Ajker Patrika

জেলেনস্কি: পর্দার স্কুলশিক্ষক থেকে বিপদগ্রস্ত প্রেসিডেন্ট

জেলেনস্কি: পর্দার স্কুলশিক্ষক থেকে বিপদগ্রস্ত প্রেসিডেন্ট

‘কখনো সময় আসে, জীবন মুচকি হাসে’—কবীর সুমনের এই গানের মতো কখনো কখনো জীবন মুচকি হাসির বদলে রূঢ় করুণ বাস্তবতার মুখোমুখিও দাঁড়ায়। ঠোঁটের কোনা থেকে মুছে যায় হাসি। ভলোদিমির জেলেনস্কির জীবন থেকে এই মুহূর্তে হারিয়ে গেছে হাসি। অথচ একসময় কী দম ফাটানো হাসিতেই না তিনি মাতিয়ে রাখতেন সবাইকে! 

সংঘাতপূর্ণ ইউক্রেনের নানা স্থানে এখন চোখে পড়ছে দাউ দাউ আগুন। বোমা আর গুলির মধ্যে রাতদিন কাটছে ইউক্রেনীয়দের। এর মধ্যেই গুজব রটেছিল জেলেনস্কি পালিয়েছেন কিয়েভ ছেড়ে। যদিও পরে ভিডিও করে জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি আছেন কিয়েভেই। ইউক্রেন ছেড়ে কোথাও পালাবেন না তিনি। 

অবশ্য জেলেনস্কি নিজেই বলেছিলেন, ‘আমি শত্রুদের ১ নম্বর টার্গেট। দ্বিতীয় টার্গেট আমার পরিবার। যেকোনো সময় তারা আমাকে মেরে ফেলবে।’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাঁকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার। উত্তরে জেলেনস্কি গোলাবারুদ ও অস্ত্র চেয়েছিলেন। 

তারও মাস দুয়েক আগে যখন রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্তে লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন করল, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘যদি রাশিয়া অযাচিত আক্রমণ করে বসে, আমরা পালাব না। আপনারা আমাদের পিঠ দেখবেন না, মুখ দেখবেন।’ 

এসব বক্তব্যের কারণে বর্তমানে পশ্চিমাসহ পুরো বিশ্বের কাছেই ইউক্রেনের ‘বিপদগ্রস্ত’ প্রেসিডেন্ট প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। সাহসিকতা তাঁকে এনে দিয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা। সম্প্রতি এক জরিপে ৯১ শতাংশ ইউক্রেনীয় বলেছেন, তাঁরা জেলেনস্কিকে সমর্থন করেন। 

জনপ্রিয় অবশ্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগেও ছিলেন জেলেনস্কি। জীবিকা নির্বাহ করতেন অভিনয় করে। ইউক্রেনের কিরিভি রিহ শহরের এক ইহুদি পরিবারে জন্ম জেলেনস্কির। পড়াশোনা করেছেন আইন বিষয়ে কিয়েভ ন্যাশনাল ইকোনমিক ইউনিভার্সিটিতে। কিন্তু পেশা গড়েননি আইনে। তরুণ বয়সে নিয়মিত রুশ টিভির কমেডি শোতে দেখা যেত তাঁকে। এই কৌতুকাভিনেতা সর্বশেষ অভিনয় করেছেন ‘সার্ভেন্ট অব দ্য পিপল’ সিরিজে। ওই সিরিজে তিনি ছিলেন এক স্কুলশিক্ষকের ভূমিকায়, যিনি দুর্নীতি সহ্য করেন না। তিনি সেই সিরিজে যে দুর্নীতিবিরোধী বক্তব্য দিয়েছিলেন, তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। ইউক্রেনীয়দের কাছে ঈর্ষণীয় জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। 

সেই জনপ্রিয়তা রাজনীতির মাঠে জেলেনস্কির সঙ্গী হয়। বিপুল ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি। নির্বাচনে ৭৩ দশমিক ২ শতাংশ ভোট তিনি পেয়েছিলেন। এরপর ২০১৯ সালের ২০ মে ইউক্রেনের ষষ্ঠ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন জেলেনস্কি। 

শপথ নেওয়ার পর বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন জেলেনস্কি। বলেছিলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের অফিসে প্রেসিডেন্টের ছবি টাঙানোর দরকার নেই। তার বদলে বাবা-মা কিংবা সন্তানের ছবি টাঙানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর এ পদক্ষেপ ব্যাপক প্রশংসা পায় ইউক্রেনে। 

রাজনীতিকে ধনীদের প্রভাবমুক্ত রাখারও ঘোষণা দিয়েছিল জেলেনস্কির সরকার। রুশপন্থী বিরোধীদলীয় নেতা ভিক্টর মেদভেদচুককে গৃহবন্দী করেছিলেন জেলেনস্কি। মেদভেদচুকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছিল। এরপর জেলেনস্কি একটি আইন প্রণয়ন করেন, যার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোতে ধনীদের অনুদান নিষিদ্ধ করা হয়। 

এসবে ৪৪ বছর বয়সী জেলেনস্কির জনপ্রিয়তার পালেও হাওয়া লাগে জোরেশোরে। এরপরই এল রাশিয়ার সঙ্গে সংকট। রাজনীতিতে অভিজ্ঞতাশূন্য এক ‘নবীন’ রাজনীতিককে এবার যুঝতে হচ্ছে বিশ্ব রাজনীতির ঝানু মোড়ল ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে! যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা বিশ্ব মুখে পাশে থাকার কথা জানালেও জেলেনস্কিকে এরই মধ্যে আক্ষেপ করে বলতে হয়েছে, ‘রুশ আমাদের ওপর বর্বর হামলা চালাচ্ছে। আর পশ্চিমারা চেয়ে চেয়ে দেখছে। তারা আমাদের বাঘের মুখে একা ছেড়ে দিয়েছে।’

ভলোদিমির-জেলেনস্কিজেলেনস্কির সমালোচনাও আছে। ২০২১ সালে গাজা উপত্যকায় হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল। সেই সময় ইসরায়েলকেই সমর্থন করে টুইট করেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ফিলিস্তিন নয়, এই যুদ্ধে ইসরায়েলই ভিকটিম। এখন জেলেনস্কি যখন ক্ষণে ক্ষণে নিজেকে ‘ভিকটিম’ দাবি করছেন, তখন অনেকেই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে তাঁর সেই টুইট। 

সমালোচনা আছে আরও। ২০২১ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত প্যান্ডোরা পেপারসে নাম এসেছিল ভলোদিমির জেলেনস্কির। প্যান্ডোরা পেপারস নামের নথিতে বিশ্বের প্রভাবশালী সব ধনীর লুকানো সম্পদের তথ্য ছিল। 

সব মিলিয়ে বলাই যায়, ভলোদিমির জেলেনস্কির জীবন রূপালী পর্দার মতোই রঙিন। তফাত হলো, এত দিনের রঙিন দুনিয়ায় এবার যুদ্ধের বিপন্নতা ভর করেছে। সেই বিপদ পেরিয়ে জেলেনস্কি সত্যিকারের নায়ক হতে পারেন কি না, সেটিই এখন দেখার।      

তথ্যসূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট, সিবিএস নিউজ, সিএনএন, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও টাইম ম্যাগাজিন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইউটিউবে ১০০০ ভিউতে আয় কত

বাকৃবির ৫৭ শিক্ষকসহ ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারে সরকার, ভয়ে কলকাতায় দিলীপ কুমারের আত্মহত্যা

স্ত্রী রাজি নন, সাবেক সেনাপ্রধান হারুনের মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে না: পুলিশ

সাবেক সেনাপ্রধান হারুন ছিলেন চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসে, দরজা ভেঙে বিছানায় মিলল তাঁর লাশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত