Ajker Patrika

মারধরে অসুস্থ মাদ্রাসাছাত্র ১ সপ্তাহ বিনা চিকিৎসায় বন্দী থাকার পর উদ্ধার

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৮: ৩৫
Thumbnail image

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ৯ বছরের এক মাদ্রাসাছাত্রের ওপর নির্যাতনের খবর পাওয়া গেছে। নির্যাতনে অসুস্থ ছাত্রের শরীরের ক্ষতস্থানে লতাপাতা পিষে লাগিয়ে সপ্তাহখানেক বিনা চিকিৎসায় মাদ্রাসায় বন্দী করে রাখা হয়। খবর পেয়ে গতকাল শনিবার রাতে জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম মাস্টার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিনের সহায়তায় শিশুটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। 

এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক আমজাদ হোসেনকে আটক করে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। পরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে তাঁর বিরুদ্ধে জোরারগঞ্জ থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।

আজ রোববার শিক্ষক আমজাদ হোসেনকে আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করে পুলিশ। পরে আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আমলে নিয়ে আদালতের দেওয়া নির্দেশনা মোতাবেক তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। 

এ বিষয়ে রেজাউল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হেফজ শাখার এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহত করার বিষয়টি জেনে আমরা তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু আঘাত এত গুরুতর ছিল, তা বুঝতে পারিনি।’ 

শিশু আব্দুল্লা আল নাঈম (৯) উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের আবুর হাট ভূইয়া গ্রামের মো. আব্দুল মোতালেবের ছেলে। সে উপজেলার জোরারগঞ্জ থানাধীন জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের ইমামপুর গ্রামের দারুস সালাম মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র। 

শিশু আব্দুল্লা আল নাঈমের মা বিবি আয়শা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে হঠাৎ করে নাঈম কানে ব্যথা অনুভব করলে সে বাড়িতে আসার জন্য শিক্ষকের কাছে ছুটির আবেদন করে। ছুটি না দেওয়ায় পরদিন শনিবার সকালে মাদ্রাসা থেকে না বলে বাড়িতে আসার চেষ্টা করে। বিষয়টি জানতে পেরে হেফজ বিভাগের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক আমজাদ হোসেন কয়েকজন শিক্ষার্থী পাঠিয়ে রাস্তা থেকে নাঈমকে ধরে নিয়ে যায়। পরে মাদ্রাসার কক্ষের ভেতরে নিয়ে দফায় দফায় নির্যাতন করলে নাঈম অজ্ঞান হয়ে যায়।’ 

বিবি আয়শা বলেন, ‘আমার ছেলেকে রক্তাক্ত অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় অনাহারে এক সপ্তাহ ধরে রুমে বন্দী করে রাখা হয়। শুক্রবার সকালে (১০ ফেব্রুয়ারি) মাদ্রাসায় ছেলেকে নির্যাতনের খবর শুনে দেখতে যাই। ছেলেকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখে চিকিৎসার জন্য নিতে চাইলে বাধা দেন মাদ্রাসার শিক্ষকেরা। পরে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম মাস্টারের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহফুজা জেরিন এসে নাঈমকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।’ 

জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম মাস্টার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিশুটিকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানায়। নির্যাতনের পর মুমূর্ষু অবস্থায় এক সপ্তাহ উপযুক্ত চিকিৎসা না দিয়ে গাছের লতাপাতা পিষে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে খাবার না দিয়ে ১ সপ্তাহ বন্দী করে রাখে।’ এ নির্মমতার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন এলাকাবাসী। 

জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আসামিকে চালান করে ১৬৪ জবানবন্দি নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আমলে নিয়ে আদালতের দেওয়া নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত