Ajker Patrika

পোশাকের রাজনীতি, আফগানিস্তানে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হচ্ছে নারীদের

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২৫, ১২: ৪১
২০২১ সালে তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় আসার এক বছরের মধ্যে কঠোর পোশাকবিধি চালু করে। ছবি: অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন
২০২১ সালে তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় আসার এক বছরের মধ্যে কঠোর পোশাকবিধি চালু করে। ছবি: অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন

ধরুন, আপনি শান্তভাবে শপিং করছেন। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ এসে আপনাকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে বসল। কারণ জিজ্ঞেস করলে জানানো হলো, হিজাব পরেননি, তাই আপনার এই শাস্তি প্রাপ্য। অবিশ্বাস্য শোনালেও আফগানিস্তানের মতো দেশে এখন এটি নির্মম বাস্তবতা। দেশটিতে সম্প্রতি এমন শাস্তি দেওয়া হচ্ছে সেই সব নারীকে, যারা হিজাব না পরে বাইরে বের হচ্ছে।

২০২১ সালে তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় আসার এক বছরের মধ্যে কঠোর পোশাকবিধি চালু করে। নারীদের বোরকা বা মুখসহ সম্পূর্ণ হিজাব পরতে বাধ্য করা হয় এবং বলা হয়, ‘জরুরি না হলে’ বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। তালেবান নারীদের পোশাকবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে বৈদ্যুতিক শক প্রয়োগ করছে। এ ছাড়া নারীদের জনসমক্ষে মুখ ঢেকে রাখাও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

তালেবান সরকারের ‘নৈতিকতা পুলিশ’ নারীদের আটক করতে গিয়ে যে বৈদ্যুতিক শক দেয়, তাতে অনেক নারী অচেতন হয়ে পড়েন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার ডিভাইসের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সেগুলোকে ‘মৌলিকভাবে নির্যাতনমূলক’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, এগুলো মারাত্মক ক্ষতি বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। আন্তর্জাতিক পুলিশিং নীতিমালা অনুসারে, বৈদ্যুতিক শক কেবল চূড়ান্ত বিকল্প হিসেবে অথবা আত্মরক্ষার্থে ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ধরনের ঘটনার সময় পুলিশকে বাধা দেওয়া হলে তারা জানায়, পুণ্য প্রচার ও পাপ প্রতিরোধ মন্ত্রণালয়ের কাজে কোনোভাবেই বাধা দেওয়া যাবে না।

নতুন ‘পুণ্য প্রচার ও পাপ প্রতিরোধ আইন’ তালেবান বাহিনীকে যেকোনো সময় নারীদের পোশাক নিয়ে প্রশ্ন ও শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছে। আইনটি চালুর আগে ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি নারীদের এক শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে বৈদ্যুতিক শক ব্যবহার করা হয়েছিল। ২০ জুলাই আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে ডজনের বেশি তরুণীকে আটক করা এবং অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তারা পুলিশি হেফাজতে একটি রাত কাটানোর পর ‘নিয়ম মেনে চলা’র প্রতিশ্রুতির শর্তে মুক্তি পান।

ক্ষমতায় ফেরার এক বছরের মধ্যে তালেবান সরকার ঘোষণা দেয়, পুরো শরীর ও মুখ ঢেকে রাখে এমন বোরকা নারীদের পরতে হবে। এ ধরনের দমন-পীড়ন জাতিসংঘের সমালোচনার মুখে পড়ে। প্রতিষ্ঠানটি বলে, এটি নারীদের প্রতি প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য আরোপ করে আফগান সমাজে তাদের অবস্থানকে হেয় করে।

এখন তালেবান বাহিনী মাঝেমধ্যে হিজাব পরিহিত নারীদের উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এমন অভিযোগ অনেকের। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার জানিয়েছে, নারীরা সঠিকভাবে হিজাব মানছে না। এ বিষয়ে শরিয়া আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই তালিকায় শুধু আফগানিস্তান নয়, ইরানও রয়েছে। ২০২৪ সালে সরকারি নৈতিকতা আইন লঙ্ঘন ও হিজাব না পরার দায়ে রোয়া হেশমাতি নামের এক তরুণীকে ৭৪ বার বেত্রাঘাতের সাজা দিয়েছিল ইরান।

এদিকে মধ্য এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ নিরাপত্তার জন্য মুখ ঢেকে রাখা নিকাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তান জনপরিসরে নারীদের নিকাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এমনকি জরিমানা পর্যন্ত ধার্য করা হয়েছে।

যেকোনো আইন বা বিধিনিষেধেরই একটা কারণ থাকে। তবে নারীদের হিজাব কিংবা নিকাব পরা কিংবা না পরা নিয়ে নিষেধাজ্ঞা ও জরিমানার মতো পরিস্থিতি তৈরি করা একটি রাষ্ট্রের পক্ষে কতটা যৌক্তিক, সে বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

সূত্র: রুখসানা মিডিয়া, এমএসএন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত