Ajker Patrika

নিউইয়র্ক টাইমসের নিবন্ধ /মেদভেদেভের মন্তব্য আর চাকরির ডেটায় খেপে গিয়ে ট্রাম্প দেখালেন, কতটা নাজুক প্রেসিডেন্ট তিনি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২৫, ০০: ২৬
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরের প্রথমার্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির গতি কিছুটা কমে এলেও তা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। কিন্তু গত শুক্রবার প্রকাশিত জুলাই মাসের পরিসংখ্যানে চাকরির হার ব্যাপক কম দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই পরিসংখ্যানকে ‘জাল’ দাবি করে এর জন্য দায়িত্বশীল সরকারি সংস্থার প্রধানকে বরখাস্তও করেছেন।

একসময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন দিমিত্রি মেদভেদেভ, কিন্তু তিনি ক্রেমলিনের পছন্দের এক অনলাইন ট্রল আর কিছু নন। তবু পারমাণবিক যুদ্ধ নিয়ে তাঁর উসকানিমূলক পোস্টে ক্ষিপ্ত হয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখালেন ট্রাম্প। ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সহযোগিতা করতে ‘অনিচ্ছুক’ বলে আগে থেকে বিরক্ত ট্রাম্প এবার এমন প্রতিক্রিয়া দেখালেন, যেন কোনো প্রকৃত পরাশক্তির সঙ্গে সংঘর্ষ আসন্ন! সাবমেরিনগুলোকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন তিনি।

মাত্র কয়েক দিন আগেই ‘গলফ সফর’ শেষ করে যখন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরলেন, তখনো রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষমতা নিয়ে ট্রাম্পকে বেশ উচ্ছ্বসিত দেখা যাচ্ছিল। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যাপক কাটছাঁট থাকলেও নির্জীব কংগ্রেস তাঁর নতুন অভ্যন্তরীণ নীতিমালার পক্ষে ভোট দিয়েছে। ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকির মুখে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাণিজ্য চুক্তিতে রাজি হয়েছে। এতে উৎসাহিত হয়ে ট্রাম্প এমন শুল্কনীতি এগিয়ে গেছেন, যা বৈশ্বিক অর্থনীতির কাঠামো পাল্টে দিতে পারে।

কিন্তু গতকাল শুক্রবার নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে এমন দুটি বিষয়ে সম্মুখীন হয়ে ট্রাম্প এমন প্রতিক্রিয়া দেখালেন, যাতে মাত্রাতিরিক্ত তীব্রতা ও ধৈর্যহীনতা প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু এমন ঘটনা নতুন নয়, বরং ধারাবাহিকতারই অংশ। আগেও দেখা গেছে ট্রাম্পের ইচ্ছার কাছে নত না হলেই তাঁদের প্রতি তাঁর সহনশীলতা কমে যায়।

ট্রাম্পের সুদের হার কমানোর দাবিকে অগ্রাহ্য করে তাঁর তীব্র সমালোচনা ও লাগাতার অপমানের শিকার হয়েছেন ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ার জেরোম পাওয়েল। এমনকি এপস্টাইন ফাইল প্রকাশের দাবি থেকে সরে না আসায় নিজের ঘনিষ্ঠ সমর্থকদেরও ছেড়ে দেননি ট্রাম্প।

কিন্তু শুক্রবারের প্রতিক্রিয়া ছিল আরও বিস্ময়কর। কারণ, এর সঙ্গে জড়িত ছিল দুটি বড় ইস্যু—রাশিয়া ও অর্থনীতি।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রথম দিনেই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারবেন—এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু পুতিন সেই প্রচেষ্টায় সাড়া না দিয়ে বরং নতুন হামলা চালাচ্ছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার হুমকি উপেক্ষা করছেন। এতে ক্ষিপ্ত ট্রাম্প শুক্রবার এক অনলাইন ট্রলের উত্তেজক পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় ‘সামরিক কমান্ড’ ব্যবহার করে বসলেন।

নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্প লেখেন, ‘এই বোকামি ও উসকানিমূলক বক্তব্য যদি শুধুই কথা না হয়, তাহলে সাবমেরিনগুলোকে ‘সংলগ্ন অঞ্চলে’ মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছি।’

পাশাপাশি তিনি লেবার স্ট্যাটিস্টিকস ব্যুরোর প্রধান এরিকা ম্যাকএন্টারফারকে বরখাস্ত করেন। ট্রাম্পের দাবি, তাকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করতেই ম্যাকএন্টারফার ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ পরিসংখ্যান দিয়েছেন।

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন আর বোল্টন বলেন, ‘আমি মনে করি, তিনি (ট্রাম্প) নিজেকে ‘জি হুজুর’ নারী-পুরুষদের দিয়ে ঘিরে থাকতে পছন্দ করেন। সাম্প্রতিক ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হলো, তিনি প্রেসিডেন্ট পদে থাকার উপযুক্ত নন। এমন পরিস্থিতিতে কোনো প্রেসিডেন্টের এমন আচরণ কাম্য নয়।’

২০২৪ সালে উভয় দলীয় সমর্থনে নিয়োগপ্রাপ্ত ম্যাকএন্টারফারকে বরখাস্ত করার কারণ হিসেবে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, তিনি ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পরিসংখ্যান বিকৃত করেছেন। তাঁর দাবি, অর্থনীতিবিদেরাও সর্বসম্মতিক্রমে তা অস্বীকার করেছেন।

গতকাল শুক্রবার হোয়াইট হাউস ত্যাগ করার সময় ট্রাম্প বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, সংখ্যাগুলো জাল, যেমনটা নির্বাচনের আগেও ছিল। তাই আপনারা দেখলেন, আমি কী করলাম? আমি তাকে বরখাস্ত করলাম। এবং আমি যা করলাম, সেটাই সঠিক কাজ।’

এর আগেও ট্রাম্প বিভিন্ন পরিসংখ্যান দপ্তরের স্বাধীনতা খর্ব করেছেন; ন্যায়নিষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করেছেন এবং ‘রাজনৈতিকভাবে অস্বস্তিকর’ তথ্য প্রকাশে বাধা দিয়েছেন।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে মনোনীত ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিস্টিকসের সাবেক প্রধান উইলিয়াম ডব্লিউ বিচ ট্রাম্পের বরখাস্তের এই সিদ্ধান্তকে ‘ভিত্তিহীন’ এবং ‘বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত’ আখ্যা দেন।

এক যৌথ বিবৃতিতে বিচ বলেন, ‘এটি ফেডারেল পরিসংখ্যান ব্যবস্থার স্বাধীনতা ও সততার ওপর ট্রাম্পের নজিরবিহীন আক্রমণকে আরও একধাপ এগিয়ে নিল। প্রেসিডেন্ট এমন ব্যক্তিকে দোষারোপ করছেন, যার একমাত্র পছন্দমতো পরিসংখ্যান না দেওয়া।’

এর আগে মেদভেদেভের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়েও অবিমৃশ্যকারিতা দেখান ট্রাম্প। শুক্রবার সকালে সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের পারমাণবিক হামলার সক্ষমতা তুলে ধরে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বলেন, ট্রাম্প যেন টিভি সিরিজ ‘দ্য ওয়াকিং ডেড’-এর মতো পরিস্থিতি কল্পনা করেন।

এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘শব্দ খুব গুরুত্বপূর্ণ। এবং তা প্রায়ই অনিচ্ছাকৃত পরিণতি ডেকে আনতে পারে। আমি আশা করি, এবার তা হবে না।’

কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ‘আরও সংযত হওয়ার’ পরামর্শ দিয়ে জন বোল্টন বলেন, ‘তিনি হয়তো বুঝতেই পারছেন না তিনি কী করছেন। তার পক্ষে এমন উগ্র কথা বলা এতটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে যে কৌশলগত পরিণতির কথা ভাবার ক্ষমতাই হারিয়েছেন তিনি।’

বোল্টন আরও বলেন, ট্রাম্পের চারপাশে এমন উপদেষ্টারা ঘিরে থাকেন, যাঁরা তাঁর মর্জির বিরোধিতা করেন না—তাতে কোনো প্রতিরোধ থাকছে না। বাস্তবতা ট্রাম্পকে নিরস্ত করতে পারে না। মুখে যা আসে, তিনি তা-ই বলেন।’

তবে ট্রাম্পের সমর্থকেরা বলছেন, তিনি ঠিক সেই কাজই করছেন, যা নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন—ক্ষমতা ব্যবহার করছেন এবং বিশ্বস্ত সহযোগীদের নিয়ে তাঁর ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন। তাঁদের মতে, জনসমক্ষে সরাসরি কথা বলার ক্ষেত্রে তাঁর দ্বিধাহীনতা ‘আমেরিকানদের কাছে প্রশংসনীয়’।

কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প বারবার ফেডারেল সরকারের বিভিন্ন শক্তিকে তাঁর ব্যক্তিগত বিরোধ নিষ্পত্তিতে ব্যবহার করছেন।

এই সপ্তাহের শুরুতে ট্রাম্প ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন, যা সাধারণত কূটনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপের মাঝামাঝি স্তরের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সেই বিচারক ট্রাম্পের মতাদর্শিক মিত্র ও ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করছিলেন।

বলসোনারো ২০২২ সালের নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, আদালত ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চেয়েছিলেন এবং সেনাবাহিনীকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। পরে তাঁর সমর্থকেরা ব্রাজিলের রাজধানীতে সরকারি ভবনে হামলা চালান, যা যুক্তরাষ্ট্রে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল হামলার স্মৃতি ফিরিয়ে আনে।

ফেড চেয়ার পাওয়েলকে আক্রমণ করে ট্রাম্প দাবি করেন, ফেডারেল রিজার্ভ ভবনের ‘ব্যয়বহুল সংস্কার’ ভুল পথে পরিচালনা করছেন পাওয়েল। তবে সম্প্রতি ট্রাম্প যখন ওই ভবনে গিয়ে বক্তব্য দেন, তখন পাওয়েল জনসমক্ষে প্রেসিডেন্টের উপস্থাপিত ব্যয়সংক্রান্ত তথ্য চ্যালেঞ্জ করেন, যা ছিল তাঁর একধরনের নীরব প্রতিবাদ।

শুক্রবার কর্মসংস্থানের নতুন পরিসংখ্যানে ‘ট্রাম্পের আমলে অর্থনীতি মন্থর’ গতি ফুটে ওঠার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট আবারও পাওয়েলকে পদত্যাগের আহ্বান জানান।

(নিউইয়র্ক টাইমসের হোয়াইট হাউস সংবাদদাতা জোলান কান্নো-ইয়াংসের প্রতিবেদন থেকে অনূদিত)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাবিতে ‘তুর্কি এনজিও সমর্থিত’ সংগঠনের ‘বৃহত্তর বাংলাদেশ’ মানচিত্রে ভারতের অংশ, বললেন জয়শঙ্কর

কালো জাদুর অভিযোগে মবের তাণ্ডব, এক পরিবারে পাঁচজনকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা

খিলগাঁওয়ে পুরি-শিঙাড়া বিক্রেতাকে পিটিয়ে হত্যা

ফ্লাইটে অসুস্থ ব্যক্তিকে সহযাত্রীর চড়, তারপর থেকে তিনি নিখোঁজ

সাপের বিষে তৈরি যে মদ পাওয়া যায় এশিয়ার বিভিন্ন দেশে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত