Ajker Patrika

‘মামলা চাই না, বিচার চাই আল্লাহর কাছে’

মাগুরা প্রতিনিধি
আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২৪, ১৭: ৫৮
Thumbnail image

সাব্বির হোসেন রাজু কাজ করতেন জননী কুরিয়ার সার্ভিসে। শুক্রবার (১৯ জুলাই) নামাজ শেষে দুপুরের খাবারের পানি আনতে গেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে মারা যান তিনি। তাঁকে বাঁচাতে গেলে অপর দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। ২৭ বছর বয়সী রাজুর বাড়ি মাগুরা সদরের জগদল ইউনিয়নে। একই সময়ে মাগুরা শ্রীপুর উপজেলার সব্দালপুর ইউনিয়নে মরদেহ আসে হাসিব ইকবালের (২৮)। তিনিও শুক্রবার ঢাকায় পল্লবী এলাকায় নামাজ শেষে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে মারা যান।

হাসিবের দাফন শেষে জানা যায়, পাশের দ্বারিয়াপুর ইউনিয়নের বড়ইচারায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া মোত্তাকিন বিল্লাহর শ্বশুর শহিদুল ইসলাম মরদেহের জন্য অপেক্ষা করছেন। ২৭ বছরের যুবক মোত্তাকিনের তিন বছরের একটি ছেলে আছে। তাঁদের মধ্যে একমাত্র হাসিব ইকবাল অবিবাহিত ছিলেন। তবে যেদিন তিনি গুলিবিদ্ধ হন, সেদিন বিকেলে তাঁর বিয়ের কথা চূড়ান্ত হওয়ার কথা বলছিলেন তাঁর বাবা এ এমএ রাজ্জাক।

শনিবার (২০ জুলাই) একই দিনে এই তিন যুবকের দেশের বাড়ি মাগুরায় দাফন সম্পন্ন হয়। তবে কোনো প্রকার মামলায় যেতে চাননি তাঁদের পরিবারগুলো। বিচার চেয়েছেন আল্লাহর কাছে।

নিহত হাসিব ইকবালের বাবা এম এ রাজ্জাক বলেন, ‘হাসিব বায়িং হাউসে চাকরি করত। শুক্রবারের নামাজ শেষে সে আর বাসায় ফেরেনি। তবে মাগরিবের নামাজের পর একটা ফোনে জানতে পারি ছেলের মরদেহ আন্জুমানর মফিদুলে। তার বন্ধুদের থেকে জানতে পেরেছি জুম্মার নামাজ শেষে প্রধান সড়কে কোটা আন্দোলন দেখতে গেলে হাসিবের মাথায় হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হয়। এরপর তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। পরে বন্ধুরা তাকে গোসলের জন্য আঞ্জুমান মফিদুলে নিয়ে গেলে বাড়িতে ফোন করে।’

তিনি ছেলের এই ঘটনায় বিচার চান না আদালতে। তবে দুই হাত তুলে বলেন এই হত্যার বিচার আল্লাহর কাছে ছেড়ে দিলাম।

একইভাবে সৃষ্টিকর্তার কাছে বিচার চেয়েছেন বড়ইচারার সন্তান নিহত মোত্তাকিন বিল্লাহর পরিবার। তাঁর শ্বশুর শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পাঁচ বছর হলো বিয়ে হয়েছে আমার মেয়ের সঙ্গে। তার বাবা নেই। জামাই আমার তিন বছরের শিশুসন্তান রেখে চলে গেল। ঢাকায় সে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করত। আমার মেয়েও একটি বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। শুক্রবার বাইরে বের হলে তার মাথায় গুলি লাগে হেলিকপ্টার থেকে। তাকে বাঁচানোর জন্য কয়েকটি হাসপাতালে নিয়ে ছোটাছুটি করা হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত সে আর বাঁচেনি।’

মাগুরা সদরের জগদল ইউনিয়নের আজমপুরের ছেলে রাজুর নিহতের ঘটনায় হতবাক গ্রামের মানুষ। রাজধানীর মোহম্মদপুরের জননী কুরিয়ার শাখায় চাকরি করা শুরু করেছে মাত্র কয়েক মাস। মাসের বেতনটাও বাড়িতে বাবার কাছে পাঠানোর সময় হয়নি। ঠিক এমন সময় এলাকায় শান্ত ছেলে হিসেবে পরিচিত রাজু চিরতরে চলে গেল। শুক্রবার মোহাম্মদপুরে ব্যাপক গোলাগুলির মধ্যে পড়ে যায় রাজু। অফিস থেকে একটু দূরে টিউবওয়েলে দুপুরের খাবারের পানি আনতে গেলে পুলিশ তাকে ঘিরে ধরে। সে কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী পরিচয় দিলেও পুলিশ তার কোমরে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে বলে জানান রাজুর বাবা আবু কালাম মোল্লা।

তবে তিনজনের মরদেহ দাফন হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো খবর নেওয়া হয়নি বলে পরিবারগুলো জানিয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, পুলিশের গুলি খেয়ে মরল অথচ প্রশাসনের কাছে বিচার কেউ চাইছে না কেন। সবাই শুধু আল্লাহর কাছে বিচার চাইছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

বিয়ে করলেন সারজিস আলম

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়ছে শ্রীলঙ্কা, ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ কোথায় দেখবেন

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

সাবেক শিক্ষার্থীর প্রাইভেট কারে ধাক্কা, জাবিতে ১২ বাস আটকে ক্ষতিপূরণ আদায় ছাত্রদলের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত