জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
বাঙালি মুসলমানের মনে একটা অদ্ভুত ধারণা ভিত্তি পেয়েছে। তাদের মনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে যে ব্রিটিশ যুগে এসেই মুসলমানরা বঞ্চিত হয়েছে। তুর্কি-মোগলদের শাসনামলে বাঙালি মুসলমানরা ধনে-মানে-শিক্ষায়-সংস্কৃতিতে এগিয়ে ছিল। ব্রিটিশরা এসে তাদের সেই অবস্থা থেকে টেনে নামিয়েছে। আর তারই সুযোগ নিয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়। তাদের মনে এ কথাও ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে যে ব্রিটিশ সরকার, তাদের ধর্মপ্রচারক এবং তাদের হিন্দু সহযোগীরা মিলে হিন্দুর ভাষা বাংলাকে চাপিয়ে দিয়েছে বাঙালি মুসলমানদের ওপর। আর ইংরেজিকে প্রশাসনিক ভাষায় রূপান্তরিত করায় ফারসি জানা মুসলমানেরা একের পর এক চাকরি হারাতে থাকেন এবং ধীরে ধীরে দরিদ্র হয়ে যান। কিন্তু ইতিহাস বলছে ভিন্ন কথা।
ব্রিটিশ শাসন শুরু হওয়ার আগে থেকেই অর্থাৎ এ দেশে যখন মুসলিম শাসন চলছে, তখনো শিক্ষার দিক দিয়ে মুসলমানেরা ছিল হিন্দুদের থেকে অনগ্রসর। রাজপরিবারের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য তখন গৃহশিক্ষক নিয়োগ করা হতো। শিক্ষার বিষয়টি মূলত অভিজাত সম্প্রদায়ের জন্যই নির্দিষ্ট ছিল। তবে সাধারণ প্রজাদের মধ্যেও আগ্রহী কেউ কেউ পড়ালেখা করতেন।
এই সাধারণ প্রজারা পাঠশালায় পড়াশোনা করতেন। হিন্দু পুরাণ পড়ানো হতো বলে মুসলমানের সন্তানেরা পাঠশালায় যেতে আগ্রহী ছিল না। এ ছাড়া রাজকার্য জানার জন্য বাংলা ভাষার প্রয়োজন হতো না বলে মুসলিমরা পাঠশালায় কমই যেত।
হিন্দু বিদ্যার্থীদের জন্য ছিল টোল ও চতুষ্পাঠি। মুসলমানদের জন্য ছিল মক্তব আর মাদ্রাসা। ধর্মের জন্য মুসলমানের দরকার ছিল আরবি, রাজকার্যের জন্য ফারসি। সেখানে এই ভাষাগুলোই শেখানো হতো। তাই বাংলা ভাষার প্রতি তার কোনো আকর্ষণ ছিল না। প্রয়োজনের তুলনায় মক্তবের সংখ্যা ছিল কম।
মক্তব ও মাদ্রাসায় ইসলাম ধর্মশাস্ত্রের প্রাধান্য থাকায় হিন্দু শিক্ষার্থীরাও সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেত না। কিন্তু রাজ ভাষা ফারসি না জানলে তো রাজকার্য জুটবে না। এ কারণেই বুঝি ‘পার্সী স্কুল’ চালু হয়, যেখানে হিন্দু শিক্ষার্থীরা ফারসি ভাষার সঙ্গে পরিচিত হতো। যেখানে পার্সী স্কুল ছিল না, সেখানে হিন্দু শিক্ষার্থীরা মক্তব-মাদ্রাসাতেও শিক্ষা গ্রহণ করত।
কেন মুসলিম শাসনামলেও মুসলমানদের তুলনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা বেশি করে প্রশাসনে যুক্ত হতে পারতেন, তা বোঝা যাবে একটি পরিসংখ্যানের শরণাপন্ন হলে। লর্ড বেন্টিং-এর শাসনামলে উইলিয়াম অ্যাডাম বাংলা ও বিহারের ‘স্বদেশী শিক্ষাব্যবস্থা’ সম্পর্কে যে তিনটি রিপোর্ট পেশ করেন (১৮৩৫-১৮৩৮), তাঁর সর্বশেষ রিপোর্টটিতে তিনি জানান, মুর্শিদাবাদ জেলার বাংলা স্কুলের মোট ১ হাজার ৮০ জন ছাত্রের মধ্যে ৯৯৮ জন হিন্দু এবং ৮২ জন মুসলমান। আরবি-ফারসি স্কুলের মোট ১০৯ জন ছাত্রের মধ্যে ৬২ জন হিন্দু ও ৪৭ জন মুসলমান। অর্থাৎ বাংলা শিক্ষায় তো বটেই, আরবি-ফারসি শিক্ষায়ও মুসলমানেরা হিন্দুদের চেয়ে পিছিয়ে ছিল।
মুর্শিদ কুলি খাঁর আমলের অধিকাংশ ইজারাদারই হিন্দু ছিলেন। সেই ইতিহাসই হবে আমাদের পরবর্তী আলোচনার বিষয়।
বাঙালি মুসলমানের মনে একটা অদ্ভুত ধারণা ভিত্তি পেয়েছে। তাদের মনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে যে ব্রিটিশ যুগে এসেই মুসলমানরা বঞ্চিত হয়েছে। তুর্কি-মোগলদের শাসনামলে বাঙালি মুসলমানরা ধনে-মানে-শিক্ষায়-সংস্কৃতিতে এগিয়ে ছিল। ব্রিটিশরা এসে তাদের সেই অবস্থা থেকে টেনে নামিয়েছে। আর তারই সুযোগ নিয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়। তাদের মনে এ কথাও ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে যে ব্রিটিশ সরকার, তাদের ধর্মপ্রচারক এবং তাদের হিন্দু সহযোগীরা মিলে হিন্দুর ভাষা বাংলাকে চাপিয়ে দিয়েছে বাঙালি মুসলমানদের ওপর। আর ইংরেজিকে প্রশাসনিক ভাষায় রূপান্তরিত করায় ফারসি জানা মুসলমানেরা একের পর এক চাকরি হারাতে থাকেন এবং ধীরে ধীরে দরিদ্র হয়ে যান। কিন্তু ইতিহাস বলছে ভিন্ন কথা।
ব্রিটিশ শাসন শুরু হওয়ার আগে থেকেই অর্থাৎ এ দেশে যখন মুসলিম শাসন চলছে, তখনো শিক্ষার দিক দিয়ে মুসলমানেরা ছিল হিন্দুদের থেকে অনগ্রসর। রাজপরিবারের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য তখন গৃহশিক্ষক নিয়োগ করা হতো। শিক্ষার বিষয়টি মূলত অভিজাত সম্প্রদায়ের জন্যই নির্দিষ্ট ছিল। তবে সাধারণ প্রজাদের মধ্যেও আগ্রহী কেউ কেউ পড়ালেখা করতেন।
এই সাধারণ প্রজারা পাঠশালায় পড়াশোনা করতেন। হিন্দু পুরাণ পড়ানো হতো বলে মুসলমানের সন্তানেরা পাঠশালায় যেতে আগ্রহী ছিল না। এ ছাড়া রাজকার্য জানার জন্য বাংলা ভাষার প্রয়োজন হতো না বলে মুসলিমরা পাঠশালায় কমই যেত।
হিন্দু বিদ্যার্থীদের জন্য ছিল টোল ও চতুষ্পাঠি। মুসলমানদের জন্য ছিল মক্তব আর মাদ্রাসা। ধর্মের জন্য মুসলমানের দরকার ছিল আরবি, রাজকার্যের জন্য ফারসি। সেখানে এই ভাষাগুলোই শেখানো হতো। তাই বাংলা ভাষার প্রতি তার কোনো আকর্ষণ ছিল না। প্রয়োজনের তুলনায় মক্তবের সংখ্যা ছিল কম।
মক্তব ও মাদ্রাসায় ইসলাম ধর্মশাস্ত্রের প্রাধান্য থাকায় হিন্দু শিক্ষার্থীরাও সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেত না। কিন্তু রাজ ভাষা ফারসি না জানলে তো রাজকার্য জুটবে না। এ কারণেই বুঝি ‘পার্সী স্কুল’ চালু হয়, যেখানে হিন্দু শিক্ষার্থীরা ফারসি ভাষার সঙ্গে পরিচিত হতো। যেখানে পার্সী স্কুল ছিল না, সেখানে হিন্দু শিক্ষার্থীরা মক্তব-মাদ্রাসাতেও শিক্ষা গ্রহণ করত।
কেন মুসলিম শাসনামলেও মুসলমানদের তুলনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা বেশি করে প্রশাসনে যুক্ত হতে পারতেন, তা বোঝা যাবে একটি পরিসংখ্যানের শরণাপন্ন হলে। লর্ড বেন্টিং-এর শাসনামলে উইলিয়াম অ্যাডাম বাংলা ও বিহারের ‘স্বদেশী শিক্ষাব্যবস্থা’ সম্পর্কে যে তিনটি রিপোর্ট পেশ করেন (১৮৩৫-১৮৩৮), তাঁর সর্বশেষ রিপোর্টটিতে তিনি জানান, মুর্শিদাবাদ জেলার বাংলা স্কুলের মোট ১ হাজার ৮০ জন ছাত্রের মধ্যে ৯৯৮ জন হিন্দু এবং ৮২ জন মুসলমান। আরবি-ফারসি স্কুলের মোট ১০৯ জন ছাত্রের মধ্যে ৬২ জন হিন্দু ও ৪৭ জন মুসলমান। অর্থাৎ বাংলা শিক্ষায় তো বটেই, আরবি-ফারসি শিক্ষায়ও মুসলমানেরা হিন্দুদের চেয়ে পিছিয়ে ছিল।
মুর্শিদ কুলি খাঁর আমলের অধিকাংশ ইজারাদারই হিন্দু ছিলেন। সেই ইতিহাসই হবে আমাদের পরবর্তী আলোচনার বিষয়।
বর্তমানকালের পরিপ্রেক্ষিতে নয়া ইতিহাস তৈরির বাহানা নিয়ে কিছু কথা বলা জরুরি। বর্তমানে যেভাবে কোনো কোনো মহল থেকে নিজের পছন্দমতো ইতিহাসের ন্যারেটিভ দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, কখনো কখনো তা অতি হাস্যকর হলেও ডিজিটাল যুগে সেই প্রচারণায় অনেকেই মজে যায়। তা বিশ্বাস করে নেয়। মানুষ যাচাই করে দেখে না, এই প্রচ
৪ ঘণ্টা আগেঅধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নতুন দল গঠন প্রসঙ্গে বলেন, ‘তরুণেরা সত্যিই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাদের খারাপ কোনো কিছুর সঙ্গে সংস্পর্শ নেই বা নিজেদের রাজনৈতিক আখের গোছানোর ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা নেই। তারা এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দল গঠন করছে বা রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছে। এটা দরকার। কারণ, রক্ত দিয়ে তারা যেগুলো অর্জন করেছে
৪ ঘণ্টা আগেবিদ্যার দেবী সরস্বতীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের এক বিশেষ দিন সরস্বতী পূজা। এটি শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং জ্ঞান, সাহিত্য, সংগীত ও শিল্পকলার প্রতি মানুষের ভালোবাসার প্রতিফলন। প্রতিবছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়, যা ‘বসন্ত পঞ্চমী’ নামেও পরিচিত। বসন্তের আগমনী বার্তা নিয়ে এই পূজা
৪ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের দারিদ্র্য মানচিত্র ২০২২’ আমাদের সামনে এক নতুন বাস্তবতা উন্মোচন করেছে। দারিদ্র্যের হার ও ভৌগোলিক বিন্যাসের পরিবর্তন একদিকে যেমন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অসামঞ্জস্যতা তুলে ধরে, অন্যদিকে তা আমাদের নীতিনির্ধারকদের জন্য এক গুরুতর সতর্কবার্তা। ৩১ জানুয়
৫ ঘণ্টা আগে