রাফে সাদনান আদেল
খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, দেশে ক্যানসার-আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১৫ লাখ। প্রতি বছর গড়ে অন্তত দেড় লাখ রোগী মারা যাচ্ছেন এই ব্যাধিতে। গেল দুই বছরে আমরা করোনা মহামারির সঙ্গে নিজেদের সবটুকু দিয়ে লড়ে যাচ্ছি। করোনা মোকাবিলায় কত শ পদক্ষেপ নিচ্ছি আমরা। কিন্তু যদি সংখ্যার হিসাবটা কষি, তবে ক্যানসারের মৃত্যুর হারটা কি আমাদের একটু ভাবায় না! মরণব্যাধিখ্যাত এই অসংক্রামক রোগ অনেকটা মহামারির মতো বিস্তার পেয়েছে। গেল দুই বছরে করোনায় দেশে মৃতের সংখ্যা প্রায় সাড়ে আটাশ হাজার।
ক্যানসারের সম্ভাব্য প্রায় সব চিকিৎসাই তো দেশে আছে। তবে কেন এই মৃত্যু থামানো যাচ্ছে না? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে যে বিষয়গুলো সামনে এসেছে, তার প্রধানটি হলো, অবহেলা। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল দশা ও হাসপাতালগুলোর ভোগান্তি; সেই সঙ্গে চিকিৎসা ব্যয় অত্যধিক হওয়ায় আমরা সচরাচর একান্তই বাধ্য না হলে হাসপাতালে যেতে চাই না। রোগগুলো শরীরে পোক্ত না হওয়া অবধি, আমাদের একেবারে কাবু না করে ফেলা পর্যন্ত আমরা খুব একটা চিকিৎসকের কাছে যাই না। এ কারণেই আমাদের রোগ নির্ণয় সম্ভব হয় না প্রাথমিক পর্যায়ে। আর ক্যানসার এমন এক রোগ, যাকে পুরোপুরি নির্মূল করা সহজ হলো শুধুমাত্র তা প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা সম্ভব হলেই। রোগ একেবারে ঘাঁটি গেড়ে বসলে যে তা থেকে পরিত্রাণ মেলে না, তা কিন্তু নয়। তবে সেই পথটা অনেক বন্ধুর, অনেক কঠিন। সে ক্ষেত্রে যতটা না ক্যানসার আপনাকে কাবু করবে, তার চেয়ে শতগুণ বেশি কাবু করবে এর চিকিৎসা ব্যয় বহনের টেনশন।
দ্বিতীয় যে কারণটি আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় তা হলো, ক্যানসার চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনা। ক্যানসার চিকিৎসায় রোগী তার স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে দ্রুত। তাই কেমোথেরাপি নেওয়ার পর রোগীকে অন্তত পরের একটি সপ্তাহ নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। শরীরের নানা জটিলতাকে তখন চট জলদি সারিয়ে ফেলতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে ক্যানসার চিকিৎসা মানেই রোগীর দেহে কেমো কিংবা রেডিওথেরাপি দিয়ে দেওয়া। তার পরের জটিলতাগুলো আর তেমনভাবে সারিয়ে তোলার ব্যাপারে যত্নবান আমরা কেউই নই। এই অবহেলাতেও শত প্রাণ চলে যাওয়ার নজির কম নয়।
একে তো দেরিতে রোগ সম্পর্কে টের পাওয়া, তার পর তার যথার্থ চিকিৎসা শুরু করতে বা শুরু করেও বিপত্তি! যেমন ধরুন, ক্যানসারের সোর্স সার্জারির মাধ্যমে ফেলে দেবেন। বিপত্তির শুরু এখানেই। আগে কেমো দিয়ে সোর্স ছোট করে এনে সার্জারিতে যাবেন, নাকি আগে সার্জারি পরে কেমো! এর সমাধান না হয় হলো। এবার আসুন সার্জারিটা করবেন কে? দেশে কতজন পুরোদস্তুর ক্যানসার সার্জন আছেন জানেন কি? সংখ্যাটি অনেক কম! এবার আপনি সোর্স কেটে ফেলে দিলেন। কিন্তু ক্যানসার জার্ম রয়ে গেল তার সারফেসে। তখন আদতে কি আপনার সার্জারির কোনো লাভ হলো? প্রশ্নটা পাঠকদের কাছেই রইল।
এবার আসি ব্যয়ের কথায়। আমরা সবাই জানি ক্যানসার চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘ সময় ধরে করতে হয়। সাধারণ মানুষের জন্য সরকারি হাসপাতালগুলোতে লম্বা লাইন দিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার একটা সুযোগ থাকছে। কিন্তু ওষুধ? কয়টা হাসপাতালে ক্যানসারের ওষুধ মেলে বিনা মূল্যে? সরকার হয়তো বরাদ্দ দিচ্ছেন। তাহলে কেন সেই ‘বিক্রির জন্য নহে’ সিল দেওয়া দামি ওষুধগুলোর দেখা মেলে ফার্মেসিতে?
সবশেষে ক্যানসার সম্পর্কিত সচেতনতা নিয়ে একটু বলি। আদতে এই ভয়ানক ব্যাধি সম্পর্কে কতজন আর ঠিকঠাক জানে? ক্যানসার আক্রান্ত পরিবারগুলো বাদে কারও কি আর জানার কোনো সুযোগ আছে? মানুষকে জানানোর জন্য আদৌ কি শক্তিশালী পদক্ষেপ আছে? আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার বইয়ে কতটুকুই-বা জানান দেওয়া আছে এই রোগ সম্পর্কে। যে রোগ শুধুমাত্র একজনের জীবনই কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে না, সেই সঙ্গে পুরো পরিবারকে মানসিক ও অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দিতে পারে, তা নিয়ে আমাদের সচেতনতা কতটুকু।
ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখেই বিশ্ব ওভারিয়ান ক্যানসার কোয়ালিশন তাদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছে, বর্তমানে যেমন আছে, সেভাবেই চলতে থাকলে ২০৪০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রায় ৪০ লাখ মানুষ শুধু জরায়ুর ক্যানসারেই প্রাণ হারাবে! এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমাদের। আমরা এ রোগ প্রতিরোধে এগিয়ে আসব, নাকি নির্লিপ্ত থাকব। যেখানে দ্রুত শনাক্ত হলে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, সেখানে কারও মুখাপেক্ষী না হয়ে আমাদেরই জানতে হবে ক্যানসার সম্পর্কে। বিশ্ব ক্যানসার দিবসে আমাদের প্রত্যয় হোক—টিউমারসহ ক্যানসারের কোনো লক্ষণকে আমরা আর অবহেলা করব না। ক্যানসারকে শুধু জানবই না, এ বিষয়ে আমার পরিবারের মানুষকেও সচেতন করে তুলব।
লেখক: বোর্ড ডিরেক্টর, ওয়ার্ল্ড ওভারিয়ান ক্যানসার কোয়ালিশন
খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, দেশে ক্যানসার-আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১৫ লাখ। প্রতি বছর গড়ে অন্তত দেড় লাখ রোগী মারা যাচ্ছেন এই ব্যাধিতে। গেল দুই বছরে আমরা করোনা মহামারির সঙ্গে নিজেদের সবটুকু দিয়ে লড়ে যাচ্ছি। করোনা মোকাবিলায় কত শ পদক্ষেপ নিচ্ছি আমরা। কিন্তু যদি সংখ্যার হিসাবটা কষি, তবে ক্যানসারের মৃত্যুর হারটা কি আমাদের একটু ভাবায় না! মরণব্যাধিখ্যাত এই অসংক্রামক রোগ অনেকটা মহামারির মতো বিস্তার পেয়েছে। গেল দুই বছরে করোনায় দেশে মৃতের সংখ্যা প্রায় সাড়ে আটাশ হাজার।
ক্যানসারের সম্ভাব্য প্রায় সব চিকিৎসাই তো দেশে আছে। তবে কেন এই মৃত্যু থামানো যাচ্ছে না? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে যে বিষয়গুলো সামনে এসেছে, তার প্রধানটি হলো, অবহেলা। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল দশা ও হাসপাতালগুলোর ভোগান্তি; সেই সঙ্গে চিকিৎসা ব্যয় অত্যধিক হওয়ায় আমরা সচরাচর একান্তই বাধ্য না হলে হাসপাতালে যেতে চাই না। রোগগুলো শরীরে পোক্ত না হওয়া অবধি, আমাদের একেবারে কাবু না করে ফেলা পর্যন্ত আমরা খুব একটা চিকিৎসকের কাছে যাই না। এ কারণেই আমাদের রোগ নির্ণয় সম্ভব হয় না প্রাথমিক পর্যায়ে। আর ক্যানসার এমন এক রোগ, যাকে পুরোপুরি নির্মূল করা সহজ হলো শুধুমাত্র তা প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা সম্ভব হলেই। রোগ একেবারে ঘাঁটি গেড়ে বসলে যে তা থেকে পরিত্রাণ মেলে না, তা কিন্তু নয়। তবে সেই পথটা অনেক বন্ধুর, অনেক কঠিন। সে ক্ষেত্রে যতটা না ক্যানসার আপনাকে কাবু করবে, তার চেয়ে শতগুণ বেশি কাবু করবে এর চিকিৎসা ব্যয় বহনের টেনশন।
দ্বিতীয় যে কারণটি আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় তা হলো, ক্যানসার চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনা। ক্যানসার চিকিৎসায় রোগী তার স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে দ্রুত। তাই কেমোথেরাপি নেওয়ার পর রোগীকে অন্তত পরের একটি সপ্তাহ নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। শরীরের নানা জটিলতাকে তখন চট জলদি সারিয়ে ফেলতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে ক্যানসার চিকিৎসা মানেই রোগীর দেহে কেমো কিংবা রেডিওথেরাপি দিয়ে দেওয়া। তার পরের জটিলতাগুলো আর তেমনভাবে সারিয়ে তোলার ব্যাপারে যত্নবান আমরা কেউই নই। এই অবহেলাতেও শত প্রাণ চলে যাওয়ার নজির কম নয়।
একে তো দেরিতে রোগ সম্পর্কে টের পাওয়া, তার পর তার যথার্থ চিকিৎসা শুরু করতে বা শুরু করেও বিপত্তি! যেমন ধরুন, ক্যানসারের সোর্স সার্জারির মাধ্যমে ফেলে দেবেন। বিপত্তির শুরু এখানেই। আগে কেমো দিয়ে সোর্স ছোট করে এনে সার্জারিতে যাবেন, নাকি আগে সার্জারি পরে কেমো! এর সমাধান না হয় হলো। এবার আসুন সার্জারিটা করবেন কে? দেশে কতজন পুরোদস্তুর ক্যানসার সার্জন আছেন জানেন কি? সংখ্যাটি অনেক কম! এবার আপনি সোর্স কেটে ফেলে দিলেন। কিন্তু ক্যানসার জার্ম রয়ে গেল তার সারফেসে। তখন আদতে কি আপনার সার্জারির কোনো লাভ হলো? প্রশ্নটা পাঠকদের কাছেই রইল।
এবার আসি ব্যয়ের কথায়। আমরা সবাই জানি ক্যানসার চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘ সময় ধরে করতে হয়। সাধারণ মানুষের জন্য সরকারি হাসপাতালগুলোতে লম্বা লাইন দিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার একটা সুযোগ থাকছে। কিন্তু ওষুধ? কয়টা হাসপাতালে ক্যানসারের ওষুধ মেলে বিনা মূল্যে? সরকার হয়তো বরাদ্দ দিচ্ছেন। তাহলে কেন সেই ‘বিক্রির জন্য নহে’ সিল দেওয়া দামি ওষুধগুলোর দেখা মেলে ফার্মেসিতে?
সবশেষে ক্যানসার সম্পর্কিত সচেতনতা নিয়ে একটু বলি। আদতে এই ভয়ানক ব্যাধি সম্পর্কে কতজন আর ঠিকঠাক জানে? ক্যানসার আক্রান্ত পরিবারগুলো বাদে কারও কি আর জানার কোনো সুযোগ আছে? মানুষকে জানানোর জন্য আদৌ কি শক্তিশালী পদক্ষেপ আছে? আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার বইয়ে কতটুকুই-বা জানান দেওয়া আছে এই রোগ সম্পর্কে। যে রোগ শুধুমাত্র একজনের জীবনই কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে না, সেই সঙ্গে পুরো পরিবারকে মানসিক ও অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দিতে পারে, তা নিয়ে আমাদের সচেতনতা কতটুকু।
ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখেই বিশ্ব ওভারিয়ান ক্যানসার কোয়ালিশন তাদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছে, বর্তমানে যেমন আছে, সেভাবেই চলতে থাকলে ২০৪০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রায় ৪০ লাখ মানুষ শুধু জরায়ুর ক্যানসারেই প্রাণ হারাবে! এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমাদের। আমরা এ রোগ প্রতিরোধে এগিয়ে আসব, নাকি নির্লিপ্ত থাকব। যেখানে দ্রুত শনাক্ত হলে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, সেখানে কারও মুখাপেক্ষী না হয়ে আমাদেরই জানতে হবে ক্যানসার সম্পর্কে। বিশ্ব ক্যানসার দিবসে আমাদের প্রত্যয় হোক—টিউমারসহ ক্যানসারের কোনো লক্ষণকে আমরা আর অবহেলা করব না। ক্যানসারকে শুধু জানবই না, এ বিষয়ে আমার পরিবারের মানুষকেও সচেতন করে তুলব।
লেখক: বোর্ড ডিরেক্টর, ওয়ার্ল্ড ওভারিয়ান ক্যানসার কোয়ালিশন
মুঘল বাদশাহ আওরঙ্গজেব ১৭০০ খ্রিষ্টাব্দে মুর্শিদকুলি খাঁকে সুবা বাংলার দেওয়ান করেছিলেন। নতুন দেওয়ান দেখলেন, বাংলার জমিদারেরা ঠিকভাবে খাজনা পরিশোধ করেন না। কী করে কর আদায় করা যায়, তা ভাবতে লাগলেন তিনি। প্রশাসনিক প্রধান ছিলেন বাংলার সুবাদার বাদশাহের দৌহিত্র আজিমুশ্শান। তবে রাজস্ব আদায়ে সর্বেসর্বা ছিলেন
৭ ঘণ্টা আগেশিল্পভিত্তিক অর্থনীতি রচনা করতে গিয়ে আমরা নষ্ট করে চলেছি মাটির উর্বরতা শক্তি, নদীপ্রবাহ ও পানি, পরিবেশ ও প্রতিবেশ। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা সংস্থার এক হিসাব অনুযায়ী, ১৯৭৭ সালে দেশে কৃষিজমি ছিল মোট জমির প্রায় ৮৫ শতাংশ। কিন্তু ২০১০ সালে তা নেমে হয় ৭৫ শতাংশে। আর এ ১৫ বছরে তা নিশ্চয়ই আরও অনেকখানি কমে এসেছে।
৭ ঘণ্টা আগেআমি যখন সিডনি আসি, তখন বাংলা ভাষাভাষী মানুষ বিশেষত বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। একসময় যে আমাদের একটি বা একাধিক বইমেলার প্রয়োজন পড়তে পারে, সেটা দূরদর্শী ব্যতীত কারও মাথায় আসেনি। কিন্তু বাংলা, বাঙালি মানেই বিদ্রোহ আর দ্রোহের ভেতর দিয়ে নতুন কোনো ইতিহাস রচনা। সে ইতিহাস যে শুধু দেশের মাটিতে
৭ ঘণ্টা আগেগত বছরের জুলাইয়ের পর থেকেই ছাত্রসমাজকে দেখছি বিভিন্ন অসংগতির বিরুদ্ধে সোচ্চার। পৃথিবীর সব দেশেই ছাত্র বা তরুণসমাজ কোনো অন্যায়-অবিচার বা বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়, এটাই স্বাভাবিক। কোটা সংস্কারের দাবি ছিল যৌক্তিক। এই যৌক্তিক দাবির পক্ষে জুলাই মাসে দেশের ছাত্রসমাজ যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল, সেই আন্দো
৭ ঘণ্টা আগে