Ajker Patrika

‘বেশ ভালো লাগছে। পড়ুন।’

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২২, ১৩: ০৭
‘বেশ ভালো লাগছে। পড়ুন।’

‘টনসিল’ নাটকটা লিখেছিলেন বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়। ভাবছেন, ‘বন্দ্যোপাধ্যায় বলতে গিয়ে ভুল করে মুখোপাধ্যায় বলে ফেলেছি? মোটেই না। যাঁরা তাঁর সম্পর্কে কম জানেন, তাঁরা একটু খোঁজ নিলেই জানবেন, বিহারের দ্বারভাঙ্গা জেলায় পাণ্ডুল গ্রামে জন্ম নেওয়া এই সাহিত্যিক যথেষ্ট এলেমদার। তাঁর লেখা গল্প ‘রানুর প্রথমভাগ’ আর ‘নীলাঙ্গুরীয়’ যথেষ্ট নাম করেছিল।

তপন সিংহের ‘অঙ্কুশ’ সিনেমাটা ফ্লপ। এরপর শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের ‘কৃষ্ণা’ গল্পটি নিয়ে তিনি ‘উপহার’ নামে করলেন একটি ছবি। তাতে ছিলেন উত্তমকুমার আর সাবিত্রী। এরপরই তিনি ভাবলেন বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের ‘টনসিল’ নিয়ে ছবি করবেন। একটি পোস্টকার্ড লিখে বিভূতিবাবুর কাছে পাঠিয়ে ট্রেনের তৃতীয় শ্রেণিতে করে দ্বারভাঙ্গায় গেলেন স্ক্রিপ্ট শোনাতে। বলে রাখি, ‘বরযাত্রী’ গল্পের গণশা, ঘোঁতনা, ত্রিলোচন, গোরাচাঁদ, রাজেন আর কে গুপ্ত তখন রসসাহিত্যের পরিচিত চরিত্র। তাঁরাই আছেন ‘টনসিল’-এ।

রেলস্টেশনে স্বয়ং বিভূতিবাবু এলেন। তাঁর আতিথেয়তা অতুলনীয়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খাওয়ার ওপরই ছিলেন তপন সিংহ। তারপর বসলেন চিত্রনাট্য শোনাতে। তপন সিংহ পড়ে শোনাচ্ছেন। বিভূতিবাবু শুনছেন। অন্য কেউ হলে হাসতে হাসতে পেটে খিল পড়ে যেত। কিন্তু বিভূতিবাবু শুনছেন গম্ভীর মুখে। তাতে তপন সিংহের অস্বস্তি হচ্ছে। এই স্ক্রিপ্ট যখন স্টুডিওতে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, জহর গাঙ্গুলিদের শুনিয়েছিলেন, তখন তাঁরা হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু পড়ে শোনানোর সময়টিতে বিভূতিবাবু গম্ভীর। তপন সিংহ ভাবলেন, তাহলে বুঝি সিনেমা করার অনুমতি মিলছে না। ঠিক এ সময় একটি শিশু এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল বিভূতিবাবুর কোলে। বলল, ‘দাদু, একটা বেলুন দাও।’

বিভূতিবাবু বললেন, ‘আর পারি না। সকাল থেকে চারটা বেলুন ফাটালে।’ এবার তপন সিংহ বললেন, ‘হাসির স্ক্রিপ্ট শুনে আপনি হাসছেন না!’

বিভূতিবাবু বললেন, ‘বেশ ভালো লাগছে। পড়ুন।’

চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাওয়ার পর দেশ পত্রিকায় চলচ্চিত্র সমালোচক পঙ্কজ দত্ত লিখেছিলেন, ‘হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যায়, এমনই নির্ভেজাল হাসির ছবি।’

সূত্র: তপন সিংহ, মনে পড়ে, পৃষ্ঠা ৫৪-৫৬

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত