Ajker Patrika

দুর্গা রানীদের সচ্ছলতা কেড়ে নিয়েছে সস্তা প্লাস্টিক

আয়শা সিদ্দিকা আকাশী, মাদারীপুর
আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২৫, ০৯: ৩৪
সাংসারিক কাজের পাশাপাশি বাঁশের জিনিসপত্র তৈরিতে ব্যস্ত দুর্গা রানীসহ অন্যরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
সাংসারিক কাজের পাশাপাশি বাঁশের জিনিসপত্র তৈরিতে ব্যস্ত দুর্গা রানীসহ অন্যরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে কুটিরশিল্পের অন্যতম বাঁশের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র। একসময় বাঁশের তৈরি বিভিন্ন পণ্য সংসারের কাজের অন্যতম মাধ্যম হলেও আজ তা প্লাস্টিক জিনিসপত্রের ভিড়ে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। তবু এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে, আর পূর্বপুরুষের পেশা টিকিয়ে রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার পূর্ব স্বরমঙ্গল গ্রামের দুর্গা রানী দাস। তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করছেন। আর এসব পণ্য বিক্রি করা টাকায় চলছে তাঁদের সংসার।

রাজৈর উপজেলার পূর্ব স্বরমঙ্গল গ্রামের কুটিরশিল্পী সুকুমার দাসের (৫৫) স্ত্রী দুর্গা রানী দাস (৪৮)। তিনি ছেলের বউ মালা রানী দাস (২৩) ও মেয়ে অপর্ণা দাসকে (২৫) নিয়ে বাঁশের তৈরি নানা জিনিসপত্র তৈরি করেন। বাঁশ কেটে ডালা, কুলা, চালুনি, খাঁচা, চাটাই, গোলা, মাছ ধরার চাঁইসহ বিভিন্ন ধরনের খেলনাও তৈরি করেন তিনি। এ ছাড়া বাঁশের সঙ্গে তাঁরা কখনো কখনো বেতও ব্যবহার করেন। সাংসারিক কাজের পাশাপাশি বাড়িতে বসে এসব পণ্য তৈরির পর বাড়ির পুরুষ সদস্যরা বিভিন্ন হাটবাজারে নিয়ে বিক্রি করেন।

জীবিকার তাগিদে সাংসারিক কাজের পাশাপাশি বাঁশের তৈরি এই জিনিসপত্র বিক্রি করে দুর্গা রানীর সংসার চললেও দিন দিন এগুলোর বিক্রি এবং চাহিদা কমে যাচ্ছে। নানা ডিজাইন আর অল্প দামে হাতের কাছেই প্লাস্টিকের জিনিসপত্র পাওয়া যায়। তাই এই শিল্প ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।

দুর্গা রানীর স্বামী ও ছেলে বিভিন্ন হাট থেকে বাঁশ কিনে আনেন। তারপর সেগুলো কেটে চাটাই বানিয়ে দেন। পরে দুর্গা এবং তাঁর মেয়ে ও ছেলের বউ মিলে ডালা, কুলা, চালুনিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করেন। কখনো সেগুলোতে রংও করেন তাঁরা। একবারে ৫০ পিস তৈরি করার পর তা বিভিন্ন হাটে নিয়ে বিক্রি করা হয়।

দুর্গা রানী সাত-আট বছর বয়সে তাঁর মা-বাবার কাছে এই কাজ শেখেন। এটি তাঁর পারিবারিক পেশা।

দুর্গা রানীর স্বামী সুকুমার দাস জানান, বর্তমান বাজারে নিত্যপণ্যের পাশাপাশি বাঁশের দামও বেড়েছে। তাই প্রতিটি পণ্য তৈরিতে খরচ হয় ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। পরে তা পাইকারি ৭০-৮০ টাকা দামে বিক্রি হয়। এতে প্রতি মাসে ১৫-২০ হাজার টাকা উপার্জন হয় তাঁদের।

কিন্তু বাঁশ-বেতের ঐতিহ্যবাহী কাজ দিন দিন কমে যাচ্ছে। এ বিষয়ে মাদারীপুরের ইতিহাস গবেষক সুবল বিশ্বাস জানান, কুটিরশিল্পীদের আর্থিক সচ্ছলতা না ফিরলে এই শিল্প বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব

নয়। তা না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাবে।

রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহফুজুল হক জানিয়েছেন, উপজেলার বাঁশ

ও বেতশিল্পীদের তালিকা করা হয়েছে। তাঁদের সরকারিভাবে সহযোগিতা করে এ শিল্প টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। এই শিল্পের আধুনিকায়ন কীভাবে করা যায়, সেদিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত