Ajker Patrika

উদ্বোধনের আগেই ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ব্রিজের গার্ডার ভেঙে নদীতে

প্রতিনিধি, উজিরপুর (বরিশাল) 
উদ্বোধনের আগেই ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ব্রিজের গার্ডার ভেঙে নদীতে

প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা উজিরপুরে কঁচা নদীতে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ব্রিজের গার্ডার ভেঙে পড়েছে। গতকাল শনিবার দুপুর ২টার দিকে উপজেলার সাতলা চৌমোহনী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ব্রিজটির মাঝ বরাবর ৪৫ মিটার দৈর্ঘ্যের দুটি গার্ডার বিকট শব্দে ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। এ সময় একজন শ্রমিক আহত হয়েছেন। 

অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্রিজ নির্মাণকাজ বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে গার্ডার স্থাপন করতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ কারণে এরই মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিল আটকে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফ মো. জামাল উদ্দিন। 

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, গতকাল দুপুর ২টার দিকে বিকট শব্দে ব্রিজের দুটি গার্ডার ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। গার্ডার ভাঙার শব্দে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। 

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কঁচা নদীর ওপর ৬ হাজার ৩০০ মিটার চেইনেজে ৪০৫ মিটার পিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এলজিইডি'র তত্ত্বাবধানে ব্রিজ নির্মাণকাজ বাস্তবায়নের কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওটিবিএল। চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুটি গার্ডার ভেঙে পড়ায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এটি হস্তান্তর করতে পারবে কিনা তা নিয়ে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। 

ওটিবিএল কোম্পানির প্রজেক্ট ম্যানেজার সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বলেন, এর আগে প্রতিটি পিলারের মাঝে ৪৫ মিটার করে ৫টি গার্ডার স্থাপন করা হয়েছিল। মাঝ বরাবর ক্রেনের মাধ্যমে একটি গার্ডার সরাতে গিয়ে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দুটি গার্ডার ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। এটি দুর্ঘটনা ছাড়া আর কিছুই নয়। 

উপজেলা প্রকৌশলী মইদুল ইসলাম বলেন, গার্ডার দুটি ভেঙে পড়ার পেছনে এলজিইডি কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতি নেই। এটার সম্পূর্ণ দায়ভার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। নিয়ম অনুযায়ী গার্ডার ঢালাই থেকে শুরু করে লিফটিং অ্যান্ড শিফটিং করার সময় অবশ্যই বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। তাদের উপস্থিতিতেই গুরুত্বপূর্ণ এ কাজগুলো করতে হবে। নির্মাণকাজের দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী (এসও) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। এ কারণে তিনি সেখানে যাওয়া বা খোঁজ খবর রাখতে পারেননি। 

নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফ মো. জামাল উদ্দিন বলেন, গার্ডার ভেঙে পড়ার ঘটনা জানতে পেরে আমি নিজেই খোঁজ খবর নিয়েছি। কাজের মান নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। মূলত ঠিকাদারের লোকেদের অসাবধানতার কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। গার্ডার শিফটিং করতে গিয়ে জ্যাক স্লিপ করে অপর একটি গার্ডারের ওপর পড়ে। এ জন্য দুটি গার্ডারই ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। 

নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, এ ঘটনা ঘটতেই পারে। তবে এটা ঘটবে তা আমাদের কাম্য ছিল না। কেননা একটি গার্ডার বানাতে অন্তত এক মাস সময় লেগে যায়। সেটা ভেঙে গেলে পুনরায় এক মাস পিছিয়ে যেতে হয়। দুটি গার্ডার ভাঙার কারণে আগামী ডিসেম্বরে নির্ধারিত সময়ে ব্রিজটির কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না। এখন সময় বর্ধিত করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। 

ব্রিজটি প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে উদ্বোধন করানো হবে না জানিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফ মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ব্রিজটির এপ্রোজে সমস্যা আছে। আর ত্রুটিপূর্ণ একটি ব্রিজ আমরা প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে উদ্বোধন করাতে চাই না। তা ছাড়া নির্মাণকাজ শেষ করতে সময়ও লাগবে। তারপরেও নির্মাণকাজ শেষে মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর করা হবে। তাঁরাই উদ্বোধনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। 

উজিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বাচ্চু বলেন, ব্রিজ ভেঙে পড়েছে এমন খবর আমিও শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত