Ajker Patrika

তালেবানের আফগানিস্তান যে কারণে উদ্বেগের

অনলাইন ডেস্ক
হেরাতে তালেবান মতাদর্শে স্নাতক হওয়া একদল শিক্ষার্থী। ছবি: এএফপি
হেরাতে তালেবান মতাদর্শে স্নাতক হওয়া একদল শিক্ষার্থী। ছবি: এএফপি

দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পর থেকে আফগানিস্তানকে নিজেদের মতবাদ অনুযায়ী পুনর্গঠনের পথে এগোতে শুরু করে তালেবান। তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে—চিকিৎসা কেন্দ্র, কারাগার, সামরিক ঘাঁটি থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যন্ত দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে কট্টর ইসলামি আদর্শে গড়ে তোলা।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, সম্প্রতি আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাত প্রদেশের একটি মাদক পুনর্বাসন কেন্দ্রে ১০০ জন নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির স্নাতক সমাবর্তনের ছবি তালেবান-ঘনিষ্ঠ গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা কোরআনের তিলাওয়াত ও উচ্চারণ শিখে সনদ লাভ করেন। সাদা পোশাক আর টুপি মাথায় তালেবানি পতাকার ছায়ায় এই অনুষ্ঠান হয়। এদের মধ্যে সৈয়দ আসিফ নামে একজন বলেন, ‘আমি এখন চিকিৎসার মধ্যে আছি এবং নেশা ছাড়তে পেরেছি। এই সময়ে আমি কোরআন পড়া শুরু করি এবং অনেক অংশ মুখস্থ করেছি।’

হেরাতের মাদকবিরোধী প্রধান হায়াতুল্লাহ রুহানি জানান, নেশাগ্রস্তদের পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে ধর্মীয় শিক্ষার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু উদ্বেগের জায়গাটি অন্য। আফগান পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোতে শুধু ধর্মীয় শিক্ষা নয়, জেহাদি সংগীতের আয়োজনও করছে তালেবান। তাদের ২০ বছরের যুদ্ধ, আত্মঘাতী হামলা, বোমা বিস্ফোরণের বর্ণনা সংবলিত গান শেখানো হয় সেখানে। এসব গান তালেবানের জেহাদি বর্ণনাকে মহিমান্বিত করে ও সহিংসতাকে বৈধতা দেয়।

ধর্মীয় শিক্ষা উদ্বেগজনক নয়, কিন্তু এর বিষয়বস্তু ও ব্যাখ্যাই চিন্তার বিষয়। এটি এমনভাবে সাজানো হচ্ছে যাতে সমাজ আরও চরমপন্থার দিকে ধাবিত হয় এবং ভবিষ্যতের তালেবান যোদ্ধা তৈরি হয়। অতীতে তালেবান যোদ্ধা সংগ্রহের মূল জায়গা ছিল মাদ্রাসাগুলো। এসব প্রতিষ্ঠান ইসলামি শিক্ষাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে এবং সহিংসতাকে মহিমান্বিত করে তুলছে।

বর্তমানে তালেবান আফগানিস্তানের স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, কারাগার, মাদ্রাসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলো সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা দেশকে এমনভাবে গড়ে তুলতে চায়, যেখানে শুধু রাজনৈতিক নয়, বুদ্ধিবৃত্তিক ও আদর্শিকভাবেও তালেবানি মতাদর্শই একমাত্র গ্রহণযোগ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।

এই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা শুধু পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোতে সীমাবদ্ধ নয়। পুরো আফগানিস্তানজুড়ে তালেবান মতাদর্শে মাদ্রাসার সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে তালেবানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা নিয়মিত উপস্থিত থাকেন। তাঁরা মানুষকে ধর্ম শেখার আহ্বান জানালেও—সেই শিক্ষা গ্রহণ করতে হয় শুধু তালেবানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী। মুসলিম বিশ্বের মূলধারার ইসলামের সঙ্গে এটিকে অনেকেই সাংঘর্ষিক মনে করেন।

তালেবানের এই একমুখী, চরমপন্থী ইসলামি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব বৃদ্ধি উদ্বেগজনক। শরিয়া আইন বাস্তবায়ন এবং ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মতো স্লোগানের মাধ্যমে তারা আফগান সমাজের ভেতরে তাদের মতাদর্শের শিকড় গেড়ে ফেলতে চাইছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে—ধর্মকে হাতিয়ার করে জনগণকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনা এবং রাজনৈতিক-সামরিক ক্ষমতাকে দীর্ঘমেয়াদি রূপ দেওয়া।

এই রূপান্তর শুধু আফগানিস্তানের জন্য নয়, পুরো অঞ্চলের জন্যই ভবিষ্যতের বড় সংকট ডেকে আনতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ওসি হয়েও আমার কম দামি ফোন, দামি ফোন নিয়ে ঘুরলে ছিনতাই তো হবেই’, ভুক্তভোগীকে মোহাম্মদপুরের ওসি

এনসিপির পদযাত্রা উপলক্ষে ‘স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত’, প্রধান শিক্ষকের দুই রকম বক্তব্য

মোহাম্মদপুর থানায় ভুক্তভোগীকে হেনস্তা: চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার, ৩ ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার

হিন্দু মন্দির নিয়ে কেন সংঘাতে জড়াল বৌদ্ধ-অধ্যুষিত থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া

বলিদান ও শয়তান পূজার বুদ্ধি দিল চ্যাটজিপিটি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত