Ajker Patrika

নতুন বাংলাদেশ দেখতে চায় গুলিতে দৃষ্টিশক্তি হারানো কিশোর মবিন

মো. বেলাল হোসাইন, শরীয়তপুর
Thumbnail image

কোটা সংস্কার আন্দোলনের মিছিলে গিয়ে গুলিতে দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি হারিয়েছে শরীয়তপুরের কিশোর মো. মবিন ইসলাম (১৭)। এর কিছুদিন পরই আওয়ামী লীগ সরকার পতন হয়। ছাত্র জনতার জীবনের বিনিময়ে রচিত হয় নতুন ইতিহাস। আর সেই নতুন বাংলাদেশ দেখার ইচ্ছা এখন মোবিনের।

রাজধানীর উত্তরার একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করত শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার বড় শিধলকুড়া গ্রামের মবিন ইসলাম (১৭)। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে যোগ দেয় সে। মিছিলটি কত দূর যাওয়ার পরই পুলিশের গুলিতে দুই চোখের দৃষ্টি শক্তিসহ এক কানের শ্রবণশক্তি হারায় মবিন। পিতৃহারা মবিনের চিকিৎসা করতে গিয়ে এখন নিঃস্ব তার অসহায় পরিবার।

বর্তমানে বাম চোখে কিছু দেখতে পায় না মবিন, আর ডান চোখে কেবল আলোর উপস্থিতি বুঝে পারে। চিকিৎসকেরা এখনো কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেননি দৃষ্টিশক্তি ফিরবে কিনা।

গতকাল রোববার সকালে শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার সিধলকুড়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বড় শিধলকুড়া গ্রামে কথা হয় মবিনের সঙ্গে।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবন্ধী ছেলে জুলহাসসহ তিন ছেলেকে রেখে প্রায় ৫ মাস আগে মারা যায় মবিনের বাবা মোফাজ্জল হোসেন মাল। খেয়ে না খেয়ে কোনোমতে চলছিল মবিনের সংসার। সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে মবিনের মা নাজমা বেগম দিশেহারা হয়ে পড়ে।

পরে স্থানীয় ও স্বজনদের পরামর্শে বড় ছেলে নাজমুল হুদা পলাশকে ড্রাইভারের চাকরি ও মবিনকে ঢাকার উত্তরার একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজে দেন মা নাজমা বেগম।

১৮ জুলাই ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি। ওই দিন প্রতিদিনের মতো মবিন রাজধানীর উত্তরার রাজলক্ষ্মীর পাশে ৩ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর সড়কের ২৭ নম্বর প্লটে লতিফ এম্পোরিয়াম মার্কেটে কম্পিউটারের দোকানে কাজের জন্য যায়।

বেলা গড়ার সঙ্গে সঙ্গে মিছিলে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকার উত্তরা। মবিনও দোকান বন্ধ করে যোগ দেয় মিছিলে। মিছিলটি যখন উত্তরা থানার দিকে যায়, তখন থানার ভেতর থেকে এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ করে পুলিশ। একপর্যায়ে পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে চোখসহ মাথা ক্ষতবিক্ষত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মবিন।

মিছিলের সাথিরা মবিনকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল পাঠায় জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। সেখান থেকে পাঠানো হয় ভিশন আই হাসপাতালে।

মবিন ও তার প্রতিবন্ধী ভাই জুলহাসের সঙ্গে মা নাজমা বেগম। ছবি: আজকের পত্রিকাসেখানে মবিনের চোখের চারটি অপারেশন করা হয়। এ পর্যন্ত মোবিনের চিকিৎসায় ১ লাখ বিশ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এসব টাকা ধার দেনা করে জোগাড় করে মবিনের পরিবার। মবিন বর্তমানে গ্রামের বাড়িতে রয়েছে। সে কারও সাহায্য ছাড়া চলতে পারে না। তার মাথায় এখনো অসংখ্য ছররা গুলি রয়েছে।

মবিন বলে, ‘স্বৈরাচারের পতন হওয়ায় এখন আমার কোনো দুঃখ নাই। তবে নতুন বাংলাদেশ দেখার ইচ্ছা হয়। এজন্য আমি সরকার ও দেশবাসীর সহযোগিতা চাই। আমি সুস্থভাবে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাঁচতে চাই।’

মবিনের বড় ভাই ড্রাইভার নাজমুল হুদা পলাশ বলেন, ‘মবিনের চোখের চারটি অপারেশন করা হয়েছে। সে এখনো চোখে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। আগামী বৃহস্পতিবার আবারও ভিশন আই হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এ পর্যন্ত ধারদেনা করে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়েছে। এখন আমাদের থাকার ১২ শতাংশ ভিটে মাটি ছাড়া কিছুই নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বড় ভাই প্রতিবন্ধী। এখন ছোট ভাই দৃষ্টিশক্তি ফিরে না পেলে সেও প্রতিবন্ধী হয়ে যাবে। আমার ভাইকে সুস্থ করতে দেশবাসী ও সরকারের সহযোগিতা চাই। আপনারা সবাই আমার ভাইটির জন্য এগিয়ে আসুন।’

মবিনের মা নাজমা বেগম বলেন, ‘আমার বড় ছেলে প্রতিবন্ধী। এখন ছোট ছেলেটাও প্রতিবন্ধী হয়ে গেল। আমার এতিম ছেলেরা যাতে বাঁচতে পারে আপনারা তার একটা ব্যবস্থা করে দেন। আমার ছেলেকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেন।’

ডামুড্যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাসরিন বেগম সেতু বলেন, মবিনের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার সরকার বহন করবে। আগামী বুধবার মবিনকে আবারও চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে। এজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত