Ajker Patrika

জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট

কান্না, রক্তের আকুতি

শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
আপডেট : ২২ জুলাই ২০২৫, ০৭: ২১
স্ট্রেচারে করে নেওয়া হচ্ছে আহত শিক্ষার্থীকে। গতকাল রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। ছবি: আজকের পত্রিকা
স্ট্রেচারে করে নেওয়া হচ্ছে আহত শিক্ষার্থীকে। গতকাল রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। ছবি: আজকের পত্রিকা

একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স আসছে। ভেতর থেকে বের করে আনা হচ্ছে কোমলমতি শিশুদের। তাদের কারও হাত-পা, কারও মুখমণ্ডল, আবার কারও শরীরের অধিকাংশই দগ্ধ। তাদের আর্তনাদ ও স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট।

গতকাল সোমবার রাজধানীর দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ ৬০ শিক্ষার্থী ও শিক্ষককে ভর্তি করা হয়েছে বার্ন ইনস্টিটিউটে। হাসপাতালে ঢোকার মুখেই চোখে পড়ে রক্তের জন্য আকুতি। রোগীকে বাঁচাতে ‘রক্ত চাই’। বিভিন্ন গ্রুপের পজিটিভ রক্ত মিললেও নেগেটিভ রক্তের জন্য ছিল হাহাকার। একজন বাবা কাঁপা কণ্ঠে বললেন, ‘রক্ত না পেলে আমার ছেলেটা বাঁচবে না।’

হাসপাতালের ছয়তলায় উঠে দেখা যায়, ওয়ার্ডের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন এক মা। তাঁর পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে নুরে জান্নাত ইউশার শরীরের ৬ শতাংশ পুড়ে গেছে। মেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে মা ছটফট করছেন। বলছিলেন, ‘আমার একমাত্র মেয়ে, আল্লাহ ওকে যেন বাঁচিয়ে দেয়।’

হাসপাতালের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে একজন বাবা চিৎকার করছেন, ‘আমার ছেলেটা কোথায়? এই অ্যাম্বুলেন্সে আমার ছেলেটা আছে? ওর নাম সামি।’ কিন্তু তিনি তাঁর ছেলের দেখা পাননি। ছুটে গেলেন অন্য হাসপাতালে।

গতকাল বিকেল গড়াতে না গড়াতেই বার্ন ইনস্টিটিউটের দেয়ালগুলো যেন হয়ে ওঠে কান্নার প্রাচীর। ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয় ততক্ষণে। কিন্তু তখনো তাদের স্বজনেরা জানেন না প্রিয় মানুষটি চলে গেছে।

রাতে হাসপাতালের ৭০৫ নম্বর ওয়ার্ডের সামনে দাঁড়িয়ে কথা হয় আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁর মেয়ে মুনতাহা তোয়া মাইলস্টোন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। দুর্ঘটনার খবর শুনে ছুটে যান ঘটনাস্থলে। তখনো ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছায়নি।

কাঁদতে কাঁদতে আবুল কালাম জানান, গিয়ে দেখেন ১০-১৫টা লাশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। সব পুড়ে ছাই। দেড় ঘণ্টা পোড়া লাশের পাশে দাঁড়িয়ে মেয়ের খোঁজ করেছেন। একসময় একজন শিক্ষক ফোন করে বলেন, মেয়েকে জীবিত পাওয়া গেছে। এরপর এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটতে থাকেন। শেষে বার্ন ইনস্টিটিউটে মেয়েকে পান। এই বাবা বলেন, ‘এসে দেখি আমার মেয়ের সোনা মুখটা পুড়ে কালো হয়ে গেছে। একবার চোখ মেলে দেখলেও বাবা ডাকতে পারেনি।’

‘শুধু পোশাক দেখে শনাক্ত করার চেষ্টা’

হাসপাতালের নিচতলায় অসংখ্য স্বজন ছুটে আসছেন নিখোঁজ শিশুদের খুঁজতে। কেউ কাপড় দেখে চেনার চেষ্টা করছেন। কেউ ছবি দেখিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে জানতে চাইছেন, ‘এই মেয়েটিকে কি আনা হয়েছে?’ জবাব নেই কারও মুখে। পরে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের তালিকায় নাম খুঁজে না পেয়ে কেউ কেউ অচেতন হয়ে পড়ছেন।

সামিয়া নামের তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে খুঁজছেন তার চাচা রাকিব। তাঁর ভাই এক হাসপাতালে, ভাবি এক হাসপাতালে আর তিনি এসেছেন বার্ন ইনস্টিটিউটে। কিন্তু কোথাও নেই সামিয়া। রাকিব বলেন, এই অবুঝ বাচ্চাদের সঙ্গে এমন কেন হলো। কীভাবে সহ্য করবে মা-বাবা।

এদিকে দুর্ঘটনার খবরের পর থেকেই বার্ন ইনস্টিটিউট চত্বর যেন হয়ে ওঠে এক মানবিক যুদ্ধক্ষেত্র। ছাত্র, চিকিৎসক, নার্স, স্বেচ্ছাসেবক—সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ হল থেকে শিক্ষার্থীরা সারবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে অ্যাম্বুলেন্স চলাচলের জন্য রাস্তা করে দিচ্ছেন। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট, রোভার স্কাউট, বুয়েট ও মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা রক্তের জন্য সংগ্রহ অভিযান চালাচ্ছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় গুরুতর দগ্ধ অন্তত ৬০ জন শিক্ষার্থী ও শিক্ষককে ভর্তি করা হয়েছে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। আহতদের অধিকাংশের বয়স ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। তাদের মধ্যে ২৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। কারও কারও শরীরের ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত পুড়ে গেছে। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় ১০ জনকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে দুজন ইতিমধ্যে মারা গেছে।

জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন শাওন বিন রহমান বলেন, এ পর্যন্ত ৬০ জনের বেশি আহত ভর্তি হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই স্কুলের শিক্ষার্থী। প্রায় সবাই গুরুতর অবস্থায় রয়েছে। কারও কারও শরীর কম দগ্ধ হলেও গুরুত্বপূর্ণ জায়গা পুড়ে যাওয়ায় তাদের অবস্থা খারাপ।

বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রোগীদের একটি তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দগ্ধ অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দগ্ধদের মধ্যে নাফির শরীরের ৯৫ শতাংশ, আব্দুল্লাহ শামীমের ৯০ শতাংশ, শায়ান ইউসুফের ৯৫ শতাংশ, শামিমার ২০ শতাংশ, মাহিয়া তাসনিমের ৪৫ শতাংশ, আফনান ফাইয়াজের ৯৫ শতাংশ, বাপ্পি সরকারের ৩৫ শতাংশ ও মাসুদার শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। অন্যদিকে তাসনিয়ার ৩৫ শতাংশ, ১১ বছর বয়সী আরিয়ানের ৫৫ শতাংশ, আশরাফুল ইসলামের ১৫ শতাংশ, রোহানের ৫০ শতাংশ, শ্রেয়ার ৫ শতাংশ, কাব্যর ২০ শতাংশ, ইউশার ৬ শতাংশ ও রূপী বড়ুয়ার ৬ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। আরও অনেক শিক্ষার্থীর শরীরের বিভিন্ন মাত্রায় পোড়া রয়েছে। হাসপাতালের তালিকায় নওরিন ও মাসুকা নামের দুজন রোগী রয়েছে, যাদের বয়স ও কোন মাত্রায় দগ্ধ, তা উল্লেখ করা হয়নি।

জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে কথা হয় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষকের সঙ্গে। ঘটনার ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে ওই শিক্ষক বলেন, ঘটনাটি এতটা আকস্মিক ছিল যে কেউ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেনি। স্কুল ছুটির ঘণ্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই ছাত্রছাত্রীরা লাইনে দাঁড়িয়েছিল, তখন বিমানটি ভবনের ওপর ভেঙে পড়ে। মুহূর্তেই আগুন ও ধোঁয়ায় চারপাশ ঢেকে যায়।

এই ঘটনায় বিকেল থেকে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ মানুষ হাসপাতালের বাইরে ভিড় করে। জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম তলায় দগ্ধদের চিকিৎসা চলছে। স্বজনেরা বারান্দা ও করিডরে দাঁড়িয়ে আহাজারি করছেন।

আহতদের দেখতে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গিয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা। সেই সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারাও ছিলেন। এতে হাসপাতালের সামনে ব্যাপক ভিড় হয়। বিকেলে এই হাসপাতালে যান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়বিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম প্রমুখ হাসপাতালটিতে যান।

হাসপাতালের সামনে ব্যাপক ভিড় সৃষ্টি হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে সেখানে। দুর্ঘটনার পরপরই জরুরি চিকিৎসা সহায়তার জন্য জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে একটি হটলাইন চালু করা হয়েছে, যার নম্বর ০১৯৪৯০৪৩৬৯৭।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সাপ্লাই চেইন বিভাগে চাকরির সুযোগ

যুগান্তকারী উদ্ভাবন: চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ছাত্রদল নেতাকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
জাহাঙ্গীর আলম। ছবি: সংগৃহীত
জাহাঙ্গীর আলম। ছবি: সংগৃহীত

নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় জাহাঙ্গীর আলম (৩০) নামের ছাত্রদলের এক নেতাকে হাত–পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

গতকাল সোমবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার কেন্দুয়া–আঠারবাড়ী সড়কের পাশে বড় কালিয়ান এলাকা থেকে তাঁকে উদ্ধার করা হয়।

জাহাঙ্গীর আলম গন্ডা ইউনিয়ন ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। তিনি মরিচপুর এলাকার আজিজুল হকের ছেলে।

কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জাহাঙ্গীর আলম গতকাল সন্ধ্যার পর বাড়ি থেকে বের হন। এর কিছুক্ষণ পর তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। তখন পরিবারের লোকজন তাঁকে খুঁজতে শুরু করেন। একপর্যায়ে রাত ৯টার দিকে স্থানীয় লোকজন কেন্দুয়া–আঠারবাড়ী সড়কের কালিয়ান এলাকায় একটি ইটভাটায় হাত–পা বাঁধা অচেতন অবস্থায় তাঁকে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।

জাহাঙ্গীর আলমের চাচাতো ভাই হাসান মিয়া বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পর গভীর রাতে জাহাঙ্গীরের জ্ঞান ফিরে আসে। তিনি এখনো কথা বলতে পারছেন না। কীভাবে এমন হলো, তা তিনি এখনো বলতে পারছেন না। তবে আমরা ধারণা করছি, গন্ডা ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে বিরোধ চলছে। আমার ভাইয়ের বিপক্ষের কিছু লোক তাঁকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। তিনি পুরোপুরি সুস্থ হলে তাঁর কাছ থেকে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সাপ্লাই চেইন বিভাগে চাকরির সুযোগ

যুগান্তকারী উদ্ভাবন: চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জবি ছাত্র জোবায়েদ হত্যা: আদালতে দায় স্বীকার করে ৩ আসামির জবানবন্দি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জবি শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
জবি শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. জোবায়েদ হোসেন (২৫) হত্যার ঘটনায় রাজধানীর বংশাল থানায় করা মামলায় গ্রেপ্তার জোবায়েদের ছাত্রী (১৯), তাঁর বন্ধু মো. মাহির রহমান (১৯) ও মাহিরের বন্ধু ফারদীন আহম্মেদ আয়লান (২০) দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাঁরা জবানবন্দি দেন।

বিকেলে বংশাল থানা-পুলিশ তিনজনকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বংশাল থানার এসআই মো. আশরাফ হোসেন তিনজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার জন্য আবেদন করেন। আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই তিনজনের পরিকল্পনায় জোবায়েদকে হত্যা করা হয় বলে গ্রেপ্তারের পর তাঁরা জানান। তাঁরা আদালতেও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে ইচ্ছুক।

পরে তিনজনই ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান, মাসুম মিয়া ও জুয়েল রানার খাস কামরায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি শেষে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়।

আসামি মাহির জবানবন্দি দেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের কাছে। জোবায়েদের ছাত্রী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম মিয়া ও আয়লান মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল রানার কাছে জবানবন্দি দেন। বিকেল থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত তাঁরা জবানবন্দি দেন।

আদালতের বংশাল থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই তানভীর মোর্শেদ চৌধুরী জবানবন্দির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জোবায়েদ খুন হওয়ার পর ওই দিন রাতেই তাঁর ছাত্রীকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও শান্তিনগর থেকে অপর দুজনকে আটক করে পুলিশ। আজ সকালে বংশাল থানায় মামলা করেন জোবায়েদের বড় ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত।

মামলায় জোবায়েদের ছাত্রী, তাঁর বন্ধু মো. মাহির রহমান ও মাহিরের বন্ধু ফারদীন আহম্মেদ আয়লানকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও চার–পাঁচজনকে আসামি করা হয়।

জবানবন্দিতে যা বলেছেন তিনজন

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর থানা হেফাজতে তাঁদের মুখোমুখি করা হয়। পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে তাঁরা হত্যার দায় স্বীকার করেন। পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে তাঁরা যা বলেছেন, আদালতে সে রকম স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

প্রত্যেকে জবানবন্দিতে বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ড তাঁরা সংঘটিত করেছেন পরিকল্পিতভাবে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে তাঁরা জোবায়েদকে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সাপ্লাই চেইন বিভাগে চাকরির সুযোগ

যুগান্তকারী উদ্ভাবন: চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সিরাজগঞ্জে কিশোরী ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার ৩

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি  
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০০: ০১
গ্রেপ্তার তিনজন। ছবি: আজকের পত্রিকা
গ্রেপ্তার তিনজন। ছবি: আজকের পত্রিকা

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে কিশোরীকে রেস্টুরেন্টে ধর্ষণের মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে মামলার প্রধান আসামিসহ আরও দুজন পলাতক রয়েছেন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার জামতৈল গ্রামের আলমের ছেলে মো. আকাশ (২১), নান্নু সরকারের ছেলে মো. আতিক (২৩) এবং কর্ণসুতি গ্রামের জাহাঙ্গীর প্রামাণিকের ছেলে নাজমুল হক নয়ন (২০)।

কামারখন্দ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ বলেন, গ্রেপ্তার তিনজনকে আজ মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

পুলিশ জানায়, গতকাল সোমবার জামতৈল বাজার এলাকা থেকে আকাশ ও আতিককে এবং পরে নাজমুল হক নয়নকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

উল্লেখ্য, গত রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কর্ণসুতি গ্রামের এক কিশোরীকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে নিয়ে উপজেলার জামতৈল সেন্ট্রাল পার্কসংলগ্ন ‘ডেরা ফাস্ট ফুড অ্যান্ড চাইনিজ রেস্টুরেন্টে’ ধর্ষণ করা হয়। ওই ঘটনায় কিশোরীর মা গতকাল কামারখন্দ থানায় ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সাপ্লাই চেইন বিভাগে চাকরির সুযোগ

যুগান্তকারী উদ্ভাবন: চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চট্টগ্রামে আ.লীগ অফিসে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগ, ভাঙচুর

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে আ.লীগ কার্যালয় ভাঙচুর করেন একদল যুবক। ছবি: আজকের পত্রিকা
চট্টগ্রামে আ.লীগ কার্যালয় ভাঙচুর করেন একদল যুবক। ছবি: আজকের পত্রিকা

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কার্যালয়ে ভাঙচুর চালিয়েছেন একদল যুবক। নগরীর নিউমার্কেট দোস্ত বিল্ডিংয়ের কার্যালয়টিতে আজ মঙ্গলবার বিকেলে এ ভাঙচুর চালানো হয়। তবে ভাঙচুর সম্পর্কে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি ঘটনাস্থল থেকে ২০০ গজ দূরে থাকা কোতোয়ালি থানা-পুলিশ।

আব্দুল মালেক নামের স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, বিকেলে ৩০-৪০ জনের একটি দল এসে দোস্ত বিল্ডিংয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। ভাঙচুর শেষে তারা ভবনটিতে থাকা চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ ও মুজিব সেনা কার্যালয়ে প্রবেশ করে। তাদের হাতে হকিস্টিক ও লাঠিসোঁটা ছিল।

চট্টগ্রামে আ.লীগ কার্যালয় ভাঙচুর করেন একদল যুবক। ছবি: আজকের পত্রিকা
চট্টগ্রামে আ.লীগ কার্যালয় ভাঙচুর করেন একদল যুবক। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ সময় আওয়ামী লীগ কার্যালয়টি ভাঙচুর চালিয়ে তছনছ করে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে কার্যালয় দুটি তালা দেওয়া ছিল বলে জানান স্থানীয় ওই দোকানদার। ভাঙচুর করতে আসা যুবকদের সঙ্গে বিল্ডিংয়ের লিজ দাবিদার জাকির হোসেনও উপস্থিত ছিলেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মহানগর সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী আরিফ মঈনুদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে ভবনটিতে অবৈধভাবে দখল করে কার্যালয় পরিচালনা করে আসছিল আওয়ামী লীগ। সরকার পতনের পর কিছুদিন কার্যালয়টি বন্ধ ছিল। কিন্তু কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা তিন-চার মাস ধরে রাতের বেলায় কার্যালয়টিতে বসে মিটিং করে। বৃহত্তর চট্টগ্রামের সব নাশতার পরিকল্পনা হয় এই কার্যালয় থেকে।

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর ‘৩৬ জুলাই’ নামের একটি সংগঠনের লোকজন কার্যালয়টিতে তল্লাশি করে। এই সময় কার্যালয়টিতে সম্প্রতি সময়ে মিটিং করার নমুনা হিসেবে ড্রিংকিং ওয়াটার, বিছানা, চেয়ার টেবিল, শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা ও ইন্দিরা গান্ধীর ছবি পাওয়া গেছে বলে জানান এনসিপির এই নেতা।

চট্টগ্রামে আ.লীগ কার্যালয় ভাঙচুর করেন একদল যুবক। ছবি: আজকের পত্রিকা
চট্টগ্রামে আ.লীগ কার্যালয় ভাঙচুর করেন একদল যুবক। ছবি: আজকের পত্রিকা

অপর দিকে ঘটনাস্থলের কাছে থাকা কোতোয়ালি থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একটু আগে রাতে এই বিষয়ে খবর পেয়েছি। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি। তবে এই ঘটনায় আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি।’

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম নগরীর নিউমার্কেট মোড়ের দোস্ত বিল্ডিংয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের ৪১টি কার্যালয় রয়েছে। ভবনটির প্রকৃত মালিক একজন বিহারি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যিনি দেশত্যাগ করেন।

এর পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ভবনটি দখল করে নিজেদের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। মাঝখানে ১৯৯১ সালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন জাকির নামের এক ব্যক্তিকে লিজ দিলেও বিভিন্ন আইনি জটিলতায় তিনি দখল নিতে পারেননি। ভবনটি নিয়ে লিজ পাওয়া ব্যক্তি ও দখলদারদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি কমপক্ষে চারটি মামলা চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সাপ্লাই চেইন বিভাগে চাকরির সুযোগ

যুগান্তকারী উদ্ভাবন: চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত