Ajker Patrika

রাতে লঞ্চে তুলে দিয়ে সকালে খবর পেলেন বাবা আর নেই

আল-আমিন রাজু, ঝালকাঠি থেকে
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২১, ২৩: ১৬
Thumbnail image

আব্দুর রাজ্জাক। বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের সোনালী মাদ্রাসার গণিত শিক্ষক ছিলেন। শাসন আর ভালোবাসা দিয়ে শিক্ষার্থীদের শেখাতেন গণিত। দীর্ঘ শিক্ষকজীবনে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার মানুষটি বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চের আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেলেন। 

অসুস্থতার কারণে চিকিৎসা নিতে ঢাকায় ছেলের কাছে এসেছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। কিন্তু এই যাত্রাই যে শেষ যাত্রা হবে কে জানত!

আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে আহসান হাবীব রানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাবাকে ডাক্তার দেখিয়ে গতকাল ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে তুলে দিয়েছিলাম। বাড়ি পৌঁছে আমাকে ফোন দিতে বলেছিলাম। কিন্তু খবর পাওয়া গেল, বাবা যে লঞ্চে গেছেন, সেই লঞ্চে আগুন লেগেছে। সকালে আসে বাবার মৃত্যুর খবর!’

রানা বলেন, ‘নিজে গিয়ে লঞ্চে তুলে দিয়ে আসছি। কে জানত এই বিদায়ই শেষ বিদায় হবে! আমার বাবা একেবারে চলে গেল।’

বাবার মৃত্যুর খবরে ঝালকাঠি পৌঁছেছেন রানা। বাবার মরদেহ এখনো বুঝে পাননি। মরদেহের অপেক্ষায় আছেন ঝালকাঠি হাসপাতালের ডোমঘরের সামনে। জানেন না কখন বুঝে পাবেন মরদেহ।

রানা বলেন, ‘সরকার এখন কী করবে? আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিতে পারবে? আমাকে ১ কোটি টাকা হয়তো দিতে পারবে, আমার বাবাকে তো আর ফিরিয়ে দিতে পারবে না। এ ধরনের দুর্ঘটনা যেন না ঘটে, সেটা নিশ্চিত করুক। এ ঘটনায় যদি কারও অপরাধ থাকে, তাহলে তাদের বিচার করুক।’

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিন তলাবিশিষ্ট লঞ্চটি পাঁচ শতাধিক যাত্রী নিয়ে সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায়। রাত ৩টার দিকে ঝালকাঠির গাবখানের কাছাকাছি সুগন্ধা নদীতে লঞ্চটিতে আগুন ধরে যায়। পরে ঝালকাঠি সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের দিয়াকুল এলাকায় নদীর তীরে লঞ্চটি ভেড়ানো হয়।

আগুন লাগার পরই প্রাণ বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে যাত্রীদের অনেকে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ট্রলার নিয়ে লঞ্চের আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন।

ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণকক্ষ জানিয়েছে, রাত ৩টা ২৮ মিনিটে তাঁরা অগ্নিকাণ্ডের খবর পান। কর্মীরা ৩টা ৫০ মিনিটে সেখানে পৌঁছে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিটের চেষ্টায় ভোর ৫টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। স্থানীয় বাসিন্দা, কোস্ট গার্ড ও পুলিশ সদস্যরাও উদ্ধার অভিযানে সহযোগিতা করেন।

এখন পর্যন্ত ৩৯ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে প্রশাসন। সংখ্যাটি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগুন থেকে বাঁচতে যারা নদীতে লাফ দিয়েছিল তাদের অনেকে এখনো নিখোঁজ আছে।

বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক কামাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘লঞ্চটির ইঞ্জিনরুম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।’ এ ঘটনায় সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত