Ajker Patrika

জাতীয় পরিচয়পত্র নেই,করোনার টিকাও নিতে পারছেন না তাঁরা

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২১, ০২: ৫৬
জাতীয় পরিচয়পত্র নেই,করোনার টিকাও নিতে পারছেন না তাঁরা

নগরের অক্সিজেন নয়াহাট এলাকার হিজড়া পল্লি এলাকায় থাকেন অনামিকা চৌধুরী (৩২)। ২০১৩ সালে রংপুর থেকে আসেন এই পল্লিতে। একই বছরে গাজীপুর থেকে এই পল্লিতে আসেন সুপ্তা রানী (২৮)। একইভাবে নগরের সদরঘাট থেকে আসেন রিপন (৩০)। তাঁরা প্রত্যেকেই বহুবার চেষ্টা করেও জাতীয় পরিচয়পত্র পাননি। পরিচয়পত্র না থাকায় অনেক নাগরিক সুবিধা থেকেও বঞ্চিত তাঁরা। এখন কোভিড টিকাও নিতে পারছেন না।

শুধু অনামিকা, সুপ্তা কিংবা রিপন নন, চট্টগ্রাম নগর ও উপজেলা মিলিয়ে ৯৫ শতাংশ তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। 
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জন্মসনদ, বাবা-মায়ের নাম ব্যবহার করা নিয়ে জটিলতার কারণে এখনো তাঁরা জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে পারছেন না। অথচ ২০১৯ সালে স্বতন্ত্র পরিচয়ে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে ভোটাধিকার দিয়েছে সরকার। 

অনামিকা চৌধুরী এ প্রতিবেদককে বলেন, বিদ্যুৎ বিলের কপি, মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র, না হয় জমির দলিল, জন্মসনদ আর কমিশনার সার্টিফিকেট-এত কিছু কীভাবে জোগাড় করব। কারণ আমরা- তো ছোটকালেই ঘর ছেড়ে চলে এসেছি বা বের করে দিয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও আমরা নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি না। 
 
পথচলা ফাউন্ডেশনের সিইও মানিষা মিম নিপুণও একজন ট্রান্সজেন্ডার। তিনি এই জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করছেন দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি সময় ধরে। নাম জটিলতার কারণে তাঁরও পাসপোর্ট করা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি কীভাবে তিনি পাসপোর্ট পেতে পারেন এ বিষয়ে তথ্য সহায়তা চেয়ে একটি ফেসবুক গ্রুপে পোস্টও দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। 

তিনি বলেন, ছেলে হিসেবে জন্ম তাঁর। তখন মা-বাবা তাঁর নাম রাখেন জাহিদুল ইসলাম আল আজাদ। ১৩ বছর বয়সের পর বুঝতে পারেন তাঁর শারীরিক পরিবর্তন। তিনি নিজেকে মেয়ে হিসেবে পরিচয় দিতে চান। নিজেই নিজের নাম রাখেন মানিষা মিম নিপুণ। 

মানিষা মিম নিপুণ নামে পাসপোর্ট করতে গেলে পাসপোর্ট অফিস থেকে তাঁকে জানানো হয়, জন্মনিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম জাহিদুল ইসলাম আল আজাদ। তাঁকে ওই নামেই পাসপোর্ট করতে হবে।

মানিষা মিম নিপুণ আরও বলেন, জেন্ডার সচেতনতায় কাজ করায় আন্তর্জাতিক এনজিও থেকে বিভিন্ন কর্মশালায় অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ পেলেও পাসপোর্ট না থাকায় সেগুলোতে অংশ নিতে পারি না। আমি এই জন্য কিছুদিন আগে পাসপোর্ট করতে গেলে তাঁরা আমার আগের জাহিদুল ইসলাম আল আজাদের নামে পাসপোর্ট করতে বলেছেন। কিন্তু আমি মেয়ে হিসেবে অর্থাৎ মানিষা মিম নিপুণ নামে করতে চাই।

তৃতীয় লিঙ্গের এই জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করা পথচলা ফাউন্ডেশনের কিছু তথ্য তুলে ধরেন মানিষা মিম নিপুণ। শুধু তাঁর কাছেই থাকা তথ্য অনুযায়ী কতজন টিকা নিতে পারছেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু পথচলা ফাউন্ডেশনের আওতায় ১ হাজার ২০০ ট্রান্সজেন্ডার রয়েছেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও তার আশপাশে এলাকা মিলে প্রায় ৫ হাজার ট্রান্সজেন্ডার। এর মধ্যে ৩০-৫০ বছর বয়সী ৬০ শতাংশ, ১৮-৩০ বছর বয়সী ২০ শতাংশ বাকিরা ১৮ বছরের নিচে। এদের ৯৫ ভাগের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। তাই করোনার টিকা নিতে পারেননি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ট্রান্সজেন্ডারের ক্ষেত্রে শর্ত শিথিলের সর্বোচ্চ চেষ্টা করি আমরা। তবে ন্যূনতম ভোটার হতে একজন ব্যক্তির জন্মসনদ, মা-বাবার পরিচয়পত্র, চেয়ারম্যান অথবা কমিশনারের সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়। তাদের ক্ষেত্রেও সেগুলো লাগবে। এগুলো ছাড়া কাউকে ভোটার করতে পারি না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত