Ajker Patrika

জামানতের শতকোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা আ.লীগের তিন নেতা, বাড়ি ভাঙচুর

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৮: ৪৮
মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে গ্রাহকের জামানতের টাকা নিয়ে লাপাত্তার ঘটনায় ধর্মঘট ও মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগীরা। পরে বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে গ্রাহকের জামানতের টাকা নিয়ে লাপাত্তার ঘটনায় ধর্মঘট ও মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগীরা। পরে বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাঁচ শতাধিক গ্রাহকের জামানতের প্রায় শতকোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার গ্রাম মানবিক উন্নয়ন ক্ষুদ্র সমবায় সমিতি নামের একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা বছরের পর বছর ঘুরেও পাচ্ছেন না জামানত ও লভ্যাংশের টাকা। প্রতারণার ফাঁদে পড়ে ভিটেমাটি হারিয়েছেন অসংখ্য গ্রাহক। অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি ভুক্তভোগীরা। ঋণের ফাঁদে জর্জরিত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয়েছে অনেককে।

এর ফলে আজ রোববার দুপরে উপজেলার উত্তর জামশা এলাকায় অবস্থান ধর্মঘট ও মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগী গ্রামবাসী। এ সময় বিক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক ও সমবায় মালিক আমজাদ হোসেনের বসতবাড়িতে ভাঙচুর করেন।

জানা গেছে, যৌথ মালিকানায় ২০০৫ সালে সমবায় প্রতিষ্ঠানটি নিবন্ধিত হয়। জামশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুজ্জামান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক আমজাদ হোসেন, ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি মানিক মিয়া উজ্জ্বল ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুল্লাহ যৌথভাবে প্রতিষ্ঠা করেন সমবায় সমিতিটি।

কিডনি জটিলতায় ভোগা অসুস্থ ফাতেমা আক্তার বলেন, তাঁর চিকিৎসার জন্য ১০ লাখ টাকা জামানত হিসেবে রেখেছিলেন গ্রাম মানবিক উন্নয়ন ক্ষুদ্র সমবায় সমিতিতে। চাহিদা বিবেচনায় চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে যেকোনো সময় তুলতে পারবেন টাকা—এ ভরসায় দুই মাস মেয়াদে তিন বছর আগে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু তিন বছর পার হলেও পাওয়া যায়নি কোনো অর্থ। এখন টাকার অভাবে আটকে রয়েছে তাঁর চিকিৎসা।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে অসুস্থ ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘টাকা দেওয়ার পর থেকে তাদের পায়ে পর্যন্ত ধরেছি, কোনো টাকা দেয় নাই। আমার যা সহায় সম্বল ছিল, সব শেষ। পোলাপান নিয়ে কীভাবে আমার দিন যায়, রাত পোহায়, আমি জানি আর আল্লাহ জানে। আমার পরিবারটারে একেবারে নিঃস্ব করে ফালাইছে।’

মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে গ্রাহকের জামানতের টাকা নিয়ে লাপাত্তার ঘটনায় ধর্মঘট ও মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগীরা। পরে বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে গ্রাহকের জামানতের টাকা নিয়ে লাপাত্তার ঘটনায় ধর্মঘট ও মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগীরা। পরে বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভুক্তভোগী সেলিম মিয়া জানান, এই প্রতারক চক্র ৫০০ গ্রাহকের প্রায় শতকোটি টাকা পাচার করে দুবাইয়ে ব্যবসা শুরু করেছে। চক্রটি যেকোনো সময় দেশ ছেড়ে পরিবারসহ বিদেশে চলে যাবে। তিনি বলেন, তারা গ্রাহকের টাকায় ব্যবসা করেছে, কোথাও কোনো লস খায়নি। পাবলিকের টাকায় পাবলিককে দিয়েছে। সমিতির ভাষ্যমতে, তাদের ফিল্ডে কোটি পাঁচেক টাকা আছে, কিন্তু তারা হাজারখানেক গ্রাহকের কাছ থেকে জামানত নিয়ে রেখেছে শতকোটি টাকা। তারা এই টাকা অবৈধভাবে দেশ থেকে পাচার করেছে। তাদের এই চক্রান্ত পূর্বপরিকল্পিত।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত কাউকেই এলাকায় পাওয়া যায়নি। তবে কথা হয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সমবায়ের পরিচালক গাজী কামরুজ্জামানের স্ত্রী মৌসুমী আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘টাকা–পয়সার জন্য বাড়িতে প্রতিনিয়তই লোকজন আসে। আমি আমার স্বামীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি আট থেকে নয় কোটি টাকার কথা স্বীকার করেছেন, যা গ্রাহক পায়। পর্যায়ক্রমে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে। শেখ হাসিনা পালানোর পর থেকে রাজনৈতিক মামলায় তিনিও গাঁ ঢাকা দিয়ে আছেন। সমিতির টাকাগুলো একাধিক জায়গায় ইনভেস্ট করা আছে। সেখান থেকে প্রফিট আসা শুরু হলে তিন থেকে চার বছরের ভেতর গ্রাহকের সব টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব হবে।’

এ বিষয়ে জেলা সমবায় কর্মকর্তা ফারহানা ফেরদৌসী বলেন, ‘প্রথমত কোনো সমবায় সমিতি গ্রাহকের কাছ থেকে জামানত সংগ্রহ করতে পারবে না। সমিতির নিবন্ধন থাকলে সদস্যদের মাঝে ক্ষুদ্রঋণের কার্যক্রম পরিচালিত করতে পারবে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা অভিযোগ করলে আমরা সমিতির বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত