৩০টি অ্যাম্বুলেন্সকে হতাহতদের সরিয়ে নিতে দেখা যায়।

ঘটনাস্থলে আসা এক নারী বিবিসিকে জানান, তাঁর ছেলে দুর্ঘটনার পরপরই তাঁকে ফোন করেছিলেন, কিন্তু এরপর থেকে তিনি আর তার কোনো খবর পাননি।

জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের একজন চিকিৎসক জানান, শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কসহ ৫০ জনের বেশি মানুষকে দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের ভেতরে নিহতদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের ভিড় দেখা যায়। তাদের মধ্যে ছিলেন তানভীর আহমেদ নামক অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রের চাচা শাহ আলম। তানভীর এই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। তানভীরের বাবার হাত ধরে কান্নারত শাহ আলম বলেন, ‘আমার আদরের ভাতিজা এখন মর্গে।’

বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়াদের অধিকাংশই অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং তাদের বেশির ভাগের বয়স ৯ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। সাধারণ মানুষও রক্তদান করতে হাসপাতালে ছুটে যান। এ ছাড়া, বাংলাদেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও জামায়াতে ইসলামীর বেশ কয়েকজন নেতাও হাসপাতাল পরিদর্শন করেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঢাকার সাতটি হাসপাতালে হতাহতদের ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকার আজ মঙ্গলবার সারা দেশে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। আজ জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।

বিমানবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় পাইলট জনবহুল এলাকা এড়িয়ে বিমানটিকে অন্য দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি রাজধানীর একটি বিমান ঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের পরপরই এই দুর্ঘটনার শিকার হন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ‘প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ’ নেওয়া হবে এবং ‘সব ধরনের সহায়তা’ নিশ্চিত করা হবে। সামাজিক মাধ্যম এক্সে শেয়ার করা এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘এটি জাতির জন্য গভীর শোকের মুহূর্ত। আমি আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতালসহ সকল কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার নির্দেশ দিচ্ছি।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত