Ajker Patrika

শরীরে ৪ গুলি নিয়ে বিনা চিকিৎসায় যন্ত্রণায় ছটফট করছেন অভিক

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২১: ১১
Thumbnail image

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের ছোড়া গুলিতে বাঁ চোখ হারানোর পথে ঝিনাইদহের হাসিব রহমান অভিকের। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে বর্তমানে বাড়িতে বিনা চিকিৎসায় চোখের যন্ত্রণায় ছটফট করছেন তিনি। 

বাঁ চোখে একটি এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে থাকা আরও তিনটি গুলি বের করা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারি-বেসরকারিসহ সবার কাছে আর্থিক সহযোগিতা চায় অভিকের পরিবার। 

গত ৫ আগস্ট দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা মহেশপুর শহরের শাপলা চত্বরে (পুরাতন পৌরসভা মোড়) আন্দোলনরত অবস্থায় পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে গুরুতর আহত হন মহেশপুর পৌর শহরের হামিদপুর গোডাউনপাড়া গ্রামের মোজাফ্ফর রহমানের ছেলে। খুলনা নর্দান ইউনিভার্সিটির বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হাসিব রহমান অভিক। 

অভিকের বাঁ চোখে একটি, নাকে, মুখে ও গোলায় মোট পাঁচটি ছররা গুলি বিদ্ধ হয়। ওই সময় দ্রুত তাঁকে মহেশপুর ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক দিন চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর করা হয় বাংলাদেশ চক্ষু হাসপাতালে। 

সেখানে চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়াজ আবদুর রহমানে কাছে চিকিৎসা করান। সেখানে পরপর দুবার অপারেশন করেও চোখের রেটিনায় আটকে থাকা গুলি বের করা সম্ভব হয়নি। চিকিৎসকেরা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে দেশের বাইরে নিয়ে যেতে বলেছেন। তবে টাকার অভাবে দেশের বাইরে যাওয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমানে বাড়িতে বিনা চিকিৎসায় চোখের যন্ত্রণায় ছটফট করছেন এই শিক্ষার্থী। 

পৌর শহরের হামিদপুর গোডাউনপাড়া বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিছানায় শুয়ে আছেন অভিক। তাঁর বাঁ চোখে ব্যান্ডেজ। 

অভিক বলেন, ‘ওই দিন পুলিশের ছোড়া প্রথম গুলির শিকার আমি। পাঁচটি ছররা গুলি লাগে চোখে, নাকে মুখে ও গোলায়। একটা গুলি বের হলেও বাকি চারটা গুলি এখনো রয়েছে। দেশের চিকিৎসা প্রায় শেষ। অনেক টাকা ব্যয় করে আমার পরিবার আমাকে ঢাকায় চিকিৎসা করান। তারপরও চোখটাও ভালো হলো না। বাঁ চোখে তেমন কিছুই দেখতে পারি না, চোখের ব্যথা ও মাথা যন্ত্রণায় রাতে ঘুমাতে পারি না। ডাক্তাররা বলেছে দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করাতে।’ এ কথা বলতে বলতেই কেঁদে ওঠেন তিনি। 

অভিকের বাবা মোজাফ্ফর রহমান বলেন, ছেলের চিকিৎসার জন্য তাঁরা দেশে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। উন্নত চিকিৎসার জন্য অভিককে সিঙ্গাপুর বা চেন্নাই নিয়ে যেতে বলছেন চিকিৎসক। বিদেশে চিকিৎসার জন্য ৪০-৫০ লাখ টাকা লাগতে পারে বলে তাঁরা জানিয়েছেন। 

বাঁ চোখ ব্যান্ডেজ করে বাড়িতে বিনা চিকিৎসায় দিন কাটাচ্ছেন অভিক। ছবি: সংগৃহীত তিনি বলেন, ‘বিশাল অঙ্কের এই টাকা কোথায় পাব, কে দেবে?’ এমন পরিস্থিতিতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে পুরো পরিবার। 

অভিকের মা হোসনে আরা বেগম জানান, অভিক সেদিন সবাইকে ফাঁকি দিয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনে গেছে। পরে জানতে পারেন তাঁর বাঁ চোখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লেগেছে। চোখের গুলি বের করাসহ পরিপূর্ণ সুচিকিৎসার প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। যা তাঁদের পক্ষে ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না। সে কারণে ছেলেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সবার সহযোগিতা চান বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহেশপুর উপজেলার অন্যতম সমন্বয়ক মেহেদী হাসান বাপ্পি বলেন, ‘অভিক আমাদের আন্দোলনের অন্যতম সহযোদ্ধা। আন্দোলনরত অবস্থায় পুলিশের ছোড়া গুলিতে আহত হয় অভিক। তার বাঁ চোখসহ শরীরে এখনো চারটি গুলি রয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যেতে বলেছে চিকিৎসকেরা। এতে প্রায় ৪০-৫০ লাখ টাকা লাগতে পারে।’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের অভিকের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত