Ajker Patrika

অনাগত সন্তান বাবার মুখ দেখতে পারবে না: মাগুরায় গুলিতে নিহত রাব্বির স্ত্রীর আক্ষেপ 

ফয়সাল পারভেজ, মাগুরা
আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২৪, ১৬: ২৪
Thumbnail image

নির্মাণাধীন বাড়ির পুরোটাই থমথমে। বাইরে মেঘ আর রোদের আলোছায়াতে পুরো বাড়ির দেয়ালে বিষণ্নতা যেন পেয়ে বসেছে। বাড়ির ভেতরেও সুনসান নীরবতা। কিছুদিন আগেও যেখানে সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম যুবক মেহেদী হাসান রাব্বির পদচারণা ছিল। রাব্বিহীন সেখানে এখন শোকের মাতম। বাবা মইন উদ্দীন কয়েক মাস আগে মারা যাওয়ায় পরিবারের হাল ধরেন বড় ছেলে রাব্বি।

তবে দুঃস্বপ্নে সময় কাটছে রাব্বির স্ত্রী মোছা. রুমি খাতুনের চোখে মুখে। প্রায় পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা তিনি। বাবাহীন পৃথিবীটা আগত সন্তানের জন্য কতটা নিরাপদ হবে সেই ভাবনায় তিনি মূর্ছা যাচ্ছেন প্রায়ই।

গত ৪ আগস্ট কোটা সংস্কার আন্দোলনে মাগুরা পারনান্দুয়ালী দুই ব্রিজ সংলগ্ন পুলিশ, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় ওই এলাকার ছাত্রজনতা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে। এতে পারনান্দুয়ালী বৈরনাতুল গ্রামের স্থানীয় যুবক ও জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বিও (৩০) গুলিবিদ্ধ হয়ে মাগুরা সদরে হাসপাতালে মারা যান। চার ভাইবোনের মধ্যে বড় তিনি। বড় সন্তানকে হারিয়ে মায়ের আহাজারি যেন থামছেই না। 

রাব্বির স্ত্রী রুমি খাতুন বলেন, ‘ওর সঙ্গে আমার শেষ কথা হয় ফোনে। সে বলেছিল গ্রামবাসীসহ ছেলেরা মার খাচ্ছে। আমি বাড়ি আসছি। তুমি লাঠিসোঁটা কিছু ব্যবস্থা কর।’ 

রুমি খাতুন আরও বলেন, ‘বেলা সাড়ে ১১টায় শুনি রাব্বির পেটে গুলি লেগেছে। তাকে স্থানীয়রা হাসপাতালে নিয়ে গেছে। আল্লাহ আল্লাহ করতে থাকি। আমার পেটে আমাদের সন্তান বড় হচ্ছে। কত স্বপ্ন আমাদের ওকে নিয়ে। কত কিছু করব ও যখন পৃথিবীতে আসবে। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে দুজন মিলে অনাগত সন্তানের কত নাম পছন্দ করতাম। সব এখন যেন দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছে। মনে হয় একটা ঘুমের ঘোরে আমি আছি। ঘুম ভাঙলে হয়তো দেখতে পাব আমার স্বামী বেঁচে আছে।’ 

মেহেদী হাসান রাব্বির মা সালেহা বেগম বলেন, ‘বড় ছেলে রাব্বি চলে যাওয়ায় আমরা খুব অসহায় হয়ে গেছি। ও সবাইকে দেখে রাখত। ওর বাবার মৃত্যুর পর ও এই পরিবারের ভালোমন্দ দেখাশোনা করত। এখন তো আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না আমার ছেলে নেই। ছেলের বউ অন্তঃসত্ত্বা। আল্লাহ দিলে একটা শিশু আসবে তখন বাবাকে দেখবে না। কোনো দিন সে তার বাবার আদরটুকু পাবে না। এটা কি কখনো মেনে নেওয়া যায়? 

তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চাই। কঠিন শাস্তি চাই এই সরকারের কাছে।’ 

মাগুরা কোটা বৈষম্য আন্দোলনের সমন্বয়ক ও নিহত রাব্বির প্রতিবেশী শফিকুর রহমান বলেন, ‘সংঘর্ষের দিন আমি ছিলাম পুলিশ ও ছাত্রলীগের অগ্রভাগে। ছাত্রলীগের ছেলেরা আমাদের ছাত্রদের দিকে অনবরত গুলি চালাচ্ছিল। আমরা শুধু ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে পিছু হটছিলাম। এ সময় আমার শরীরে গুলির কিছু অংশ লাগে। এ কথা রাব্বি ভাই শুনতে পেয়ে তিনি আমাকে উদ্ধার করতে আসে। কিন্তু ততক্ষণে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। আমি বেঁচে থাকি ওই সময়ে, রাব্বি ভাই মারা যান।’ 

মাগুরা বৈরনাতুল এলাকায় স্থানীয়রা বলেন, রাব্বি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে থাকলেও সে খুব ভালো ছেলে ছিল। ইন্টারনেটের ব্যবসা করে সংসার চালাত। কারও বিপদে সে থেমে থাকেননি। পাশে থাকার চেষ্টা করছে। ভালো একটা ছেলের মৃত্যু তারা মেনে নিতে পারছেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত