Ajker Patrika

গোয়ালন্দে দেবে যাওয়া ব্রিজে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২১, ১৫: ৫৬
গোয়ালন্দে দেবে যাওয়া ব্রিজে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা এলাকায় খালের ওপর নির্মিত ব্রিজের নিচ থেকে মাটি ধসে গেছে। এতে ব্রিজের একাধিক স্থানে দেবে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। ব্রিজের মাঝের অংশ সম্পূর্ণভাবে দেবে গিয়ে নিচের দিকে ঝুঁকে গেছে। দুই সপ্তাহ ধরে এমন পরিস্থিতি হওয়ায় ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হলেও হালকা যান (মোটরসাইকেল, মাহেন্দ্র, অটোরিকশা ও রিকশা) চলাচল অব্যাহত থাকায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে। যেকোনো সময় ব্রিজ ভেঙে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। 

জানা যায়, দেবগ্রামের তেনাপচা আশ্রয়ন ইউজেড-আরএইচডি (পিয়ার আলী মোড়) সড়কটি এলজইডির অধীন। সড়কের ৫২৩ মিটার চেইনেজে অবস্থিত দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২০১১-২০১২ অর্থবছরে খালের ওপর প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২ মিটার দৈর্ঘ্যের ২ ভেন্ট বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। কালভার্টের তলদেশের মাটি ধসে যাওয়ায় কয়েক স্থানে দেবে গেছে। ফেলে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এলজিইডির গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকৌশলী ব্রিজটি দ্রুত মেরামত বা পুনর্নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ১৬ নভেম্বর নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে পাঠানো প্রতিবেদনে জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।   

৬৪ জেলা খাল খনন প্রকল্পের আওতায় ২০১৮ সালে গোয়ালন্দ-রাজবাড়ী-ফরিদপুরের ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খাল খনন প্রকল্পের কাজ হয়। ২০১৮-২০১৯ থেকে শুরু করে ২০২০-২০২১ অর্ধ বছরে খনন কাজ শেষ হয়। প্রায় ২৫ ফুট চওড়া এবং ৪ ফুট গভীর খনন কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। কাজের চুক্তিমূল্য ধরা হয়েছিল ৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ঢাকার মতিঝিলের টিটিএসএল-এসআর নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাউবো রাজবাড়ীর তত্ত্বাবধানে গোয়ালন্দের দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা এলাকায় পদ্মা নদী হতে উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের কেউটিল হয়ে বয়ে যাওয়া খালটি ফরিদপুর পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খনন কাজ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে গোয়ালন্দ উপজেলা এলাকায় ছিল প্রায় ১১ কিলোমিটার। 

এলাকাবাসীর অভিযোগ, পর্যাপ্ত জায়গা ও ঢালু না রেখে খাল খনন করা হয়। এমনকি ব্রিজসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে গার্ডার, সিসি ব্লক, জিওব্যাগ সহ প্রয়োজনীয় সুরক্ষার ব্যবস্থার প্রয়োজন থাকলেও করা হয়নি। ফলে গত দুই বছরে বর্ষাকালে খাল দিয়ে পানি প্রচণ্ড বেগে প্রবাহিত হওয়ায় ব্রিজের নিচে এবং পাশ থেকে মাটি ধসে যায়। তেনাপচা এলাকার প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে খালের দুই পাশ বেশি ধসে পড়ে। এতে ৬-৭টি পরিবার অন্যত্র সরে যেতে বাধ্য হয়। আরও বেশ কিছু পরিবার ভাঙন ঝুঁকিতে পড়ে।    

গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, তেনাপচা খালের ওপর নির্মিত ব্রিজটির মাঝ খানে এবং একপাশ ভেঙে দেবে গেছে। ব্রিজের নিচে একাধিক স্থান ভেঙে গেছে। ব্রিজে উঠতে বাম পাশের বেশ জায়গা নিয়ে মাটি সরে গেছে। ওই অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে মাহেন্দ্র, রিকশা, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের মতো হালকা যান এবং পথচারীরা আসা যাওয়া করছে। ঝুঁকি নিয়ে কেন ব্রিজ পার হচ্ছেন? কয়েক জনকে এমন প্রশ্ন করা হলে তারা বলেন, কি করব, যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম এই রাস্তা। এখান দিয়ে না গেলে অনেক ঘুরে যেতে হয়। তাই ঝুঁকি থাকার পরও পারাপার হচ্ছেন। 

দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা এলাকায় খালের ওপর নির্মিত ব্রিজের নিচ থেকে মাটি ধসে গেছেগত শুক্রবার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান চৌধুরী ও উপজেলা ছাত্রলীগের একাংশের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কার সিদ্দিক নসিমনে করে মেহগনি গাছের গুঁড়ি এনে ব্রিজের গোড়ায় ফেলছেন। 

আসাদ চৌধুরী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি সংস্কার কাজের অংশ হিসেবে তাদের খালের দুই পাশে প্যালাসাইডিং করতে বলেছে। কাজ শেষে তাদের বিল পরিশোধ করা হবে। 

আসাদ চৌধুরী আরও বলেন, অপরিকল্পিত খাল খননে দুই বছর ধরে খালের দুই পাড় ধসে পড়ছে। ছোটভাকলার আব্দুল আজিজ মাস্টারের বাড়ির কাছ থেকে দেবগ্রামের প্রয়াত চেয়ারম্যান পিয়ার আলীর বাড়ি হয়ে তেনাপচা পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন হয়েছে। এর মধ্যে তেনাপচা এক কিলোমিটার এলাকায় বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে। খাল পাড়ে তার বাড়ি থাকায় তিনিও ঝুঁকিতে বাস করছেন। অপরিকল্পিত খননের কারণে ব্রিজটি ধসে পড়ছে বলে জানান তিনি।   

দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, অপরিকল্পিত খাল খনন এবং বর্ষাকালে ছোট ব্রিজ দিয়ে প্রচণ্ড বেগে পানি প্রবাহিত হওয়ায় পাশ থেকে মাটি ধসে ব্রিজটি দেবে গেছে। যেকোনো মুহূর্তে ব্রিজ সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকায় দুই সপ্তাহ ধরে ভারী যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। অনতিবিলম্বে সেখানে নতুন করে ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানান তিনি। 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবু সাঈদ মণ্ডল বলেন, ব্রিজটি অন্তত ৫০ বছরেও কিছু হতো না। নিচে ও পাশ থেকে মাটি ধসে যাওয়ায় ২০-২২ বছরেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করেছি। 

উপজেলা প্রকৌশলী বজলুর রহমান খান বলেন, ব্রিজের উভয় পাশে এলজিইডির কার্পেটিং করা ৫২৩ মিটার পাকা সড়ক রয়েছে। খাল খননের কারণে পাক সড়কের অনেক স্থানে ধসে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ১৬ নভেম্বর নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি দিয়ে অবগত করা হয়েছে। 

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুল হক খান বলেন, দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে যানবাহন চলাচল করতে নিষেধ করা হয়েছে। ব্রিজের ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে।   

পাউবোর গোয়ালন্দের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী ইবাল সরদার বলেন, খালের উভয় পাশে বাড়ি-ঘরসহ অনেক স্থাপনা থাকায় সিডিউল অনুযায়ী খাল খনন সম্ভব হয়নি। পাউবোর খাল অনুযায়ী ব্রিজটি সঠিক মাপে না করায় পানি প্রবাহের ক্ষেত্রে চাপ পড়েছিল বেশি। যার ফলে ব্রিজের কয়েকস্থানে ধসে যায়। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত