আজকের পত্রিকা ডেস্ক
ইতিহাসের অন্যতম দীর্ঘ ও নির্মম সংঘাত ছিল ভিয়েতনাম যুদ্ধ। এই যুদ্ধের প্রতিটি দিন ভয়, মৃত্যু এবং সাহসিকতার এক করুণ প্রতিচ্ছবি। ঠিক এই কঠিন বাস্তবতার মাঝে ভিয়তনামের যুদ্ধের ছবি তুলতে লাগল কিশোর ফটোসাংবাদিক লু মান হং ওরফে জিমি।
১৯৬৮ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে দক্ষিণ ভিয়েতনামের সবচেয়ে কম বয়সী ফটোসাংবাদিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে লু মান হং। তার বাবা লো ভিনহ ছিলেন একজন অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার। ৪৪ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত ছিলেন লো ভিনহ। তিনি উত্তর ভিয়েতনামে কমিউনিস্টদের হাত থেকে পালিয়ে দক্ষিণে এসেছিলেন। বাবার ডার্করুমেই ফটোগ্রাফিতে জিমির হাতেখড়ি হয়। সেখানে আলোছায়ার ব্যবহার এবং ক্যামেরার শাটারের ছন্দ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে।
১১ বছর বয়সেই জিমি বাবার সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করে। ভিয়েতনামের রাজধানী সাইগনের যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় ক্যামেরা নিয়ে ঘুরতে থাকে।
ছোট শারীরিক গঠন অনেক সময় অসুবিধা তৈরি করলেও যুদ্ধক্ষেত্রে এই গঠনই একসময় তার সবচেয়ে বেশি সুবিধা দেয়। ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে এবং সরু গলি দিয়ে সহজে চলাচল করতে পারত, যা প্রাপ্তবয়স্কদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তবে, বয়স কম হওয়ায় প্রায়শই পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হতে হতো।
জিমি শেষ পর্যন্ত তার বাবার পরিচয় এবং অদম্য সংকল্পের মাধ্যমে পুলিশ ও অন্যদের কাছে সম্মান পেতে শুরু করে। সে এমন সব ঘটনার ছবি তোলার সুযোগ পায় যা অন্যদের পক্ষে সম্ভব ছিল না।
১৯৬৮ সালের টেট আক্রমণের সময় জিমি আরও বিখ্যাত হয়ে ওঠে। প্রায়ই এআরভিএন (আর্মি অব দ্য রিপাবলিক অব ভিয়েতনাম) সৈন্যদের সঙ্গে ভিয়েত কং নিয়ন্ত্রিত সাইগনের গভীরে প্রবেশ করে ছবি তুলতো এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোতে সেগুলো বিক্রি করতো। প্রতিটি ছবির জন্য পেত ১০ ডলার (বর্তমান বাজারে ৯০ ডলারের বেশি)। এই পরিমাণ অর্থ ওই সময় ভিয়েতনামে পুরো পরিবারের এক মাসের খরচ চালানোর জন্য যথেষ্ট ছিল।
জিমি এবং তার বাবা প্রতিদিন ভোর ৫টায় কাজ শুরু করতো। রাত ৯টা পর্যন্ত টানা কাজ চলতো। যুদ্ধবিরতির সময় তারা মোটরসাইকেলে করে শহরে ঘুরে বেড়াতো এবং সরকারি অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে বিয়ে, বিমানবন্দরে বিশেষ ব্যক্তির আগমন এবং অগ্নিকাণ্ড—সবকিছুর ছবি তুলতো। ফিল্ম প্রসেসিং এবং প্রিন্টিংয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতো জিমি। এরপর বার্তা বাহক হিসেবেও কাজ করেছে। নতুন প্রিন্টগুলো সংবাদ সংস্থাগুলোতে পৌঁছে দেওয়া ছিল তার কাজ।
তবে সাইগনের পতনের সময় জিমি তার সমস্ত ছবি এবং নেগেটিভ হারিয়ে ফেলে। তার পালানোর জন্য মাত্র কয়েক মিনিট সময় ছিল এবং সৈন্যদের ঠাসাঠাসি করে থাকা একটি হেলিকপ্টারে তাকে টেনে তোলা হয়েছিল। পরে সে ভিয়েতনাম ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে একটি ছবির দোকান খোলে।
১৯৯৮ সালে সান ফ্রান্সিসকোতে অ্যাসোসিয়েটেডে প্রেসের (এপি) সাবেক ফটোগ্রাফার হর্স্ট ফাসের সঙ্গে দেখা হয় জিমির। টেট আক্রমণের সময় ছোট্ট জিমির যুদ্ধক্ষেত্রে কাজ করার মুহূর্ত হর্স্ট নিজের ক্যামেরায় বন্দী করেছিলেন। তাঁর কাছে ছিল জিমির পুরোনো ছবি। ছবিতে হেলমেট পরে আছে জিমি, আর সেই হেলমেটে বড় অক্ষরে লেখা ‘PRESS’।
এই ছবির সঙ্গে ছিল একটি ল্যামিনেট করা পত্রিকা কাটিং, যার শিরোনাম ছিল: ‘বয় ১২, ইন ডেঞ্জারাস জবস।’
২০১৮ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান লু মান হং। তাঁর গল্প যুদ্ধক্ষেত্রে অসাধারণ প্রতিভা এবং অদম্য সংকল্পের একটি দৃষ্টান্ত। ফটো সাংবাদিকতার ইতিহাসে অবিস্মরণীয় ছাপ রেখে গেছেন তিনি।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
ইতিহাসের অন্যতম দীর্ঘ ও নির্মম সংঘাত ছিল ভিয়েতনাম যুদ্ধ। এই যুদ্ধের প্রতিটি দিন ভয়, মৃত্যু এবং সাহসিকতার এক করুণ প্রতিচ্ছবি। ঠিক এই কঠিন বাস্তবতার মাঝে ভিয়তনামের যুদ্ধের ছবি তুলতে লাগল কিশোর ফটোসাংবাদিক লু মান হং ওরফে জিমি।
১৯৬৮ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে দক্ষিণ ভিয়েতনামের সবচেয়ে কম বয়সী ফটোসাংবাদিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে লু মান হং। তার বাবা লো ভিনহ ছিলেন একজন অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার। ৪৪ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত ছিলেন লো ভিনহ। তিনি উত্তর ভিয়েতনামে কমিউনিস্টদের হাত থেকে পালিয়ে দক্ষিণে এসেছিলেন। বাবার ডার্করুমেই ফটোগ্রাফিতে জিমির হাতেখড়ি হয়। সেখানে আলোছায়ার ব্যবহার এবং ক্যামেরার শাটারের ছন্দ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে।
১১ বছর বয়সেই জিমি বাবার সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করে। ভিয়েতনামের রাজধানী সাইগনের যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় ক্যামেরা নিয়ে ঘুরতে থাকে।
ছোট শারীরিক গঠন অনেক সময় অসুবিধা তৈরি করলেও যুদ্ধক্ষেত্রে এই গঠনই একসময় তার সবচেয়ে বেশি সুবিধা দেয়। ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে এবং সরু গলি দিয়ে সহজে চলাচল করতে পারত, যা প্রাপ্তবয়স্কদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তবে, বয়স কম হওয়ায় প্রায়শই পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হতে হতো।
জিমি শেষ পর্যন্ত তার বাবার পরিচয় এবং অদম্য সংকল্পের মাধ্যমে পুলিশ ও অন্যদের কাছে সম্মান পেতে শুরু করে। সে এমন সব ঘটনার ছবি তোলার সুযোগ পায় যা অন্যদের পক্ষে সম্ভব ছিল না।
১৯৬৮ সালের টেট আক্রমণের সময় জিমি আরও বিখ্যাত হয়ে ওঠে। প্রায়ই এআরভিএন (আর্মি অব দ্য রিপাবলিক অব ভিয়েতনাম) সৈন্যদের সঙ্গে ভিয়েত কং নিয়ন্ত্রিত সাইগনের গভীরে প্রবেশ করে ছবি তুলতো এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোতে সেগুলো বিক্রি করতো। প্রতিটি ছবির জন্য পেত ১০ ডলার (বর্তমান বাজারে ৯০ ডলারের বেশি)। এই পরিমাণ অর্থ ওই সময় ভিয়েতনামে পুরো পরিবারের এক মাসের খরচ চালানোর জন্য যথেষ্ট ছিল।
জিমি এবং তার বাবা প্রতিদিন ভোর ৫টায় কাজ শুরু করতো। রাত ৯টা পর্যন্ত টানা কাজ চলতো। যুদ্ধবিরতির সময় তারা মোটরসাইকেলে করে শহরে ঘুরে বেড়াতো এবং সরকারি অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে বিয়ে, বিমানবন্দরে বিশেষ ব্যক্তির আগমন এবং অগ্নিকাণ্ড—সবকিছুর ছবি তুলতো। ফিল্ম প্রসেসিং এবং প্রিন্টিংয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতো জিমি। এরপর বার্তা বাহক হিসেবেও কাজ করেছে। নতুন প্রিন্টগুলো সংবাদ সংস্থাগুলোতে পৌঁছে দেওয়া ছিল তার কাজ।
তবে সাইগনের পতনের সময় জিমি তার সমস্ত ছবি এবং নেগেটিভ হারিয়ে ফেলে। তার পালানোর জন্য মাত্র কয়েক মিনিট সময় ছিল এবং সৈন্যদের ঠাসাঠাসি করে থাকা একটি হেলিকপ্টারে তাকে টেনে তোলা হয়েছিল। পরে সে ভিয়েতনাম ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে একটি ছবির দোকান খোলে।
১৯৯৮ সালে সান ফ্রান্সিসকোতে অ্যাসোসিয়েটেডে প্রেসের (এপি) সাবেক ফটোগ্রাফার হর্স্ট ফাসের সঙ্গে দেখা হয় জিমির। টেট আক্রমণের সময় ছোট্ট জিমির যুদ্ধক্ষেত্রে কাজ করার মুহূর্ত হর্স্ট নিজের ক্যামেরায় বন্দী করেছিলেন। তাঁর কাছে ছিল জিমির পুরোনো ছবি। ছবিতে হেলমেট পরে আছে জিমি, আর সেই হেলমেটে বড় অক্ষরে লেখা ‘PRESS’।
এই ছবির সঙ্গে ছিল একটি ল্যামিনেট করা পত্রিকা কাটিং, যার শিরোনাম ছিল: ‘বয় ১২, ইন ডেঞ্জারাস জবস।’
২০১৮ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান লু মান হং। তাঁর গল্প যুদ্ধক্ষেত্রে অসাধারণ প্রতিভা এবং অদম্য সংকল্পের একটি দৃষ্টান্ত। ফটো সাংবাদিকতার ইতিহাসে অবিস্মরণীয় ছাপ রেখে গেছেন তিনি।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
৬ ঘণ্টা আগে১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির...
২ দিন আগেচলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না।
৩ দিন আগেবিরিয়ানি কিংবা কাবাব-পরোটা খেতে মন চাইলে পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারের কথা মনে পড়তেই পারে। এসব খেয়ে কেউ কেউ বিউটি কিংবা নূরানীর লাচ্ছি খেয়ে ভোজ শেষ করতে পারেন। আবার কেউ ধোঁয়া ওঠা গরম চা পিরিচে নিয়ে ফুঁকে ফুঁকে গলায় ঢালতে পারেন। যাঁরা নিয়মিত যান নাজিরাবাজারে, তাঁরা জানেন এসব চা-প্রেমীর ভিড় লেগে...
৪ দিন আগে