Ajker Patrika

এখনো কাঁদেন সাতক্ষীরার ‘জুলাই শহীদ’ পরিবারের সদস্যরা

আবুল কাসেম, সাতক্ষীরা 
হাফেজ আনাছবিল্লাহর বাবা ওয়ারেজ আলী মোড়ল শহীদ ছেলের কবরের পাশে। ছবি: আজকের পত্রিকা
হাফেজ আনাছবিল্লাহর বাবা ওয়ারেজ আলী মোড়ল শহীদ ছেলের কবরের পাশে। ছবি: আজকের পত্রিকা

এক বছর পেরিয়ে গেলেও শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি সাতক্ষীরার ‘জুলাই বিপ্লবে’ শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা। আহতদের অনেকে এখনো পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। সরকারি সহায়তা পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ করছেন পরিবারের সদস্য ও আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে যেকোনো প্রয়োজনে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

২০২৫ সালের ১৪ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরূপ মন্তব্যের পর সারা দেশে যে ছাত্র আন্দোলন গড়ে ওঠে, তার ঢেউ লাগে সাতক্ষীরায়ও। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা পুলিশের হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে খণ্ড খণ্ড মিছিল করতেন। ১৮ জুলাই আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের হামলায় অন্তত ১০ জন আহত হন, গ্রেপ্তার করা হয় ১৫ জনকে।

৫ আগস্ট সকালে হাসপাতাল মোড় এলাকায় মিছিল চলাকালে পুলিশের গুলিতে চারজন গুলিবিদ্ধ হন। একই দিন বিকেলে আশাশুনির প্রতাপনগরে বিজয় মিছিল চলাকালে ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা জাকির হোসেনের গুলিতে শহীদ হন তিনজন আন্দোলনকারী।

শহীদ ও আহতদের পরিচয়

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, সাতক্ষীরায় গেজেটভুক্ত আহত জুলাইযোদ্ধার সংখ্যা ১০৭ এবং শহীদ হয়েছেন চারজন। শহীদেরা হলেন—

হাফেজ আনাছবিল্লাহ (কুড়িকাউনিয়া, আশাশুনি),

আলম সরদার (নাকনা, আশাশুনি),

আবুল বাশার (প্রতাপনগর, আশাশুনি),

আসিফ হাসান (আস্কারপুর, দেবহাটা; নিহত হন ঢাকার উত্তরায়)।

আহতদের চিকিৎসা বাবদ জুলাই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ১ লাখ টাকা এবং শহীদ পরিবারের জন্য ৫ লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে।

‘সহযোগিতা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল’

সরেজমিনে দেখা যায়, শোক আর আর্থিক অনটনের মধ্য দিয়ে দিন কাটছে শহীদ পরিবারের সদস্যদের। তাঁরা মনে করেন, সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য।

আলম সরদারের স্ত্রী আসমা খাতুন বলেন, ‘তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আমার তিনটি বাচ্চা, দুটো স্কুলে যায়। তাদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে হিমশিম খাই। এখন পর্যন্ত যেটুকু সহায়তা পেয়েছি, তাতে আমাদের চলে না।’

আবুল বাশারের বাবা আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘আমার ছেলে বিজয় মিছিলে গিয়েছিল। জাকির চেয়ারম্যানের দোতলা বাড়ি থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গুলি মাথা ফুঁড়ে বের হয়ে যায়।’

হাফেজ আনাছবিল্লাহর বাবা ওয়ারেজ আলী মোড়ল বলেন, ‘৩ জুলাই থেকে আন্দোলনে সক্রিয় ছিল আমার ছেলে। ৫ আগস্ট বিকেলে আমাকে জানায়, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। বিজয়ের আনন্দে সে মিছিলে অংশ নেয়। এরপর জাকির চেয়ারম্যানের লোকেরা বাড়ির ওপর থেকে গুলি চালালে সে শহীদ হয়।’

‘আন্দোলনের আদর্শ এখনো জীবিত’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আরাফাত হোসাইন বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের মূল দাবি ছিল ফ্যাসিবাদ উৎখাত ও নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রবর্তন। সরকার পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু আন্দোলন শেষ হয়নি। আমাদের দাবি, আহত ও শহীদ পরিবারের পাশে আন্তর্বর্তী সরকারসহ পরবর্তী সরকার যেন দাঁড়ায় এবং যথাযথ সহায়তা দেয়।’

প্রশাসনের আশ্বাস

জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, সাতক্ষীরায় গেজেটভুক্ত আহত হয়েছেন ১০৭ জন এবং শহীদ হয়েছেন চারজন। জেলা প্রশাসন সব সময় তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সহায়তা দেওয়া হয়েছে এবং প্রয়োজনে আরও উদ্যোগ নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৩ আগস্ট বিমানবন্দরে বাধা পান তাপস, হাসিনাকে অনুরোধ করেন অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে- অডিও ফাঁস

শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালে অবতরণ করল প্রথম ফ্লাইট

স্ত্রী রাজি নন, সাবেক সেনাপ্রধান হারুনের মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে না: পুলিশ

বাকৃবির ৫৭ শিক্ষকসহ ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

সাবেক সেনাপ্রধান হারুন ছিলেন চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসে, দরজা ভেঙে বিছানায় মিলল তাঁর লাশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত