Ajker Patrika

শখ

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২২, ১১: ১৭
শখ

ছোটবেলায় সব মানুষেরই মনের মধ্যে নানা ধরনের শখ জেগে ওঠে। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একবার শখ হয়েছিল তিনি মিস্ত্রি হবেন। চীনে মিস্ত্রিরা পাখির ঘর গড়ছিল বাড়িতে। জাল দিয়ে ঘেরা একটা মন্দিরও তৈরি হচ্ছিল। মুগ্ধ নয়নে অবনীন্দ্রনাথ দেখতেন মিস্ত্রিদের। দেখতেন তাঁদের কাজের সরঞ্জাম। হাতুড়ি-পেরেক দিয়ে কীভাবে তাঁরা কাজ করেন, তা দেখে কাজগুলো করার শখ হলো তাঁর। কিন্তু সুযোগ তো মেলে না!

একদিন অবশ্য মিলে গেল সে সুযোগ। কারিগরেরা সবাই গেছেন টিফিন করতে, সেই ফাঁকে ঘরটার দিকে তাকালেন শিশু অবনীন্দ্রনাথ। দেখলেন পড়ে আছে হাতুড়ি আর বাটালি। ব্যস! তিনি নিজেই হয়ে গেলেন কারিগর। ফস করে বাঁ হাতের বুড়ো আঙুলের ডগায় চালিয়ে দিলেন বাটালির এক ঘা। আর কি রক্ষে আছে! খাঁচার গায়ে দু-চার ফোঁটা রক্ত গড়িয়ে পড়ল।

রক্ত মুছবেন কী করে, বুঝতে না পেরে দ্রুত চলে গেলেন বাগানবাড়িতে। খানিক ধুলোবালি নিয়ে রক্ত থামানোর চেষ্টা করলেন কিন্তু তাতে রক্ত পড়া থামল না। ফলে সব দোষ স্বীকার করা ছাড়া আর কোনো উপায় রইল না।

ধমক অবশ্য তিনি খেলেন না। ধমক খেলেন কারিগরেরা। কারণ, শিশুদের হাতের কাছে যন্ত্রপাতি রেখে তাঁরা কেন চলে গিয়েছিলেন? বাটালির ঘায়ে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছিল, সেই ক্ষত আঙুলের ডগা থেকে আর কখনোই মিলিয়ে যায়নি।

আরেকবার তাঁর শখ হয়েছিল গড়গড়িতে তামাক খাওয়ার। কোথা থেকে একটা গাড়ু জোগাড় করে তার ভেতরে খানিক পানি ভরে টানতে শুরু করেছিলেন অবনীন্দ্রনাথ। হঠাৎ কারও পায়ের শব্দে চমকে উঠে পালাতে যেই গেছেন, অমনি সেই শখের গড়গড়িটা উল্টে পড়েছিল ঠোঁটের ওপর। নীল মাধব ডাক্তার এসে বরফ আর ধমক দিয়ে শুশ্রূষা করেছিলেন।

অবনীন্দ্রনাথ ভেবেছেন, যদি দুষ্টুমির শাস্তির চিহ্ন থাকত শরীরে, তাহলে গুরুজনেরা আর মারপিট করতেন না; কিন্তু দুষ্টুমি করেও যদি অক্ষত শরীর থাকত, তাহলে বেত বা ধমকের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যেত না।

সূত্র: অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আপন কথা, পৃষ্ঠা ৬৭-৬৯

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত