নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
হৃদয়বিদারক, মর্মান্তিক, মর্মস্পর্শী। এমনই এক দুর্ঘটনা ঘটেছে গতকাল সোমবার রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে। বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনা শোকবিহ্বল করেছে পুরো দেশকে।
দুপুরে ওই যুদ্ধবিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে আছড়ে পড়ে বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছেন বৈমানিকসহ অন্তত ২০ জন। আহত ও দগ্ধ হয়েছে দেড় শতাধিক। এদের বেশির ভাগই মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থী। আহতদের মধ্যে আছেন শিক্ষক ও অভিভাবকও। আইএসপিআর বলেছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। কারণ উদ্ঘাটনে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি করেছে বিমানবাহিনী।
নিহত বৈমানিকের নাম ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম। নিহতদের মধ্যে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ১২ জন, জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ২ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২ জন, উত্তরার লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে ২ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১, উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ১ জনের মরদেহ রয়েছে। দগ্ধ হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে নিহত অন্যদের পরিচয় জানা যায়নি।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, যুদ্ধবিমানটি বেলা ১টা ১৮ মিনিটে দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের হায়দার আলী একাডেমিক ভবনের ওপর পড়ে বিধ্বস্ত হয়।
এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার এক দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদ, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানিয়েছে, এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের অংশ হিসেবে আজ দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। পাশাপাশি সব সরকারি, বেসরকারি ভবন ও বিদেশে বাংলাদেশি মিশনেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। হতাহতদের জন্য দেশের সব মসজিদ ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
আরেক বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় বলেছে, পরিচয় শনাক্ত হওয়া মরদেহ দ্রুত পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। যাদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা যাবে না, তাদের মরদেহ ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করে পরে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
সন্ধ্যায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামসহ ২০ জন নিহত এবং ১৭১ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনে বিমানবাহিনীর একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আইএসপিআর জানায়, বিমানবাহিনীর ‘এফ-৭ বিজিআই’ বিমানটি বেলা ১টা ৬ মিনিটে প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকার কুর্মিটোলার এ কে খন্দকার বিমানঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। পরে বিমানটি ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দোতলা একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়।
জানা যায়, বিধ্বস্ত এফ-৭ বিজিআই বিমানটি চীনের তৈরি চেংদু জে-৭ সিরিজের একটি যুদ্ধবিমান। বাংলাদেশে এই মডেলের বিমানের তৃতীয় দুর্ঘটনা এটি। এর আগে ২০১৮ সালের নভেম্বরে টাঙ্গাইলের মধুপুরের রসুলপুরে ফায়ারিং রেঞ্জে মহড়ার সময় বিমানবাহিনীর এফ-৭ বিজি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে উইং কমান্ডার আরিফ আহমেদ দিপু নিহত হন। এরপর ২০২১ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রামের জহুরুল হক ঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের পর বঙ্গোপসাগরে বিধ্বস্ত হয় এফ-৭ এমবি। এতে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তাহমিদ নিহত হন।
গতকালের দুর্ঘটনার বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাইলস্টোন স্কুলের হায়দার আলী একাডেমিক ভবনের প্রধান ফটকে আছড়ে পড়ে বিমানটি। সঙ্গে সঙ্গে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। অনেক দূর থেকেও ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়। জ্বলন্ত বিমানটির আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিসের নয়টি ইউনিট। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেখান থেকে একজনের লাশ উদ্ধার করেন। দগ্ধ অর্ধশতাধিক মানুষকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। আরও অনেককে উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল, লুবনা হাসপাতালসহ উত্তরার বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়। আহতদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী। তাদের অনেকের পুরো শরীর পুড়ে গেছে।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন শাওন বিন রহমান বলেন, আহতদের প্রায় সবাই স্কুলের শিক্ষার্থী। সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দা জহিরুল বলেন, বিমানটি প্রথমে ভবনে আছড়ে পড়ে। পরে ছেঁচড়ে ভবনে গিয়ে ধাক্কা খায়। সঙ্গে সঙ্গে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়।
দুর্ঘটনাস্থল থেকে অনেককে স্ট্রেচারে করে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে নিয়ে যেতে দেখা যায়। আহতদের একটি অংশকে প্রাথমিকভাবে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল, কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়া হয়। দগ্ধদের অধিকাংশকে পাঠানো হয় জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে।
উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালের প্রশাসন শাখার পরিচালক নাজমুল ইসলাম বলেন, যাদের ৩০ শতাংশের বেশি পুড়ে গেছে, তাদের বার্ন ইউনিটে রেফার করা হয়েছে। অল্প আঘাত নিয়ে আসা কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাসায় চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
উত্তরা আধুনিক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আকাশ বলেন, আহতদের বেশির ভাগের শরীরের ৬০-৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাদের অনেকের বয়স ১৪ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।
রাত পৌনে নয়টার দিকে বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ ভ্যানে তুলে নিয়ে উদ্ধারকাজের আপাতত সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, হায়দার আলী ভবনটি দোতলা এবং পশ্চিমমুখী। ভবনটির মাঝখানে প্রধান ফটক ও দোতলায় ওঠার সিঁড়ি। বিমানটি সোজা ফটকে আছড়ে পড়লে ভবনটি এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ও সেনাসদস্যরা বিভিন্ন যন্ত্র দিয়ে বিমানটির বিভিন্ন অংশ কেটে বের করেন।
কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, ওই ভবনে দুটি তলা মিলিয়ে মোট ১৬টি শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষকদের চারটি কক্ষ রয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শ্রেণিকক্ষের সামনে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। শিক্ষার্থীরা জানায়, ভবনটিতে ছুটির পর ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কোচিং করত।
জানতে চাইলে মাইলস্টোন কলেজের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল বলেন, হায়দার আলী ভবনে ইংরেজি মাধ্যমের তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস হতো। স্কুল ছুটির ঠিক আগে হওয়ায় বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার সময় অনেক অভিভাবক ভবনের সামনে ছিলেন।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সায়েম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বেলা ১টা ১০ মিনিটের দিকে বিকট শব্দ শুনতে পাই। দৌড়ে বাইরে এসে দেখি, আগুন জ্বলছে হায়দার আলী ভবনে। কিছু শিক্ষার্থী গায়ে আগুন নিয়ে বের হয়ে আসে। কিছু শিক্ষার্থী ক্লাসরুমে আটকা পড়ে।’ তিনি বলেন, প্রধান ফটকের ভেতর বিমানটি ঢুকে যাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী সেখানে আটকা পড়ে। ভবনের কক্ষের জানালায় লোহার গ্রিল থাকায় অনেকে বের হতে পারেনি। ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নেভানোর পর গ্রিল কেটে এবং ছাদে মই দিয়ে উঠে অনেক শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে।
বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ওই এলাকা পরিদর্শনে যান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহেদ কামাল। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দোতলা ভবনটির প্রথম তলায় ছিল তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শ্রেণিকক্ষ। দ্বিতীয় তলায় ছিল দ্বিতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির শ্রেণিকক্ষ। সঙ্গে ছিল অধ্যক্ষের অফিস মিটিং রুম। একটি কোচিংয়ের ক্লাস চলমান ছিল। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার সময় স্কুল ছুটি হয়ে গিয়েছিল এবং ওই সময় শিক্ষকদের কক্ষের সংলগ্ন যে জায়গায় বিমানটি পড়েছিল, ওই জায়গায় বাচ্চারা জড়ো হয়েছিল এবং তাদের সঙ্গে হয়তো কিছুসংখ্যক অভিভাবকও ছিলেন।
বিকেলে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন দগ্ধদের খোঁজখবর নিতে যান অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারাও বার্ন ইনস্টিটিউটে যান। পরে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, বার্ন ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চিকিৎসার প্রয়োজনে যত কিছু দরকার, তারা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। তারপরও যদি প্রয়োজন হয়, বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনা হবে।
হৃদয়বিদারক, মর্মান্তিক, মর্মস্পর্শী। এমনই এক দুর্ঘটনা ঘটেছে গতকাল সোমবার রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে। বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনা শোকবিহ্বল করেছে পুরো দেশকে।
দুপুরে ওই যুদ্ধবিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে আছড়ে পড়ে বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছেন বৈমানিকসহ অন্তত ২০ জন। আহত ও দগ্ধ হয়েছে দেড় শতাধিক। এদের বেশির ভাগই মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থী। আহতদের মধ্যে আছেন শিক্ষক ও অভিভাবকও। আইএসপিআর বলেছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। কারণ উদ্ঘাটনে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি করেছে বিমানবাহিনী।
নিহত বৈমানিকের নাম ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম। নিহতদের মধ্যে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ১২ জন, জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ২ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২ জন, উত্তরার লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে ২ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১, উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ১ জনের মরদেহ রয়েছে। দগ্ধ হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে নিহত অন্যদের পরিচয় জানা যায়নি।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, যুদ্ধবিমানটি বেলা ১টা ১৮ মিনিটে দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের হায়দার আলী একাডেমিক ভবনের ওপর পড়ে বিধ্বস্ত হয়।
এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার এক দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদ, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানিয়েছে, এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের অংশ হিসেবে আজ দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। পাশাপাশি সব সরকারি, বেসরকারি ভবন ও বিদেশে বাংলাদেশি মিশনেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। হতাহতদের জন্য দেশের সব মসজিদ ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
আরেক বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় বলেছে, পরিচয় শনাক্ত হওয়া মরদেহ দ্রুত পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। যাদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা যাবে না, তাদের মরদেহ ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করে পরে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
সন্ধ্যায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামসহ ২০ জন নিহত এবং ১৭১ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনে বিমানবাহিনীর একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আইএসপিআর জানায়, বিমানবাহিনীর ‘এফ-৭ বিজিআই’ বিমানটি বেলা ১টা ৬ মিনিটে প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকার কুর্মিটোলার এ কে খন্দকার বিমানঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। পরে বিমানটি ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দোতলা একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়।
জানা যায়, বিধ্বস্ত এফ-৭ বিজিআই বিমানটি চীনের তৈরি চেংদু জে-৭ সিরিজের একটি যুদ্ধবিমান। বাংলাদেশে এই মডেলের বিমানের তৃতীয় দুর্ঘটনা এটি। এর আগে ২০১৮ সালের নভেম্বরে টাঙ্গাইলের মধুপুরের রসুলপুরে ফায়ারিং রেঞ্জে মহড়ার সময় বিমানবাহিনীর এফ-৭ বিজি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে উইং কমান্ডার আরিফ আহমেদ দিপু নিহত হন। এরপর ২০২১ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রামের জহুরুল হক ঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের পর বঙ্গোপসাগরে বিধ্বস্ত হয় এফ-৭ এমবি। এতে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তাহমিদ নিহত হন।
গতকালের দুর্ঘটনার বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাইলস্টোন স্কুলের হায়দার আলী একাডেমিক ভবনের প্রধান ফটকে আছড়ে পড়ে বিমানটি। সঙ্গে সঙ্গে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। অনেক দূর থেকেও ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়। জ্বলন্ত বিমানটির আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিসের নয়টি ইউনিট। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেখান থেকে একজনের লাশ উদ্ধার করেন। দগ্ধ অর্ধশতাধিক মানুষকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। আরও অনেককে উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল, লুবনা হাসপাতালসহ উত্তরার বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়। আহতদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী। তাদের অনেকের পুরো শরীর পুড়ে গেছে।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন শাওন বিন রহমান বলেন, আহতদের প্রায় সবাই স্কুলের শিক্ষার্থী। সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দা জহিরুল বলেন, বিমানটি প্রথমে ভবনে আছড়ে পড়ে। পরে ছেঁচড়ে ভবনে গিয়ে ধাক্কা খায়। সঙ্গে সঙ্গে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়।
দুর্ঘটনাস্থল থেকে অনেককে স্ট্রেচারে করে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে নিয়ে যেতে দেখা যায়। আহতদের একটি অংশকে প্রাথমিকভাবে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল, কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়া হয়। দগ্ধদের অধিকাংশকে পাঠানো হয় জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে।
উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালের প্রশাসন শাখার পরিচালক নাজমুল ইসলাম বলেন, যাদের ৩০ শতাংশের বেশি পুড়ে গেছে, তাদের বার্ন ইউনিটে রেফার করা হয়েছে। অল্প আঘাত নিয়ে আসা কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাসায় চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
উত্তরা আধুনিক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আকাশ বলেন, আহতদের বেশির ভাগের শরীরের ৬০-৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাদের অনেকের বয়স ১৪ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।
রাত পৌনে নয়টার দিকে বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ ভ্যানে তুলে নিয়ে উদ্ধারকাজের আপাতত সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, হায়দার আলী ভবনটি দোতলা এবং পশ্চিমমুখী। ভবনটির মাঝখানে প্রধান ফটক ও দোতলায় ওঠার সিঁড়ি। বিমানটি সোজা ফটকে আছড়ে পড়লে ভবনটি এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ও সেনাসদস্যরা বিভিন্ন যন্ত্র দিয়ে বিমানটির বিভিন্ন অংশ কেটে বের করেন।
কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, ওই ভবনে দুটি তলা মিলিয়ে মোট ১৬টি শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষকদের চারটি কক্ষ রয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শ্রেণিকক্ষের সামনে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। শিক্ষার্থীরা জানায়, ভবনটিতে ছুটির পর ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কোচিং করত।
জানতে চাইলে মাইলস্টোন কলেজের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল বলেন, হায়দার আলী ভবনে ইংরেজি মাধ্যমের তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস হতো। স্কুল ছুটির ঠিক আগে হওয়ায় বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার সময় অনেক অভিভাবক ভবনের সামনে ছিলেন।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সায়েম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বেলা ১টা ১০ মিনিটের দিকে বিকট শব্দ শুনতে পাই। দৌড়ে বাইরে এসে দেখি, আগুন জ্বলছে হায়দার আলী ভবনে। কিছু শিক্ষার্থী গায়ে আগুন নিয়ে বের হয়ে আসে। কিছু শিক্ষার্থী ক্লাসরুমে আটকা পড়ে।’ তিনি বলেন, প্রধান ফটকের ভেতর বিমানটি ঢুকে যাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী সেখানে আটকা পড়ে। ভবনের কক্ষের জানালায় লোহার গ্রিল থাকায় অনেকে বের হতে পারেনি। ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নেভানোর পর গ্রিল কেটে এবং ছাদে মই দিয়ে উঠে অনেক শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে।
বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ওই এলাকা পরিদর্শনে যান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহেদ কামাল। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দোতলা ভবনটির প্রথম তলায় ছিল তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শ্রেণিকক্ষ। দ্বিতীয় তলায় ছিল দ্বিতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির শ্রেণিকক্ষ। সঙ্গে ছিল অধ্যক্ষের অফিস মিটিং রুম। একটি কোচিংয়ের ক্লাস চলমান ছিল। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার সময় স্কুল ছুটি হয়ে গিয়েছিল এবং ওই সময় শিক্ষকদের কক্ষের সংলগ্ন যে জায়গায় বিমানটি পড়েছিল, ওই জায়গায় বাচ্চারা জড়ো হয়েছিল এবং তাদের সঙ্গে হয়তো কিছুসংখ্যক অভিভাবকও ছিলেন।
বিকেলে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন দগ্ধদের খোঁজখবর নিতে যান অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারাও বার্ন ইনস্টিটিউটে যান। পরে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, বার্ন ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চিকিৎসার প্রয়োজনে যত কিছু দরকার, তারা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। তারপরও যদি প্রয়োজন হয়, বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনা হবে।
ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে শনাক্ত ৮ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় দগ্ধ ও আহত আরও দেড় শতাধিক চিকিৎসাধীন আছে।
৩ ঘণ্টা আগেনিম্নচাপ কেটে গেছে। মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকলেও থেমেছে ভারী বর্ষণ। তবে উজানে ভারতের ত্রিপুরায় ভারী বর্ষণ হচ্ছে। এতে বাড়ছে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি। উজানের সেই ঢলে আবার ডুবছে ফেনী। একাধিক ভাঙা বাঁধ দিয়ে গতকাল সোমবার সকাল থেকেই লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।
৩ ঘণ্টা আগে‘মাদ্রাসা থেকে ফিরলেই বাবা কোলে তুলে নিত, আদর করত, টাকা দিত। রাতে বাবার গা ঘেঁষে ঘুমাতাম। এখন আর কেউ আমাকে বাবার মতো আদর করে না। বাবাকে অনেক মিস করি।’ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কথাগুলো বলছিল সাত বছরের তাইবা খাতুন। ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন তাঁর বাবা ইয়াহিয়া আলী।
৩ ঘণ্টা আগেভাগাড় উঁচু হয়ে গেছে পাহাড়ের সমান। সেখানে আর বর্জ্য ফেলার জায়গা নেই। ফলে রাজশাহী শহরের শত শত টন বর্জ্য প্রতিদিনই এলোমেলোভাবে ফেলা হচ্ছে সড়কের পাশে, কৃষিজমিতে এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনেও। এসব বর্জ্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগে