Ajker Patrika

পূর্ব আফ্রিকায় অস্ত্র সরবরাহে প্রভাব বাড়ছে ব্রিকসের

আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩: ৫৮
পূর্ব আফ্রিকায় অস্ত্র সরবরাহে প্রভাব বাড়ছে ব্রিকসের

পূর্ব আফ্রিকায় ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর অস্ত্র সরবরাহের প্রতিযোগিতা চলছে জোরেশোরে। ২০২১ ও ২০২২ সালে রাশিয়ার অস্ত্রের সবচেয়ে বড় বাজার ছিল উগান্ডা ও রুয়ান্ডা। আর ইথিওপিয়া ও তানজানিয়ার সামরিক শক্তির প্রধান উৎস চীন ছিল। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিপ্রি) অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে। 

গত ২২-২৪ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনের ঠিক আগে সিপ্রির প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, অস্ত্র সরবরাহে আধিপত্য বিস্তারকারী প্রধান দুই দেশ হচ্ছে রাশিয়া ও চীন। কেবল ব্রিকস নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্র আমদানিকারক দেশ ভারত। 

প্রতিবেদনে ২০০৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ব্রিকস জোটের দেশ ব্রাজিল, রাশিয়া ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার অস্ত্র সরবরাহের গতিধারা খুঁজে বের করার চেষ্টা হয়েছে। এই জোটে আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে আরও ছয়টি দেশ। সেই দেশগুলোর সঙ্গে ব্রিকসের প্রথম পাঁচটি দেশের অস্ত্র সরবরাহের প্রবণতা খতিয়ে দেখেছে সিপ্রি। গবেষণা সংস্থাটির তথ্যানুসারে, ব্রিকসের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বাড়ছে। গত ১৪ বছর ধরে ভারতের কাছে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র সরবরাহ করেছে রাশিয়া।

তবে অস্ত্র রপ্তানির ক্ষেত্রে রাশিয়ার প্রভাব আগের চেয়ে বেশ কমেছে বলে সিপ্রির গবেষণায় উঠে এসেছে। ২০০৮-১২ সাল পর্যন্ত বিশ্বে রাশিয়ার অস্ত্র রপ্তানির হার ৭৮ শতাংশ থাকলেও ২০১৮-২০২২ মেয়াদে তা কমে ৪৫ শতাংশে নেমেছে। কারণ, এই লড়াইয়ে যোগ দিয়েছে ফ্রান্স, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। সিপ্রি আরও জানায়, রাশিয়া থেকেই সবচেয়ে বেশি অস্ত্র আমদানি করে চীন। ২০০৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্রের বাজার ছিল চীন। তবে অস্ত্র আমদানির ওপর থেকে চীনের নির্ভরশীলতা কমছে। কারণ চীনের অস্ত্রশিল্প প্রসারিত হচ্ছে। 

আগ্নেয়াস্ত্র আমদানির সূচকে বিশ্বের এক নম্বর দেশ ভারত। এই তালিকায় চীন তিন নম্বরে। ব্রিকসের অন্যান্য দেশ অবশ্য এই তালিকার নিচের দিকে। ব্রাজিল ৩৬তম, দক্ষিণ আফ্রিকা ৫৫তম এবং রাশিয়া আছে ৬৩তম নম্বরে। রপ্তানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই রাশিয়ার অবস্থান। এই তালিকার ৫ নম্বর নামটি চীনের। ভারত, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার অস্ত্রশিল্প খুব বেশি বিকশিত নয় বলে দেশগুলোর রপ্তানির পরিমাণও কম। 

পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে ২০২২ সালে রাশিয়ার অস্ত্রের সবচেয়ে বড় বাজার ছিল উগান্ডা। সিপ্রির ট্রেন্ড ইনডিকেটর ভ্যালু অনুসারে, ৫ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের অস্ত্রের মধ্যে ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলারের অস্ত্র ছিল রাশিয়ার। এর বাইরে চেক প্রজাতন্ত্র, ইসরায়েল, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকেও অস্ত্র আমদানি করেছে উগান্ডা।

২০২১ সালে রাশিয়া থেকে ৪ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলারের অস্ত্র আমদানি করেছে রুয়ান্ডা। তুরস্ক থেকে ১ কোটি মার্কিন ডলার ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২ কোটি মার্কিন ডলারের অস্ত্র কিনেছে দেশটি। 

২০২২ সালে চীন থেকে ৩ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের অস্ত্র আমদানি করেছে ইথিওপিয়া। এর আগের বছর তুরস্ক থেকে ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের অস্ত্র আমদানি করেছিল দেশটি। 

২০২১ সালে চীন থেকে ২ কোটি ৯০ লাখ ডলারের অস্ত্র আমদানি করেছিল তানজানিয়া। এ ছাড়া ফ্রান্স থেকে ২ কোটি ৪০ লাখ ডলারের অস্ত্র আমদানি করেছিল দেশটি। 

দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে অস্ত্র আমদানি করে সোমালিয়া ও গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র। পূর্ব আফ্রিকার মধ্যে কেবল কেনিয়া ও দক্ষিণ সুদানই ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো থেকে ২০০৮-২২-এর মধ্যে অস্ত্র আমদানি করেনি। 

ভূরাজনীতিতে পশ্চিমা আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠা করে ব্রিকস। শান্তি, নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও সহযোগিতার ভিত্তিতে গঠিত হয় এই জোট। নতুন সদস্য হিসেবে আর্জেন্টিনা, মিসর, ইথিওপিয়া, ইরান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের অন্তর্ভুক্তিতে এই লক্ষ্য আরও বিস্তৃত করার ইঙ্গিত মিলেছে। 

বৈশ্বিক ব্যবস্থায় উদীয়মান বাজারের প্রকৃত ভূমিকা এবং বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে তাদের ক্ষমতার মধ্যে যে বিশাল ব্যবধান উপস্থিত, তা হ্রাস করার লক্ষ্যে এবং একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য ব্রিকসের উত্থানকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত