একেএম শামসুদ্দিন

কয়েক দিন ধরেই সেনাবাহিনী নিয়ে গণমাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে। নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) নামক অপর একটি দলের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদের কিছু বক্তব্য এই আলোচনার সূত্রপাত ঘটিয়েছে। তাঁদের বক্তব্য যেমন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, তেমনই দেশের মানুষের মনে আশঙ্কাও তৈরি করেছে। বিশেষ করে হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্য জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্যকে বক্তব্য না বলে অভিযোগ বলাই ভালো হবে। কারণ, তিনি ফেসবুকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধানের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ উত্থাপন করে চারদিকে যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন, এর আগে কখনো এ রকম পরিস্থিতি হয়নি। তাঁর অভিযোগ কম-বেশি আমাদের সবারই জানা। এখানে উল্লেখ করে লেখার পরিসর বড় করে লাভ নেই। কিন্তু আমরা আশ্চর্যের সঙ্গে লক্ষ করেছি, দলটির মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী সিলেটে তাঁর দলের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘হাসনাতের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা উচিত হয়নি। আমরা মনে করি, এটা শিষ্টাচারবর্জিত একটি স্ট্যাটাস হয়েছে।’ নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীর বক্তব্যের ঠিক পরদিনই এনসিপির আরেক সংগঠক সারজিস আলম হাসনাতের বক্তব্যের সঙ্গে কিছুটা দ্বিমত পোষণ করে আরেকটি বক্তব্য তাঁর ফেসবুকে পোস্ট করেন। সারজিস আলম ও হাসনাত দুজনেই ১১ মার্চ ঢাকা সেনানিবাসে সেনাবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেনাপ্রধান ক্যান্টনমেন্টে তাঁদের ডেকে নিয়েছেন বলে হাসনাত যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সরাসরি নাকচ করে সারজিস আলম লিখেছেন, ‘সেদিন সেনানিবাসে আমাদের ডেকে নেওয়া হয়নি।’ সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজকে দেওয়া সেনাসদরের বক্তব্যেও বলা হয়েছে, এনসিপির সংগঠকদের আগ্রহেই সেনাপ্রধান তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ দেওয়ায় সম্মতি দিয়েছিলেন। অতএব এই বিষয়ে হাসনাতের বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
হাসনাত আরও লিখেছেন, ‘আমাদের প্রস্তাব দেওয়া হয়, আসন সমঝোতার বিনিময়ে আমরা যেন এই (ইনক্লুসিভ নির্বাচন) প্রস্তাব মেনে নিই। আমাদের বলা হয়, ইতিমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।...একটি বিরোধী দল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা নাকি ভালো।’ এ বিষয়েও সারজিস স্পষ্ট করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘আমার জায়গা থেকে আমি সেদিনের (সেনাবাহিনী প্রধান) বক্তব্যকে সরাসরি “প্রস্তাব” দেওয়ার আঙ্গিকে দেখি না বরং “সরাসরি অভিমত প্রকাশ”র মতো করে দেখি। “অভিমত প্রকাশ” এবং “প্রস্তাব দেওয়া” দুটি বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। পাশাপাশি “রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ”র জন্য “চাপ দেওয়া”র যে বিষয়টি (হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্য) এসেছে সেখানে “চাপ দেওয়া হয়েছে” এমনটি মনে হয়নি। বরং রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ না আসলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে সমস্যার সৃষ্টি হবে, সেটা তিনি অতি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলছিলেন।’ এ ছাড়া সারজিস জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে কি না, এই নির্বাচনে তারা থাকলে কী হবে; আবার না থাকলে কী হতে পারে—এসব সমীকরণে দেশের ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে, স্থিতিশীলতা কিংবা অস্থিতিশীলতা কোন পর্যায়ে যেতে পারে, সেসব নিয়ে কথা হয়েছে। এরূপ অনেক বিষয়ের মধ্যে সারজিস আরও লিখেছেন, ‘কিন্তু যেই টোনে হাসনাতের ফেসবুক লেখা উপস্থাপন করা হয়েছে, আমি মনে করি কনভারসেশন ততটা এক্সট্রিম ছিল না। তবে অন্য কোনো দিনের চেয়ে অবশ্যই স্ট্রেইট-ফরওয়ার্ড এবং সো-কনফিডেন্ট ছিল। দেশের স্থিতিশীলতার রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের ইলেকশনে অংশগ্রহণ করা যে প্রয়োজনীয়, সেই বিষয়ে সরাসরি অভিমত ছিল।’
সারজিসের বক্তব্য শুনে মনে হয় সেনাবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে সেদিন তাঁদের অনেক বিষয় নিয়েই কথা হয়েছে, তার মধ্যে আওয়ামী লীগের বিষয়টিও আলোচিত হয়েছে। দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে কথায় কথায় আওয়ামী লীগের প্রসঙ্গ আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পূর্বশর্ত হিসেবে সব দলের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের বিষয়টি আসতে পারে এবং সে প্রসঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রধান হয়তো অভিমত ব্যক্ত করেছেন। হাসনাত এই বিষয়টিকেই ফেসবুকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন যে সবার কাছে সেনাপ্রধান সম্পর্কে একটি ভুল বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আমার বিশ্বাস, হাসনাত তাঁর অপরিপক্বতার বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। এ কারণেই হয়তো সারজিসের ফেসবুক পোস্টের পর তিনি আর উচ্চবাচ্য করেননি।
হাসনাত ও সারজিসের ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে মনে হয়েছে সাফল্যের সঙ্গে গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিতে পারলেও রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় তাঁরা উভয়ে অনেক পিছিয়ে আছেন। একটি কথা মনে রাখতে হবে, তাঁরা এখন আর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক নন। তাঁরা একটি নবগঠিত রাজনৈতিক দলের সংগঠক। কাজেই তাঁদের চালচলনে-কথাবার্তায় পরিপক্বতা থাকতে হবে। সেনাবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করে সেখানে কী আলোচনা হলো, সে বিষয়ে কি তাঁরা দলীয় পর্যায়ে কোনো আলোচনাই করেননি? দলীয় পর্যায়ে আলোচনা করেই বিবৃতি দেওয়া উচিত ছিল। এ ব্যাপারটি যে ঘটেনি, তা সহজেই অনুমান করা যায়, সারজিসের ফেসবুক স্ট্যাটাস দেওয়ার পর দলের অন্য নেতাদের তির্যক মন্তব্যগুলো দেখে। যাঁরা মন্তব্য করেছেন তাঁরাও যে প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন, তা নয়। খালেদ সাইফুল্লাহ নামের এক নেতা হাসনাত ও সারজিসের প্রতি ইঙ্গিত করে লিখেছেন, ‘ব্যক্তিগত রাজনীতি হাসিলের জন্য তারা যখন যা ইচ্ছে বলে বেড়াচ্ছেন; সেগুলো যে স্ববিরোধী হয়ে যাচ্ছে, সেটি নিয়েও তাদের কোনো উদ্বেগ নেই। যদি সেলিব্রিটি ফেইস, কন্ট্রোভার্সি আর পপুলিজম দিয়েই রাজনীতি করতে চান, তাহলে আমাদের পার্টি থেকে বাদ দিয়ে “টিকটকারদের” এনে বসিয়ে দেন।’ আরেক নেতা লিখেছেন, ‘দল গোল্লায় যাক, ওনাদের লাইম লাইটে থাকতে হবে।’ অন্যজন লিখেছেন, ‘যে যার মতো পোস্ট দিয়ে দিচ্ছেন, পাবলিক পোস্টে একজন অন্যজনের বক্তব্য খারিজ করছেন—এসব কী চলছে?’ তবে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করে সারজিসের পোস্টের মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন, ‘এসব কি ভাই। পাবলিকলিই বলছি—দুইজনের একজন মিথ্যা বলছেন।...সরি আর চুপ থাকতে পারলাম না।’
ওদিকে হাসনাত সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার পর সেনাবাহিনী বলেছে, ‘হাসনাত আবদুল্লাহর পোস্ট “সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি” বৈ অন্য কিছু নয়।’ হাসনাতের বক্তব্যকে ‘অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ব গল্পের সম্ভার’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে সেনাবাহিনী।
৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আমরা যে বাক্স্বাধীনতা পেয়েছি, তার সদ্ব্যবহার করতে গিয়ে মনে হয় মাঝে মধ্যে কেউ কেউ বেহিসেবি হয়ে পড়ছি। যে যখন মুখে যা আসছে তা-ই বলে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় কেউ কেউ সেনাবাহিনীকে নিয়েও মাত্রাতিরিক্ত বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন, যা সত্যিই অশোভনীয়। মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়ে এভাবে বক্তব্য রাখা বোধ হয় উচিত নয়। কিছুদিন যাবৎ সেনাবাহিনী নিয়ে এবি পার্টির ব্যারিস্টার ফুয়াদের কিছু বিকৃত রুচির বক্তব্য সবার দৃষ্টি কেড়েছে। আমি ভেবে অবাক হই একটি দলের সাধারণ সম্পাদক হয়ে একজন ব্যক্তি একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নিয়ে এমন অরুচিকর বক্তব্য দেন কী করে। সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের ‘চাকর-বাকর’-এর সঙ্গে তুলনা করে তিনি কী অর্জন করতে চান? কিছু কিছু ব্যক্তি মনে করেন বাক্স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে সেনাবাহিনীর মতো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নেগেটিভ কথা বলে অতি সহজেই জনপ্রিয় হওয়া যায়। আদতে তাই দেখছি, এ ধরনের সস্তা বক্তব্য দিয়ে অনেকেই সেলিব্রিটি হওয়ার পথ খুঁজে নিচ্ছেন। তবে এ কথা ঠিক, গত ১৫ বছর গদিচ্যুত শেখ হাসিনা, যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও দলীয় বিবেচনায় কিছু কিছু সেনা কর্মকর্তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা নিয়েছেন। এসব হঠাৎ পদ ও পদবি পাওয়া কর্মকর্তাদের কেউ কেউ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। যতদূর জেনেছি, স্বয়ং শেখ হাসিনাই তাঁদের দুর্নীতির সুযোগ করে দিয়েছেন। আমার বিশ্বাস, তাঁদের দুর্নীতির কথা জেনেও শেখ হাসিনা কোনো প্রকার ব্যবস্থা না নিয়ে, দলের স্বার্থেই তাঁদের অন্যায়ভাবে ব্যবহার করেছেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর এসব কর্মকর্তার দুর্নীতির সব তথ্যই ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে। এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা পুরো সেনাবাহিনীর মধ্যে শতকরা কতজন হবেন? তাই বলে কি পুরো সেনাবাহিনীকেই এভাবে গালমন্দ করতে হবে?
যাঁরা সেনাবাহিনীকে নিয়ে বিষোদ্গার করছেন তাঁদের মনে রাখা উচিত একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সম্পন্ন হতো না, যদি সেদিন বাঙালি সেনাসদস্যরা নিজেদের আত্মবলিদান না দিতেন। নব্বইয়ের এরশাদের পতন হতো না, তরুণ কর্মকর্তারা যদি সেদিন মিছিলের ওপর গুলিবর্ষণ করতে অস্বীকার না করতেন। চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনারও এত সহজে পতন হতো না, যদি ছাত্র-জনতার পাশে সেনাবাহিনী না দাঁড়াত। সস্তা বক্তব্য দিয়ে যাঁরা সহজেই জনপ্রিয় হতে চান তাঁদের মনে রাখতে হবে, প্রকাশ্যে নির্ভয়ে-নির্দ্বিধায় যে বড় বড় বক্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছেন, তা তো জুলাই গণ-অভ্যুত্থানেরই ফল। বিকৃত রুচির বক্তব্য দিয়ে কিছুই অর্জন করা যায় না, বরং তাতে বিকৃত মানসিকতারই পরিচয় পাওয়া যায়। কারোর বিরুদ্ধে আপত্তি থাকতে পারে, তাই বলে পুরো বাহিনীকে নিয়ে দোষারোপ করা ঠিক নয়। জাতীয় স্বার্থেই সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করা উচিত নয়। কথা বলার আগে আমাদের সৌজন্যবোধ বজায় রেখে কথা বলা উচিত। শুধু সেনাবাহিনী বলে নয়, যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কথা বলার সময়েও ন্যূনতম সৌজন্য বজায় রাখা উচিত।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলাম লেখক

কয়েক দিন ধরেই সেনাবাহিনী নিয়ে গণমাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে। নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) নামক অপর একটি দলের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদের কিছু বক্তব্য এই আলোচনার সূত্রপাত ঘটিয়েছে। তাঁদের বক্তব্য যেমন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, তেমনই দেশের মানুষের মনে আশঙ্কাও তৈরি করেছে। বিশেষ করে হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্য জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্যকে বক্তব্য না বলে অভিযোগ বলাই ভালো হবে। কারণ, তিনি ফেসবুকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধানের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ উত্থাপন করে চারদিকে যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন, এর আগে কখনো এ রকম পরিস্থিতি হয়নি। তাঁর অভিযোগ কম-বেশি আমাদের সবারই জানা। এখানে উল্লেখ করে লেখার পরিসর বড় করে লাভ নেই। কিন্তু আমরা আশ্চর্যের সঙ্গে লক্ষ করেছি, দলটির মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী সিলেটে তাঁর দলের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘হাসনাতের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা উচিত হয়নি। আমরা মনে করি, এটা শিষ্টাচারবর্জিত একটি স্ট্যাটাস হয়েছে।’ নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীর বক্তব্যের ঠিক পরদিনই এনসিপির আরেক সংগঠক সারজিস আলম হাসনাতের বক্তব্যের সঙ্গে কিছুটা দ্বিমত পোষণ করে আরেকটি বক্তব্য তাঁর ফেসবুকে পোস্ট করেন। সারজিস আলম ও হাসনাত দুজনেই ১১ মার্চ ঢাকা সেনানিবাসে সেনাবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেনাপ্রধান ক্যান্টনমেন্টে তাঁদের ডেকে নিয়েছেন বলে হাসনাত যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সরাসরি নাকচ করে সারজিস আলম লিখেছেন, ‘সেদিন সেনানিবাসে আমাদের ডেকে নেওয়া হয়নি।’ সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজকে দেওয়া সেনাসদরের বক্তব্যেও বলা হয়েছে, এনসিপির সংগঠকদের আগ্রহেই সেনাপ্রধান তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ দেওয়ায় সম্মতি দিয়েছিলেন। অতএব এই বিষয়ে হাসনাতের বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
হাসনাত আরও লিখেছেন, ‘আমাদের প্রস্তাব দেওয়া হয়, আসন সমঝোতার বিনিময়ে আমরা যেন এই (ইনক্লুসিভ নির্বাচন) প্রস্তাব মেনে নিই। আমাদের বলা হয়, ইতিমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।...একটি বিরোধী দল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা নাকি ভালো।’ এ বিষয়েও সারজিস স্পষ্ট করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘আমার জায়গা থেকে আমি সেদিনের (সেনাবাহিনী প্রধান) বক্তব্যকে সরাসরি “প্রস্তাব” দেওয়ার আঙ্গিকে দেখি না বরং “সরাসরি অভিমত প্রকাশ”র মতো করে দেখি। “অভিমত প্রকাশ” এবং “প্রস্তাব দেওয়া” দুটি বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। পাশাপাশি “রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ”র জন্য “চাপ দেওয়া”র যে বিষয়টি (হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্য) এসেছে সেখানে “চাপ দেওয়া হয়েছে” এমনটি মনে হয়নি। বরং রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ না আসলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে সমস্যার সৃষ্টি হবে, সেটা তিনি অতি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলছিলেন।’ এ ছাড়া সারজিস জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে কি না, এই নির্বাচনে তারা থাকলে কী হবে; আবার না থাকলে কী হতে পারে—এসব সমীকরণে দেশের ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে, স্থিতিশীলতা কিংবা অস্থিতিশীলতা কোন পর্যায়ে যেতে পারে, সেসব নিয়ে কথা হয়েছে। এরূপ অনেক বিষয়ের মধ্যে সারজিস আরও লিখেছেন, ‘কিন্তু যেই টোনে হাসনাতের ফেসবুক লেখা উপস্থাপন করা হয়েছে, আমি মনে করি কনভারসেশন ততটা এক্সট্রিম ছিল না। তবে অন্য কোনো দিনের চেয়ে অবশ্যই স্ট্রেইট-ফরওয়ার্ড এবং সো-কনফিডেন্ট ছিল। দেশের স্থিতিশীলতার রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের ইলেকশনে অংশগ্রহণ করা যে প্রয়োজনীয়, সেই বিষয়ে সরাসরি অভিমত ছিল।’
সারজিসের বক্তব্য শুনে মনে হয় সেনাবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে সেদিন তাঁদের অনেক বিষয় নিয়েই কথা হয়েছে, তার মধ্যে আওয়ামী লীগের বিষয়টিও আলোচিত হয়েছে। দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে কথায় কথায় আওয়ামী লীগের প্রসঙ্গ আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পূর্বশর্ত হিসেবে সব দলের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের বিষয়টি আসতে পারে এবং সে প্রসঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রধান হয়তো অভিমত ব্যক্ত করেছেন। হাসনাত এই বিষয়টিকেই ফেসবুকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন যে সবার কাছে সেনাপ্রধান সম্পর্কে একটি ভুল বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আমার বিশ্বাস, হাসনাত তাঁর অপরিপক্বতার বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। এ কারণেই হয়তো সারজিসের ফেসবুক পোস্টের পর তিনি আর উচ্চবাচ্য করেননি।
হাসনাত ও সারজিসের ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে মনে হয়েছে সাফল্যের সঙ্গে গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিতে পারলেও রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় তাঁরা উভয়ে অনেক পিছিয়ে আছেন। একটি কথা মনে রাখতে হবে, তাঁরা এখন আর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক নন। তাঁরা একটি নবগঠিত রাজনৈতিক দলের সংগঠক। কাজেই তাঁদের চালচলনে-কথাবার্তায় পরিপক্বতা থাকতে হবে। সেনাবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করে সেখানে কী আলোচনা হলো, সে বিষয়ে কি তাঁরা দলীয় পর্যায়ে কোনো আলোচনাই করেননি? দলীয় পর্যায়ে আলোচনা করেই বিবৃতি দেওয়া উচিত ছিল। এ ব্যাপারটি যে ঘটেনি, তা সহজেই অনুমান করা যায়, সারজিসের ফেসবুক স্ট্যাটাস দেওয়ার পর দলের অন্য নেতাদের তির্যক মন্তব্যগুলো দেখে। যাঁরা মন্তব্য করেছেন তাঁরাও যে প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন, তা নয়। খালেদ সাইফুল্লাহ নামের এক নেতা হাসনাত ও সারজিসের প্রতি ইঙ্গিত করে লিখেছেন, ‘ব্যক্তিগত রাজনীতি হাসিলের জন্য তারা যখন যা ইচ্ছে বলে বেড়াচ্ছেন; সেগুলো যে স্ববিরোধী হয়ে যাচ্ছে, সেটি নিয়েও তাদের কোনো উদ্বেগ নেই। যদি সেলিব্রিটি ফেইস, কন্ট্রোভার্সি আর পপুলিজম দিয়েই রাজনীতি করতে চান, তাহলে আমাদের পার্টি থেকে বাদ দিয়ে “টিকটকারদের” এনে বসিয়ে দেন।’ আরেক নেতা লিখেছেন, ‘দল গোল্লায় যাক, ওনাদের লাইম লাইটে থাকতে হবে।’ অন্যজন লিখেছেন, ‘যে যার মতো পোস্ট দিয়ে দিচ্ছেন, পাবলিক পোস্টে একজন অন্যজনের বক্তব্য খারিজ করছেন—এসব কী চলছে?’ তবে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করে সারজিসের পোস্টের মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন, ‘এসব কি ভাই। পাবলিকলিই বলছি—দুইজনের একজন মিথ্যা বলছেন।...সরি আর চুপ থাকতে পারলাম না।’
ওদিকে হাসনাত সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার পর সেনাবাহিনী বলেছে, ‘হাসনাত আবদুল্লাহর পোস্ট “সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি” বৈ অন্য কিছু নয়।’ হাসনাতের বক্তব্যকে ‘অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ব গল্পের সম্ভার’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে সেনাবাহিনী।
৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আমরা যে বাক্স্বাধীনতা পেয়েছি, তার সদ্ব্যবহার করতে গিয়ে মনে হয় মাঝে মধ্যে কেউ কেউ বেহিসেবি হয়ে পড়ছি। যে যখন মুখে যা আসছে তা-ই বলে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় কেউ কেউ সেনাবাহিনীকে নিয়েও মাত্রাতিরিক্ত বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন, যা সত্যিই অশোভনীয়। মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়ে এভাবে বক্তব্য রাখা বোধ হয় উচিত নয়। কিছুদিন যাবৎ সেনাবাহিনী নিয়ে এবি পার্টির ব্যারিস্টার ফুয়াদের কিছু বিকৃত রুচির বক্তব্য সবার দৃষ্টি কেড়েছে। আমি ভেবে অবাক হই একটি দলের সাধারণ সম্পাদক হয়ে একজন ব্যক্তি একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নিয়ে এমন অরুচিকর বক্তব্য দেন কী করে। সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের ‘চাকর-বাকর’-এর সঙ্গে তুলনা করে তিনি কী অর্জন করতে চান? কিছু কিছু ব্যক্তি মনে করেন বাক্স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে সেনাবাহিনীর মতো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নেগেটিভ কথা বলে অতি সহজেই জনপ্রিয় হওয়া যায়। আদতে তাই দেখছি, এ ধরনের সস্তা বক্তব্য দিয়ে অনেকেই সেলিব্রিটি হওয়ার পথ খুঁজে নিচ্ছেন। তবে এ কথা ঠিক, গত ১৫ বছর গদিচ্যুত শেখ হাসিনা, যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও দলীয় বিবেচনায় কিছু কিছু সেনা কর্মকর্তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা নিয়েছেন। এসব হঠাৎ পদ ও পদবি পাওয়া কর্মকর্তাদের কেউ কেউ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। যতদূর জেনেছি, স্বয়ং শেখ হাসিনাই তাঁদের দুর্নীতির সুযোগ করে দিয়েছেন। আমার বিশ্বাস, তাঁদের দুর্নীতির কথা জেনেও শেখ হাসিনা কোনো প্রকার ব্যবস্থা না নিয়ে, দলের স্বার্থেই তাঁদের অন্যায়ভাবে ব্যবহার করেছেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর এসব কর্মকর্তার দুর্নীতির সব তথ্যই ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে। এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা পুরো সেনাবাহিনীর মধ্যে শতকরা কতজন হবেন? তাই বলে কি পুরো সেনাবাহিনীকেই এভাবে গালমন্দ করতে হবে?
যাঁরা সেনাবাহিনীকে নিয়ে বিষোদ্গার করছেন তাঁদের মনে রাখা উচিত একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সম্পন্ন হতো না, যদি সেদিন বাঙালি সেনাসদস্যরা নিজেদের আত্মবলিদান না দিতেন। নব্বইয়ের এরশাদের পতন হতো না, তরুণ কর্মকর্তারা যদি সেদিন মিছিলের ওপর গুলিবর্ষণ করতে অস্বীকার না করতেন। চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনারও এত সহজে পতন হতো না, যদি ছাত্র-জনতার পাশে সেনাবাহিনী না দাঁড়াত। সস্তা বক্তব্য দিয়ে যাঁরা সহজেই জনপ্রিয় হতে চান তাঁদের মনে রাখতে হবে, প্রকাশ্যে নির্ভয়ে-নির্দ্বিধায় যে বড় বড় বক্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছেন, তা তো জুলাই গণ-অভ্যুত্থানেরই ফল। বিকৃত রুচির বক্তব্য দিয়ে কিছুই অর্জন করা যায় না, বরং তাতে বিকৃত মানসিকতারই পরিচয় পাওয়া যায়। কারোর বিরুদ্ধে আপত্তি থাকতে পারে, তাই বলে পুরো বাহিনীকে নিয়ে দোষারোপ করা ঠিক নয়। জাতীয় স্বার্থেই সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করা উচিত নয়। কথা বলার আগে আমাদের সৌজন্যবোধ বজায় রেখে কথা বলা উচিত। শুধু সেনাবাহিনী বলে নয়, যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কথা বলার সময়েও ন্যূনতম সৌজন্য বজায় রাখা উচিত।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলাম লেখক
একেএম শামসুদ্দিন

কয়েক দিন ধরেই সেনাবাহিনী নিয়ে গণমাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে। নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) নামক অপর একটি দলের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদের কিছু বক্তব্য এই আলোচনার সূত্রপাত ঘটিয়েছে। তাঁদের বক্তব্য যেমন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, তেমনই দেশের মানুষের মনে আশঙ্কাও তৈরি করেছে। বিশেষ করে হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্য জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্যকে বক্তব্য না বলে অভিযোগ বলাই ভালো হবে। কারণ, তিনি ফেসবুকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধানের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ উত্থাপন করে চারদিকে যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন, এর আগে কখনো এ রকম পরিস্থিতি হয়নি। তাঁর অভিযোগ কম-বেশি আমাদের সবারই জানা। এখানে উল্লেখ করে লেখার পরিসর বড় করে লাভ নেই। কিন্তু আমরা আশ্চর্যের সঙ্গে লক্ষ করেছি, দলটির মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী সিলেটে তাঁর দলের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘হাসনাতের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা উচিত হয়নি। আমরা মনে করি, এটা শিষ্টাচারবর্জিত একটি স্ট্যাটাস হয়েছে।’ নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীর বক্তব্যের ঠিক পরদিনই এনসিপির আরেক সংগঠক সারজিস আলম হাসনাতের বক্তব্যের সঙ্গে কিছুটা দ্বিমত পোষণ করে আরেকটি বক্তব্য তাঁর ফেসবুকে পোস্ট করেন। সারজিস আলম ও হাসনাত দুজনেই ১১ মার্চ ঢাকা সেনানিবাসে সেনাবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেনাপ্রধান ক্যান্টনমেন্টে তাঁদের ডেকে নিয়েছেন বলে হাসনাত যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সরাসরি নাকচ করে সারজিস আলম লিখেছেন, ‘সেদিন সেনানিবাসে আমাদের ডেকে নেওয়া হয়নি।’ সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজকে দেওয়া সেনাসদরের বক্তব্যেও বলা হয়েছে, এনসিপির সংগঠকদের আগ্রহেই সেনাপ্রধান তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ দেওয়ায় সম্মতি দিয়েছিলেন। অতএব এই বিষয়ে হাসনাতের বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
হাসনাত আরও লিখেছেন, ‘আমাদের প্রস্তাব দেওয়া হয়, আসন সমঝোতার বিনিময়ে আমরা যেন এই (ইনক্লুসিভ নির্বাচন) প্রস্তাব মেনে নিই। আমাদের বলা হয়, ইতিমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।...একটি বিরোধী দল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা নাকি ভালো।’ এ বিষয়েও সারজিস স্পষ্ট করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘আমার জায়গা থেকে আমি সেদিনের (সেনাবাহিনী প্রধান) বক্তব্যকে সরাসরি “প্রস্তাব” দেওয়ার আঙ্গিকে দেখি না বরং “সরাসরি অভিমত প্রকাশ”র মতো করে দেখি। “অভিমত প্রকাশ” এবং “প্রস্তাব দেওয়া” দুটি বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। পাশাপাশি “রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ”র জন্য “চাপ দেওয়া”র যে বিষয়টি (হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্য) এসেছে সেখানে “চাপ দেওয়া হয়েছে” এমনটি মনে হয়নি। বরং রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ না আসলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে সমস্যার সৃষ্টি হবে, সেটা তিনি অতি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলছিলেন।’ এ ছাড়া সারজিস জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে কি না, এই নির্বাচনে তারা থাকলে কী হবে; আবার না থাকলে কী হতে পারে—এসব সমীকরণে দেশের ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে, স্থিতিশীলতা কিংবা অস্থিতিশীলতা কোন পর্যায়ে যেতে পারে, সেসব নিয়ে কথা হয়েছে। এরূপ অনেক বিষয়ের মধ্যে সারজিস আরও লিখেছেন, ‘কিন্তু যেই টোনে হাসনাতের ফেসবুক লেখা উপস্থাপন করা হয়েছে, আমি মনে করি কনভারসেশন ততটা এক্সট্রিম ছিল না। তবে অন্য কোনো দিনের চেয়ে অবশ্যই স্ট্রেইট-ফরওয়ার্ড এবং সো-কনফিডেন্ট ছিল। দেশের স্থিতিশীলতার রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের ইলেকশনে অংশগ্রহণ করা যে প্রয়োজনীয়, সেই বিষয়ে সরাসরি অভিমত ছিল।’
সারজিসের বক্তব্য শুনে মনে হয় সেনাবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে সেদিন তাঁদের অনেক বিষয় নিয়েই কথা হয়েছে, তার মধ্যে আওয়ামী লীগের বিষয়টিও আলোচিত হয়েছে। দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে কথায় কথায় আওয়ামী লীগের প্রসঙ্গ আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পূর্বশর্ত হিসেবে সব দলের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের বিষয়টি আসতে পারে এবং সে প্রসঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রধান হয়তো অভিমত ব্যক্ত করেছেন। হাসনাত এই বিষয়টিকেই ফেসবুকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন যে সবার কাছে সেনাপ্রধান সম্পর্কে একটি ভুল বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আমার বিশ্বাস, হাসনাত তাঁর অপরিপক্বতার বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। এ কারণেই হয়তো সারজিসের ফেসবুক পোস্টের পর তিনি আর উচ্চবাচ্য করেননি।
হাসনাত ও সারজিসের ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে মনে হয়েছে সাফল্যের সঙ্গে গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিতে পারলেও রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় তাঁরা উভয়ে অনেক পিছিয়ে আছেন। একটি কথা মনে রাখতে হবে, তাঁরা এখন আর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক নন। তাঁরা একটি নবগঠিত রাজনৈতিক দলের সংগঠক। কাজেই তাঁদের চালচলনে-কথাবার্তায় পরিপক্বতা থাকতে হবে। সেনাবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করে সেখানে কী আলোচনা হলো, সে বিষয়ে কি তাঁরা দলীয় পর্যায়ে কোনো আলোচনাই করেননি? দলীয় পর্যায়ে আলোচনা করেই বিবৃতি দেওয়া উচিত ছিল। এ ব্যাপারটি যে ঘটেনি, তা সহজেই অনুমান করা যায়, সারজিসের ফেসবুক স্ট্যাটাস দেওয়ার পর দলের অন্য নেতাদের তির্যক মন্তব্যগুলো দেখে। যাঁরা মন্তব্য করেছেন তাঁরাও যে প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন, তা নয়। খালেদ সাইফুল্লাহ নামের এক নেতা হাসনাত ও সারজিসের প্রতি ইঙ্গিত করে লিখেছেন, ‘ব্যক্তিগত রাজনীতি হাসিলের জন্য তারা যখন যা ইচ্ছে বলে বেড়াচ্ছেন; সেগুলো যে স্ববিরোধী হয়ে যাচ্ছে, সেটি নিয়েও তাদের কোনো উদ্বেগ নেই। যদি সেলিব্রিটি ফেইস, কন্ট্রোভার্সি আর পপুলিজম দিয়েই রাজনীতি করতে চান, তাহলে আমাদের পার্টি থেকে বাদ দিয়ে “টিকটকারদের” এনে বসিয়ে দেন।’ আরেক নেতা লিখেছেন, ‘দল গোল্লায় যাক, ওনাদের লাইম লাইটে থাকতে হবে।’ অন্যজন লিখেছেন, ‘যে যার মতো পোস্ট দিয়ে দিচ্ছেন, পাবলিক পোস্টে একজন অন্যজনের বক্তব্য খারিজ করছেন—এসব কী চলছে?’ তবে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করে সারজিসের পোস্টের মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন, ‘এসব কি ভাই। পাবলিকলিই বলছি—দুইজনের একজন মিথ্যা বলছেন।...সরি আর চুপ থাকতে পারলাম না।’
ওদিকে হাসনাত সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার পর সেনাবাহিনী বলেছে, ‘হাসনাত আবদুল্লাহর পোস্ট “সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি” বৈ অন্য কিছু নয়।’ হাসনাতের বক্তব্যকে ‘অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ব গল্পের সম্ভার’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে সেনাবাহিনী।
৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আমরা যে বাক্স্বাধীনতা পেয়েছি, তার সদ্ব্যবহার করতে গিয়ে মনে হয় মাঝে মধ্যে কেউ কেউ বেহিসেবি হয়ে পড়ছি। যে যখন মুখে যা আসছে তা-ই বলে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় কেউ কেউ সেনাবাহিনীকে নিয়েও মাত্রাতিরিক্ত বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন, যা সত্যিই অশোভনীয়। মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়ে এভাবে বক্তব্য রাখা বোধ হয় উচিত নয়। কিছুদিন যাবৎ সেনাবাহিনী নিয়ে এবি পার্টির ব্যারিস্টার ফুয়াদের কিছু বিকৃত রুচির বক্তব্য সবার দৃষ্টি কেড়েছে। আমি ভেবে অবাক হই একটি দলের সাধারণ সম্পাদক হয়ে একজন ব্যক্তি একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নিয়ে এমন অরুচিকর বক্তব্য দেন কী করে। সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের ‘চাকর-বাকর’-এর সঙ্গে তুলনা করে তিনি কী অর্জন করতে চান? কিছু কিছু ব্যক্তি মনে করেন বাক্স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে সেনাবাহিনীর মতো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নেগেটিভ কথা বলে অতি সহজেই জনপ্রিয় হওয়া যায়। আদতে তাই দেখছি, এ ধরনের সস্তা বক্তব্য দিয়ে অনেকেই সেলিব্রিটি হওয়ার পথ খুঁজে নিচ্ছেন। তবে এ কথা ঠিক, গত ১৫ বছর গদিচ্যুত শেখ হাসিনা, যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও দলীয় বিবেচনায় কিছু কিছু সেনা কর্মকর্তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা নিয়েছেন। এসব হঠাৎ পদ ও পদবি পাওয়া কর্মকর্তাদের কেউ কেউ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। যতদূর জেনেছি, স্বয়ং শেখ হাসিনাই তাঁদের দুর্নীতির সুযোগ করে দিয়েছেন। আমার বিশ্বাস, তাঁদের দুর্নীতির কথা জেনেও শেখ হাসিনা কোনো প্রকার ব্যবস্থা না নিয়ে, দলের স্বার্থেই তাঁদের অন্যায়ভাবে ব্যবহার করেছেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর এসব কর্মকর্তার দুর্নীতির সব তথ্যই ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে। এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা পুরো সেনাবাহিনীর মধ্যে শতকরা কতজন হবেন? তাই বলে কি পুরো সেনাবাহিনীকেই এভাবে গালমন্দ করতে হবে?
যাঁরা সেনাবাহিনীকে নিয়ে বিষোদ্গার করছেন তাঁদের মনে রাখা উচিত একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সম্পন্ন হতো না, যদি সেদিন বাঙালি সেনাসদস্যরা নিজেদের আত্মবলিদান না দিতেন। নব্বইয়ের এরশাদের পতন হতো না, তরুণ কর্মকর্তারা যদি সেদিন মিছিলের ওপর গুলিবর্ষণ করতে অস্বীকার না করতেন। চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনারও এত সহজে পতন হতো না, যদি ছাত্র-জনতার পাশে সেনাবাহিনী না দাঁড়াত। সস্তা বক্তব্য দিয়ে যাঁরা সহজেই জনপ্রিয় হতে চান তাঁদের মনে রাখতে হবে, প্রকাশ্যে নির্ভয়ে-নির্দ্বিধায় যে বড় বড় বক্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছেন, তা তো জুলাই গণ-অভ্যুত্থানেরই ফল। বিকৃত রুচির বক্তব্য দিয়ে কিছুই অর্জন করা যায় না, বরং তাতে বিকৃত মানসিকতারই পরিচয় পাওয়া যায়। কারোর বিরুদ্ধে আপত্তি থাকতে পারে, তাই বলে পুরো বাহিনীকে নিয়ে দোষারোপ করা ঠিক নয়। জাতীয় স্বার্থেই সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করা উচিত নয়। কথা বলার আগে আমাদের সৌজন্যবোধ বজায় রেখে কথা বলা উচিত। শুধু সেনাবাহিনী বলে নয়, যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কথা বলার সময়েও ন্যূনতম সৌজন্য বজায় রাখা উচিত।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলাম লেখক

কয়েক দিন ধরেই সেনাবাহিনী নিয়ে গণমাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে। নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) নামক অপর একটি দলের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদের কিছু বক্তব্য এই আলোচনার সূত্রপাত ঘটিয়েছে। তাঁদের বক্তব্য যেমন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, তেমনই দেশের মানুষের মনে আশঙ্কাও তৈরি করেছে। বিশেষ করে হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্য জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্যকে বক্তব্য না বলে অভিযোগ বলাই ভালো হবে। কারণ, তিনি ফেসবুকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধানের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ উত্থাপন করে চারদিকে যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন, এর আগে কখনো এ রকম পরিস্থিতি হয়নি। তাঁর অভিযোগ কম-বেশি আমাদের সবারই জানা। এখানে উল্লেখ করে লেখার পরিসর বড় করে লাভ নেই। কিন্তু আমরা আশ্চর্যের সঙ্গে লক্ষ করেছি, দলটির মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী সিলেটে তাঁর দলের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘হাসনাতের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা উচিত হয়নি। আমরা মনে করি, এটা শিষ্টাচারবর্জিত একটি স্ট্যাটাস হয়েছে।’ নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীর বক্তব্যের ঠিক পরদিনই এনসিপির আরেক সংগঠক সারজিস আলম হাসনাতের বক্তব্যের সঙ্গে কিছুটা দ্বিমত পোষণ করে আরেকটি বক্তব্য তাঁর ফেসবুকে পোস্ট করেন। সারজিস আলম ও হাসনাত দুজনেই ১১ মার্চ ঢাকা সেনানিবাসে সেনাবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেনাপ্রধান ক্যান্টনমেন্টে তাঁদের ডেকে নিয়েছেন বলে হাসনাত যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সরাসরি নাকচ করে সারজিস আলম লিখেছেন, ‘সেদিন সেনানিবাসে আমাদের ডেকে নেওয়া হয়নি।’ সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজকে দেওয়া সেনাসদরের বক্তব্যেও বলা হয়েছে, এনসিপির সংগঠকদের আগ্রহেই সেনাপ্রধান তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ দেওয়ায় সম্মতি দিয়েছিলেন। অতএব এই বিষয়ে হাসনাতের বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
হাসনাত আরও লিখেছেন, ‘আমাদের প্রস্তাব দেওয়া হয়, আসন সমঝোতার বিনিময়ে আমরা যেন এই (ইনক্লুসিভ নির্বাচন) প্রস্তাব মেনে নিই। আমাদের বলা হয়, ইতিমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।...একটি বিরোধী দল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা নাকি ভালো।’ এ বিষয়েও সারজিস স্পষ্ট করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘আমার জায়গা থেকে আমি সেদিনের (সেনাবাহিনী প্রধান) বক্তব্যকে সরাসরি “প্রস্তাব” দেওয়ার আঙ্গিকে দেখি না বরং “সরাসরি অভিমত প্রকাশ”র মতো করে দেখি। “অভিমত প্রকাশ” এবং “প্রস্তাব দেওয়া” দুটি বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। পাশাপাশি “রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ”র জন্য “চাপ দেওয়া”র যে বিষয়টি (হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্য) এসেছে সেখানে “চাপ দেওয়া হয়েছে” এমনটি মনে হয়নি। বরং রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ না আসলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে সমস্যার সৃষ্টি হবে, সেটা তিনি অতি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলছিলেন।’ এ ছাড়া সারজিস জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে কি না, এই নির্বাচনে তারা থাকলে কী হবে; আবার না থাকলে কী হতে পারে—এসব সমীকরণে দেশের ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে, স্থিতিশীলতা কিংবা অস্থিতিশীলতা কোন পর্যায়ে যেতে পারে, সেসব নিয়ে কথা হয়েছে। এরূপ অনেক বিষয়ের মধ্যে সারজিস আরও লিখেছেন, ‘কিন্তু যেই টোনে হাসনাতের ফেসবুক লেখা উপস্থাপন করা হয়েছে, আমি মনে করি কনভারসেশন ততটা এক্সট্রিম ছিল না। তবে অন্য কোনো দিনের চেয়ে অবশ্যই স্ট্রেইট-ফরওয়ার্ড এবং সো-কনফিডেন্ট ছিল। দেশের স্থিতিশীলতার রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের ইলেকশনে অংশগ্রহণ করা যে প্রয়োজনীয়, সেই বিষয়ে সরাসরি অভিমত ছিল।’
সারজিসের বক্তব্য শুনে মনে হয় সেনাবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে সেদিন তাঁদের অনেক বিষয় নিয়েই কথা হয়েছে, তার মধ্যে আওয়ামী লীগের বিষয়টিও আলোচিত হয়েছে। দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে কথায় কথায় আওয়ামী লীগের প্রসঙ্গ আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পূর্বশর্ত হিসেবে সব দলের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের বিষয়টি আসতে পারে এবং সে প্রসঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রধান হয়তো অভিমত ব্যক্ত করেছেন। হাসনাত এই বিষয়টিকেই ফেসবুকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন যে সবার কাছে সেনাপ্রধান সম্পর্কে একটি ভুল বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আমার বিশ্বাস, হাসনাত তাঁর অপরিপক্বতার বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। এ কারণেই হয়তো সারজিসের ফেসবুক পোস্টের পর তিনি আর উচ্চবাচ্য করেননি।
হাসনাত ও সারজিসের ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে মনে হয়েছে সাফল্যের সঙ্গে গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিতে পারলেও রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় তাঁরা উভয়ে অনেক পিছিয়ে আছেন। একটি কথা মনে রাখতে হবে, তাঁরা এখন আর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক নন। তাঁরা একটি নবগঠিত রাজনৈতিক দলের সংগঠক। কাজেই তাঁদের চালচলনে-কথাবার্তায় পরিপক্বতা থাকতে হবে। সেনাবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করে সেখানে কী আলোচনা হলো, সে বিষয়ে কি তাঁরা দলীয় পর্যায়ে কোনো আলোচনাই করেননি? দলীয় পর্যায়ে আলোচনা করেই বিবৃতি দেওয়া উচিত ছিল। এ ব্যাপারটি যে ঘটেনি, তা সহজেই অনুমান করা যায়, সারজিসের ফেসবুক স্ট্যাটাস দেওয়ার পর দলের অন্য নেতাদের তির্যক মন্তব্যগুলো দেখে। যাঁরা মন্তব্য করেছেন তাঁরাও যে প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন, তা নয়। খালেদ সাইফুল্লাহ নামের এক নেতা হাসনাত ও সারজিসের প্রতি ইঙ্গিত করে লিখেছেন, ‘ব্যক্তিগত রাজনীতি হাসিলের জন্য তারা যখন যা ইচ্ছে বলে বেড়াচ্ছেন; সেগুলো যে স্ববিরোধী হয়ে যাচ্ছে, সেটি নিয়েও তাদের কোনো উদ্বেগ নেই। যদি সেলিব্রিটি ফেইস, কন্ট্রোভার্সি আর পপুলিজম দিয়েই রাজনীতি করতে চান, তাহলে আমাদের পার্টি থেকে বাদ দিয়ে “টিকটকারদের” এনে বসিয়ে দেন।’ আরেক নেতা লিখেছেন, ‘দল গোল্লায় যাক, ওনাদের লাইম লাইটে থাকতে হবে।’ অন্যজন লিখেছেন, ‘যে যার মতো পোস্ট দিয়ে দিচ্ছেন, পাবলিক পোস্টে একজন অন্যজনের বক্তব্য খারিজ করছেন—এসব কী চলছে?’ তবে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করে সারজিসের পোস্টের মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন, ‘এসব কি ভাই। পাবলিকলিই বলছি—দুইজনের একজন মিথ্যা বলছেন।...সরি আর চুপ থাকতে পারলাম না।’
ওদিকে হাসনাত সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার পর সেনাবাহিনী বলেছে, ‘হাসনাত আবদুল্লাহর পোস্ট “সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি” বৈ অন্য কিছু নয়।’ হাসনাতের বক্তব্যকে ‘অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ব গল্পের সম্ভার’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে সেনাবাহিনী।
৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আমরা যে বাক্স্বাধীনতা পেয়েছি, তার সদ্ব্যবহার করতে গিয়ে মনে হয় মাঝে মধ্যে কেউ কেউ বেহিসেবি হয়ে পড়ছি। যে যখন মুখে যা আসছে তা-ই বলে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় কেউ কেউ সেনাবাহিনীকে নিয়েও মাত্রাতিরিক্ত বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন, যা সত্যিই অশোভনীয়। মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়ে এভাবে বক্তব্য রাখা বোধ হয় উচিত নয়। কিছুদিন যাবৎ সেনাবাহিনী নিয়ে এবি পার্টির ব্যারিস্টার ফুয়াদের কিছু বিকৃত রুচির বক্তব্য সবার দৃষ্টি কেড়েছে। আমি ভেবে অবাক হই একটি দলের সাধারণ সম্পাদক হয়ে একজন ব্যক্তি একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নিয়ে এমন অরুচিকর বক্তব্য দেন কী করে। সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের ‘চাকর-বাকর’-এর সঙ্গে তুলনা করে তিনি কী অর্জন করতে চান? কিছু কিছু ব্যক্তি মনে করেন বাক্স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে সেনাবাহিনীর মতো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নেগেটিভ কথা বলে অতি সহজেই জনপ্রিয় হওয়া যায়। আদতে তাই দেখছি, এ ধরনের সস্তা বক্তব্য দিয়ে অনেকেই সেলিব্রিটি হওয়ার পথ খুঁজে নিচ্ছেন। তবে এ কথা ঠিক, গত ১৫ বছর গদিচ্যুত শেখ হাসিনা, যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও দলীয় বিবেচনায় কিছু কিছু সেনা কর্মকর্তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা নিয়েছেন। এসব হঠাৎ পদ ও পদবি পাওয়া কর্মকর্তাদের কেউ কেউ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। যতদূর জেনেছি, স্বয়ং শেখ হাসিনাই তাঁদের দুর্নীতির সুযোগ করে দিয়েছেন। আমার বিশ্বাস, তাঁদের দুর্নীতির কথা জেনেও শেখ হাসিনা কোনো প্রকার ব্যবস্থা না নিয়ে, দলের স্বার্থেই তাঁদের অন্যায়ভাবে ব্যবহার করেছেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর এসব কর্মকর্তার দুর্নীতির সব তথ্যই ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে। এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা পুরো সেনাবাহিনীর মধ্যে শতকরা কতজন হবেন? তাই বলে কি পুরো সেনাবাহিনীকেই এভাবে গালমন্দ করতে হবে?
যাঁরা সেনাবাহিনীকে নিয়ে বিষোদ্গার করছেন তাঁদের মনে রাখা উচিত একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সম্পন্ন হতো না, যদি সেদিন বাঙালি সেনাসদস্যরা নিজেদের আত্মবলিদান না দিতেন। নব্বইয়ের এরশাদের পতন হতো না, তরুণ কর্মকর্তারা যদি সেদিন মিছিলের ওপর গুলিবর্ষণ করতে অস্বীকার না করতেন। চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনারও এত সহজে পতন হতো না, যদি ছাত্র-জনতার পাশে সেনাবাহিনী না দাঁড়াত। সস্তা বক্তব্য দিয়ে যাঁরা সহজেই জনপ্রিয় হতে চান তাঁদের মনে রাখতে হবে, প্রকাশ্যে নির্ভয়ে-নির্দ্বিধায় যে বড় বড় বক্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছেন, তা তো জুলাই গণ-অভ্যুত্থানেরই ফল। বিকৃত রুচির বক্তব্য দিয়ে কিছুই অর্জন করা যায় না, বরং তাতে বিকৃত মানসিকতারই পরিচয় পাওয়া যায়। কারোর বিরুদ্ধে আপত্তি থাকতে পারে, তাই বলে পুরো বাহিনীকে নিয়ে দোষারোপ করা ঠিক নয়। জাতীয় স্বার্থেই সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করা উচিত নয়। কথা বলার আগে আমাদের সৌজন্যবোধ বজায় রেখে কথা বলা উচিত। শুধু সেনাবাহিনী বলে নয়, যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কথা বলার সময়েও ন্যূনতম সৌজন্য বজায় রাখা উচিত।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলাম লেখক

মোশাহিদা সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘সর্বজনকথা’র প্রকাশক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি, ভবঘুরে ও হকার উচ্ছেদের কারণ এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তিনি...
৮ ঘণ্টা আগে
মানুষের জীবনের একটা অনিবার্য পরিণতি—মৃত্যু, সে এক প্রাকৃতিক বিষয়। যেমন মেঘ, বৃষ্টি, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত—যার ওপর মানুষের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, তেমনই। কিন্তু কিছু মানুষের মৃত্যু হলে আমরা বলে থাকি, একটা শূন্যতার সৃষ্টি হলো, যে শূন্যতা দেখা যায় না, কিন্তু অনুভব করি আমরা বহু দিন, বহু বর্ষ, বহু শতাব্দী।
৯ ঘণ্টা আগে
দেশে বড় বড় কত ঘটনা ঘটে চলেছে, অথচ সেদিকে চোখ না রেখে দিনাজপুরের বিরামপুর নিয়ে কেন সম্পাদকীয় লিখতে হবে, তার একটা ব্যাখ্যা থাকা দরকার। দেশের রাজনীতিতে প্রতিটি মুহূর্তেই জন্ম নিচ্ছে নতুন বাস্তবতা। একটি রাজনৈতিক দলকে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে অন্য এক দলের সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী, পর মুহূর্তেই দেখা যাচ্ছে, সেই
৯ ঘণ্টা আগে
এখন নাকি বানর আর শূকরের পালকেই দেখা যায় লাউয়াছড়ায়। বিরল প্রজাতির অনেক পাখি ও প্রাণী বাস করত এই সংরক্ষিত বনে। কিন্তু সেসব লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বনটিকে নিজেদের অভয়ারণ্য বলে হয়তো ভাবতে পারছে না তারা।
১ দিন আগে
মোশাহিদা সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘সর্বজনকথা’র প্রকাশক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি, ভবঘুরে ও হকার উচ্ছেদের কারণ এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানার সঙ্গে।
মাসুদ রানা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি এবং হকার উচ্ছেদের মূল কারণ কী? শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে?
চা-দোকানি ও হকাররা ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেন, এ রকম তথ্য আমরা এর আগে শুনিনি বা পাইনি। যেটা আমরা জেনেছি, এখানে কিছু ভবঘুরে, পাগল থাকেন; বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা তাঁদের কাছে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এখানে মাদকাসক্তদের আড্ডার বিষয়টা বড় করে উপস্থাপন করা হয়। সেসবের সঙ্গে হকারদের কোনো সম্পর্ক আছে বলে আমাদের ধারণা নেই। ধারণা নেই বলতে বোঝাতে চাচ্ছি, আসলে তাঁদের সঙ্গে এসবের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, যদি সম্পর্ক থাকত, তাহলে ক্যাম্পাসের পাশে যে শাহবাগ থানা আছে, তারা তা জানত। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কারা মাদক বিক্রি করে, সেটা তারা জানে এবং চাইলে তাদেরকে ধরতে পারে। কিন্তু চা-বিক্রেতা বা হকারদের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
ডাকসুর কোনো প্রতিনিধি কি এভাবে হকার উচ্ছেদ করতে পারেন? এটা তো প্রশাসনের দায়িত্বে হওয়ার কথা?
সত্যি বলতে কি, ডাকসু প্রতিনিধিদের এগুলো করার কথা নয়। এটা যাঁরা করেছেন, তাঁরা নিয়মবহির্ভূতভাবেই করেছেন। এটা করার কোনো এখতিয়ার তাঁদের নেই। তাঁরা বরং প্রশাসনের কাছে দাবি তুলতে পারেন, আপনারা এখান থেকে চা-দোকানি ও হকারদের সরিয়ে নিন এবং এখানে একটা বিকল্প ব্যবস্থা করুন। এখানে চা-দোকানি বা হকাররা কেন এসেছেন? ক্যাম্পাসে সস্তা খাবারের চাহিদা আছে বলেই তাঁরা এখানে ব্যবসা করতে পারছেন। এখানে মেট্রোরেলের কারণে মানুষের যাতায়াত আছে। দুপুর ও রাতের খাবারের পরেও শিক্ষার্থীদের খিদে লাগাটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তাঁরাই কিন্তু এসব দোকানের বড় কনজ্যুমার বা ভোক্তা।
এখন তাঁরা যদি বলেন, এখানে কেন তাঁরা এলেন, কেন তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হলো? তাহলে বলতে হবে, সেটা তো দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছেন। সবার জানা থাকার কথা, জুলাই আন্দোলনের সময় এই মানুষগুলোই শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। অনেক সময় তাঁরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা বিপদগ্রস্ত হলে তাঁদের আশ্রয় দিয়েছেন এবং বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের সাহায্যও করেছেন। এভাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হকার বা চা-দোকানিদের একটা দীর্ঘ সময়ের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
আরেকটা বিষয় লক্ষ করার মতো, তাঁদের বেশির ভাগই একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানটিন বয় ছিলেন নতুবা ক্যানটিনের অন্য কাজ করেছেন। এ ধরনের লোকজন অবসর সময়ে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এভাবে তাঁরা আবার ক্যাম্পাসের ইকোসিস্টেমের অংশ হয়ে গেছেন। এঁদেরকে বহিরাগত হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
উচ্ছেদ করা দোকানি বা হকারদের বিরুদ্ধে ‘মাদক কারবারি’র অভিযোগ আনা হয়েছে। ঢালাওভাবে সবাইকে অভিযুক্ত করা কতটা যৌক্তিক?
ক্যাম্পাসে একটা সিস্টেম থাকা দরকার। কাদেরকে এবং কীভাবে বসার অনুমতি দেওয়া হবে? এই অনুমতি যদি কেউ ভেতরে ভেতরে দিয়ে থাকে, কোনো চাঁদাবাজির ব্যাপার থাকে এবং সেখান থেকে কোনো অর্থ আয়ের ব্যাপার থাকে, তাহলে তাঁরা কোনোভাবেই সিস্টেমের মধ্যে আসতে চাইবেন না। সেটা আইনি পথ নয়। লিখিত অনুমতি না থাকায় মুখে মুখে একধরনের অনুমতি দেওয়ার মতো ব্যাপার। অর্থাৎ মৌখিক চুক্তি।
যেটাকে তাঁরা আইনবহির্ভূত বলছেন, সেটার কি কোনো লিখিত দলিল আছে? লিখিত থাকলে সেটা দেখার বিষয়। যদি কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাহলে তার তো একটা নীতিমালা থাকা উচিত। সেই নীতিমালা অনুযায়ী হকারদের বসতে দেওয়া হবে। কিন্তু সেটা তো আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
ডাকসুর পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযানে সরাসরি যুক্ত হওয়া কি সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করার চেয়ে প্রশাসন বা অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার ইঙ্গিত দেয় না?
প্রশাসন বা অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার ইঙ্গিত দেয় কি না, সেটা তো আমরা জানি না। তবে অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ জড়িত থাকতে পারে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এ ধরনের কাজ করার কথা নয়। এর মধ্যে আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি, বিভিন্ন জায়গায় স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে, সেখানে দু-তিন রাতের মধ্যে দোকান বসানো হয়েছে। এই দোকানগুলো বসানো হয়েছে নতুন প্রশাসন আসার পর। তাঁরা কীভাবে এখানে এসে দোকান খুলতে পারলেন? এখানে নিশ্চয় কোনো গোষ্ঠীস্বার্থের ব্যাপার আছে, যারা এই নতুন দোকানিদের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। অনুমান করতে পারি, এখানে কোনো না কোনোভাবে একটা বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ থাকতে পারে।
যে বামপন্থী ছাত্রনেতারা এসবের বিরোধিতা করেছেন, তাঁদেরকে ‘গাঞ্জাটিয়া’সহ আপত্তিকর শব্দে গালি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের ভাষার ব্যবহার কি ছাত্ররাজনীতির পরিবেশকে বিব্রত করে না?
যাঁরা এভাবে কথা বলছেন, তাঁদের একটা বিশেষ উদ্দেশ্য আছে। উদ্দেশ্যটা হলো, যাঁরা তাঁদের এসব অপকর্মে বাধা দিচ্ছেন, তাঁদের কোনো না কোনোভাবে মানুষের কাছে হেয় করা। আমাদের সমাজব্যবস্থা অনুযায়ী, কাউকে হেয়, অপমান করা এবং ট্যাগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে এমনভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়, যেন তাঁরা ভবিষ্যতে কোনো ঘটনায় প্রতিবাদ করতে না পারেন। সেই উদ্দেশ্য থেকে বামপন্থীদের ‘গাঞ্জাটিয়া’ এবং ভবঘুরে ও হকারদের সক্রিয়ভাবে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। কোনো বামপন্থী বা সাধারণ শিক্ষার্থী বলেননি যে তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা চান না। বামপন্থী ছাত্রনেতারা কিন্তু একটা প্রক্রিয়ার কথা বলেছেন।
এখন হকার উচ্ছেদ করা হচ্ছে। কিছুদিন পর অন্য কোনো হকার অন্য প্রক্রিয়ায় ফিরে আসতে পারেন। তাঁরাই যদি আবার নারী শিক্ষার্থীদের গোপনে ছবি তোলেন বা ভিডিও করেন? সেটার কী হবে?
ডাকসু প্রতিনিধি সত্যি সত্যি নিরাপত্তার কথা ভেবে থাকলে আগে তাঁদেরকে জানতে হবে, কোন কোন বিষয় একজন নারী শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তাহীন করে তোলে। শিক্ষার্থীরা কি অভিযোগ করেছেন, যাঁরা প্রকাশ্যে খাবার বিক্রি করেন, তাঁরা নারী শিক্ষার্থীদের যৌন কোনো ইঙ্গিত দিয়েছেন কিংবা শ্লীলতাহানি করেছেন? অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ডাকসুর যে দুজন প্রতিনিধি হকার ও চা-দোকানিদের পিটিয়েছেন, তাঁরা কিন্তু অভিযোগ করেছেন, তাঁরা মাদকাসক্তি নির্মূল করছেন। ব্যাপারটিকে তাঁরা ঘুরিয়ে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন, যাঁরা এটার বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাঁরা (বামপন্থীরা) যেন মুখ খুলতে না পারেন।
এই পুরো ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা কতটা নিরপেক্ষ ছিল বলে আপনি মনে করেন?
আমার মনে হয়, ডাকসুতে যাঁরা প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা একটা বিশেষ দলের আজ্ঞাবহ হয়ে সুচিন্তিতভাবে এ কাজগুলো করছেন। ডাকসুর প্রতিনিধিরা প্রশাসনের ওপর ধারাবাহিকভাবে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন, যাতে প্রশাসন কোনো ভূমিকা না নেয়। এই সুযোগে ছাত্রপ্রতিনিধিরা ভূমিকা গ্রহণ করছেন। এ কারণে আমি এ ঘটনাকে প্রশাসনিক ব্যর্থতা বলব।
ডাকসুর গঠনতন্ত্রে এসব না থাকার পরেও তাঁরা এটা কীভাবে করতে পারলেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা কি এড়াতে পারে?
এই প্রশাসন কিন্তু আরও অনেক কিছু করেনি। তাদের দায়িত্বের কাজ না করার কারণে এখানে অনেক ঘটনা ঘটেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাম্য হত্যাকাণ্ড হয়েছে। ওই সময় কিন্তু ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আসার নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিল। তা সত্ত্বেও এ ঘটনা ঘটেছে। সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রশাসন করতে পারেনি।
কোনো বহিরাগত ক্যাম্পাসে এসে কোনো নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করেছে, সে রকম কিছু আমরা শুনিনি। কিন্তু আমরা দেখেছি, বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন কর্মচারী একজন নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করেছেন। তাঁর অপরাধের কারণে তাঁকে থানায় পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তাঁকে থানা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছে, তাঁকে ফুলের মালাও পরানো হয়েছে।
এই উদাহরণগুলো থেকে বোঝা যায়, প্রশাসন আসলে কোনো ধরনের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়নি। তার কারণে ঘটনাগুলো বারবার ঘটছে।
গত সরকারের সময় ছাত্রলীগ যে অপকর্মগুলো করেছিল, বর্তমান ডাকসু নেতৃত্ব কি সেদিকে অগ্রসর হচ্ছেন বলে আপনি মনে করেন?
আগে ছাত্রলীগ যা করত, এখনকার ডাকসু প্রতিনিধিরা কম কিছু করছেন না। এগুলো নিয়ে তাঁদের মধ্যে কোনো অনুশোচনাও নেই। তাঁরা বলছেন, বামপন্থীদের ঠ্যাং ভেঙে দেবেন। যাঁরা ঘটনাগুলোর প্রতিবাদ করছেন, তাঁদেরকে হেয় করছেন। বিভিন্নভাবে তাঁদেরকে অপমান করা ও অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, একটা ভিডিওতে দেখা গেছে, একজন ভবঘুরের ব্যক্তিগত ব্যাগ থেকে জিনিসপত্র বের করার সঙ্গে কনডম পাওয়ার ঘটনাটি প্রচার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী কি কারও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে পারেন? কিছুদিন আগে আমাদের একজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, দুই প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য তাঁর মোবাইল ফোন চেক করেছেন। এই যে ধারাটা শুরু হয়েছে, তাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়ভীতি ঢোকানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবেন না।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি এবং হকার উচ্ছেদের মূল কারণ কী? শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে?
চা-দোকানি ও হকাররা ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেন, এ রকম তথ্য আমরা এর আগে শুনিনি বা পাইনি। যেটা আমরা জেনেছি, এখানে কিছু ভবঘুরে, পাগল থাকেন; বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা তাঁদের কাছে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এখানে মাদকাসক্তদের আড্ডার বিষয়টা বড় করে উপস্থাপন করা হয়। সেসবের সঙ্গে হকারদের কোনো সম্পর্ক আছে বলে আমাদের ধারণা নেই। ধারণা নেই বলতে বোঝাতে চাচ্ছি, আসলে তাঁদের সঙ্গে এসবের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, যদি সম্পর্ক থাকত, তাহলে ক্যাম্পাসের পাশে যে শাহবাগ থানা আছে, তারা তা জানত। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কারা মাদক বিক্রি করে, সেটা তারা জানে এবং চাইলে তাদেরকে ধরতে পারে। কিন্তু চা-বিক্রেতা বা হকারদের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
ডাকসুর কোনো প্রতিনিধি কি এভাবে হকার উচ্ছেদ করতে পারেন? এটা তো প্রশাসনের দায়িত্বে হওয়ার কথা?
সত্যি বলতে কি, ডাকসু প্রতিনিধিদের এগুলো করার কথা নয়। এটা যাঁরা করেছেন, তাঁরা নিয়মবহির্ভূতভাবেই করেছেন। এটা করার কোনো এখতিয়ার তাঁদের নেই। তাঁরা বরং প্রশাসনের কাছে দাবি তুলতে পারেন, আপনারা এখান থেকে চা-দোকানি ও হকারদের সরিয়ে নিন এবং এখানে একটা বিকল্প ব্যবস্থা করুন। এখানে চা-দোকানি বা হকাররা কেন এসেছেন? ক্যাম্পাসে সস্তা খাবারের চাহিদা আছে বলেই তাঁরা এখানে ব্যবসা করতে পারছেন। এখানে মেট্রোরেলের কারণে মানুষের যাতায়াত আছে। দুপুর ও রাতের খাবারের পরেও শিক্ষার্থীদের খিদে লাগাটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তাঁরাই কিন্তু এসব দোকানের বড় কনজ্যুমার বা ভোক্তা।
এখন তাঁরা যদি বলেন, এখানে কেন তাঁরা এলেন, কেন তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হলো? তাহলে বলতে হবে, সেটা তো দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছেন। সবার জানা থাকার কথা, জুলাই আন্দোলনের সময় এই মানুষগুলোই শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। অনেক সময় তাঁরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা বিপদগ্রস্ত হলে তাঁদের আশ্রয় দিয়েছেন এবং বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের সাহায্যও করেছেন। এভাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হকার বা চা-দোকানিদের একটা দীর্ঘ সময়ের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
আরেকটা বিষয় লক্ষ করার মতো, তাঁদের বেশির ভাগই একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানটিন বয় ছিলেন নতুবা ক্যানটিনের অন্য কাজ করেছেন। এ ধরনের লোকজন অবসর সময়ে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এভাবে তাঁরা আবার ক্যাম্পাসের ইকোসিস্টেমের অংশ হয়ে গেছেন। এঁদেরকে বহিরাগত হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
উচ্ছেদ করা দোকানি বা হকারদের বিরুদ্ধে ‘মাদক কারবারি’র অভিযোগ আনা হয়েছে। ঢালাওভাবে সবাইকে অভিযুক্ত করা কতটা যৌক্তিক?
ক্যাম্পাসে একটা সিস্টেম থাকা দরকার। কাদেরকে এবং কীভাবে বসার অনুমতি দেওয়া হবে? এই অনুমতি যদি কেউ ভেতরে ভেতরে দিয়ে থাকে, কোনো চাঁদাবাজির ব্যাপার থাকে এবং সেখান থেকে কোনো অর্থ আয়ের ব্যাপার থাকে, তাহলে তাঁরা কোনোভাবেই সিস্টেমের মধ্যে আসতে চাইবেন না। সেটা আইনি পথ নয়। লিখিত অনুমতি না থাকায় মুখে মুখে একধরনের অনুমতি দেওয়ার মতো ব্যাপার। অর্থাৎ মৌখিক চুক্তি।
যেটাকে তাঁরা আইনবহির্ভূত বলছেন, সেটার কি কোনো লিখিত দলিল আছে? লিখিত থাকলে সেটা দেখার বিষয়। যদি কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাহলে তার তো একটা নীতিমালা থাকা উচিত। সেই নীতিমালা অনুযায়ী হকারদের বসতে দেওয়া হবে। কিন্তু সেটা তো আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
ডাকসুর পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযানে সরাসরি যুক্ত হওয়া কি সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করার চেয়ে প্রশাসন বা অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার ইঙ্গিত দেয় না?
প্রশাসন বা অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার ইঙ্গিত দেয় কি না, সেটা তো আমরা জানি না। তবে অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ জড়িত থাকতে পারে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এ ধরনের কাজ করার কথা নয়। এর মধ্যে আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি, বিভিন্ন জায়গায় স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে, সেখানে দু-তিন রাতের মধ্যে দোকান বসানো হয়েছে। এই দোকানগুলো বসানো হয়েছে নতুন প্রশাসন আসার পর। তাঁরা কীভাবে এখানে এসে দোকান খুলতে পারলেন? এখানে নিশ্চয় কোনো গোষ্ঠীস্বার্থের ব্যাপার আছে, যারা এই নতুন দোকানিদের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। অনুমান করতে পারি, এখানে কোনো না কোনোভাবে একটা বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ থাকতে পারে।
যে বামপন্থী ছাত্রনেতারা এসবের বিরোধিতা করেছেন, তাঁদেরকে ‘গাঞ্জাটিয়া’সহ আপত্তিকর শব্দে গালি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের ভাষার ব্যবহার কি ছাত্ররাজনীতির পরিবেশকে বিব্রত করে না?
যাঁরা এভাবে কথা বলছেন, তাঁদের একটা বিশেষ উদ্দেশ্য আছে। উদ্দেশ্যটা হলো, যাঁরা তাঁদের এসব অপকর্মে বাধা দিচ্ছেন, তাঁদের কোনো না কোনোভাবে মানুষের কাছে হেয় করা। আমাদের সমাজব্যবস্থা অনুযায়ী, কাউকে হেয়, অপমান করা এবং ট্যাগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে এমনভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়, যেন তাঁরা ভবিষ্যতে কোনো ঘটনায় প্রতিবাদ করতে না পারেন। সেই উদ্দেশ্য থেকে বামপন্থীদের ‘গাঞ্জাটিয়া’ এবং ভবঘুরে ও হকারদের সক্রিয়ভাবে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। কোনো বামপন্থী বা সাধারণ শিক্ষার্থী বলেননি যে তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা চান না। বামপন্থী ছাত্রনেতারা কিন্তু একটা প্রক্রিয়ার কথা বলেছেন।
এখন হকার উচ্ছেদ করা হচ্ছে। কিছুদিন পর অন্য কোনো হকার অন্য প্রক্রিয়ায় ফিরে আসতে পারেন। তাঁরাই যদি আবার নারী শিক্ষার্থীদের গোপনে ছবি তোলেন বা ভিডিও করেন? সেটার কী হবে?
ডাকসু প্রতিনিধি সত্যি সত্যি নিরাপত্তার কথা ভেবে থাকলে আগে তাঁদেরকে জানতে হবে, কোন কোন বিষয় একজন নারী শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তাহীন করে তোলে। শিক্ষার্থীরা কি অভিযোগ করেছেন, যাঁরা প্রকাশ্যে খাবার বিক্রি করেন, তাঁরা নারী শিক্ষার্থীদের যৌন কোনো ইঙ্গিত দিয়েছেন কিংবা শ্লীলতাহানি করেছেন? অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ডাকসুর যে দুজন প্রতিনিধি হকার ও চা-দোকানিদের পিটিয়েছেন, তাঁরা কিন্তু অভিযোগ করেছেন, তাঁরা মাদকাসক্তি নির্মূল করছেন। ব্যাপারটিকে তাঁরা ঘুরিয়ে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন, যাঁরা এটার বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাঁরা (বামপন্থীরা) যেন মুখ খুলতে না পারেন।
এই পুরো ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা কতটা নিরপেক্ষ ছিল বলে আপনি মনে করেন?
আমার মনে হয়, ডাকসুতে যাঁরা প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা একটা বিশেষ দলের আজ্ঞাবহ হয়ে সুচিন্তিতভাবে এ কাজগুলো করছেন। ডাকসুর প্রতিনিধিরা প্রশাসনের ওপর ধারাবাহিকভাবে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন, যাতে প্রশাসন কোনো ভূমিকা না নেয়। এই সুযোগে ছাত্রপ্রতিনিধিরা ভূমিকা গ্রহণ করছেন। এ কারণে আমি এ ঘটনাকে প্রশাসনিক ব্যর্থতা বলব।
ডাকসুর গঠনতন্ত্রে এসব না থাকার পরেও তাঁরা এটা কীভাবে করতে পারলেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা কি এড়াতে পারে?
এই প্রশাসন কিন্তু আরও অনেক কিছু করেনি। তাদের দায়িত্বের কাজ না করার কারণে এখানে অনেক ঘটনা ঘটেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাম্য হত্যাকাণ্ড হয়েছে। ওই সময় কিন্তু ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আসার নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিল। তা সত্ত্বেও এ ঘটনা ঘটেছে। সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রশাসন করতে পারেনি।
কোনো বহিরাগত ক্যাম্পাসে এসে কোনো নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করেছে, সে রকম কিছু আমরা শুনিনি। কিন্তু আমরা দেখেছি, বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন কর্মচারী একজন নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করেছেন। তাঁর অপরাধের কারণে তাঁকে থানায় পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তাঁকে থানা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছে, তাঁকে ফুলের মালাও পরানো হয়েছে।
এই উদাহরণগুলো থেকে বোঝা যায়, প্রশাসন আসলে কোনো ধরনের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়নি। তার কারণে ঘটনাগুলো বারবার ঘটছে।
গত সরকারের সময় ছাত্রলীগ যে অপকর্মগুলো করেছিল, বর্তমান ডাকসু নেতৃত্ব কি সেদিকে অগ্রসর হচ্ছেন বলে আপনি মনে করেন?
আগে ছাত্রলীগ যা করত, এখনকার ডাকসু প্রতিনিধিরা কম কিছু করছেন না। এগুলো নিয়ে তাঁদের মধ্যে কোনো অনুশোচনাও নেই। তাঁরা বলছেন, বামপন্থীদের ঠ্যাং ভেঙে দেবেন। যাঁরা ঘটনাগুলোর প্রতিবাদ করছেন, তাঁদেরকে হেয় করছেন। বিভিন্নভাবে তাঁদেরকে অপমান করা ও অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, একটা ভিডিওতে দেখা গেছে, একজন ভবঘুরের ব্যক্তিগত ব্যাগ থেকে জিনিসপত্র বের করার সঙ্গে কনডম পাওয়ার ঘটনাটি প্রচার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী কি কারও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে পারেন? কিছুদিন আগে আমাদের একজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, দুই প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য তাঁর মোবাইল ফোন চেক করেছেন। এই যে ধারাটা শুরু হয়েছে, তাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়ভীতি ঢোকানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবেন না।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।

কয়েক দিন ধরেই সেনাবাহিনী নিয়ে গণমাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে। নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) নামক অপর একটি দলের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান...
২৯ মার্চ ২০২৫
মানুষের জীবনের একটা অনিবার্য পরিণতি—মৃত্যু, সে এক প্রাকৃতিক বিষয়। যেমন মেঘ, বৃষ্টি, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত—যার ওপর মানুষের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, তেমনই। কিন্তু কিছু মানুষের মৃত্যু হলে আমরা বলে থাকি, একটা শূন্যতার সৃষ্টি হলো, যে শূন্যতা দেখা যায় না, কিন্তু অনুভব করি আমরা বহু দিন, বহু বর্ষ, বহু শতাব্দী।
৯ ঘণ্টা আগে
দেশে বড় বড় কত ঘটনা ঘটে চলেছে, অথচ সেদিকে চোখ না রেখে দিনাজপুরের বিরামপুর নিয়ে কেন সম্পাদকীয় লিখতে হবে, তার একটা ব্যাখ্যা থাকা দরকার। দেশের রাজনীতিতে প্রতিটি মুহূর্তেই জন্ম নিচ্ছে নতুন বাস্তবতা। একটি রাজনৈতিক দলকে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে অন্য এক দলের সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী, পর মুহূর্তেই দেখা যাচ্ছে, সেই
৯ ঘণ্টা আগে
এখন নাকি বানর আর শূকরের পালকেই দেখা যায় লাউয়াছড়ায়। বিরল প্রজাতির অনেক পাখি ও প্রাণী বাস করত এই সংরক্ষিত বনে। কিন্তু সেসব লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বনটিকে নিজেদের অভয়ারণ্য বলে হয়তো ভাবতে পারছে না তারা।
১ দিন আগেমামুনুর রশীদ

মানুষের জীবনের একটা অনিবার্য পরিণতি—মৃত্যু, সে এক প্রাকৃতিক বিষয়। যেমন মেঘ, বৃষ্টি, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত—যার ওপর মানুষের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, তেমনই। কিন্তু কিছু মানুষের মৃত্যু হলে আমরা বলে থাকি, একটা শূন্যতার সৃষ্টি হলো, যে শূন্যতা দেখা যায় না, কিন্তু অনুভব করি আমরা বহু দিন, বহু বর্ষ, বহু শতাব্দী। তেমনি সাম্প্রতিককালে আমরা একটা মৃত্যুর মিছিল দেখছি, যার সূচনা হয়েছে যতীন সরকার থেকে। যতীন সরকার ছিলেন নেত্রকোনার বারহাট্টা গ্রামের একজন ছাপোষা শিক্ষক। দেশ বিভাগের আগে একজন শিক্ষক কেমন ছিলেন, তা সহজে অনুমান করা যায়। কিন্তু তিনি বলেও গেছেন ছাত্রদের এবং কৌতূহলী মানুষদের, সেগুলো পাঠ্যপুস্তকের বিষয় নয়, আবার পাঠ্যবই থেকে পড়িয়েছেনও।
তাঁর অনেক মূল্যবান লেখার মধ্যে একটি লেখা, ‘পাকিস্তানের জন্ম মৃত্যু দর্শন।’ এই বইয়ে তিনি দার্শনিকতার সংজ্ঞা নির্ণয় করতে গিয়ে একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন। সেটি হচ্ছে, একটা পুকুরপাড়ে দেখা গেল অনেক মানুষের জটলা, কৌতূহলবশত সেখানে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এখানে কী হয়েছে?’ উত্তরে একজন এসে বললেন, ‘ঐ যে পুকুরে মাছ ধরছে।’ এর পরের জিজ্ঞাসা, ‘আপনারা কী করছেন?’ উত্তর, ‘আমরা দার্শনিক।’ কথাটা নেত্রকোনার একটি আঞ্চলিক কথা বটে, কিন্তু যতীন সরকার তাকে একটা দার্শনিক অভিধা দিয়েছেন। যিনি দর্শন করেন, তিনি তো দার্শনিক বটেই। পৃথিবীর সব দার্শনিকের দর্শনচিন্তার শিকড় তো সেটাই, কিন্তু তারপর তিনি কী দেখেন? শুধুই কি দেখা, নাকি এই দেখা মানবজাতির অভিজ্ঞতায় নতুন একটা উপাদান হিসেবে যুক্ত হলো, সেটাই দেখার বিষয়। যতীন সরকার লিখেছিলেন, ‘পাকিস্তানের জন্ম মৃত্যু দর্শন’। তিনি পাকিস্তানের জন্ম দেখেছিলেন, মৃত্যুও।
তাই তার আনুপূর্বিক বিষয়াদি নিয়ে তাঁর ভাবনা উপস্থিত করেছিলেন। পাঠক তাতে ঋদ্ধ হয়েছিল। এভাবে কোনো রাষ্ট্র নির্মাণ করা যায় কি না, তার ভবিষ্যৎই-বা কী দাঁড়ায়? বরং চিরতরে একটা সাম্প্রদায়িকতার উৎস এবং ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারকেই বেগবান করে তোলে। বাংলাদেশের প্রতিটি ঘটনায় তার উদ্বেগ শুধু নয়, একটা ব্যাখ্যাও আমাদের আলোড়িত করত। প্রায়ই একই সময়ে আরেকজন শিক্ষক, তিনি এসেছেন পশ্চিম বাংলার বর্ধমান ও কলকাতা থেকে—বদরুদ্দীন উমর।
পিতা আবুল হাশিমের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন দেখেছেন কিন্তু ছোটবেলা থেকে পরিবারের অন্য আত্মীয়দের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং সেই প্রভাব ছিল সাম্যবাদের পক্ষে। পাকিস্তানের দার্শনিক ভিত্তিটায় তিনি প্রথমেই আঘাত করেন। তাঁর যুগান্তকারী রচনা ‘সাম্প্রদায়িকতা’ ও ‘সংস্কৃতির সংকট’। বাঙালি মুসলমানের আত্মপরিচয়ের সংকটটিতেই যাদের ভাবনায় দেখা দেয়—‘আমরা বাঙালি না মুসলমান’। এই সময়ই তিনি ‘ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’ নামক বইটি লিখেছিলেন। সংকটটা যে তখন শুধু ভাষার ছিল না, সঙ্গে ছিল আরও অনেক ধরনের বাস্তবতা, তা এত সবিস্তারে যুক্তিসহযোগে তাঁর মতো আর কেউ উপস্থাপন করেননি। আমৃত্যু তিনি নিরলসভাবে বাংলা ও ইংরেজিতে লিখে গেছেন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভাষা আন্দোলন এতই গুরুত্বপূর্ণ এক ফলক, যাকে স্পর্শ না করে কোনোভাবেই হাঁটা যায় না। সেই পথ, সেই ঘটনার সাক্ষী আরেক লেখক, গবেষক আহমদ রফিক। পেশায় চিকিৎসক। ভাষা আন্দোলনের সময় ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র। ভাষা আন্দোলনের সাক্ষী শুধু নন, সংগঠক, নেতা এবং আজীবন ভাষার আলো তিনি ছড়িয়ে গেছেন। লেখক হিসেবে তাঁর দিগন্ত বিস্তৃত, কিন্তু তিনি শুধু ভাষা আন্দোলন নয়, ভাষার দর্শনেরও প্রবক্তা।
সম্প্রতি এই মৃত্যুর মিছিলে যিনি যুক্ত হয়েছেন, তিনি বয়সে তাঁদের চেয়ে ছোট হলেও ছিলেন দর্শনের ছাত্র। নিজেকে তিনি কখনোই শিক্ষক ভাবতেন না; বরং ছাত্র ভাবতেই অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি দর্শনকে ব্যাখ্যা করতে ভালোবাসতেন। সেই সঙ্গে ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র ও শিক্ষক হিসেবে একটা দিগন্তে তাঁর বিচরণ তো ছিলই। বিপুলসংখ্যক ছাত্র-অছাত্র-পাঠকের মধ্যে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের একটা প্রভাব তৈরি হয়েছিল, যা তাঁর মৃত্যুর পর নানা মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। তিনি গল্প, নাটক লিখেছেন, অসংখ্য প্রবন্ধের রচয়িতাও। এ দেশে যা একেবারেই দুর্লভ, সেই কাজও তিনি করেছেন। তা হলো চিত্রকলা ও সাহিত্যের সমালোচনা। এ কাজগুলো হয়তো আরও অনেকে করে থাকেন, কিন্তু মনজুরের যে আত্মগত অঙ্গীকার, তা একেবারেই দুর্লভ। স্বপ্রণোদিত হয়ে কোনো শিল্পীকে আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত করার কাজটিও তিনি প্রায় নিয়মিতই করতেন; বিশেষ করে তরুণদের নিয়ে। তিনি তরুণদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন নিয়মিত। সর্বোপরি আধুনিকতায়, চিন্তায়, মননে ও ব্যবহারিক জীবনে সব সময় আধুনিকতার চর্চাকে উৎসাহিত করতেন প্রবলভাবে। আধুনিক মনন একবার গ্রহণ করলে পূর্বাপর তাবৎ জ্ঞানকে একটা পরিশীলিত এবং সময়োপযোগী হিসেবে গ্রহণ করাটা সহজ হয়। সাধারণত মতাদর্শগত জ্ঞান এবং ভাবনা যদি গভীরভাবে মননে প্রোথিত হয়ে যায়, তাহলে মুক্তবুদ্ধিকে ধারণ করাও কঠিন হয়ে যেতে পারে।
যতীন সরকার যখন জন্মেছিলেন, তখন পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক দর্শন মার্ক্সবাদের প্রভাব সারা বিশ্বে স্পন্দিত হয়েছিল। বস্তুবাদী দর্শনের নিরিখে একধরনের গবেষণালব্ধ এবং যুক্তিতর্কের উপস্থাপনার সময় এসেছিল। বাড়ির পাশেই দেখতে পেয়েছিলেন টংক বিদ্রোহ, হাজং বিদ্রোহ। সেই সঙ্গে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ভারতীয় গণনাট্য সংঘ—এসব তাঁর চিন্তাকে নিশ্চয় অনুপ্রাণিত করেছিল। কিন্তু ওই পাকিস্তানের জন্ম মৃত্যু দর্শনের মধ্য দিয়ে একদা আবিষ্কার করলেন, তিনি সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছেন। সংখ্যালঘুর সেই জটিল নিরাপত্তাহীনতা সত্ত্বেও তিনি তাঁর
কথা নিঃসংকোচে লিখে গেছেন এবং প্রগতিশীল রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছেন।
বদরুদ্দীন উমরও ছিলেন একই সময়ের মানুষ। মার্ক্সবাদের দীক্ষায় তাঁর যৌবন ও উত্তরকাল কেটেছে। বাম রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্ক তাঁর এতই ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের কাজ ছেড়ে তিনি সার্বক্ষণিক রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে রাষ্ট্র, সমাজ, সরকার—সবই ছিল তাঁর তুখোড় সমালোচনার ক্ষেত্র। রাজনীতি কখনো দার্শনিকতা ও মুক্তবুদ্ধির চর্চার বাইরে চলে যায়। যুক্তি কখনো একপেশে হয়ে
যায়। তিনি একই মতাদর্শের মানুষেরও সমালোচনা করতেন। কাউকে ছেড়ে কথা বলতেন না। একটা সমাজে এখন এ রকম মানুষের প্রবল অভাব।
ভাষা আন্দোলনের সৈনিক, সংগঠক, সাক্ষী আহমদ রফিক শুধু চিকিৎসক হিসেবেই জীবনটা পার করে দিতে পারতেন। ভাষা আন্দোলন তো বটেই, নব্বই-ঊর্ধ্ব জীবনে শিক্ষকের পেশা ছেড়ে দিয়ে তিনি সাহিত্যেও মনোনিবেশ করেছিলেন, কিন্তু চিন্তায় ছিলেন প্রগতিশীল। সুদীর্ঘ জীবনে একজন মানুষ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে যাঁরা লড়াই করেন, তিনি ছিলেন তাঁদেরই একজন।
গত ৫৪ বছরের রাজনীতিতে সরকার সমাজের কথা ভাবেনি। রাষ্ট্রও নিরপেক্ষ ও মানবিক হতে পারেনি। পাকিস্তানের প্রায় ২৪ বছর এবং পরে বাংলাদেশের ১৫ বছরের বেশি সময় একটা অগণতান্ত্রিক সামরিক ব্যবস্থার মধ্যে চলেছে।
তাই সমাজে মূল্যবোধ তৈরি হওয়ার কোনো সুযোগই ঘটেনি; বরং রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতাকে করায়ত্ত করার জন্য কালক্ষেপণ করেছে। এই ব্যবস্থায় অর্থ এসে দাঁড়িয়েছে একটা কেন্দ্রস্থলে। সব ক্ষেত্রে পেশাদারি সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারেনি। সামরিক বাহিনীও ব্যবহৃত হয়েছে এর পাহারাদার হিসেবে। আজকের সামগ্রিক বিশৃঙ্খলা তারই প্রতিফলন। যে সময়ে এই মানুষগুলো লোকান্তরিত হলেন, সে-ও এক অস্থির সময়। তাঁদের মূল্যায়নের জন্য এই সময়টি তেমন সুস্থির সময় নয়। এই শূন্যস্থান পূরণ করার জন্য অনাগতকালে কোনো মহৎ মানুষের জন্ম হবে কি না, তা-ও অনিশ্চিত। অসংখ্য রাজনৈতিক দল গড়ে উঠেছে, পাশাপাশি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু বিপুল বিশাল জনগোষ্ঠীর আবাসভূমি কী করে নিরাপদ হবে, তার ভাবনা কোথায়?
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব

মানুষের জীবনের একটা অনিবার্য পরিণতি—মৃত্যু, সে এক প্রাকৃতিক বিষয়। যেমন মেঘ, বৃষ্টি, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত—যার ওপর মানুষের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, তেমনই। কিন্তু কিছু মানুষের মৃত্যু হলে আমরা বলে থাকি, একটা শূন্যতার সৃষ্টি হলো, যে শূন্যতা দেখা যায় না, কিন্তু অনুভব করি আমরা বহু দিন, বহু বর্ষ, বহু শতাব্দী। তেমনি সাম্প্রতিককালে আমরা একটা মৃত্যুর মিছিল দেখছি, যার সূচনা হয়েছে যতীন সরকার থেকে। যতীন সরকার ছিলেন নেত্রকোনার বারহাট্টা গ্রামের একজন ছাপোষা শিক্ষক। দেশ বিভাগের আগে একজন শিক্ষক কেমন ছিলেন, তা সহজে অনুমান করা যায়। কিন্তু তিনি বলেও গেছেন ছাত্রদের এবং কৌতূহলী মানুষদের, সেগুলো পাঠ্যপুস্তকের বিষয় নয়, আবার পাঠ্যবই থেকে পড়িয়েছেনও।
তাঁর অনেক মূল্যবান লেখার মধ্যে একটি লেখা, ‘পাকিস্তানের জন্ম মৃত্যু দর্শন।’ এই বইয়ে তিনি দার্শনিকতার সংজ্ঞা নির্ণয় করতে গিয়ে একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন। সেটি হচ্ছে, একটা পুকুরপাড়ে দেখা গেল অনেক মানুষের জটলা, কৌতূহলবশত সেখানে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এখানে কী হয়েছে?’ উত্তরে একজন এসে বললেন, ‘ঐ যে পুকুরে মাছ ধরছে।’ এর পরের জিজ্ঞাসা, ‘আপনারা কী করছেন?’ উত্তর, ‘আমরা দার্শনিক।’ কথাটা নেত্রকোনার একটি আঞ্চলিক কথা বটে, কিন্তু যতীন সরকার তাকে একটা দার্শনিক অভিধা দিয়েছেন। যিনি দর্শন করেন, তিনি তো দার্শনিক বটেই। পৃথিবীর সব দার্শনিকের দর্শনচিন্তার শিকড় তো সেটাই, কিন্তু তারপর তিনি কী দেখেন? শুধুই কি দেখা, নাকি এই দেখা মানবজাতির অভিজ্ঞতায় নতুন একটা উপাদান হিসেবে যুক্ত হলো, সেটাই দেখার বিষয়। যতীন সরকার লিখেছিলেন, ‘পাকিস্তানের জন্ম মৃত্যু দর্শন’। তিনি পাকিস্তানের জন্ম দেখেছিলেন, মৃত্যুও।
তাই তার আনুপূর্বিক বিষয়াদি নিয়ে তাঁর ভাবনা উপস্থিত করেছিলেন। পাঠক তাতে ঋদ্ধ হয়েছিল। এভাবে কোনো রাষ্ট্র নির্মাণ করা যায় কি না, তার ভবিষ্যৎই-বা কী দাঁড়ায়? বরং চিরতরে একটা সাম্প্রদায়িকতার উৎস এবং ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারকেই বেগবান করে তোলে। বাংলাদেশের প্রতিটি ঘটনায় তার উদ্বেগ শুধু নয়, একটা ব্যাখ্যাও আমাদের আলোড়িত করত। প্রায়ই একই সময়ে আরেকজন শিক্ষক, তিনি এসেছেন পশ্চিম বাংলার বর্ধমান ও কলকাতা থেকে—বদরুদ্দীন উমর।
পিতা আবুল হাশিমের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন দেখেছেন কিন্তু ছোটবেলা থেকে পরিবারের অন্য আত্মীয়দের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং সেই প্রভাব ছিল সাম্যবাদের পক্ষে। পাকিস্তানের দার্শনিক ভিত্তিটায় তিনি প্রথমেই আঘাত করেন। তাঁর যুগান্তকারী রচনা ‘সাম্প্রদায়িকতা’ ও ‘সংস্কৃতির সংকট’। বাঙালি মুসলমানের আত্মপরিচয়ের সংকটটিতেই যাদের ভাবনায় দেখা দেয়—‘আমরা বাঙালি না মুসলমান’। এই সময়ই তিনি ‘ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’ নামক বইটি লিখেছিলেন। সংকটটা যে তখন শুধু ভাষার ছিল না, সঙ্গে ছিল আরও অনেক ধরনের বাস্তবতা, তা এত সবিস্তারে যুক্তিসহযোগে তাঁর মতো আর কেউ উপস্থাপন করেননি। আমৃত্যু তিনি নিরলসভাবে বাংলা ও ইংরেজিতে লিখে গেছেন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভাষা আন্দোলন এতই গুরুত্বপূর্ণ এক ফলক, যাকে স্পর্শ না করে কোনোভাবেই হাঁটা যায় না। সেই পথ, সেই ঘটনার সাক্ষী আরেক লেখক, গবেষক আহমদ রফিক। পেশায় চিকিৎসক। ভাষা আন্দোলনের সময় ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র। ভাষা আন্দোলনের সাক্ষী শুধু নন, সংগঠক, নেতা এবং আজীবন ভাষার আলো তিনি ছড়িয়ে গেছেন। লেখক হিসেবে তাঁর দিগন্ত বিস্তৃত, কিন্তু তিনি শুধু ভাষা আন্দোলন নয়, ভাষার দর্শনেরও প্রবক্তা।
সম্প্রতি এই মৃত্যুর মিছিলে যিনি যুক্ত হয়েছেন, তিনি বয়সে তাঁদের চেয়ে ছোট হলেও ছিলেন দর্শনের ছাত্র। নিজেকে তিনি কখনোই শিক্ষক ভাবতেন না; বরং ছাত্র ভাবতেই অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি দর্শনকে ব্যাখ্যা করতে ভালোবাসতেন। সেই সঙ্গে ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র ও শিক্ষক হিসেবে একটা দিগন্তে তাঁর বিচরণ তো ছিলই। বিপুলসংখ্যক ছাত্র-অছাত্র-পাঠকের মধ্যে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের একটা প্রভাব তৈরি হয়েছিল, যা তাঁর মৃত্যুর পর নানা মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। তিনি গল্প, নাটক লিখেছেন, অসংখ্য প্রবন্ধের রচয়িতাও। এ দেশে যা একেবারেই দুর্লভ, সেই কাজও তিনি করেছেন। তা হলো চিত্রকলা ও সাহিত্যের সমালোচনা। এ কাজগুলো হয়তো আরও অনেকে করে থাকেন, কিন্তু মনজুরের যে আত্মগত অঙ্গীকার, তা একেবারেই দুর্লভ। স্বপ্রণোদিত হয়ে কোনো শিল্পীকে আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত করার কাজটিও তিনি প্রায় নিয়মিতই করতেন; বিশেষ করে তরুণদের নিয়ে। তিনি তরুণদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন নিয়মিত। সর্বোপরি আধুনিকতায়, চিন্তায়, মননে ও ব্যবহারিক জীবনে সব সময় আধুনিকতার চর্চাকে উৎসাহিত করতেন প্রবলভাবে। আধুনিক মনন একবার গ্রহণ করলে পূর্বাপর তাবৎ জ্ঞানকে একটা পরিশীলিত এবং সময়োপযোগী হিসেবে গ্রহণ করাটা সহজ হয়। সাধারণত মতাদর্শগত জ্ঞান এবং ভাবনা যদি গভীরভাবে মননে প্রোথিত হয়ে যায়, তাহলে মুক্তবুদ্ধিকে ধারণ করাও কঠিন হয়ে যেতে পারে।
যতীন সরকার যখন জন্মেছিলেন, তখন পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক দর্শন মার্ক্সবাদের প্রভাব সারা বিশ্বে স্পন্দিত হয়েছিল। বস্তুবাদী দর্শনের নিরিখে একধরনের গবেষণালব্ধ এবং যুক্তিতর্কের উপস্থাপনার সময় এসেছিল। বাড়ির পাশেই দেখতে পেয়েছিলেন টংক বিদ্রোহ, হাজং বিদ্রোহ। সেই সঙ্গে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ভারতীয় গণনাট্য সংঘ—এসব তাঁর চিন্তাকে নিশ্চয় অনুপ্রাণিত করেছিল। কিন্তু ওই পাকিস্তানের জন্ম মৃত্যু দর্শনের মধ্য দিয়ে একদা আবিষ্কার করলেন, তিনি সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছেন। সংখ্যালঘুর সেই জটিল নিরাপত্তাহীনতা সত্ত্বেও তিনি তাঁর
কথা নিঃসংকোচে লিখে গেছেন এবং প্রগতিশীল রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছেন।
বদরুদ্দীন উমরও ছিলেন একই সময়ের মানুষ। মার্ক্সবাদের দীক্ষায় তাঁর যৌবন ও উত্তরকাল কেটেছে। বাম রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্ক তাঁর এতই ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের কাজ ছেড়ে তিনি সার্বক্ষণিক রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে রাষ্ট্র, সমাজ, সরকার—সবই ছিল তাঁর তুখোড় সমালোচনার ক্ষেত্র। রাজনীতি কখনো দার্শনিকতা ও মুক্তবুদ্ধির চর্চার বাইরে চলে যায়। যুক্তি কখনো একপেশে হয়ে
যায়। তিনি একই মতাদর্শের মানুষেরও সমালোচনা করতেন। কাউকে ছেড়ে কথা বলতেন না। একটা সমাজে এখন এ রকম মানুষের প্রবল অভাব।
ভাষা আন্দোলনের সৈনিক, সংগঠক, সাক্ষী আহমদ রফিক শুধু চিকিৎসক হিসেবেই জীবনটা পার করে দিতে পারতেন। ভাষা আন্দোলন তো বটেই, নব্বই-ঊর্ধ্ব জীবনে শিক্ষকের পেশা ছেড়ে দিয়ে তিনি সাহিত্যেও মনোনিবেশ করেছিলেন, কিন্তু চিন্তায় ছিলেন প্রগতিশীল। সুদীর্ঘ জীবনে একজন মানুষ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে যাঁরা লড়াই করেন, তিনি ছিলেন তাঁদেরই একজন।
গত ৫৪ বছরের রাজনীতিতে সরকার সমাজের কথা ভাবেনি। রাষ্ট্রও নিরপেক্ষ ও মানবিক হতে পারেনি। পাকিস্তানের প্রায় ২৪ বছর এবং পরে বাংলাদেশের ১৫ বছরের বেশি সময় একটা অগণতান্ত্রিক সামরিক ব্যবস্থার মধ্যে চলেছে।
তাই সমাজে মূল্যবোধ তৈরি হওয়ার কোনো সুযোগই ঘটেনি; বরং রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতাকে করায়ত্ত করার জন্য কালক্ষেপণ করেছে। এই ব্যবস্থায় অর্থ এসে দাঁড়িয়েছে একটা কেন্দ্রস্থলে। সব ক্ষেত্রে পেশাদারি সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারেনি। সামরিক বাহিনীও ব্যবহৃত হয়েছে এর পাহারাদার হিসেবে। আজকের সামগ্রিক বিশৃঙ্খলা তারই প্রতিফলন। যে সময়ে এই মানুষগুলো লোকান্তরিত হলেন, সে-ও এক অস্থির সময়। তাঁদের মূল্যায়নের জন্য এই সময়টি তেমন সুস্থির সময় নয়। এই শূন্যস্থান পূরণ করার জন্য অনাগতকালে কোনো মহৎ মানুষের জন্ম হবে কি না, তা-ও অনিশ্চিত। অসংখ্য রাজনৈতিক দল গড়ে উঠেছে, পাশাপাশি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু বিপুল বিশাল জনগোষ্ঠীর আবাসভূমি কী করে নিরাপদ হবে, তার ভাবনা কোথায়?
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব

কয়েক দিন ধরেই সেনাবাহিনী নিয়ে গণমাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে। নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) নামক অপর একটি দলের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান...
২৯ মার্চ ২০২৫
মোশাহিদা সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘সর্বজনকথা’র প্রকাশক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি, ভবঘুরে ও হকার উচ্ছেদের কারণ এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তিনি...
৮ ঘণ্টা আগে
দেশে বড় বড় কত ঘটনা ঘটে চলেছে, অথচ সেদিকে চোখ না রেখে দিনাজপুরের বিরামপুর নিয়ে কেন সম্পাদকীয় লিখতে হবে, তার একটা ব্যাখ্যা থাকা দরকার। দেশের রাজনীতিতে প্রতিটি মুহূর্তেই জন্ম নিচ্ছে নতুন বাস্তবতা। একটি রাজনৈতিক দলকে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে অন্য এক দলের সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী, পর মুহূর্তেই দেখা যাচ্ছে, সেই
৯ ঘণ্টা আগে
এখন নাকি বানর আর শূকরের পালকেই দেখা যায় লাউয়াছড়ায়। বিরল প্রজাতির অনেক পাখি ও প্রাণী বাস করত এই সংরক্ষিত বনে। কিন্তু সেসব লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বনটিকে নিজেদের অভয়ারণ্য বলে হয়তো ভাবতে পারছে না তারা।
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

দেশে বড় বড় কত ঘটনা ঘটে চলেছে, অথচ সেদিকে চোখ না রেখে দিনাজপুরের বিরামপুর নিয়ে কেন সম্পাদকীয় লিখতে হবে, তার একটা ব্যাখ্যা থাকা দরকার। দেশের রাজনীতিতে প্রতিটি মুহূর্তেই জন্ম নিচ্ছে নতুন বাস্তবতা। একটি রাজনৈতিক দলকে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে অন্য এক দলের সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী, পর মুহূর্তেই দেখা যাচ্ছে, সেই ধারণা ঠিক নয়। জুলাই সনদ নিয়েই নানা ঘটনা ঘটছে দেশবাসীর চোখের সামনে। কিন্তু ঘটনা কোন দিকে গড়ায়, তা নিয়ে সাধারণ মানুষ তো বটেই, অনেক রাজনীতি-সচেতন মানুষ বা দলের কোনো ধারণা আছে বলে মনে হয় না। তাই ঘটনাপ্রবাহ কোন দিকে টেনে নিয়ে যাবে, সেটাই শুধু দেখার বিষয়। মন্তব্য করার মতো পরিপক্ব হয়ে ওঠার আগেই ঘটনা বদলে যাচ্ছে।
এ কারণেই বিরামপুরকে বেছে নেওয়া। বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্তমান অবস্থা থেকেও আমাদের অসহায়ত্বের খানিকটা আঁচ পাওয়া যাবে। একটি চিকিৎসা কেন্দ্রে ২৫ জন চিকিৎসক থাকার কথা, কিন্তু সেখানে আছেন সবে ধন নীলমণি ৩ জন—এই একটি তথ্যই বুঝিয়ে দেয়, কী অবস্থায় রয়েছে আমাদের স্বাস্থ্য খাত। ৫০ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পদের কোনো কমতি নেই, কিন্তু রয়েছেন তিনজন চিকিৎসক। বিরামপুর উপজেলার একটি পৌরসভা, সাতটি ইউনিয়নসহ পাশের বিভিন্ন উপজেলার ৫০০ থেকে ৬০০ রোগীকে প্রতিদিন আউটডোরে এবং প্রায় ৬০ জন ভর্তি রোগীকে ইনডোরে চিকিৎসা দিতে হয়। তিনজন চিকিৎসক কীভাবে রোগীদের এই চাপ সামলাচ্ছেন, সেটা বোধগম্য নয়।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয়, এখানে গাইনি ও স্ত্রীরোগের জন্য কোনো চিকিৎসক নেই। অর্থাৎ এলাকার নারীরা কতটা বিপদে আছেন, তা এই একটি তথ্য থেকে ধারণা করা সম্ভব।
সাধারণভাবে কয়েকটি প্রশ্ন এসে ভিড় করে মনে। দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজ কম নয়, প্রাইভেট মেডিকেল কলেজও অসংখ্য। দেশে বেকারত্বও প্রকট। তাহলে বিরামপুরের মতো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় চিকিৎসকের সংকট থাকছে কেন? সময়মতো চিকিৎসক নেওয়া হয় না, নাকি দিনাজপুরে গিয়ে চাকরি করতে হবে—এ বিষয়ে চিকিৎসকদের অনাগ্রহ রয়েছে? সরকারি চাকরিতে চিকিৎসকের অনাগ্রহের কথা ধোপে টেকে না। চাকরিসূত্রে যেকোনো জায়গায় তাঁর পোস্টিং হতে পারে। কিন্তু নানাভাবে ‘ম্যানেজ’ করে বড় বড় শহরে থেকে যাওয়ার প্রবণতাও কি রয়েছে সংকটের মূলে? নাকি সরকারি পোস্টিংয়ের ক্ষেত্রে রয়ে গেছে ঘাপলা—সেটিও খুঁজে বের করা খুব জরুরি।
মৌলিক অধিকারের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা একটি—এ কথা মনে করিয়ে দেওয়ার কোনো মানে হয় না। শিক্ষা, বাসস্থানও তো মৌলিক অধিকার, সেটাই-বা কজন পাচ্ছে? আলাদাভাবে তাই স্বাস্থ্যসেবার কথা না বলে জোর দেওয়া যাক রাজনৈতিক অভিপ্রায়ের দিকে। যাঁরা ক্ষমতায় যান কিংবা যাওয়ার জন্য রাজনীতি করেন, তাঁদের দলীয় ইশতেহারে অনেক দামি দামি কথা লেখা থাকে, কিন্তু বাস্তবতা বলছে, ২৫ জন জনবলের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ জন চিকিৎসকই থাকবেন। অর্থাৎ ইশতেহার আর বাস্তবতার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরির জন্য কেউই কাজ করবে না।
এই অবস্থাটা নানাভাবে বিভিন্ন জায়গায় বিরাজ করছে। এটা বদলাতেই হবে।

দেশে বড় বড় কত ঘটনা ঘটে চলেছে, অথচ সেদিকে চোখ না রেখে দিনাজপুরের বিরামপুর নিয়ে কেন সম্পাদকীয় লিখতে হবে, তার একটা ব্যাখ্যা থাকা দরকার। দেশের রাজনীতিতে প্রতিটি মুহূর্তেই জন্ম নিচ্ছে নতুন বাস্তবতা। একটি রাজনৈতিক দলকে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে অন্য এক দলের সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী, পর মুহূর্তেই দেখা যাচ্ছে, সেই ধারণা ঠিক নয়। জুলাই সনদ নিয়েই নানা ঘটনা ঘটছে দেশবাসীর চোখের সামনে। কিন্তু ঘটনা কোন দিকে গড়ায়, তা নিয়ে সাধারণ মানুষ তো বটেই, অনেক রাজনীতি-সচেতন মানুষ বা দলের কোনো ধারণা আছে বলে মনে হয় না। তাই ঘটনাপ্রবাহ কোন দিকে টেনে নিয়ে যাবে, সেটাই শুধু দেখার বিষয়। মন্তব্য করার মতো পরিপক্ব হয়ে ওঠার আগেই ঘটনা বদলে যাচ্ছে।
এ কারণেই বিরামপুরকে বেছে নেওয়া। বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্তমান অবস্থা থেকেও আমাদের অসহায়ত্বের খানিকটা আঁচ পাওয়া যাবে। একটি চিকিৎসা কেন্দ্রে ২৫ জন চিকিৎসক থাকার কথা, কিন্তু সেখানে আছেন সবে ধন নীলমণি ৩ জন—এই একটি তথ্যই বুঝিয়ে দেয়, কী অবস্থায় রয়েছে আমাদের স্বাস্থ্য খাত। ৫০ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পদের কোনো কমতি নেই, কিন্তু রয়েছেন তিনজন চিকিৎসক। বিরামপুর উপজেলার একটি পৌরসভা, সাতটি ইউনিয়নসহ পাশের বিভিন্ন উপজেলার ৫০০ থেকে ৬০০ রোগীকে প্রতিদিন আউটডোরে এবং প্রায় ৬০ জন ভর্তি রোগীকে ইনডোরে চিকিৎসা দিতে হয়। তিনজন চিকিৎসক কীভাবে রোগীদের এই চাপ সামলাচ্ছেন, সেটা বোধগম্য নয়।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয়, এখানে গাইনি ও স্ত্রীরোগের জন্য কোনো চিকিৎসক নেই। অর্থাৎ এলাকার নারীরা কতটা বিপদে আছেন, তা এই একটি তথ্য থেকে ধারণা করা সম্ভব।
সাধারণভাবে কয়েকটি প্রশ্ন এসে ভিড় করে মনে। দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজ কম নয়, প্রাইভেট মেডিকেল কলেজও অসংখ্য। দেশে বেকারত্বও প্রকট। তাহলে বিরামপুরের মতো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় চিকিৎসকের সংকট থাকছে কেন? সময়মতো চিকিৎসক নেওয়া হয় না, নাকি দিনাজপুরে গিয়ে চাকরি করতে হবে—এ বিষয়ে চিকিৎসকদের অনাগ্রহ রয়েছে? সরকারি চাকরিতে চিকিৎসকের অনাগ্রহের কথা ধোপে টেকে না। চাকরিসূত্রে যেকোনো জায়গায় তাঁর পোস্টিং হতে পারে। কিন্তু নানাভাবে ‘ম্যানেজ’ করে বড় বড় শহরে থেকে যাওয়ার প্রবণতাও কি রয়েছে সংকটের মূলে? নাকি সরকারি পোস্টিংয়ের ক্ষেত্রে রয়ে গেছে ঘাপলা—সেটিও খুঁজে বের করা খুব জরুরি।
মৌলিক অধিকারের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা একটি—এ কথা মনে করিয়ে দেওয়ার কোনো মানে হয় না। শিক্ষা, বাসস্থানও তো মৌলিক অধিকার, সেটাই-বা কজন পাচ্ছে? আলাদাভাবে তাই স্বাস্থ্যসেবার কথা না বলে জোর দেওয়া যাক রাজনৈতিক অভিপ্রায়ের দিকে। যাঁরা ক্ষমতায় যান কিংবা যাওয়ার জন্য রাজনীতি করেন, তাঁদের দলীয় ইশতেহারে অনেক দামি দামি কথা লেখা থাকে, কিন্তু বাস্তবতা বলছে, ২৫ জন জনবলের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ জন চিকিৎসকই থাকবেন। অর্থাৎ ইশতেহার আর বাস্তবতার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরির জন্য কেউই কাজ করবে না।
এই অবস্থাটা নানাভাবে বিভিন্ন জায়গায় বিরাজ করছে। এটা বদলাতেই হবে।

কয়েক দিন ধরেই সেনাবাহিনী নিয়ে গণমাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে। নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) নামক অপর একটি দলের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান...
২৯ মার্চ ২০২৫
মোশাহিদা সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘সর্বজনকথা’র প্রকাশক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি, ভবঘুরে ও হকার উচ্ছেদের কারণ এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তিনি...
৮ ঘণ্টা আগে
মানুষের জীবনের একটা অনিবার্য পরিণতি—মৃত্যু, সে এক প্রাকৃতিক বিষয়। যেমন মেঘ, বৃষ্টি, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত—যার ওপর মানুষের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, তেমনই। কিন্তু কিছু মানুষের মৃত্যু হলে আমরা বলে থাকি, একটা শূন্যতার সৃষ্টি হলো, যে শূন্যতা দেখা যায় না, কিন্তু অনুভব করি আমরা বহু দিন, বহু বর্ষ, বহু শতাব্দী।
৯ ঘণ্টা আগে
এখন নাকি বানর আর শূকরের পালকেই দেখা যায় লাউয়াছড়ায়। বিরল প্রজাতির অনেক পাখি ও প্রাণী বাস করত এই সংরক্ষিত বনে। কিন্তু সেসব লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বনটিকে নিজেদের অভয়ারণ্য বলে হয়তো ভাবতে পারছে না তারা।
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

এখন নাকি বানর আর শূকরের পালকেই দেখা যায় লাউয়াছড়ায়। বিরল প্রজাতির অনেক পাখি ও প্রাণী বাস করত এই সংরক্ষিত বনে। কিন্তু সেসব লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বনটিকে নিজেদের অভয়ারণ্য বলে হয়তো ভাবতে পারছে না তারা।
পর্যটন এই জীববৈচিত্র্যকে ম্লান করে দেওয়ার একটি কারণ বলে মনে করছেন অনেকে। লাউয়াছড়া বনের অভ্যন্তরের অনেকটা পথে গাড়ি ঢুকতে পারে। বনের মধ্যে গাড়ি চলছে—এটা কোনো সুসংবাদ হতে পারে না। গাড়ি প্রবেশে নিশ্চয়ই কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে। কীভাবে এই গাড়িওয়ালারা অনুমতি নিয়ে লাউয়াছড়ায় প্রবেশ করেন, তা জানা প্রয়োজন।
মৌলভীবাজারে অবস্থিত লাউয়াছড়াকে জাতীয় উদ্যান বলা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু জাতীয় উদ্যান হিসেবে বেঁচে থাকার কোনো ব্যবস্থাই রাখা হয়নি। আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, ২০১৪ সালের একটি জরিপে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণী থাকার কথা। এর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি ও ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ছিল। কিন্তু এখন এত ধরনের উদ্ভিদ, পাখি ও প্রাণী কেন দেখা যায় না, সে প্রশ্ন তো তুলতেই হবে। যাঁদের ওপর এদের রক্ষণাবেক্ষণের ভার, তাঁরা আদতে কী করছেন, তা জানতে হবে না?
তবে এ ব্যাপারে বন বিভাগ একটি খাঁটি কথা বলেছে। তাদের মতে, অতিরিক্ত পর্যটকের হট্টগোল, গাড়ি ও ট্রেনের আওয়াজ এবং জনসংখ্যা বাড়ার কারণে প্রাণীরা লোকালয় থেকে একটু দূরে চলে যায়। এসব কারণে প্রাণী কম দেখা যায় বনে। এ ছাড়া পর্যটন আর বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ একসঙ্গে রক্ষা করা কঠিন।
শেষ কথাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ‘পর্যটন আর বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ একসঙ্গে রক্ষা করা কঠিন।’ এ তো খুবই সত্যভাষণ। যদি সেটাই সত্য হয়ে থাকে, তাহলে এই বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নেয় না কেন? এই বনের ঘনত্বের কারণে একসময় বনের ভেতর সূর্যের আলো সরাসরি পড়ত না। সেই ঘনত্ব কমে গেল কেন? কেন বনের সর্বত্র মানুষ অবাধে ঢুকে পড়ছে? বন বিভাগ কি জানে না, পশুর চারণক্ষেত্রে মানুষের অবাধ আনাগোনা পশু-পাখির জন্য স্বস্তিদায়ক নয়? আরও ভয়ংকর ব্যাপার হলো, এই বনে প্রাণীদের খাদ্যসংকট। পর্যাপ্ত খাদ্য না থাকলে এই বনে পশু-পাখি কেন থাকবে? পশুদের জীবনের বারোটা বাজিয়ে দেওয়ার জন্য চা-বাগানের কীটনাশক মেশানো পানিও অনেকটা দায়ী, যার কারণে ছড়ায় পানি খেতে আসা প্রাণীরা মারা পড়ে।
লাউয়াছড়ার জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনার জন্য কোনো বাড়তি পদক্ষেপের প্রয়োজন নেই। যে কারণে বনের এই দুর্দশা, তার প্রতিটির সমাধান করার উপায় বন বিভাগের জানা আছে। সেগুলো মেনে চললে লাউয়াছড়ায় বসবাসকারী পশু-পাখি ও উদ্ভিদ বেঁচে থাকতে পারবে। একই সঙ্গে প্রকৃতিকে বাঁচানো এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা সম্ভব যদি আন্তরিকতা থাকে। সরকারি কাজে সে রকম আন্তরিকতা কি একেবারেই দুর্লভ হয়ে গেছে? না হয়ে থাকলে তার প্রমাণ দেওয়া হোক।

এখন নাকি বানর আর শূকরের পালকেই দেখা যায় লাউয়াছড়ায়। বিরল প্রজাতির অনেক পাখি ও প্রাণী বাস করত এই সংরক্ষিত বনে। কিন্তু সেসব লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বনটিকে নিজেদের অভয়ারণ্য বলে হয়তো ভাবতে পারছে না তারা।
পর্যটন এই জীববৈচিত্র্যকে ম্লান করে দেওয়ার একটি কারণ বলে মনে করছেন অনেকে। লাউয়াছড়া বনের অভ্যন্তরের অনেকটা পথে গাড়ি ঢুকতে পারে। বনের মধ্যে গাড়ি চলছে—এটা কোনো সুসংবাদ হতে পারে না। গাড়ি প্রবেশে নিশ্চয়ই কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে। কীভাবে এই গাড়িওয়ালারা অনুমতি নিয়ে লাউয়াছড়ায় প্রবেশ করেন, তা জানা প্রয়োজন।
মৌলভীবাজারে অবস্থিত লাউয়াছড়াকে জাতীয় উদ্যান বলা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু জাতীয় উদ্যান হিসেবে বেঁচে থাকার কোনো ব্যবস্থাই রাখা হয়নি। আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, ২০১৪ সালের একটি জরিপে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণী থাকার কথা। এর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি ও ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ছিল। কিন্তু এখন এত ধরনের উদ্ভিদ, পাখি ও প্রাণী কেন দেখা যায় না, সে প্রশ্ন তো তুলতেই হবে। যাঁদের ওপর এদের রক্ষণাবেক্ষণের ভার, তাঁরা আদতে কী করছেন, তা জানতে হবে না?
তবে এ ব্যাপারে বন বিভাগ একটি খাঁটি কথা বলেছে। তাদের মতে, অতিরিক্ত পর্যটকের হট্টগোল, গাড়ি ও ট্রেনের আওয়াজ এবং জনসংখ্যা বাড়ার কারণে প্রাণীরা লোকালয় থেকে একটু দূরে চলে যায়। এসব কারণে প্রাণী কম দেখা যায় বনে। এ ছাড়া পর্যটন আর বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ একসঙ্গে রক্ষা করা কঠিন।
শেষ কথাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ‘পর্যটন আর বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ একসঙ্গে রক্ষা করা কঠিন।’ এ তো খুবই সত্যভাষণ। যদি সেটাই সত্য হয়ে থাকে, তাহলে এই বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নেয় না কেন? এই বনের ঘনত্বের কারণে একসময় বনের ভেতর সূর্যের আলো সরাসরি পড়ত না। সেই ঘনত্ব কমে গেল কেন? কেন বনের সর্বত্র মানুষ অবাধে ঢুকে পড়ছে? বন বিভাগ কি জানে না, পশুর চারণক্ষেত্রে মানুষের অবাধ আনাগোনা পশু-পাখির জন্য স্বস্তিদায়ক নয়? আরও ভয়ংকর ব্যাপার হলো, এই বনে প্রাণীদের খাদ্যসংকট। পর্যাপ্ত খাদ্য না থাকলে এই বনে পশু-পাখি কেন থাকবে? পশুদের জীবনের বারোটা বাজিয়ে দেওয়ার জন্য চা-বাগানের কীটনাশক মেশানো পানিও অনেকটা দায়ী, যার কারণে ছড়ায় পানি খেতে আসা প্রাণীরা মারা পড়ে।
লাউয়াছড়ার জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনার জন্য কোনো বাড়তি পদক্ষেপের প্রয়োজন নেই। যে কারণে বনের এই দুর্দশা, তার প্রতিটির সমাধান করার উপায় বন বিভাগের জানা আছে। সেগুলো মেনে চললে লাউয়াছড়ায় বসবাসকারী পশু-পাখি ও উদ্ভিদ বেঁচে থাকতে পারবে। একই সঙ্গে প্রকৃতিকে বাঁচানো এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা সম্ভব যদি আন্তরিকতা থাকে। সরকারি কাজে সে রকম আন্তরিকতা কি একেবারেই দুর্লভ হয়ে গেছে? না হয়ে থাকলে তার প্রমাণ দেওয়া হোক।

কয়েক দিন ধরেই সেনাবাহিনী নিয়ে গণমাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে। নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) নামক অপর একটি দলের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান...
২৯ মার্চ ২০২৫
মোশাহিদা সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘সর্বজনকথা’র প্রকাশক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি, ভবঘুরে ও হকার উচ্ছেদের কারণ এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তিনি...
৮ ঘণ্টা আগে
মানুষের জীবনের একটা অনিবার্য পরিণতি—মৃত্যু, সে এক প্রাকৃতিক বিষয়। যেমন মেঘ, বৃষ্টি, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত—যার ওপর মানুষের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, তেমনই। কিন্তু কিছু মানুষের মৃত্যু হলে আমরা বলে থাকি, একটা শূন্যতার সৃষ্টি হলো, যে শূন্যতা দেখা যায় না, কিন্তু অনুভব করি আমরা বহু দিন, বহু বর্ষ, বহু শতাব্দী।
৯ ঘণ্টা আগে
দেশে বড় বড় কত ঘটনা ঘটে চলেছে, অথচ সেদিকে চোখ না রেখে দিনাজপুরের বিরামপুর নিয়ে কেন সম্পাদকীয় লিখতে হবে, তার একটা ব্যাখ্যা থাকা দরকার। দেশের রাজনীতিতে প্রতিটি মুহূর্তেই জন্ম নিচ্ছে নতুন বাস্তবতা। একটি রাজনৈতিক দলকে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে অন্য এক দলের সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী, পর মুহূর্তেই দেখা যাচ্ছে, সেই
৯ ঘণ্টা আগে