জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
ব্রিটিশ আমলের শুরুর দিক পর্যন্ত বহিরাগত অভিজাত মুসলমানেরা নিজেদের মনে করত পূর্বতন শাসকগোষ্ঠীর অংশ। দেশীয় মুসলমানেরা এই পরিচয়ের ক্ষেত্রে ছিল উদাসীন। কারণ তাতে তাদের কিছুই আসত-যেত না। কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ থেকে দেশীয় মুসলমানেরাও মনে করতে শুরু করল, যেহেতু এককালে মুসলমানেরাই ছিল শাসকগোষ্ঠী, তাই এ দেশের সকল মুসলমানই ছিল সেই শাসনপর্বের অংশীদার। কিন্তু ইতিহাস বলে, কথাটি একেবারেই সত্য নয়।
মুসলমানেরা তাদের অধোগতির জন্য দায়ী করা শুরু করল হিন্দু জমিদার, নতুন গজিয়ে ওঠা বাবুশ্রেণি ও ইংরেজদের। মোগল শাসকদের ধর্ম ইসলাম হলেও তাদের শাসনে দেশীয় মুসলমানদের গ্রাহ্য করা হয়নি। কিন্তু দেশীয় মুসলমানেরা রাজনৈতিকভাবে মোগলদের কোনো দোষ দেখল না। তাদের মনে ভিড় করল কল্পনা। তারা ভাবতে লাগল, মুসলমানেরা যখন ছিল শাসক, তখন হিন্দুরা ছিল তাদের অধস্তন প্রজা। এই ভাবনা হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে দূরত্বই তৈরি করল কেবল। মুসলমানেরা মনে করতে শুরু করে, অতীত গৌরব ফিরে পেলে তারা আবার পরিণত হবে শাসকশ্রেণিতে। তারা একবারের জন্যও ভাবেনি যে মোগলরা স্থানীয় বাঙালি মুসলমানদের অভিজাতশ্রেণির মর্যাদা দেয়নি। বরং উচ্চবর্ণের হিন্দুদের সঙ্গে আঁতাত করে তারা বাংলার আপামর জনসাধারণের ওপর আধিপত্য বিস্তার করেছে।
কেন বাঙালি মুসলমানেরা নিজেদের শাসকশ্রেণির প্রতিনিধি হিসেবে গণ্য করল? এর পেছনে দুটো কারণ বিদ্যমান। একটি হলো, লর্ড কর্নওয়ালিসের নতুন বন্দোবস্তের আগপর্যন্ত বিচার বিভাগে ছিল মুসলমানদের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ, যদিও এদের প্রায় সবাই ছিল বাইরে থেকে আসা মুসলমান। কর্নওয়ালিস বিচার বিভাগ ও প্রশাসনে বসালেন শ্বেতাঙ্গদের। মুসলিম অভিজাতরা হলেন চাকরিচ্যুত। অন্যদিকে দীর্ঘদিন এ দেশে বসবাস করার ফলে সম্রাট তাদের অনেককেই লাখেরাজ বা নিষ্কর জমি দিয়েছিলেন। উনিশ শতকের শুরুতে তার বেশির ভাগই বাজেয়াপ্ত করা হয়। লাখেরাজ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হওয়ায় মুসলিমদের চেয়ে হিন্দুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু হিন্দুদের এক অংশ এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তাদের আরেকটি অংশ সরকারি চাকরিতে জায়গা করে নেওয়ায় একধরনের ভারসাম্য আসে। মুসলমানদের ভাগ্যে তা ঘটেনি। ফলে সম্প্রদায়গতভাবে অধঃপতনটি মূলত ঘটেছে মুসলিম জনগোষ্ঠীর।
নিজেদের পূর্বতন শাসক ভাবার আরেকটি কারণ হলো ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন। স্থানীয় মুসলমানেরা মূলত আরব থেকে যুগে যুগে আসা সুফিদের মাধ্যমে ইসলামে দীক্ষিত হলেও এই অঞ্চলে হাজার বছর ধরে প্রচলিত অনেক আচার-অনুষ্ঠান ও রীতিনীতি তাদের জীবনাচরণের অংশ ছিল। এ জনপদের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের কারণেই ইসলামি অনুশাসন হুবহু আরবের কায়দায় অনুসৃত হতো না। সেকালের বঙ্গীয় মুসলিম সমাজ তাই ছিল বহুলাংশে হিন্দু-আচার-প্রথা প্রভাবিত। আবার হিন্দুদের ওপর মুসলিম সুফি সাধকদের প্রভাব ছিল লক্ষণীয়। ধর্মীয় সহনশীলতা ছিল আঠারো শতকের শুরুর দিকে এ অঞ্চলের সমাজনীতির বৈশিষ্ট্য। এমন প্রেক্ষাপটেই বঙ্গীয় মুসলিম সমাজের আচার অনুষ্ঠান থেকে স্থানীয় ‘হিন্দু প্রভাব’ দূর করার লক্ষ্যে ইসলাম ধর্মের সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। এর প্রভাবে যে পারস্পরিক সৌহার্দ্যের মধ্য দিয়ে দুই সম্প্রদায়ের সমাজজীবন বয়ে চলেছিল, তাতে ফাটল ধরল। হিন্দু-মুসলমান দুই পাশেই মাথা চাড়া দিল গোঁড়ামি। এই পথেই বাংলার স্থানীয় মুসলমানেরাও নিজেদের অধিকার হারিয়ে ফেলা শাসকশ্রেণি বলে মনে করতে শুরু করলেন।
ব্রিটিশ আমলের শুরুর দিক পর্যন্ত বহিরাগত অভিজাত মুসলমানেরা নিজেদের মনে করত পূর্বতন শাসকগোষ্ঠীর অংশ। দেশীয় মুসলমানেরা এই পরিচয়ের ক্ষেত্রে ছিল উদাসীন। কারণ তাতে তাদের কিছুই আসত-যেত না। কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ থেকে দেশীয় মুসলমানেরাও মনে করতে শুরু করল, যেহেতু এককালে মুসলমানেরাই ছিল শাসকগোষ্ঠী, তাই এ দেশের সকল মুসলমানই ছিল সেই শাসনপর্বের অংশীদার। কিন্তু ইতিহাস বলে, কথাটি একেবারেই সত্য নয়।
মুসলমানেরা তাদের অধোগতির জন্য দায়ী করা শুরু করল হিন্দু জমিদার, নতুন গজিয়ে ওঠা বাবুশ্রেণি ও ইংরেজদের। মোগল শাসকদের ধর্ম ইসলাম হলেও তাদের শাসনে দেশীয় মুসলমানদের গ্রাহ্য করা হয়নি। কিন্তু দেশীয় মুসলমানেরা রাজনৈতিকভাবে মোগলদের কোনো দোষ দেখল না। তাদের মনে ভিড় করল কল্পনা। তারা ভাবতে লাগল, মুসলমানেরা যখন ছিল শাসক, তখন হিন্দুরা ছিল তাদের অধস্তন প্রজা। এই ভাবনা হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে দূরত্বই তৈরি করল কেবল। মুসলমানেরা মনে করতে শুরু করে, অতীত গৌরব ফিরে পেলে তারা আবার পরিণত হবে শাসকশ্রেণিতে। তারা একবারের জন্যও ভাবেনি যে মোগলরা স্থানীয় বাঙালি মুসলমানদের অভিজাতশ্রেণির মর্যাদা দেয়নি। বরং উচ্চবর্ণের হিন্দুদের সঙ্গে আঁতাত করে তারা বাংলার আপামর জনসাধারণের ওপর আধিপত্য বিস্তার করেছে।
কেন বাঙালি মুসলমানেরা নিজেদের শাসকশ্রেণির প্রতিনিধি হিসেবে গণ্য করল? এর পেছনে দুটো কারণ বিদ্যমান। একটি হলো, লর্ড কর্নওয়ালিসের নতুন বন্দোবস্তের আগপর্যন্ত বিচার বিভাগে ছিল মুসলমানদের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ, যদিও এদের প্রায় সবাই ছিল বাইরে থেকে আসা মুসলমান। কর্নওয়ালিস বিচার বিভাগ ও প্রশাসনে বসালেন শ্বেতাঙ্গদের। মুসলিম অভিজাতরা হলেন চাকরিচ্যুত। অন্যদিকে দীর্ঘদিন এ দেশে বসবাস করার ফলে সম্রাট তাদের অনেককেই লাখেরাজ বা নিষ্কর জমি দিয়েছিলেন। উনিশ শতকের শুরুতে তার বেশির ভাগই বাজেয়াপ্ত করা হয়। লাখেরাজ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হওয়ায় মুসলিমদের চেয়ে হিন্দুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু হিন্দুদের এক অংশ এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তাদের আরেকটি অংশ সরকারি চাকরিতে জায়গা করে নেওয়ায় একধরনের ভারসাম্য আসে। মুসলমানদের ভাগ্যে তা ঘটেনি। ফলে সম্প্রদায়গতভাবে অধঃপতনটি মূলত ঘটেছে মুসলিম জনগোষ্ঠীর।
নিজেদের পূর্বতন শাসক ভাবার আরেকটি কারণ হলো ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন। স্থানীয় মুসলমানেরা মূলত আরব থেকে যুগে যুগে আসা সুফিদের মাধ্যমে ইসলামে দীক্ষিত হলেও এই অঞ্চলে হাজার বছর ধরে প্রচলিত অনেক আচার-অনুষ্ঠান ও রীতিনীতি তাদের জীবনাচরণের অংশ ছিল। এ জনপদের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের কারণেই ইসলামি অনুশাসন হুবহু আরবের কায়দায় অনুসৃত হতো না। সেকালের বঙ্গীয় মুসলিম সমাজ তাই ছিল বহুলাংশে হিন্দু-আচার-প্রথা প্রভাবিত। আবার হিন্দুদের ওপর মুসলিম সুফি সাধকদের প্রভাব ছিল লক্ষণীয়। ধর্মীয় সহনশীলতা ছিল আঠারো শতকের শুরুর দিকে এ অঞ্চলের সমাজনীতির বৈশিষ্ট্য। এমন প্রেক্ষাপটেই বঙ্গীয় মুসলিম সমাজের আচার অনুষ্ঠান থেকে স্থানীয় ‘হিন্দু প্রভাব’ দূর করার লক্ষ্যে ইসলাম ধর্মের সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। এর প্রভাবে যে পারস্পরিক সৌহার্দ্যের মধ্য দিয়ে দুই সম্প্রদায়ের সমাজজীবন বয়ে চলেছিল, তাতে ফাটল ধরল। হিন্দু-মুসলমান দুই পাশেই মাথা চাড়া দিল গোঁড়ামি। এই পথেই বাংলার স্থানীয় মুসলমানেরাও নিজেদের অধিকার হারিয়ে ফেলা শাসকশ্রেণি বলে মনে করতে শুরু করলেন।
এবারের মার্চ মাসটাকে কীভাবে দেখা হবে? কে কীভাবে দেখবে? উন্মাতাল এই শহরের ফুঁসে ওঠা দেখে শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন ৩ মার্চের ইত্তেফাকের শিরোনাম করেছিলেন ‘বিক্ষুব্ধ নগরীর ভয়াল গর্জন’।
১৮ ঘণ্টা আগেএবার সিডনির বইমেলায়ও মানুষের সমাগম কম হয়েছে। প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত মেলাটিতে ছিল সামান্যসংখ্যক মানুষ। পরদিন রোববার দীর্ঘকালের মেলাটি গতবারের মতো মানুষ টানতে পারেনি। আমি যখন মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে পৌঁছাই, তখন যা দেখেছি তাতে এটা বলা চলে যে মানুষ আগের মতো আসেনি।
১৮ ঘণ্টা আগেকতভাবে যে লুটপাটের পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন চলছে, তার হিসাব কোনো জ্যোতিষী হিসাববিজ্ঞানে পারদর্শী ব্যক্তিও করতে পারবেন বলে মনে হয় না। ২৪ ফেব্রুয়ারি আজকের পত্রিকায় ‘২০০ বছরের মাঠ কেটে পুকুর, উজাড় গাছও’ শিরোনামের খবরটি পড়লে...
১৮ ঘণ্টা আগেড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। বর্তমানে তিনি বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন...
২ দিন আগে