Ajker Patrika

বাড়ি ও দোকান মালিকসহ ৩ জনকে আটক দেখাল পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৩, ১৬: ০২
Thumbnail image

রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজারের একটি ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় বাড়ির ও দোকান মালিকদের তিনজনকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এর আগে ঘটনার পর দিন তাদের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ তাদের আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আটক ব্যক্তিরা হলেন—বাড়ির মালিক ওয়াহিদুর রহমান ও তার ভাই মতিউর রহমান এবং বেসমেন্টের দোকান মালিক আব্দুল মোতালেব মিন্টু।

ডিবি পুলিশ বলছে, ভবনের মালিক ইমারত নীতিমালা না মেনে বেসমেন্টে দোকান তৈরি করে ভাড়া দিয়েছেন। দোকানের মালিক সেটা ভাড়া নিয়ে এক ইঞ্চি জায়গাকেও ফাঁকা না রেখে ডেকোরেশন করেছেন। কর্মচারী ও ক্রেতাদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছেন। এতে মানুষের হানি ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভবনের মালিক এবং দোকানদারের স্বেচ্ছাচারিতা, লোভ এবং অবহেলারই ফল এই ঘটনা তাই তাদের আটক করা হয়েছে।

ভবনটি সম্পর্কে পুলিশের পর্যবেক্ষণ

  • বেসমেন্টে কার পার্কিং থাকলে বাতাসের ভেন্টিলেশন থাকত। কোনো গ্যাসের জমা হতো না। বিস্ফোরণও হয়তো হতো না। 
  • সাত তলা ভবনের বেসমেন্টসহ তিনটি ফ্লোরের কমার্শিয়াল লোকজন, বাসা বাড়ির লোকজনের পয়োবর্জ্য যেখানে জমা হয় দীর্ঘ সময় সেই জায়গা পরিষ্কার না করায় সেখানেও বায়ো গ্যাসের জন্ম হতে পারে যা বিভিন্ন কারণে বিস্ফোরিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতির সৃষ্টি করে। 
  • একসময় এই বেসমেন্টের রান্নাঘরে কমার্শিয়াল বড় লাইনে গ্যাস সরবরাহ করা হতো যা পরবর্তীতে বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু বাড়ির অন্যান্য ফ্লোরের ডোমেস্টিক লাইন এখনো চলমান। ফলে এই লাইন সম্পূর্ণ বন্ধ না হয়ে সেখান দিয়েও তিতাস গ্যাস লিক হতে পারে। কোনভাবে জমা গ্যাসে স্পার্কের মাধ্যমে বিস্ফোরণের হতে পারে। 
  • ভবন মালিকদের তথ্য মতে, মূল ক্ষতিগ্রস্ত ভবন এবং তার উত্তরপাশে ব্র্যাক ব্যাংকের ভবনের মাঝখানে সরু একটি গলি আছে। এ গলিতে পয়োবর্জ্য পদার্থের সেপটিক ট্যাংক, এসির আউটার ইত্যাদি অবস্থিত। বিস্ফোরণে সেপটিক ট্যাংকের পাশের দেয়ালগুলো সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পয়োবর্জ্য পদার্থের বায়ো গ্যাসের বিস্ফোরণে এমনটি হতে পারে। 
  • এই ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ড বা বেজম্যান্টে বড় একটি সেনেটারি দোকান, নিচ তলায় ৫টি দোকান, দোতলাতে কাপড়ের ২টি দোকান ছিল যেগুলোর জন্য অনেক কাঁচ ও ইন্টেরিয়রের কাজ করা হয়। পাওয়ারফুল এসি ব্যবহার করা হয়। এসিগুলোকে সময়ে সময়ে সার্ভিসিং না করালে বা ত্রুটিপূর্ণ থাকলে তা থেকেও বিস্ফোরণের কারণ হতে পারে। যেটা ২ / ৩ বছর আগে গুলশানে আরব আমিরাতের ভিসা সেন্টারে ঘটেছিল। 
  • ভবনটি কোনো পরিত্যক্ত পাবলিক স্পেস/ভবন নয়। ব্যক্তি মালিকানাধীন। বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সার্বক্ষণিক নজরদারি ও সিসি ক্যামেরার সার্ভিল্যান্স এ ছিল এটি। ফলে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির জন্য যে পরিমাণ বিস্ফোরক প্রয়োজন তা এখানে সবার অজান্তে জমা রাখা প্রায় অসম্ভব। 
  • বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিস, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, ঢাকা মহানগরীর সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল টিম আলাদা আলাদাভাবে তদন্ত করছে। বিভিন্ন দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারা একটা যৌক্তিক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে রিপোর্ট দেবেন তাতেই প্রকৃত কারণটি জানা যাবে। তবে এখনো পর্যন্ত বিস্ফোরক বা সেবুট্যাজের কোনো আলামত সেখানে পাওয়া যায়নি। 
  • ভবনটির বিভিন্ন ফ্লোরের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে সিসিক্যামেরা ছিল। সিসি ক্যামেরার ডিভিআর থেকে ফুটেজ সংগ্রহ করার চেষ্টা চলছে। ভবনের মালিক, দোকানের মালিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেও বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে জানার চেষ্টা চলছে।

প্রসঙ্গত, গত ৭ মার্চ রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে ভবন বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন শতাধিক। এই ঘটনায় বংশাল থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত