একুশে বইমেলা

বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশের বইমেলা এখন বাঙালির জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। এত দীর্ঘ সময়ব্যাপী বইমেলা পৃথিবীর আর কোথাও হয় বলে মনে হয় না। বাংলাদেশের এ মেলা এখন সবার কাছেই এক ঈর্ষণীয় ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।

জীবনের তাগিদে অনেকে দেশ ছেড়ে পাড়ি জমান প্রবাসে। মাতৃভূমি থেকে হাজার মাইল দূরে থেকেও মায়ের ভাষা ও বাংলা সাহিত্যের প্রতি টান অনুভব করেন তাঁদের অনেকেই। সেই টান থেকেই করেন লেখালেখি। আর এর মধ্য দিয়ে বিদেশি সংস্কৃতির নানা দিক ফুটে ওঠে প্রবাসী লেখকদের কলমে। প্রতিবছরের মতো এবারও অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হ

তুলনামূলকভাবে কম হলেও সাহিত্যচর্চায় নারীরা পিছিয়ে নেই। পাঠকমহলে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছেন অনেক নারী লেখক। বইমেলাতেও প্রতিবছর নারী লেখকদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। প্রতিষ্ঠিতদের পাশাপাশি নবীন নারী লেখকদের নিয়েও আগ্রহ বাড়ছে পাঠকদের।

এবারের অমর একুশে বইমেলার শুরু থেকেই লোকসমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু গত বুধ ও বৃহস্পতিবার পাঠক-দর্শনার্থীর আনাগোনা ছিল অনেকটাই কম। স্বাভাবিকভাবেই তাই বিক্রিও হয়েছে কম। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে পাল্টে যায় সেই চিত্র। দল বেঁধে মানুষ এসেছে মেলায়—ফিরেছে চিরচেনা ভিড়, বেড়েছে বিক্রিও।

শিশুদের হই হুল্লোড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যস্ততাও বেড়েছে বইয়ের স্টলগুলোতে। ভূতের গল্প, বৈজ্ঞানিক কল্প-কাহিনি, রূপকথা, ঠাকুমার ঝুলিসহ আঁকার বইয়ের প্রতি শিশুদের আকর্ষণ বেশি বলে জানিয়েছেন বইয়ের স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধিরা। আলাদাভাবে শিশুদের নজরে আছে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক পপআপ বইগুলোতেও। 

দশ-পনেরো বছর আগে মেলায় প্রথম বই প্রকাশ হয়েছিল। সেই তরুণদের অনেকেই আজ পুরোদস্তুর লেখক। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান-গরিমায় নিজেদের আরও সমৃদ্ধ করে চলেছেন তাঁরা। পাঠকের মনের খোরাক মেটাতে নিয়মিতই লিখছেন। নাম নিতে গেলে বহুজনই সামনে আসবেন। মোদ্দাকথা, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের সেতুবন্ধ তৈরির মাধ্যম হিসেবেও ভূম

অমর একুশে বইমেলার সময় বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে জমেও উঠেছে মেলা। লেখক-প্রকাশকদের প্রত্যাশা অনুযায়ী বেড়েছে বিক্রি। একদিকে মেলার মাঠ ঘুরে পছন্দের বই কিনছেন দর্শনার্থীরা, অন্যদিকে অনলাইনে সরব রয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

অবশেষে নানা শঙ্কার অবসান হয়েছে। সময় বেড়েছে অমর একুশে বইমেলার। প্রকাশকদের দাবির মুখে আগামী ১৭ মার্চ পর্যন্ত মেলা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ গতকাল রোববার এমন তথ্য জানান।

‘ভোর হলো, দোর খোল, খুকুমণি ওঠ রে! ঐ ডাকে, জুঁই-শাখে, ফুল-খুকী ছোট রে!’—এমন আদর করে কচি-কোমল শিশুদের ঘুম ভাঙানোর উপায় বাতলে দিয়েছেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

অবশেষে বইমেলায় চালু হলো শিশুপ্রহর। এবারের প্রথম শিশুপ্রহরে গতকাল সকাল থেকে মেলা প্রাঙ্গণ মুখর হয়ে ওঠে শিশু পাঠকদের পদচারণে। শুধু শিশুরাই নয়, ছুটির দিন হওয়ায় গতকাল সব বয়সী পাঠক-দর্শনার্থীর ঢল নেমেছিল বইমেলায়।

ছুটির দিন উপলক্ষে মেলা শুরু হওয়ার কথা ছিল সকাল ১১টা থেকে। ঠিক সময়ে মেলা প্রাঙ্গণ খুললেও স্টলগুলোর অধিকাংশই বইগুলো সাজিয়ে শেষ করতে পারেনি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতের বৃষ্টিতে অনেক স্টলের সামনে পানি জমে গেছে। কিছু স্টলে ছাদের গড়িয়ে পড়া পানিতে ভিজেছে কিছু বইও।

শুধু বই আর বই। বিচিত্র বইয়ের সমাহার বইমেলায়। প্রকাশকেরা বলছেন, একটা সময় পাঠকের চাহিদা শুধু গল্প, উপন্যাস, কবিতায় সীমিত ছিল। কিন্তু এখন বিচিত্র চাহিদা। প্রবন্ধ, গবেষণা, আত্মজীবনী, যাপিত জীবনের চালচিত্র ও ব্যক্তিগত ভাবনা নিয়ে লেখা বইও চলছে।

জার্মানির নাগরিক স্টোয়া সলৎস একটি বহুজাতিক উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা। সম্প্রতি সংস্থার কাজে এসেছেন বাংলাদেশে। বইয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকে বুধবার চলে আসেন অমর একুশে বইমেলায়।

নানা শঙ্কা নিয়ে শুরু হয় অমর একুশে বইমেলা। তবে এক সপ্তাহ না পেরোতেই মেলা জমে উঠেছে। লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের পদচারণে মুখর মেলা প্রাঙ্গণ। মেলায় আগত বইপ্রেমীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আসছে নতুন বই, বাড়ছে বেচাবিক্রি। প্রকাশের তালিকায় কাব্যগ্রন্থ এগিয়ে থাকলেও বিক্রির শীর্ষে রয়েছে উপন্যাস। তা ছাড়া আত্মোন্নয়নমূল

অমর একুশে বইমেলায় এবারও প্রকাশিত হয়েছে তারকাদের বই। কেউ লিখেছেন আত্মজীবনী, কেউ কাব্যগ্রন্থ, কেউবা গল্প-উপন্যাস। তারকাদের লেখা এসব বইয়ের খবর জানাচ্ছেন মীর রাকিব হাসান

ভাষার মাসে বইমেলা অথচ ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস এবং এ-সংক্রান্ত পাঁচটির বেশি নতুন বইয়ের খোঁজ মেলেনি পুরো মেলা ঘুরে। অমর একুশে ফেব্রুয়ারির আগে গতকাল মেলার ষষ্ঠ দিনে এ-সংক্রান্ত কোনো বইই আসেনি।

সারা বছরই মানুষ কম-বেশি বই কেনে। তবে মেলা থেকে বই কেনার মধ্যে ভিন্ন একটা মজা আছে। মেলা যদি হয় বাংলা একাডেমির, তাহলে তো কথাই নেই!