অরুণ কর্মকার
জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে দেশের রাজনীতি, আর্থসামাজিক পরিস্থিতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান প্রভৃতি বিষয়ে দেশের তরুণদের ভাবনা সম্পর্কিত একটি জরিপের ফলাফল গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। গত ২০ থেকে ৩১ মে সময়ের মধ্যে যৌথ উদ্যোগে জরিপটি চালিয়েছে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশনএইড। দেশের আটটি বিভাগের ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী দুই হাজার তরুণের ওপর জরিপটি চালানো হয়। জরিপের উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে ৭ জুলাই এর ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
বলা বাহুল্য, দেশে ১৫-৩৫ বছর বয়স গ্রুপের যে জনসংখ্যা, সেই নিরিখে দুই হাজার সংখ্যাটি কোনো শতাংশের হিসাবে আসে না। সেই বিবেচনায়, অনেকে মনে করতে পারেন যে এই জরিপে উঠে আসা মতামতকেও প্রতিনিধিত্বশীল বলা যায় না। আমরাও তেমনটা মনে করতে পারতাম যদি না ওই ক্ষুদ্রসংখ্যক তরুণের মতামত দেশের সব তরুণ-যুবা-প্রবীণনির্বিশেষে আপামর গণমানুষের ভাবনার বা মতামতের প্রতিফলন না ঘটাত।
যেমন, মোটাদাগে কয়েকটি বিষয়ের মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করা যায় বহুল আলোচিত মব জাস্টিস মতান্তরে মব সন্ত্রাসের কথা। জরিপে অংশ নেওয়া তরুণদের প্রায় ৭২ শতাংশ বলেছেন, এই মব সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করছে। এই জরিপের কথা ভুলে গিয়েও যদি মব সন্ত্রাসের বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা হয়, তাহলে দেশের কোনো একজন সাধারণ মানুষও কি এর অন্যথা বলবেন? আমরা তো দেখে এসেছি ১১ মাস ধরে যে এই মব বারবার আইনশৃঙ্খলাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সরকারকে নতজানু করেছে। এই মবের কারণেই অন্তর্বর্তী সরকার আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে এখনো যথেষ্ট ভালো অবস্থানে যেতে পারেনি।
অনেকে মনে করতে পারেন যে ৭২ শতাংশ তরুণ মবকে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন মানে অবশিষ্ট ২৮ শতাংশ মবের পক্ষে মতামত দিয়েছেন কিংবা নিশ্চুপ থেকেছেন। বিষয়টি মোটেই তেমন নয়। জরিপে অংশ নেওয়া তরুণেরা এ ক্ষেত্রে শুধু অগ্রাধিকার নির্ণয়ে ভিন্নতা দেখিয়েছেন। যেমন ৮০ শতাংশের বেশি তরুণ দস্যুতা, চুরি এবং বারবার অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনাবলিকে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহতকারী বলে মত দিয়েছেন। মবের সঙ্গে এসব ঘটনাকে কি খুব বেশি আলাদা করা যায়? এমন তো অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে যেখানে মব সৃষ্টি করে দস্যুতা করা হয়েছে। মব সৃষ্টি করে বাড়িঘর, দোকানপাট, অফিস-কারখানা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুঃখের বিষয়, এসব ঘটনার বিষয়ে, মবের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে খুব বেশি সোচ্চার দেখা যায়নি, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু বিবৃতি দেওয়া ছাড়া।
জরিপে অংশ নেওয়া তরুণদের অধিকাংশ সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহতকারী হিসেবে অনিরাপদ জনপরিসরের কথা বলেছেন। বলেছেন পক্ষপাতদুষ্ট গ্রেপ্তার এবং পক্ষপাতদুষ্ট বিচারপ্রক্রিয়ার কথা। এগুলো তো শুধু ওই স্বল্পসংখ্যক তরুণের কথা নয়। এগুলো তো দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনের কথা। এখনো কি যেনতেনভাবে কোনো মানুষকে বিশেষ কোনো ট্যাগ লাগিয়ে জনপরিসরে হেনস্তা করা হচ্ছে না? বয়স, সামাজিক অবস্থান-নির্বিশেষে নারীরা কি আজকাল জনপরিসরে নিরাপদ বোধ করেন? আর গণহারে মামলা ও গ্রেপ্তার নিয়ে যে সমস্যা, সে বিষয়ে তো আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলকেও আমরা কথা বলতে শুনেছি। তার মানে, এই ভাবনা শুধু ওই তরুণদের নয়। দেশের সাধারণ মানুষের ভাবনাই তরুণদের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
এই তরুণেরা কী চান? জরিপে এই সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তরুণেরা বলেছেন, তাঁরা চান আধুনিক শিক্ষা, উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা। রাষ্ট্রের সাধ্যের মধ্যে যতটা আধুনিক এবং উন্নত ব্যবস্থা সম্ভব। তাঁরা চান দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির অবসান। চান সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়া। স্বল্পসংখ্যক তরুণের এই প্রত্যাশায়ও জাতীয় প্রত্যাশারই প্রতিফলন ঘটেছে। গত কয়েক দশকে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে যে দুরবস্থার মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে, এ কথা কে অস্বীকার করতে পারে? পৃথিবীর আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে আমাদের শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থা কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। একই অবস্থা চিকিৎসাব্যবস্থারও। আর দুর্নীতির ব্যাপকতা নিয়ে তো নতুন করে কথা বলার কিছু নেই। রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বত্র দুর্নীতি অব্যাহতভাবে ক্রমপ্রসারমান। তরুণদের আরও কিছু চাওয়ার মধ্যে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (ক্যাম্পাসে) সুষ্ঠু পরিবেশ—অনলাইন-অফলাইনে নিরাপত্তা। এই দুটি বিষয়ও যথেষ্ট ভঙ্গুর অবস্থার মধ্যে রয়েছে। তাই তরুণদের আগ্রহ এগুলো বদলের প্রতি।
জরিপে তরুণেরা দেশে চলমান সংস্কারপ্রক্রিয়া, সরকারের কর্মদক্ষতা (পারফরম্যান্স), রাজনীতিসহ মোট ১৩টি বিষয়ে মতামত দিয়েছেন। এসব বিষয়ে তাঁদের আগ্রহ-অনাগ্রহের কথাও জানিয়েছেন। তার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হলো রাজনীতিতে অনাগ্রহ। তাঁদের ৮৩ শতাংশ রাজনীতিতে অংশগ্রহণে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এর কারণও তাঁরা বলেছেন। মূলত তিনটি কারণ—এক. রাজনীতি বড় সহিংস হয়ে উঠেছে। দুই. রাজনীতি ছেয়ে গেছে দুর্নীতি ও অনৈতিকতায়। আর তিন. (ধারণা করা যায় প্রথম দুটি কারণেই) পারিবারিকভাবে এবং সামাজিকভাবেও নিরুৎসাহিত করা হয়। দেশের সাধারণ মানুষ দশকের পর দশক ধরে যে রাজনীতি প্রত্যক্ষ করে আসছে, তাতে রাজনীতিতে অংশ নেওয়া বা আগ্রহী হওয়ার বিষয়ে এই মতই কি স্বাভাবিক নয়?
পুনশ্চ আজকের এই নিবন্ধের বিষয়বস্তু হতে পারত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে। গত বুধবার অপরাহ্ণে যখন খবর পাওয়া গেল যে রাত ৮টায় নির্বাচনের সময় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং, তখন কিছুটা অস্বাভাবিক লাগলেও তেমনটাই মনে হয়েছিল। কিন্তু পরে দেখা গেল যে না, নির্বাচনের দিনক্ষণ যেখানে ছিল সেখানেই আছে এবং আগের মতো শর্তসাপেক্ষই আছে। যদি সংস্কার এবং সব প্রস্তুতি (আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত) সম্পন্ন করা যায়, তাহলে আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগে কিংবা এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। এ ছাড়া যে বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে তা হলো—নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন। এ নির্দেশ মূলত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য। এই নির্দেশের সঙ্গে সাজুয্যপূর্ণ কোনো নির্দেশ বা নির্দেশনা নির্বাচন কমিশনকেও দেওয়া হয়েছে কি না, তার কোনো উল্লেখ সংবাদ সম্মেলনে করা হয়নি। তবে নতুন আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে, তরুণ ভোটারদের জন্য পৃথক ভোটার তালিকা এবং আলাদা ভোটকক্ষ স্থাপন করা হবে। এই উদ্যোগ নিয়ে অনেক কথাবার্তা হবে বলে মনে হয়। তবে আপাতত এইটুকু আশা করতে পারি যে এই উদ্যোগ আগামী নির্বাচনে তরুণ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রমুখী করতে বিশেষভাবে উৎসাহিত করবে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে দেশের রাজনীতি, আর্থসামাজিক পরিস্থিতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান প্রভৃতি বিষয়ে দেশের তরুণদের ভাবনা সম্পর্কিত একটি জরিপের ফলাফল গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। গত ২০ থেকে ৩১ মে সময়ের মধ্যে যৌথ উদ্যোগে জরিপটি চালিয়েছে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশনএইড। দেশের আটটি বিভাগের ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী দুই হাজার তরুণের ওপর জরিপটি চালানো হয়। জরিপের উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে ৭ জুলাই এর ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
বলা বাহুল্য, দেশে ১৫-৩৫ বছর বয়স গ্রুপের যে জনসংখ্যা, সেই নিরিখে দুই হাজার সংখ্যাটি কোনো শতাংশের হিসাবে আসে না। সেই বিবেচনায়, অনেকে মনে করতে পারেন যে এই জরিপে উঠে আসা মতামতকেও প্রতিনিধিত্বশীল বলা যায় না। আমরাও তেমনটা মনে করতে পারতাম যদি না ওই ক্ষুদ্রসংখ্যক তরুণের মতামত দেশের সব তরুণ-যুবা-প্রবীণনির্বিশেষে আপামর গণমানুষের ভাবনার বা মতামতের প্রতিফলন না ঘটাত।
যেমন, মোটাদাগে কয়েকটি বিষয়ের মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করা যায় বহুল আলোচিত মব জাস্টিস মতান্তরে মব সন্ত্রাসের কথা। জরিপে অংশ নেওয়া তরুণদের প্রায় ৭২ শতাংশ বলেছেন, এই মব সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করছে। এই জরিপের কথা ভুলে গিয়েও যদি মব সন্ত্রাসের বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা হয়, তাহলে দেশের কোনো একজন সাধারণ মানুষও কি এর অন্যথা বলবেন? আমরা তো দেখে এসেছি ১১ মাস ধরে যে এই মব বারবার আইনশৃঙ্খলাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সরকারকে নতজানু করেছে। এই মবের কারণেই অন্তর্বর্তী সরকার আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে এখনো যথেষ্ট ভালো অবস্থানে যেতে পারেনি।
অনেকে মনে করতে পারেন যে ৭২ শতাংশ তরুণ মবকে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন মানে অবশিষ্ট ২৮ শতাংশ মবের পক্ষে মতামত দিয়েছেন কিংবা নিশ্চুপ থেকেছেন। বিষয়টি মোটেই তেমন নয়। জরিপে অংশ নেওয়া তরুণেরা এ ক্ষেত্রে শুধু অগ্রাধিকার নির্ণয়ে ভিন্নতা দেখিয়েছেন। যেমন ৮০ শতাংশের বেশি তরুণ দস্যুতা, চুরি এবং বারবার অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনাবলিকে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহতকারী বলে মত দিয়েছেন। মবের সঙ্গে এসব ঘটনাকে কি খুব বেশি আলাদা করা যায়? এমন তো অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে যেখানে মব সৃষ্টি করে দস্যুতা করা হয়েছে। মব সৃষ্টি করে বাড়িঘর, দোকানপাট, অফিস-কারখানা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুঃখের বিষয়, এসব ঘটনার বিষয়ে, মবের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে খুব বেশি সোচ্চার দেখা যায়নি, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু বিবৃতি দেওয়া ছাড়া।
জরিপে অংশ নেওয়া তরুণদের অধিকাংশ সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহতকারী হিসেবে অনিরাপদ জনপরিসরের কথা বলেছেন। বলেছেন পক্ষপাতদুষ্ট গ্রেপ্তার এবং পক্ষপাতদুষ্ট বিচারপ্রক্রিয়ার কথা। এগুলো তো শুধু ওই স্বল্পসংখ্যক তরুণের কথা নয়। এগুলো তো দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনের কথা। এখনো কি যেনতেনভাবে কোনো মানুষকে বিশেষ কোনো ট্যাগ লাগিয়ে জনপরিসরে হেনস্তা করা হচ্ছে না? বয়স, সামাজিক অবস্থান-নির্বিশেষে নারীরা কি আজকাল জনপরিসরে নিরাপদ বোধ করেন? আর গণহারে মামলা ও গ্রেপ্তার নিয়ে যে সমস্যা, সে বিষয়ে তো আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলকেও আমরা কথা বলতে শুনেছি। তার মানে, এই ভাবনা শুধু ওই তরুণদের নয়। দেশের সাধারণ মানুষের ভাবনাই তরুণদের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
এই তরুণেরা কী চান? জরিপে এই সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তরুণেরা বলেছেন, তাঁরা চান আধুনিক শিক্ষা, উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা। রাষ্ট্রের সাধ্যের মধ্যে যতটা আধুনিক এবং উন্নত ব্যবস্থা সম্ভব। তাঁরা চান দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির অবসান। চান সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়া। স্বল্পসংখ্যক তরুণের এই প্রত্যাশায়ও জাতীয় প্রত্যাশারই প্রতিফলন ঘটেছে। গত কয়েক দশকে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে যে দুরবস্থার মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে, এ কথা কে অস্বীকার করতে পারে? পৃথিবীর আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে আমাদের শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থা কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। একই অবস্থা চিকিৎসাব্যবস্থারও। আর দুর্নীতির ব্যাপকতা নিয়ে তো নতুন করে কথা বলার কিছু নেই। রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বত্র দুর্নীতি অব্যাহতভাবে ক্রমপ্রসারমান। তরুণদের আরও কিছু চাওয়ার মধ্যে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (ক্যাম্পাসে) সুষ্ঠু পরিবেশ—অনলাইন-অফলাইনে নিরাপত্তা। এই দুটি বিষয়ও যথেষ্ট ভঙ্গুর অবস্থার মধ্যে রয়েছে। তাই তরুণদের আগ্রহ এগুলো বদলের প্রতি।
জরিপে তরুণেরা দেশে চলমান সংস্কারপ্রক্রিয়া, সরকারের কর্মদক্ষতা (পারফরম্যান্স), রাজনীতিসহ মোট ১৩টি বিষয়ে মতামত দিয়েছেন। এসব বিষয়ে তাঁদের আগ্রহ-অনাগ্রহের কথাও জানিয়েছেন। তার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হলো রাজনীতিতে অনাগ্রহ। তাঁদের ৮৩ শতাংশ রাজনীতিতে অংশগ্রহণে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এর কারণও তাঁরা বলেছেন। মূলত তিনটি কারণ—এক. রাজনীতি বড় সহিংস হয়ে উঠেছে। দুই. রাজনীতি ছেয়ে গেছে দুর্নীতি ও অনৈতিকতায়। আর তিন. (ধারণা করা যায় প্রথম দুটি কারণেই) পারিবারিকভাবে এবং সামাজিকভাবেও নিরুৎসাহিত করা হয়। দেশের সাধারণ মানুষ দশকের পর দশক ধরে যে রাজনীতি প্রত্যক্ষ করে আসছে, তাতে রাজনীতিতে অংশ নেওয়া বা আগ্রহী হওয়ার বিষয়ে এই মতই কি স্বাভাবিক নয়?
পুনশ্চ আজকের এই নিবন্ধের বিষয়বস্তু হতে পারত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে। গত বুধবার অপরাহ্ণে যখন খবর পাওয়া গেল যে রাত ৮টায় নির্বাচনের সময় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং, তখন কিছুটা অস্বাভাবিক লাগলেও তেমনটাই মনে হয়েছিল। কিন্তু পরে দেখা গেল যে না, নির্বাচনের দিনক্ষণ যেখানে ছিল সেখানেই আছে এবং আগের মতো শর্তসাপেক্ষই আছে। যদি সংস্কার এবং সব প্রস্তুতি (আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত) সম্পন্ন করা যায়, তাহলে আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগে কিংবা এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। এ ছাড়া যে বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে তা হলো—নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন। এ নির্দেশ মূলত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য। এই নির্দেশের সঙ্গে সাজুয্যপূর্ণ কোনো নির্দেশ বা নির্দেশনা নির্বাচন কমিশনকেও দেওয়া হয়েছে কি না, তার কোনো উল্লেখ সংবাদ সম্মেলনে করা হয়নি। তবে নতুন আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে, তরুণ ভোটারদের জন্য পৃথক ভোটার তালিকা এবং আলাদা ভোটকক্ষ স্থাপন করা হবে। এই উদ্যোগ নিয়ে অনেক কথাবার্তা হবে বলে মনে হয়। তবে আপাতত এইটুকু আশা করতে পারি যে এই উদ্যোগ আগামী নির্বাচনে তরুণ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রমুখী করতে বিশেষভাবে উৎসাহিত করবে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে ১০ জুলাই বিকেলে। ফল ঘোষণার পরপরই সাধারণ মানুষের মুখে একটাই কথা—এবার ফল কেমন যেন ঠাস করে মুখে এসে আঘাত করল। গড় পাসের হার ৬৮.৪৫ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ পয়েন্ট কম।
৬ ঘণ্টা আগেএক বছর আগে এই জুলাই মাসেই দেশের সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ইংরেজি মাধ্যম, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাখে লাখে তরুণ-তরুণী রাজপথে নেমে এসেছিল।
৬ ঘণ্টা আগেবিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দখলদার, চাঁদাবাজদের স্থান বিএনপিতে হবে না। খুব ভালো কথা। দেশের সাধারণ জনগণ দখলদার ও চাঁদাবাজবিহীন রাজনৈতিক দলই চায়।
৬ ঘণ্টা আগেশিল্পের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য চলচ্চিত্র ব্যয়বহুল মাধ্যম। যখন জিরো বাজেটে কেউ ছবি বানান, তখনো ছবিটি বানাতে ন্যূনতম কয়েক হাজার টাকা লেগে যায়। কাজেই শূন্য বাজেট আসলে শূন্য নয়। এ কারণেই বড় ক্যানভাসের ছবি বানাতে গেলে লগ্নিকারক প্রয়োজন হয়। মূলধারার চলচ্চিত্রে সূত্র মেনে যাঁরা ছবি বানান...
১ দিন আগে