Ajker Patrika

সরকারের কাছে ধান বেচতে এসে কৃষকের পদে পদে খরচ

ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি 
আপডেট : ০২ জুন ২০২৫, ২১: ২৭
সরকারিভাবে সংগ্রহের জন্য ধান মাপা হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত
সরকারিভাবে সংগ্রহের জন্য ধান মাপা হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। এ বছর সরকার সর্বোচ্চ মণপ্রতি ১ হাজার ৪৪০ টাকা মূল্যে ধান কেনায় কৃষকেরা খুশি। কিন্তু কৃষকের এত কষ্টে ধান বেচার উপার্জিত টাকার একটা অংশ লেবার বিল, অফিস খরচ, কসর বাবদ বাড়তি ধান দিতে গিয়ে চলে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে ধান পরিবহনের গাড়িভাড়া তো রয়েছেই। পদে পদে এত খরচ দিয়ে লাভের অর্থ বাড়ি নিয়ে যাওয়া এখন কৃষকের কষ্টের বিষয় হয়ে গেছে।

জানা গেছে, চাঁদপুর সেচ প্রকল্পভুক্ত ফরিদগঞ্জ উপজেলায় এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। গত ২৬ এপ্রিল খাদ্য অধিদপ্তর ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ৬ হাজার টন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। এর জন্য প্রকাশ্যে লটারির মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করা কৃষকদের মধ্য থেকে ২৫২ জনকে নির্বাচিত করা হয়। সরকারিভাবে এবার বোরো ধান কেনার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬ টাকা। বাজারের তুলনায় দাম বেশি হওয়ায় খুশি হন কৃষকেরা।

ধান বেচতে এসে পদে পদে খরচ দিতে গিয়ে কৃষকেরা এখন হতাশ হয়ে পড়ছেন। একজন কৃষকের লটারির মাধ্যমে ৩ টন ধান (৭৫ মণ) বেচে সরকারি মূল্যে দাম ১ লাখ ৮ হাজার টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও কৃষককে লেবার খরচ হিসেবে প্রতি মণে ৩০ টাকা দিতে হচ্ছে। অর্থাৎ ৭৫ মণে ২ হাজার ২৫০ টাকা। খাদ্য অফিসে অলিখিত খরচ হিসাবে টনপ্রতি ১০০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। কসর হিসেবে প্রতি মণে ২ কেজি বেশি করে দিতে হচ্ছে কৃষককে। অর্থাৎ ৭৫ মণে ১৫০ কেজি। কেজিতে ৩৬ টাকা করে ১৫০ কেজি ধানের দাম ৫ হাজার ৪০০ টাকার ধান বেশি দিতে হচ্ছে গুদামে। সব মিলিয়ে সরকারি মূল্য মণপ্রতি ১৪৪০ টাকা হলে কৃষক সব খরচ বাদ দিয়ে পান ১২৪০ টাকা। এ ছাড়া কৃষককে বাড়ি থেকে খাদ্যগুদাম পর্যন্ত গাড়িভাড়া বাবদ একটি বড় অঙ্কের অর্থ গুনতে হচ্ছে।

লটারির মাধ্যমে প্রথম হওয়া ফারুক খান বলেন, ‘আমার এক নামে ৩ টন ধান বিক্রি করতে গেলে প্রতি মণে লেবার খরচ ৩০ টাকা করে দিতে হয়েছে। অফিস খরচ বাবদ প্রতি টন ধান বাবদ ১ হাজার করে ৩ হাজার টাকা খরচ নিয়েছে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য কৃষকেরাও বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জামাল উদ্দিনের কারণে কৃষকের এমন খরচ করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি গোপন সিন্ডিকেটের সঙ্গে মিল করে অনেক কিছুই করছেন। অফিস খরচ নিচ্ছেন। ধানের আর্দ্রতা নিয়ে কৃষকদের হয়রানি করছেন। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ফরিদগঞ্জ খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জামাল উদ্দিন তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, লেবার খরচ নেওয়ার বিষয়টি সত্য। এ ছাড়া অন্য কোনো কিছু নেই। কোনো সিন্ডিকেট নেই।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, শ্রমিক বাবদ মণপ্রতি ৩০ টাকা করে নেওয়া হয়। শ্রমিকেরা কোনো বিল পান না বলেই এ খরচ নেওয়া হয়। এ ছাড়া বস্তার ওজন ও কসর বাবদ বাড়তি ১ কেজিসহ মোট ৪২ কেজি ওজন মাপা হয়। এ ছাড়া আর কোনো টাকা নেওয়া হয় না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুলতানা রাজিয়া বলেন, ‘বিষয়টি সবেমাত্র জেনেছি, খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত