Ajker Patrika

কাজের ছুতোয় মানসিক হেনস্তাও যৌন হয়রানি

আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৩: ০৬
কাজের ছুতোয় মানসিক হেনস্তাও যৌন হয়রানি

প্রশ্ন: আমার বয়স ২৩ বছর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করছি মাসখানেক ধরে। কর্মস্থলে এক সিনিয়র ফেসবুক মেসেঞ্জারে বিরক্ত করে যাচ্ছেন। তিনি বিবাহিত। শুনতে না চাইলেও তাঁর পারিবারিক অশান্তির কথা আমাকে মেসেঞ্জারে লিখতেই থাকেন। স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর শারীরিক কোনো সম্পর্ক নেই—এ ধরনের কথাও তিনি বলেন এবং কর্মস্থলের বাইরে আমার সঙ্গে দেখা করতে চান। সম্মতি না দেওয়ায় আকারে-ইঙ্গিতে নানান হুমকি দিচ্ছেন। যার মধ্যে অন্যতম হলো শিক্ষানবিশ পদ থেকে আমাকে সরিয়ে দেওয়া। তবে কর্মস্থলে তিনি আমাকে কখনো কিছু বলেন না। তাঁর বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারি?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, মিরপুর, ঢাকা

উত্তর: আপনার সঙ্গে আপনার কর্মক্ষেত্রের সিনিয়র যে অসদাচরণ করেছেন বা করছেন, তাতে বেশ কিছু অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। প্রথমত, তিনি যে আপনাকে নোংরা ইঙ্গিতপূর্ণ মেসেজ পাঠিয়েছেন, কর্মস্থলের বাইরে দেখা করতে চাইছেন এবং হুমকি দিচ্ছেন, তা যৌন হয়রানির শামিল। যৌন হয়রানি শুধু শারীরিকভাবে হয়, তেমনটি নয়। এটি হতে পারে কথার মাধ্যমে, লিখিত বা অপ্রীতিকর স্পর্শ, অশ্লীল কৌতুক কিংবা আলাপ, কাজের ছুতোয় শারীরিক-মানসিক হেনস্তা ইত্যাদি। ২০০৯ সালের ১৪ মে হাইকোর্ট কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি সব ধরনের হয়রানি, নির্যাতন, অনাচার, বৈষম্য বন্ধের জন্য নির্দেশনা এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধের জন্য ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি’ গঠনের আদেশ দেন। কাজেই আপনার কর্মক্ষেত্রে এ রকম কমিটি যদি থাকে, তাহলে আপনি সেখানে অভিযোগ করতে পারেন। অফিস থেকেপ্রয়োজনীয় প্রমাণ সাপেক্ষে (এ ক্ষেত্রে মেসেঞ্জারে আপনাকে যেসব মেসেজ পাঠিয়েছে) ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে আপনার অফিস। তা ছাড়া আপনার সিনিয়র যে অপরাধ করেছেন, তা সাইবার বুলিংয়ের অধীনেও অপরাধ। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে হয়রানি করার নামই সাইবার বুলিং। এটি সামাজিক মিডিয়া, মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম, গেমিং প্ল্যাটফর্ম ও মোবাইল ফোনে ঘটতে পারে। এ ক্ষেত্রে যাদের টার্গেট করা হয়, তাদের ভয় দেখানো, রাগিয়ে দেওয়া, লজ্জা দেওয়া বা বিব্রত করার জন্য বারবার এমন আচরণ করা হয়। সাইবার বুলিং একটি ডিজিটাল চিহ্ন রেখে যায়। এই ডিজিটাল চিহ্ন এমন একটি রেকর্ড, যা কার্যকর প্রমাণ হিসেবে কাজ করতে পারে এবং অপব্যবহার বন্ধে সহায়তা করতে প্রমাণ সরবরাহ করতে পারে।

আপনার সিনিয়র সাইবার বুলিংয়ের পাশাপাশি ইভ টিজিংয়ের মতো অপরাধও করেছেন। আপনার সিনিয়র যে ইঙ্গিত করেছেন, অফিসের বাইরে দেখা করতে চেয়েছেন, দেখা না করলে যে শিক্ষানবিশ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন, তাতে স্পষ্টত এই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশের ৭৫ ধারায় বলা হয়েছে, ‘সর্ব সমাজে অশালীন বা উচ্ছৃঙ্খল আচরণের শাস্তি হিসেবে ৩ মাস মেয়াদ পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।’ ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি আইনের ৩৫৪ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কোনো নারীর শালীনতা নষ্ট করার অভিপ্রায় বা সে তার শালীনতা নষ্ট করতে পারে জেনেও তাকে আক্রমণ করে বা অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ করে, তাহলে সে ব্যক্তি ২ বৎসর পর্যন্ত যেন কোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে বা জরিমানা দণ্ডে বা উভয় প্রকার দণ্ডে দণ্ডিত হবে। দণ্ডবিধির আইনের ২৯৪ ধারায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি অন্যদের বিরক্তি সৃষ্টি করে, কোনো প্রকাশ্য স্থানের কাছাকাছি কোনো অশ্লীল কাজ করে অথবা কোনো প্রকাশ্য স্থানে কোনো অশ্লীল গান, গাঁথা সংগীত বা পদাবলি গায়, আবৃত্তি করে বা উচ্চারণ করে; সেই ব্যক্তি ৩ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে। কাজেই আপনি স্থানীয় থানায় গিয়ে আপনার সিনিয়রের বিরুদ্ধে মামলাও করতে পারেন। প্রমাণ হিসেবে মেসেঞ্জারে যে মেসেজগুলো তিনি পাঠিয়েছেন, তা অবশ্যই থানায় দাখিল করবেন।

পরামর্শ দিয়েছেন: ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন, অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের সংখ্যালঘু ইস্যুতে বাংলাদেশের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাল দিল্লি

‘ক্রিকেটাররা আমাকে ন্যুড পাঠাত’, বিস্ফোরক ভারতের সাবেক কোচের সন্তান

‘শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে’ ব্যানারে বিমানবন্দর এলাকায় আ.লীগের মিছিল

পরপর সংঘর্ষে উড়ে গেল বাসের ছাদ, যাত্রীসহ ৫ কিমি নিয়ে গেলেন চালক

ইটনায় এবার ডিলার নিয়োগে ঘুষ চাওয়ার কল রেকর্ড ফাঁস

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত