চিররঞ্জন সরকার

বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশের বইমেলা এখন বাঙালির জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। এত দীর্ঘ সময়ব্যাপী বইমেলা পৃথিবীর আর কোথাও হয় বলে মনে হয় না। বাংলাদেশের এ মেলা এখন সবার কাছেই এক ঈর্ষণীয় ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।
কিন্তু ঘাড় গুঁজে মোবাইলে মগ্ন এই সমাজ কতটুকু পড়ে সাহিত্য, দর্শন, সমাজ-বিজ্ঞান? অবশ্য যাঁরা মনে করেন ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা মোবাইল ফোনই আমাদের পাঠাভ্যাস ধ্বংসের জন্য দায়ী, তাঁরা বোধ হয় পুরোটা ঠিক ভাবছেন না। ইন্টারনেট দুনিয়ায় আত্মসমর্পণের আগে থেকেই মানুষের বই পড়ার অভ্যাস কমছে। টিভিসহ বিভিন্ন আধুনিক বিনোদনমাধ্যম আমাদের পড়ার অভ্যাসে ফাটল ধরিয়েছে।
তারপরও এখনো বই বিক্রি হয়। বইয়ের দোকানে, অনলাইনে, বইমেলায় বই বিক্রির পরিমাণ একেবারে কম নয়। কিন্তু বই ‘কেনা’ মানেই কি ‘পড়া’? স্টিফেন হকিংয়ের ১৯৮৮ সালের বই ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ পৃথিবীজুড়ে হয়েছে ‘বেস্ট সেলার’। ৩৫টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বিক্রি হয়েছে এক কোটির বেশি কপি। আবার এই বইটিকেই বলা হয় ‘সর্বকালের সবচেয়ে না-পড়া বই’। টমাস পিকেটির ‘ক্যাপিটাল ইন দ্য টোয়েন্টি-ফার্স্ট সেঞ্চুরি’ নামের বইটির কথাও বলা যায়। এটিও একটি বেস্ট সেলার বই। কিন্তু ‘লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক জরিপ মতে, এটিও অপঠিত বইয়ের তালিকায় শীর্ষে আছে।
তার মানে মানুষ বই কিনলেই পড়ে না। তবে এখন দুনিয়াব্যাপী বই প্রকাশক ও বিক্রেতাদের মূল উদ্বেগটা বই ‘পড়া’ নিয়ে নয়; বরং বই ‘কেনা’ নিয়ে। বইসংক্রান্ত যেকোনো আলোচনায় যে বিষয়টা বাদ পড়ে যায় তা হলো, লেখক। বইমেলায়ও লেখকের বঞ্চনার বিষয়টি কখনো চোখে পড়ে না।
বইমেলার মূল প্রাণ হচ্ছে বই। বইয়ের লিখন, প্রকাশনা, বিপণন ও বিক্রয় নিয়ে এ মেলা জমে ওঠে। আর বইয়ের রচয়িতা হচ্ছেন লেখক। তাঁরাই প্রকাশকদের মাধ্যমে বইমেলায় বই জোগান। তাঁদের লেখা বই প্রকাশকেরা প্রকাশ করে স্টল সাজান। সেদিক দিয়ে বিচার করে বলা যায়, লেখকেরাই হলেন বইমেলার মূল কারিগর। তাঁরাই বইমেলার মূল প্রাণভোমরা। অথচ বাণিজ্যিক দিক থেকে দেখলে বইমেলায় সবচেয়ে বেশি প্রতারিত হন লেখকেরা। মুখে স্বীকার না করলেও প্রকাশকেরা কিন্তু আর্থিক দিক থেকে ঠিকই লাভবান হন।
একজন লেখককে একটি বই লেখার জন্য প্রচুর শ্রম দিতে হয়। হাজার হাজার ঘণ্টা শ্রম দিয়ে একটি বই লেখার পর তিনি যখন প্রকাশকের দ্বারস্থ হন, তখন তিনি প্রাপ্য সম্মানটুকুও পান না। রাজধানীর বাইরের লেখকেরা যত মেধাবীই হোন না কেন এবং তাঁরা যত ভালো ও মৌলিক গ্রন্থই রচনা করুন না কেন, প্রকাশকদের কাছে তাঁদের ভাত নেই। লেখকের সঙ্গে যেভাবে চুক্তিপত্র করা দরকার, অনেক প্রকাশকই তা করেন না। যেভাবে তাঁদের বিক্রয়লব্ধ অর্থ থেকে মুনাফা প্রদান করার কথা, তা দেন না। পরিবর্তে এমন একটা ভাব দেখান যে তাঁর বই বাজারে খুব একটা চলবে না। প্রকাশক যেন অনুগ্রহ করে তাঁর বই ছাপছেন। তারপর সেই বই বিক্রি হলেও প্রকৃত বিক্রয় সংখ্যা তাঁকে বলা হয় না। এ ব্যাপারে প্রকাশকদের সততা প্রশ্নবিদ্ধ। হয়তো দেখা গেল একুশে মেলায় গ্রামের একজন গুণী লেখকের বই ৫০০ কপি বিক্রি হলো; কিন্তু প্রকাশক তাঁকে হিসাব দিলেন ১৯ কপির। আবার সেই ১৯ কপির রয়্যালটিও তাঁকে ঠিকমতো দেওয়া হয় না। এমন অসহায় পরিস্থিতিতে লেখকেরা প্রকাশিত বইয়ের মলাটের ওপর তাঁর নিজের নাম দেখেই খুশি! অথচ লেখকের শ্রমের ফসল বিক্রি করে আর্থিক সুবিধাটি ভোগ করেন প্রকাশকেরা। প্রকাশকদের মধ্যে যে সৎ প্রকাশক একেবারেই নেই−এমন নয়। তবে তাঁদের সংখ্যা খুবই কম।
নামীদামি লেখকের বেলায় কিন্তু এমনটি হয় না। প্রকাশকেরা তাঁদের ঠিকই সম্মানী দেন। তাঁদের সঙ্গে লিখিত চুক্তিনামা সই করেন। সেখানে হয়তো উল্লেখ থাকে, লেখককে ১২ বা ১৫ শতাংশ রয়্যালটি দেওয়া হবে। যদিও এ ক্ষেত্রে কতটা সততার সঙ্গে হিসাব-নিকাশ করা হয়, সে বিষয়ে প্রশ্ন আছে।
বই প্রকাশ করতে হলে আমাদের দেশে কোনো না কোনো প্রকাশকের সঙ্গে পরিচয় বা খাতির থাকতে হবে। তা না থাকলে কেউকেটা গোছের কাউকে ধরতে হবে, যাঁর সঙ্গে প্রকাশকের খাতির আছে। তিনি বলে দিলে হয়তো প্রকাশক মহোদয় রাজি হন। এ ক্ষেত্রে প্রকাশকেরা শুরুতেই শর্ত দিয়ে দেন যে তাঁকে অন্তত দুই শ বই নগদে কিনে নিতে হবে। হোমরাচোমরা কিংবা সেলিব্রেটি না হলে কোনো প্রকাশকই বই ছাপতে চান না। যাঁর বই ছাপলে লাভ হবে, কেবল তাঁর বই-ই প্রকাশকেরা ছাপেন বা ছাপতে আগ্রহী হন! এ ব্যাপারে প্রকাশকদের বক্তব্য, ‘১৪০-১৬০ পৃষ্ঠার একটা বই দুই শ কপি ছাপতে ৪০-৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। প্রতিষ্ঠিত লেখক ছাড়া এ ধরনের বই ৫-১০ কপিও বিক্রি হয় না। এই বাস্তবতায় আমরা নতুন লেখকের বই ছাপব কীভাবে?’ প্রকাশকদের কথার মধ্যে অবশ্যই যুক্তি আছে। হাজার হাজার টাকা গচ্চা দিয়ে কেন একজন প্রকাশক বই ছাপতে যাবেন? বইয়ের পাঠক নেই বলে ভালো বই বের হয় না, ভালো বই নেই বলে পাঠকেরা পড়েন না, দুর্বল বিপণনের জন্য বাণিজ্য হয় না, বাণিজ্যে মন্দা বলেই বই-পণ্যের মান নিচু, আবার নিচু মানের পণ্য বলেই বাণিজ্যও দুর্বল−এই বৃত্তেই আছে বাংলা বই।
এত অবহেলা, অসম্মান, বঞ্চনার মধ্যেও লেখকেরা কীভাবে নতুন বই রচনা করে যাচ্ছেন, এটা একটা বিস্ময় বটে। কোনো কোনো লেখক বলেন, তাঁরা মনের আনন্দে লেখেন। নতুন সৃষ্টির আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকেন বলে লেখেন। তা হয়তো ঠিক। কিন্তু লেখকদের জন্য কেবল শুকনো আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন। এখন পেশাদারির যুগ। লেখকদের প্রাপ্য অধিকার দেওয়া দরকার। সরকারের তরফ থেকে বা বাংলা একাডেমির এ ব্যাপারে কোনো ভাবনা-চিন্তা কিংবা উদ্যোগ আছে বলে মনে হয় না। প্রতিবছর বইমেলায় কোটি কোটি টাকার বই বিক্রি হয়। ঘাম আর রক্ত ঝরানো এই অর্থের কত অংশ লেখকের আর কত অংশ প্রকাশকের পকেটে যায়, তা নিয়ে সরকার বা বাংলা একাডেমির কোনো গবেষণা বা হিসাব-নিকাশ আছে বলে মনে হয় না।
তারা সংখ্যাতত্ত্বে বিশ্বাসী হয়ে কেবল কৃতিত্ব আর বাহ্বা নিতে ব্যস্ত। বইমেলা চলাকালে একেক দিন বাংলা একাডেমি থেকে বলা হয়, আজ ৩০২টি নতুন বই মেলায় এসেছে, আজ এসেছে ৪০৫টি নতুন বই। মেলা শেষে দাবি করা হয়, গত বছরের চেয়ে এবার অনেক বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, এসব বইয়ের কত অংশ মানসম্পন্ন আর কত অংশ মানহীন—তার হিসাব কেউ করেন না।
কিছু কিছু প্রকাশক আছেন, যাঁরা দুই-পাঁচ শ বই কিনে নেওয়ার শর্তে কিংবা লেখকদের কাছ থেকে নগদ টাকা নিয়ে নিম্ন মানের বই ছাপেন! কিছু ডলার ছাড়লেই প্রবাসী লেখকদের বই প্রকাশে প্রকাশকেরা আগ্রহী হয়ে ওঠেন−এমনটাও বিরল নয়। আসলে প্রকাশনাজগতে পেশাদারির পরিবর্তে চলছে এক চরম নৈরাজ্য। তারপরও যে কিছু ভালো বই বেরোচ্ছে, সেটাই বিস্ময়ের।
লেখকদের কল্যাণে, লেখকদের স্বার্থে কোনো উদ্যোগ যদি গ্রহণ করা না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে ভালো বই প্রকাশ আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা কি কিছু ভাববেন?
পুনশ্চ: অনেকে এ কথাও বলেন যে বইয়ের পাঠকই কমে যাচ্ছে, তার আবার লেখক! যদি তা-ই হয়, তবে পাঠক বাড়ানোর উদ্যোগও নিতে হবে। কিন্তু লেখকের স্বার্থকে উপেক্ষা করা চলবে না।
লেখক: চিররঞ্জন সরকার, গবেষক ও কলামিস্ট

বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশের বইমেলা এখন বাঙালির জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। এত দীর্ঘ সময়ব্যাপী বইমেলা পৃথিবীর আর কোথাও হয় বলে মনে হয় না। বাংলাদেশের এ মেলা এখন সবার কাছেই এক ঈর্ষণীয় ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।
কিন্তু ঘাড় গুঁজে মোবাইলে মগ্ন এই সমাজ কতটুকু পড়ে সাহিত্য, দর্শন, সমাজ-বিজ্ঞান? অবশ্য যাঁরা মনে করেন ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা মোবাইল ফোনই আমাদের পাঠাভ্যাস ধ্বংসের জন্য দায়ী, তাঁরা বোধ হয় পুরোটা ঠিক ভাবছেন না। ইন্টারনেট দুনিয়ায় আত্মসমর্পণের আগে থেকেই মানুষের বই পড়ার অভ্যাস কমছে। টিভিসহ বিভিন্ন আধুনিক বিনোদনমাধ্যম আমাদের পড়ার অভ্যাসে ফাটল ধরিয়েছে।
তারপরও এখনো বই বিক্রি হয়। বইয়ের দোকানে, অনলাইনে, বইমেলায় বই বিক্রির পরিমাণ একেবারে কম নয়। কিন্তু বই ‘কেনা’ মানেই কি ‘পড়া’? স্টিফেন হকিংয়ের ১৯৮৮ সালের বই ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ পৃথিবীজুড়ে হয়েছে ‘বেস্ট সেলার’। ৩৫টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বিক্রি হয়েছে এক কোটির বেশি কপি। আবার এই বইটিকেই বলা হয় ‘সর্বকালের সবচেয়ে না-পড়া বই’। টমাস পিকেটির ‘ক্যাপিটাল ইন দ্য টোয়েন্টি-ফার্স্ট সেঞ্চুরি’ নামের বইটির কথাও বলা যায়। এটিও একটি বেস্ট সেলার বই। কিন্তু ‘লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক জরিপ মতে, এটিও অপঠিত বইয়ের তালিকায় শীর্ষে আছে।
তার মানে মানুষ বই কিনলেই পড়ে না। তবে এখন দুনিয়াব্যাপী বই প্রকাশক ও বিক্রেতাদের মূল উদ্বেগটা বই ‘পড়া’ নিয়ে নয়; বরং বই ‘কেনা’ নিয়ে। বইসংক্রান্ত যেকোনো আলোচনায় যে বিষয়টা বাদ পড়ে যায় তা হলো, লেখক। বইমেলায়ও লেখকের বঞ্চনার বিষয়টি কখনো চোখে পড়ে না।
বইমেলার মূল প্রাণ হচ্ছে বই। বইয়ের লিখন, প্রকাশনা, বিপণন ও বিক্রয় নিয়ে এ মেলা জমে ওঠে। আর বইয়ের রচয়িতা হচ্ছেন লেখক। তাঁরাই প্রকাশকদের মাধ্যমে বইমেলায় বই জোগান। তাঁদের লেখা বই প্রকাশকেরা প্রকাশ করে স্টল সাজান। সেদিক দিয়ে বিচার করে বলা যায়, লেখকেরাই হলেন বইমেলার মূল কারিগর। তাঁরাই বইমেলার মূল প্রাণভোমরা। অথচ বাণিজ্যিক দিক থেকে দেখলে বইমেলায় সবচেয়ে বেশি প্রতারিত হন লেখকেরা। মুখে স্বীকার না করলেও প্রকাশকেরা কিন্তু আর্থিক দিক থেকে ঠিকই লাভবান হন।
একজন লেখককে একটি বই লেখার জন্য প্রচুর শ্রম দিতে হয়। হাজার হাজার ঘণ্টা শ্রম দিয়ে একটি বই লেখার পর তিনি যখন প্রকাশকের দ্বারস্থ হন, তখন তিনি প্রাপ্য সম্মানটুকুও পান না। রাজধানীর বাইরের লেখকেরা যত মেধাবীই হোন না কেন এবং তাঁরা যত ভালো ও মৌলিক গ্রন্থই রচনা করুন না কেন, প্রকাশকদের কাছে তাঁদের ভাত নেই। লেখকের সঙ্গে যেভাবে চুক্তিপত্র করা দরকার, অনেক প্রকাশকই তা করেন না। যেভাবে তাঁদের বিক্রয়লব্ধ অর্থ থেকে মুনাফা প্রদান করার কথা, তা দেন না। পরিবর্তে এমন একটা ভাব দেখান যে তাঁর বই বাজারে খুব একটা চলবে না। প্রকাশক যেন অনুগ্রহ করে তাঁর বই ছাপছেন। তারপর সেই বই বিক্রি হলেও প্রকৃত বিক্রয় সংখ্যা তাঁকে বলা হয় না। এ ব্যাপারে প্রকাশকদের সততা প্রশ্নবিদ্ধ। হয়তো দেখা গেল একুশে মেলায় গ্রামের একজন গুণী লেখকের বই ৫০০ কপি বিক্রি হলো; কিন্তু প্রকাশক তাঁকে হিসাব দিলেন ১৯ কপির। আবার সেই ১৯ কপির রয়্যালটিও তাঁকে ঠিকমতো দেওয়া হয় না। এমন অসহায় পরিস্থিতিতে লেখকেরা প্রকাশিত বইয়ের মলাটের ওপর তাঁর নিজের নাম দেখেই খুশি! অথচ লেখকের শ্রমের ফসল বিক্রি করে আর্থিক সুবিধাটি ভোগ করেন প্রকাশকেরা। প্রকাশকদের মধ্যে যে সৎ প্রকাশক একেবারেই নেই−এমন নয়। তবে তাঁদের সংখ্যা খুবই কম।
নামীদামি লেখকের বেলায় কিন্তু এমনটি হয় না। প্রকাশকেরা তাঁদের ঠিকই সম্মানী দেন। তাঁদের সঙ্গে লিখিত চুক্তিনামা সই করেন। সেখানে হয়তো উল্লেখ থাকে, লেখককে ১২ বা ১৫ শতাংশ রয়্যালটি দেওয়া হবে। যদিও এ ক্ষেত্রে কতটা সততার সঙ্গে হিসাব-নিকাশ করা হয়, সে বিষয়ে প্রশ্ন আছে।
বই প্রকাশ করতে হলে আমাদের দেশে কোনো না কোনো প্রকাশকের সঙ্গে পরিচয় বা খাতির থাকতে হবে। তা না থাকলে কেউকেটা গোছের কাউকে ধরতে হবে, যাঁর সঙ্গে প্রকাশকের খাতির আছে। তিনি বলে দিলে হয়তো প্রকাশক মহোদয় রাজি হন। এ ক্ষেত্রে প্রকাশকেরা শুরুতেই শর্ত দিয়ে দেন যে তাঁকে অন্তত দুই শ বই নগদে কিনে নিতে হবে। হোমরাচোমরা কিংবা সেলিব্রেটি না হলে কোনো প্রকাশকই বই ছাপতে চান না। যাঁর বই ছাপলে লাভ হবে, কেবল তাঁর বই-ই প্রকাশকেরা ছাপেন বা ছাপতে আগ্রহী হন! এ ব্যাপারে প্রকাশকদের বক্তব্য, ‘১৪০-১৬০ পৃষ্ঠার একটা বই দুই শ কপি ছাপতে ৪০-৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। প্রতিষ্ঠিত লেখক ছাড়া এ ধরনের বই ৫-১০ কপিও বিক্রি হয় না। এই বাস্তবতায় আমরা নতুন লেখকের বই ছাপব কীভাবে?’ প্রকাশকদের কথার মধ্যে অবশ্যই যুক্তি আছে। হাজার হাজার টাকা গচ্চা দিয়ে কেন একজন প্রকাশক বই ছাপতে যাবেন? বইয়ের পাঠক নেই বলে ভালো বই বের হয় না, ভালো বই নেই বলে পাঠকেরা পড়েন না, দুর্বল বিপণনের জন্য বাণিজ্য হয় না, বাণিজ্যে মন্দা বলেই বই-পণ্যের মান নিচু, আবার নিচু মানের পণ্য বলেই বাণিজ্যও দুর্বল−এই বৃত্তেই আছে বাংলা বই।
এত অবহেলা, অসম্মান, বঞ্চনার মধ্যেও লেখকেরা কীভাবে নতুন বই রচনা করে যাচ্ছেন, এটা একটা বিস্ময় বটে। কোনো কোনো লেখক বলেন, তাঁরা মনের আনন্দে লেখেন। নতুন সৃষ্টির আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকেন বলে লেখেন। তা হয়তো ঠিক। কিন্তু লেখকদের জন্য কেবল শুকনো আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন। এখন পেশাদারির যুগ। লেখকদের প্রাপ্য অধিকার দেওয়া দরকার। সরকারের তরফ থেকে বা বাংলা একাডেমির এ ব্যাপারে কোনো ভাবনা-চিন্তা কিংবা উদ্যোগ আছে বলে মনে হয় না। প্রতিবছর বইমেলায় কোটি কোটি টাকার বই বিক্রি হয়। ঘাম আর রক্ত ঝরানো এই অর্থের কত অংশ লেখকের আর কত অংশ প্রকাশকের পকেটে যায়, তা নিয়ে সরকার বা বাংলা একাডেমির কোনো গবেষণা বা হিসাব-নিকাশ আছে বলে মনে হয় না।
তারা সংখ্যাতত্ত্বে বিশ্বাসী হয়ে কেবল কৃতিত্ব আর বাহ্বা নিতে ব্যস্ত। বইমেলা চলাকালে একেক দিন বাংলা একাডেমি থেকে বলা হয়, আজ ৩০২টি নতুন বই মেলায় এসেছে, আজ এসেছে ৪০৫টি নতুন বই। মেলা শেষে দাবি করা হয়, গত বছরের চেয়ে এবার অনেক বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, এসব বইয়ের কত অংশ মানসম্পন্ন আর কত অংশ মানহীন—তার হিসাব কেউ করেন না।
কিছু কিছু প্রকাশক আছেন, যাঁরা দুই-পাঁচ শ বই কিনে নেওয়ার শর্তে কিংবা লেখকদের কাছ থেকে নগদ টাকা নিয়ে নিম্ন মানের বই ছাপেন! কিছু ডলার ছাড়লেই প্রবাসী লেখকদের বই প্রকাশে প্রকাশকেরা আগ্রহী হয়ে ওঠেন−এমনটাও বিরল নয়। আসলে প্রকাশনাজগতে পেশাদারির পরিবর্তে চলছে এক চরম নৈরাজ্য। তারপরও যে কিছু ভালো বই বেরোচ্ছে, সেটাই বিস্ময়ের।
লেখকদের কল্যাণে, লেখকদের স্বার্থে কোনো উদ্যোগ যদি গ্রহণ করা না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে ভালো বই প্রকাশ আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা কি কিছু ভাববেন?
পুনশ্চ: অনেকে এ কথাও বলেন যে বইয়ের পাঠকই কমে যাচ্ছে, তার আবার লেখক! যদি তা-ই হয়, তবে পাঠক বাড়ানোর উদ্যোগও নিতে হবে। কিন্তু লেখকের স্বার্থকে উপেক্ষা করা চলবে না।
লেখক: চিররঞ্জন সরকার, গবেষক ও কলামিস্ট
চিররঞ্জন সরকার

বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশের বইমেলা এখন বাঙালির জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। এত দীর্ঘ সময়ব্যাপী বইমেলা পৃথিবীর আর কোথাও হয় বলে মনে হয় না। বাংলাদেশের এ মেলা এখন সবার কাছেই এক ঈর্ষণীয় ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।
কিন্তু ঘাড় গুঁজে মোবাইলে মগ্ন এই সমাজ কতটুকু পড়ে সাহিত্য, দর্শন, সমাজ-বিজ্ঞান? অবশ্য যাঁরা মনে করেন ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা মোবাইল ফোনই আমাদের পাঠাভ্যাস ধ্বংসের জন্য দায়ী, তাঁরা বোধ হয় পুরোটা ঠিক ভাবছেন না। ইন্টারনেট দুনিয়ায় আত্মসমর্পণের আগে থেকেই মানুষের বই পড়ার অভ্যাস কমছে। টিভিসহ বিভিন্ন আধুনিক বিনোদনমাধ্যম আমাদের পড়ার অভ্যাসে ফাটল ধরিয়েছে।
তারপরও এখনো বই বিক্রি হয়। বইয়ের দোকানে, অনলাইনে, বইমেলায় বই বিক্রির পরিমাণ একেবারে কম নয়। কিন্তু বই ‘কেনা’ মানেই কি ‘পড়া’? স্টিফেন হকিংয়ের ১৯৮৮ সালের বই ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ পৃথিবীজুড়ে হয়েছে ‘বেস্ট সেলার’। ৩৫টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বিক্রি হয়েছে এক কোটির বেশি কপি। আবার এই বইটিকেই বলা হয় ‘সর্বকালের সবচেয়ে না-পড়া বই’। টমাস পিকেটির ‘ক্যাপিটাল ইন দ্য টোয়েন্টি-ফার্স্ট সেঞ্চুরি’ নামের বইটির কথাও বলা যায়। এটিও একটি বেস্ট সেলার বই। কিন্তু ‘লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক জরিপ মতে, এটিও অপঠিত বইয়ের তালিকায় শীর্ষে আছে।
তার মানে মানুষ বই কিনলেই পড়ে না। তবে এখন দুনিয়াব্যাপী বই প্রকাশক ও বিক্রেতাদের মূল উদ্বেগটা বই ‘পড়া’ নিয়ে নয়; বরং বই ‘কেনা’ নিয়ে। বইসংক্রান্ত যেকোনো আলোচনায় যে বিষয়টা বাদ পড়ে যায় তা হলো, লেখক। বইমেলায়ও লেখকের বঞ্চনার বিষয়টি কখনো চোখে পড়ে না।
বইমেলার মূল প্রাণ হচ্ছে বই। বইয়ের লিখন, প্রকাশনা, বিপণন ও বিক্রয় নিয়ে এ মেলা জমে ওঠে। আর বইয়ের রচয়িতা হচ্ছেন লেখক। তাঁরাই প্রকাশকদের মাধ্যমে বইমেলায় বই জোগান। তাঁদের লেখা বই প্রকাশকেরা প্রকাশ করে স্টল সাজান। সেদিক দিয়ে বিচার করে বলা যায়, লেখকেরাই হলেন বইমেলার মূল কারিগর। তাঁরাই বইমেলার মূল প্রাণভোমরা। অথচ বাণিজ্যিক দিক থেকে দেখলে বইমেলায় সবচেয়ে বেশি প্রতারিত হন লেখকেরা। মুখে স্বীকার না করলেও প্রকাশকেরা কিন্তু আর্থিক দিক থেকে ঠিকই লাভবান হন।
একজন লেখককে একটি বই লেখার জন্য প্রচুর শ্রম দিতে হয়। হাজার হাজার ঘণ্টা শ্রম দিয়ে একটি বই লেখার পর তিনি যখন প্রকাশকের দ্বারস্থ হন, তখন তিনি প্রাপ্য সম্মানটুকুও পান না। রাজধানীর বাইরের লেখকেরা যত মেধাবীই হোন না কেন এবং তাঁরা যত ভালো ও মৌলিক গ্রন্থই রচনা করুন না কেন, প্রকাশকদের কাছে তাঁদের ভাত নেই। লেখকের সঙ্গে যেভাবে চুক্তিপত্র করা দরকার, অনেক প্রকাশকই তা করেন না। যেভাবে তাঁদের বিক্রয়লব্ধ অর্থ থেকে মুনাফা প্রদান করার কথা, তা দেন না। পরিবর্তে এমন একটা ভাব দেখান যে তাঁর বই বাজারে খুব একটা চলবে না। প্রকাশক যেন অনুগ্রহ করে তাঁর বই ছাপছেন। তারপর সেই বই বিক্রি হলেও প্রকৃত বিক্রয় সংখ্যা তাঁকে বলা হয় না। এ ব্যাপারে প্রকাশকদের সততা প্রশ্নবিদ্ধ। হয়তো দেখা গেল একুশে মেলায় গ্রামের একজন গুণী লেখকের বই ৫০০ কপি বিক্রি হলো; কিন্তু প্রকাশক তাঁকে হিসাব দিলেন ১৯ কপির। আবার সেই ১৯ কপির রয়্যালটিও তাঁকে ঠিকমতো দেওয়া হয় না। এমন অসহায় পরিস্থিতিতে লেখকেরা প্রকাশিত বইয়ের মলাটের ওপর তাঁর নিজের নাম দেখেই খুশি! অথচ লেখকের শ্রমের ফসল বিক্রি করে আর্থিক সুবিধাটি ভোগ করেন প্রকাশকেরা। প্রকাশকদের মধ্যে যে সৎ প্রকাশক একেবারেই নেই−এমন নয়। তবে তাঁদের সংখ্যা খুবই কম।
নামীদামি লেখকের বেলায় কিন্তু এমনটি হয় না। প্রকাশকেরা তাঁদের ঠিকই সম্মানী দেন। তাঁদের সঙ্গে লিখিত চুক্তিনামা সই করেন। সেখানে হয়তো উল্লেখ থাকে, লেখককে ১২ বা ১৫ শতাংশ রয়্যালটি দেওয়া হবে। যদিও এ ক্ষেত্রে কতটা সততার সঙ্গে হিসাব-নিকাশ করা হয়, সে বিষয়ে প্রশ্ন আছে।
বই প্রকাশ করতে হলে আমাদের দেশে কোনো না কোনো প্রকাশকের সঙ্গে পরিচয় বা খাতির থাকতে হবে। তা না থাকলে কেউকেটা গোছের কাউকে ধরতে হবে, যাঁর সঙ্গে প্রকাশকের খাতির আছে। তিনি বলে দিলে হয়তো প্রকাশক মহোদয় রাজি হন। এ ক্ষেত্রে প্রকাশকেরা শুরুতেই শর্ত দিয়ে দেন যে তাঁকে অন্তত দুই শ বই নগদে কিনে নিতে হবে। হোমরাচোমরা কিংবা সেলিব্রেটি না হলে কোনো প্রকাশকই বই ছাপতে চান না। যাঁর বই ছাপলে লাভ হবে, কেবল তাঁর বই-ই প্রকাশকেরা ছাপেন বা ছাপতে আগ্রহী হন! এ ব্যাপারে প্রকাশকদের বক্তব্য, ‘১৪০-১৬০ পৃষ্ঠার একটা বই দুই শ কপি ছাপতে ৪০-৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। প্রতিষ্ঠিত লেখক ছাড়া এ ধরনের বই ৫-১০ কপিও বিক্রি হয় না। এই বাস্তবতায় আমরা নতুন লেখকের বই ছাপব কীভাবে?’ প্রকাশকদের কথার মধ্যে অবশ্যই যুক্তি আছে। হাজার হাজার টাকা গচ্চা দিয়ে কেন একজন প্রকাশক বই ছাপতে যাবেন? বইয়ের পাঠক নেই বলে ভালো বই বের হয় না, ভালো বই নেই বলে পাঠকেরা পড়েন না, দুর্বল বিপণনের জন্য বাণিজ্য হয় না, বাণিজ্যে মন্দা বলেই বই-পণ্যের মান নিচু, আবার নিচু মানের পণ্য বলেই বাণিজ্যও দুর্বল−এই বৃত্তেই আছে বাংলা বই।
এত অবহেলা, অসম্মান, বঞ্চনার মধ্যেও লেখকেরা কীভাবে নতুন বই রচনা করে যাচ্ছেন, এটা একটা বিস্ময় বটে। কোনো কোনো লেখক বলেন, তাঁরা মনের আনন্দে লেখেন। নতুন সৃষ্টির আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকেন বলে লেখেন। তা হয়তো ঠিক। কিন্তু লেখকদের জন্য কেবল শুকনো আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন। এখন পেশাদারির যুগ। লেখকদের প্রাপ্য অধিকার দেওয়া দরকার। সরকারের তরফ থেকে বা বাংলা একাডেমির এ ব্যাপারে কোনো ভাবনা-চিন্তা কিংবা উদ্যোগ আছে বলে মনে হয় না। প্রতিবছর বইমেলায় কোটি কোটি টাকার বই বিক্রি হয়। ঘাম আর রক্ত ঝরানো এই অর্থের কত অংশ লেখকের আর কত অংশ প্রকাশকের পকেটে যায়, তা নিয়ে সরকার বা বাংলা একাডেমির কোনো গবেষণা বা হিসাব-নিকাশ আছে বলে মনে হয় না।
তারা সংখ্যাতত্ত্বে বিশ্বাসী হয়ে কেবল কৃতিত্ব আর বাহ্বা নিতে ব্যস্ত। বইমেলা চলাকালে একেক দিন বাংলা একাডেমি থেকে বলা হয়, আজ ৩০২টি নতুন বই মেলায় এসেছে, আজ এসেছে ৪০৫টি নতুন বই। মেলা শেষে দাবি করা হয়, গত বছরের চেয়ে এবার অনেক বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, এসব বইয়ের কত অংশ মানসম্পন্ন আর কত অংশ মানহীন—তার হিসাব কেউ করেন না।
কিছু কিছু প্রকাশক আছেন, যাঁরা দুই-পাঁচ শ বই কিনে নেওয়ার শর্তে কিংবা লেখকদের কাছ থেকে নগদ টাকা নিয়ে নিম্ন মানের বই ছাপেন! কিছু ডলার ছাড়লেই প্রবাসী লেখকদের বই প্রকাশে প্রকাশকেরা আগ্রহী হয়ে ওঠেন−এমনটাও বিরল নয়। আসলে প্রকাশনাজগতে পেশাদারির পরিবর্তে চলছে এক চরম নৈরাজ্য। তারপরও যে কিছু ভালো বই বেরোচ্ছে, সেটাই বিস্ময়ের।
লেখকদের কল্যাণে, লেখকদের স্বার্থে কোনো উদ্যোগ যদি গ্রহণ করা না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে ভালো বই প্রকাশ আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা কি কিছু ভাববেন?
পুনশ্চ: অনেকে এ কথাও বলেন যে বইয়ের পাঠকই কমে যাচ্ছে, তার আবার লেখক! যদি তা-ই হয়, তবে পাঠক বাড়ানোর উদ্যোগও নিতে হবে। কিন্তু লেখকের স্বার্থকে উপেক্ষা করা চলবে না।
লেখক: চিররঞ্জন সরকার, গবেষক ও কলামিস্ট

বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশের বইমেলা এখন বাঙালির জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। এত দীর্ঘ সময়ব্যাপী বইমেলা পৃথিবীর আর কোথাও হয় বলে মনে হয় না। বাংলাদেশের এ মেলা এখন সবার কাছেই এক ঈর্ষণীয় ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।
কিন্তু ঘাড় গুঁজে মোবাইলে মগ্ন এই সমাজ কতটুকু পড়ে সাহিত্য, দর্শন, সমাজ-বিজ্ঞান? অবশ্য যাঁরা মনে করেন ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা মোবাইল ফোনই আমাদের পাঠাভ্যাস ধ্বংসের জন্য দায়ী, তাঁরা বোধ হয় পুরোটা ঠিক ভাবছেন না। ইন্টারনেট দুনিয়ায় আত্মসমর্পণের আগে থেকেই মানুষের বই পড়ার অভ্যাস কমছে। টিভিসহ বিভিন্ন আধুনিক বিনোদনমাধ্যম আমাদের পড়ার অভ্যাসে ফাটল ধরিয়েছে।
তারপরও এখনো বই বিক্রি হয়। বইয়ের দোকানে, অনলাইনে, বইমেলায় বই বিক্রির পরিমাণ একেবারে কম নয়। কিন্তু বই ‘কেনা’ মানেই কি ‘পড়া’? স্টিফেন হকিংয়ের ১৯৮৮ সালের বই ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ পৃথিবীজুড়ে হয়েছে ‘বেস্ট সেলার’। ৩৫টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বিক্রি হয়েছে এক কোটির বেশি কপি। আবার এই বইটিকেই বলা হয় ‘সর্বকালের সবচেয়ে না-পড়া বই’। টমাস পিকেটির ‘ক্যাপিটাল ইন দ্য টোয়েন্টি-ফার্স্ট সেঞ্চুরি’ নামের বইটির কথাও বলা যায়। এটিও একটি বেস্ট সেলার বই। কিন্তু ‘লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক জরিপ মতে, এটিও অপঠিত বইয়ের তালিকায় শীর্ষে আছে।
তার মানে মানুষ বই কিনলেই পড়ে না। তবে এখন দুনিয়াব্যাপী বই প্রকাশক ও বিক্রেতাদের মূল উদ্বেগটা বই ‘পড়া’ নিয়ে নয়; বরং বই ‘কেনা’ নিয়ে। বইসংক্রান্ত যেকোনো আলোচনায় যে বিষয়টা বাদ পড়ে যায় তা হলো, লেখক। বইমেলায়ও লেখকের বঞ্চনার বিষয়টি কখনো চোখে পড়ে না।
বইমেলার মূল প্রাণ হচ্ছে বই। বইয়ের লিখন, প্রকাশনা, বিপণন ও বিক্রয় নিয়ে এ মেলা জমে ওঠে। আর বইয়ের রচয়িতা হচ্ছেন লেখক। তাঁরাই প্রকাশকদের মাধ্যমে বইমেলায় বই জোগান। তাঁদের লেখা বই প্রকাশকেরা প্রকাশ করে স্টল সাজান। সেদিক দিয়ে বিচার করে বলা যায়, লেখকেরাই হলেন বইমেলার মূল কারিগর। তাঁরাই বইমেলার মূল প্রাণভোমরা। অথচ বাণিজ্যিক দিক থেকে দেখলে বইমেলায় সবচেয়ে বেশি প্রতারিত হন লেখকেরা। মুখে স্বীকার না করলেও প্রকাশকেরা কিন্তু আর্থিক দিক থেকে ঠিকই লাভবান হন।
একজন লেখককে একটি বই লেখার জন্য প্রচুর শ্রম দিতে হয়। হাজার হাজার ঘণ্টা শ্রম দিয়ে একটি বই লেখার পর তিনি যখন প্রকাশকের দ্বারস্থ হন, তখন তিনি প্রাপ্য সম্মানটুকুও পান না। রাজধানীর বাইরের লেখকেরা যত মেধাবীই হোন না কেন এবং তাঁরা যত ভালো ও মৌলিক গ্রন্থই রচনা করুন না কেন, প্রকাশকদের কাছে তাঁদের ভাত নেই। লেখকের সঙ্গে যেভাবে চুক্তিপত্র করা দরকার, অনেক প্রকাশকই তা করেন না। যেভাবে তাঁদের বিক্রয়লব্ধ অর্থ থেকে মুনাফা প্রদান করার কথা, তা দেন না। পরিবর্তে এমন একটা ভাব দেখান যে তাঁর বই বাজারে খুব একটা চলবে না। প্রকাশক যেন অনুগ্রহ করে তাঁর বই ছাপছেন। তারপর সেই বই বিক্রি হলেও প্রকৃত বিক্রয় সংখ্যা তাঁকে বলা হয় না। এ ব্যাপারে প্রকাশকদের সততা প্রশ্নবিদ্ধ। হয়তো দেখা গেল একুশে মেলায় গ্রামের একজন গুণী লেখকের বই ৫০০ কপি বিক্রি হলো; কিন্তু প্রকাশক তাঁকে হিসাব দিলেন ১৯ কপির। আবার সেই ১৯ কপির রয়্যালটিও তাঁকে ঠিকমতো দেওয়া হয় না। এমন অসহায় পরিস্থিতিতে লেখকেরা প্রকাশিত বইয়ের মলাটের ওপর তাঁর নিজের নাম দেখেই খুশি! অথচ লেখকের শ্রমের ফসল বিক্রি করে আর্থিক সুবিধাটি ভোগ করেন প্রকাশকেরা। প্রকাশকদের মধ্যে যে সৎ প্রকাশক একেবারেই নেই−এমন নয়। তবে তাঁদের সংখ্যা খুবই কম।
নামীদামি লেখকের বেলায় কিন্তু এমনটি হয় না। প্রকাশকেরা তাঁদের ঠিকই সম্মানী দেন। তাঁদের সঙ্গে লিখিত চুক্তিনামা সই করেন। সেখানে হয়তো উল্লেখ থাকে, লেখককে ১২ বা ১৫ শতাংশ রয়্যালটি দেওয়া হবে। যদিও এ ক্ষেত্রে কতটা সততার সঙ্গে হিসাব-নিকাশ করা হয়, সে বিষয়ে প্রশ্ন আছে।
বই প্রকাশ করতে হলে আমাদের দেশে কোনো না কোনো প্রকাশকের সঙ্গে পরিচয় বা খাতির থাকতে হবে। তা না থাকলে কেউকেটা গোছের কাউকে ধরতে হবে, যাঁর সঙ্গে প্রকাশকের খাতির আছে। তিনি বলে দিলে হয়তো প্রকাশক মহোদয় রাজি হন। এ ক্ষেত্রে প্রকাশকেরা শুরুতেই শর্ত দিয়ে দেন যে তাঁকে অন্তত দুই শ বই নগদে কিনে নিতে হবে। হোমরাচোমরা কিংবা সেলিব্রেটি না হলে কোনো প্রকাশকই বই ছাপতে চান না। যাঁর বই ছাপলে লাভ হবে, কেবল তাঁর বই-ই প্রকাশকেরা ছাপেন বা ছাপতে আগ্রহী হন! এ ব্যাপারে প্রকাশকদের বক্তব্য, ‘১৪০-১৬০ পৃষ্ঠার একটা বই দুই শ কপি ছাপতে ৪০-৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। প্রতিষ্ঠিত লেখক ছাড়া এ ধরনের বই ৫-১০ কপিও বিক্রি হয় না। এই বাস্তবতায় আমরা নতুন লেখকের বই ছাপব কীভাবে?’ প্রকাশকদের কথার মধ্যে অবশ্যই যুক্তি আছে। হাজার হাজার টাকা গচ্চা দিয়ে কেন একজন প্রকাশক বই ছাপতে যাবেন? বইয়ের পাঠক নেই বলে ভালো বই বের হয় না, ভালো বই নেই বলে পাঠকেরা পড়েন না, দুর্বল বিপণনের জন্য বাণিজ্য হয় না, বাণিজ্যে মন্দা বলেই বই-পণ্যের মান নিচু, আবার নিচু মানের পণ্য বলেই বাণিজ্যও দুর্বল−এই বৃত্তেই আছে বাংলা বই।
এত অবহেলা, অসম্মান, বঞ্চনার মধ্যেও লেখকেরা কীভাবে নতুন বই রচনা করে যাচ্ছেন, এটা একটা বিস্ময় বটে। কোনো কোনো লেখক বলেন, তাঁরা মনের আনন্দে লেখেন। নতুন সৃষ্টির আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকেন বলে লেখেন। তা হয়তো ঠিক। কিন্তু লেখকদের জন্য কেবল শুকনো আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন। এখন পেশাদারির যুগ। লেখকদের প্রাপ্য অধিকার দেওয়া দরকার। সরকারের তরফ থেকে বা বাংলা একাডেমির এ ব্যাপারে কোনো ভাবনা-চিন্তা কিংবা উদ্যোগ আছে বলে মনে হয় না। প্রতিবছর বইমেলায় কোটি কোটি টাকার বই বিক্রি হয়। ঘাম আর রক্ত ঝরানো এই অর্থের কত অংশ লেখকের আর কত অংশ প্রকাশকের পকেটে যায়, তা নিয়ে সরকার বা বাংলা একাডেমির কোনো গবেষণা বা হিসাব-নিকাশ আছে বলে মনে হয় না।
তারা সংখ্যাতত্ত্বে বিশ্বাসী হয়ে কেবল কৃতিত্ব আর বাহ্বা নিতে ব্যস্ত। বইমেলা চলাকালে একেক দিন বাংলা একাডেমি থেকে বলা হয়, আজ ৩০২টি নতুন বই মেলায় এসেছে, আজ এসেছে ৪০৫টি নতুন বই। মেলা শেষে দাবি করা হয়, গত বছরের চেয়ে এবার অনেক বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, এসব বইয়ের কত অংশ মানসম্পন্ন আর কত অংশ মানহীন—তার হিসাব কেউ করেন না।
কিছু কিছু প্রকাশক আছেন, যাঁরা দুই-পাঁচ শ বই কিনে নেওয়ার শর্তে কিংবা লেখকদের কাছ থেকে নগদ টাকা নিয়ে নিম্ন মানের বই ছাপেন! কিছু ডলার ছাড়লেই প্রবাসী লেখকদের বই প্রকাশে প্রকাশকেরা আগ্রহী হয়ে ওঠেন−এমনটাও বিরল নয়। আসলে প্রকাশনাজগতে পেশাদারির পরিবর্তে চলছে এক চরম নৈরাজ্য। তারপরও যে কিছু ভালো বই বেরোচ্ছে, সেটাই বিস্ময়ের।
লেখকদের কল্যাণে, লেখকদের স্বার্থে কোনো উদ্যোগ যদি গ্রহণ করা না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে ভালো বই প্রকাশ আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা কি কিছু ভাববেন?
পুনশ্চ: অনেকে এ কথাও বলেন যে বইয়ের পাঠকই কমে যাচ্ছে, তার আবার লেখক! যদি তা-ই হয়, তবে পাঠক বাড়ানোর উদ্যোগও নিতে হবে। কিন্তু লেখকের স্বার্থকে উপেক্ষা করা চলবে না।
লেখক: চিররঞ্জন সরকার, গবেষক ও কলামিস্ট

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশের বইমেলা এখন বাঙালির জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। এত দীর্ঘ সময়ব্যাপী বইমেলা পৃথিবীর আর কোথাও হয় বলে মনে হয় না। বাংলাদেশের এ মেলা এখন সবার কাছেই এক ঈর্ষণীয় ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।
১০ মার্চ ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশের বইমেলা এখন বাঙালির জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। এত দীর্ঘ সময়ব্যাপী বইমেলা পৃথিবীর আর কোথাও হয় বলে মনে হয় না। বাংলাদেশের এ মেলা এখন সবার কাছেই এক ঈর্ষণীয় ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।
১০ মার্চ ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশের বইমেলা এখন বাঙালির জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। এত দীর্ঘ সময়ব্যাপী বইমেলা পৃথিবীর আর কোথাও হয় বলে মনে হয় না। বাংলাদেশের এ মেলা এখন সবার কাছেই এক ঈর্ষণীয় ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।
১০ মার্চ ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশের বইমেলা এখন বাঙালির জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। এত দীর্ঘ সময়ব্যাপী বইমেলা পৃথিবীর আর কোথাও হয় বলে মনে হয় না। বাংলাদেশের এ মেলা এখন সবার কাছেই এক ঈর্ষণীয় ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।
১০ মার্চ ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫