Ajker Patrika

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে গেলে সবার আস্থা প্রয়োজন: সাবেক সিইসি আবু হেনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২২, ১০: ৩২
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে গেলে সবার আস্থা প্রয়োজন: সাবেক সিইসি আবু হেনা

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবু হেনা বলেছেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে গেলে সবার আস্থা প্রয়োজন। সবাইকে নিয়েই নির্বাচন করতে হবে। ‘নির্বাচনে কে আসবে না আসবে সেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’—সাম্প্রতিক সময়ে দেওয়া ইসির এমন বক্তব্য সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক এই সিইসি।

আজ বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ডেইলি স্টার সেন্টারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন আবু হেনা।

আবু হেনা জানান, নির্বাচন কমিশন সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী স্বাধীন। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ইসি যত জনবল চাইবে, রাষ্ট্রপতি তা দিতে বাধ্য। ইসির দায়িত্বে যাঁরাই থাকুন না কেন, তাঁদের সচেতন হওয়া দরকার বলেও মনে করেন। 

সাবেক এই সিইসির মতে, নির্বাচন কমিশনেরই দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা। বিধিবিধান ও আইন তাঁকে ক্ষমতায়িত করেছে। ফলে তাঁকে সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন হতে হবে। 

আবু হেনা বলেন, ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে তার কাজের মাধ্যমে আস্থা অর্জন করত হবে। আস্থা অর্জন করতে না পারলে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাবে না।’ 

বর্তমান কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বলে আসছে, ‘নির্বাচনের জন্য কাউকে জোর করা সম্ভব নয়’। একইভাবে কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা একাধিকবার বলেছেন, নির্বাচনে কে আসবে না আসবে সেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে আবু হেনার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘ইসির এমন বক্তব্য ঠিক নয়। সবাইকে নিয়েই নির্বাচন করতে হবে। আমার দায়িত্বটা হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন করা। আমি ছেড়ে দিতে পারি না।’

ইসির প্রতি পরামর্শ দিয়ে আবু হেনা আরও বলেন, ‘আমার মতে, ইসির রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলা উচিত। আমি দুই মাস সময় পেয়েছিলাম। এর মধ্যে কতগুলো পলিটিক্যাল পার্টির সঙ্গে বসেছি। কথা বলেছি।’ 

সুজন প্রসঙ্গে আবু হেনা বলেন, ‘আমার সময়ে সুজন ছিল না। আমি মনে করি সুজন নির্বাচন কমিশনের বন্ধু। সুজন জনগণের সচেতনতার জন্য কাজ করছে।’

কারওয়ান বাজারের ডেইলি স্টার সেন্টারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তারা। এর আগে বিকেলে ডেইলি স্টার সেন্টারে দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের তথ্যাবলি নিয়ে দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুল আলীম। 

সুজনের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। আগামী প্রকাশনীর সঙ্গে যৌথভাবে প্রকাশিত বই দুটি প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি জানান, ভোটারদের তথ্যভিত্তিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বিচারপতি মো. আবদুল মতিন ও বিচারপতি এ এফ এম আবদুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ ২০০৫ সালে একটি যুগান্তকারী রায়ের মাধ্যমে হলফনামা আকারে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের তাঁদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে আট ধরনের তথ্য প্রদানের বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করেন। উল্লেখ্য, এই রায়কে ভন্ডুল করার লক্ষ্যে একটি স্বার্থান্বেষী মহল সম্পূর্ণ গোপনে এবং জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে আবু সাফা নামে একজন দুর্বৃত্তের পক্ষে আপিল দায়ের করে। 

সুজন সম্পাদক বলেন, ‘সৌভাগ্যবশত সুজনের প্রচেষ্টায় এ অপচেষ্টা রোধ এবং প্রার্থীদের সম্পর্কে ভোটারদের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।’ 

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আরপিওতে কিছু গ্রে এরিয়া আছে। যেগুলো নিয়ে কাজ করা দরকার। হলফনামা যাচাই করা আরেকটি বড় সমস্যা। আমরা কমিশনে থাকতেও এ সমস্যায় পড়েছিলাম। সমস্যা উতরাতে প্রার্থীও দেওয়া তথ্যগুলো আমরা এনবিআরে পাঠাতাম, কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি।’ 

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুল আলীম বলেন, ‘প্রার্থীর হলফনামা আমরা কোনোভাবেই যাচাই করতে পারছি না। এর থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা দরকার। জনগণকে ক্ষমতায়িত করা দরকার। দুর্ভাগ্যবশত কোনো নির্বাচন কমিশনকেই আমরা এটি করতে দেখিনি। কিন্তু তথ্যগুলো জনগণের কাছে পৌঁছানো দরকার।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত