Ajker Patrika

জীবননগরে ১২২ বস্তা সারসহ ট্রলি আটক, অভিযোগের তীর দুই বিএনপি নেতার দিকে

জীবননগর (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি 
জীবননগরে ১২২ বস্তা সারসহ ট্রলি আটক করে জনতা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জীবননগরে ১২২ বস্তা সারসহ ট্রলি আটক করে জনতা। ছবি: আজকের পত্রিকা

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদে জৈব সার বিতরণ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে বিএনপির দুই গ্রুপ ও জামায়াতের দ্বন্দ্ব চলছিল। এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ১২২ বস্তা সার নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় জনতা আটক করে।

এই সার নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বাঁকা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার ও ইউনিয়ন বিএনপির খোকন সহসভাপতি খাদেমুল খোকন জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে এই ঘটনার পর আজ বুধবার বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বিএনপি।

সার আটকের পর বাঁকা ইউনিয়ন যুবদল নেতা রাজা ফেসবুকে লেখেন, ‘বাঁকা ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারি মো. আবুল বাশার ও সহসভাপতি মো. খাদেমুল ইসলাম খোকন ভুয়া প্রকল্প করে মাটিভর্তি সার বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের নিয়ে আসে। বিষয়টি মিডিয়ায় প্রচার হওয়ায় আজ ৪/২/২৫ ইং রাত আনুমানিক ৮ ঘটিকার সময় স্যার পাওয়ার টিলার ভর্তি করে পাছার করার সময় জনতা ধাওয়া খেয়ে গাড়িসহ ধরা খায়। এই চোরের দায়দায়িত্ব বিএনপি নেবে না। এই দুজন বিএনপি নেতার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’

বাঁকা ইউনিয়ন বিএনপির নেতা আবুল কাশেম বলেন, ‘বিএনপি কোনো চোরের দল না। যাদের বাশারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। যদি ঘটনা সত্য হয় আমরা তার শাস্তি চাই।’

বাঁকা ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মাওলানা মফিজুর রহমান বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ১২২ বস্তা সার চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় আটক করা হয়েছে। গাড়ির চালক এ ঘটনায় দুজনের নাম বলেছেন। আমাদের দাবি তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’

এ বিষয়ে বাঁকা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল বাশার বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। ইউনিয়ন পরিষদেরও কেউ নই। চেয়ারম্যান বরখাস্ত হওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তিনিই সারের অনুমোদন করেছিলেন। আমাকে জড়িয়ে কোনো তথ্য দেওয়া হলে তা মিথ্যা হবে।’

এ বিষয়ে জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মামুন হোসেন বিশ্বাস বলেন, ‘ট্রলিতে করে সার নিয়ে যাচ্ছিল, এ সময় স্থানীয় লোকজন আটক করেছে। আমরা জিডিমূলে সারগুলো থানা হেফাজতে রেখেছি। এই সারের উৎস কি, কোথায় থেকে আসছে সেটি জানার জন্য প্রশাসনের কয়েকজনকে ফোন দিয়েছিলাম, তবে তারা কিছু বলতে পারেননি।’

সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর এডিপির উন্নয়ন তহবিল থেকে পিআইসির মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষকদের বিনা মূল্যে জৈব সার বিতরণ করা হয়। কিন্তু এ বছর যে সার আনা হয়েছে, তাতে মাটির ভাগ বেশি। এ ছাড়া কে এই সার এনেছেন, সে বিষয়েও পরিষদের বেশির ভাগ সদস্য কিছুই জানেন না। তবে ইউনিয়ন উন্নয়ন বাস্তবায়ন কমিটির সভায় জৈব সার বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য মর্জিনা বেগমকে। চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের প্রধান ও সংরক্ষিত নারী সদস্য মর্জিনা বেগমকে পিআইসি করে চার লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে চেয়ারম্যান বরখাস্ত হওয়ার পর বাঁকা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল বাশার চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করে মর্জিনা বেগমকে না জানিয়েই দুটি পিআইসি করে এগ্রো ডায়মন্ড কোম্পানির কাছ থেকে ৪০০ টাকা দরে ৬৫২ বস্তা জৈব সার কেনেন। যার মোট মূল্য ২ লাখ ৬০ হাজার ৮০০ টাকা। এর মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদে রাখা হয়েছে ৬১২ বস্তা, আর বাকি ৪০ বস্তার হদিস নেই।

জীবননগরে ১২২ বস্তা সারসহ ট্রলি আটক করে জনতা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জীবননগরে ১২২ বস্তা সারসহ ট্রলি আটক করে জনতা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. আসাদুর রহমান বলেন, ‘আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। কে জৈব সার এনেছে, তা আমি জানি না। আমার আসার আগেই এখানে সার রাখা হয়েছে।’

ইউপি সদস্য ও পিআইসি মর্জিনা বেগম বলেন, ‘জৈব সার বিতরণের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমাকে কে পিআইসি করেছে, তাও জানি না। গত সোমবার শুনলাম, আমার নামে জৈব সার কেনা হয়েছে। কে এনেছে, কীভাবে এনেছে, কত টাকা বরাদ্দ—এসব বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই।’

এগ্রো ডায়মন্ড কোম্পানির মালিক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশারের মাধ্যমে এ বছর ৪০০ টাকা দরে ৬৫২ বস্তা সার দিয়েছি। কিন্তু পরে জানতে পারি, সার নিয়ে সমস্যা হয়েছে। হঠাৎ আবুল বাশার আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদে যাও, সাংবাদিকেরা এসেছে। পারলে সার সরিয়ে নিয়ে যাও।’ আমি তো ব্যবসা করি, কোনো চোর নই। সার সরিয়ে নিতে হলে আমার বাড়তি খরচ হবে। তা ছাড়া এখনো সার বিক্রির টাকা পাইনি।’

জীবননগর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ও বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক মো. জুয়েল শেখ বলেন, ‘বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদে জৈব সার রাখা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে কে রেখেছে, কীভাবে এসেছে, তা জানি না। ২৭ তারিখ থেকে আমি দায়িত্ব নিয়েছি। পিআইসির মাধ্যমে কিছু কাজ করা হবে, যার মধ্যে সার বিতরণও রয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল আমিন বলেন, ‘জৈব সারের বিষয়ে শুনেছি। ইউনিয়ন পরিষদে নিয়োজিত প্রশাসককে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের সংখ্যালঘু ইস্যুতে বাংলাদেশের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাল দিল্লি

‘ক্রিকেটাররা আমাকে ন্যুড পাঠাত’, বিস্ফোরক ভারতের সাবেক কোচের সন্তান

‘শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে’ ব্যানারে বিমানবন্দর এলাকায় আ.লীগের মিছিল

পরপর সংঘর্ষে উড়ে গেল বাসের ছাদ, যাত্রীসহ ৫ কিমি নিয়ে গেলেন চালক

ইটনায় এবার ডিলার নিয়োগে ঘুষ চাওয়ার কল রেকর্ড ফাঁস

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত