অজয় দাশগুপ্ত
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর লুইস সেপুলভেদাকে জানাই অসীম কৃতজ্ঞতা। ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের মার্কিন স্বীকৃতি মিলেছে তাঁর কারণে। এটি আমাদের অর্জন। এ বছরের ২২ জানুয়ারি সর্বসম্মতভাবে তাঁর প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। বাংলা নববর্ষের এই স্বীকৃতি ইতিহাসে সোনার আখরে লেখা থাকবে।
কিন্তু আমাদের দেশে মূল ভূখণ্ডে কি ভালো আছে, নিরাপদ আছে নববর্ষ? মনে হয় না। একটা গোষ্ঠী নববর্ষের গায়ে দাগ লাগাতে চাইছে। বরাবরই চায়। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, আমরা আর আগের মতো ঐক্যবদ্ধ নই। মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে, আমরা কি হীনবল হয়ে পড়েছি? আমাদের সব অর্জন কি তাহলে শেষ হতে চলেছে?
আমি মনে করি, এখনো বাংলা নববর্ষ পারে আমাদের জাগিয়ে রাখতে। রাজনীতি না হলেও এই উৎসব সামাজিক রাজনীতির এক বিরাট অংশ। এর সঙ্গে আনন্দ-উৎসব আর আচারের যোগ নিবিড়। নববর্ষ বাঙালির সর্বজনীন অহংকার। তারপরও প্রতিটি দিবস নিয়ে আছে মতভেদ। কথা ছিল একাত্তরে মীমাংসিত এই বিষয়গুলো নিয়ে আর কোনো দিন কোনো কথা উঠবে না। তা কি হয়েছে? বরং যত সময় গেছে, তত দিবসগুলো নিয়ে তর্ক আর ঝগড়া বেড়েছে। শুধু বাংলা নববর্ষের দিনটিই ছিল অপরিবর্তিত, যার ওপর আঁচড় পড়েনি। কিন্তু এবার কি সেই আঁচড় পড়তে যাচ্ছে?
বাংলা নববর্ষ কোনো সাম্প্রদায়িক উৎসব নয়; বরং এর পরতে পরতে আছে বাঙালির প্রাণস্পন্দন। ইতিহাস বলছে, সৌরপঞ্জিমতে বাংলায় ১২টি মাস অনেক আগে থেকেই পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু গ্রেগরীয় পঞ্জিকায় দেখা যায়, এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় এ সৌরবছর গণনা শুরু হতো। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ভারতবর্ষে মোগল সাম্রাজ্য শুরুর পর থেকে আরবি বছর হিজরি পঞ্জিকা অনুযায়ী তারা কৃষিপণ্যের খাজনা আদায় করত। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় কৃষি ফলনের সঙ্গে এর কোনো মিল পাওয়া যেত না। আর তখনই সম্রাট আকবর এর সুষ্ঠু সমাধানের জন্য বাংলায় বর্ষপঞ্জি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সম্রাটের আদেশ অনুযায়ী সে সময়কার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ আমির ফতেহউল্লাহ সিরাজী সৌরবছর ও আরবি হিজরি সনের ওপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম তৈরির কাজ শুরু করেন। বাংলা বছর নির্ধারণ নিয়ে লেখা বিভিন্ন বইয়ের প্রাপ্ত তথ্যমতে, ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১০ বা ১১ মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে পরীক্ষামূলক এ গণনা পদ্ধতিকে কার্যকর ধরা হয় ১৫৫৬ সালের ৫ নভেম্বর থেকে অর্থাৎ সম্রাট আকবরের সিংহাসনে আরোহণের তারিখ থেকে। প্রথমে ফসলি সন বলা হলেও পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিতি পেতে শুরু করে।
বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৪ এপ্রিল নববর্ষ উদ্যাপিত হয়। বাংলা একাডেমি কর্তৃক নির্ধারিত পঞ্জিকা অনুসারে এ দিনকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। বাংলা দিনপঞ্জির সঙ্গে হিজরি ও খ্রিষ্টীয় সালের মৌলিক কিছু পার্থক্য রয়েছে। তা হলো হিজরি সন চলে চাঁদের সঙ্গে আর খ্রিষ্টীয় সাল চলে ঘড়ির সঙ্গে। এ কারণে হিজরি সনের নতুন তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যায় নতুন চাঁদের আগমনের মধ্য দিয়ে, ইংরেজি দিন শুরু হয় মধ্যরাতে আর বাংলা তারিখ শুরু হয় ভোরের সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে।
দুই দশকের বেশি সময় ধরে মঙ্গল শোভাযাত্রা বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের একটি অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মঙ্গল শোভাযাত্রা এখন ইউনেসকো স্বীকৃত। ইউনেসকো তার ওয়েবসাইটে মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস তুলে ধরতে গিয়ে বলেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এই শোভাযাত্রা বের হয়। ১৯৮৯ সালে সামরিক স্বৈরশাসনের হতাশার দিনগুলোতে তরুণেরা এটা শুরু করেছিল। শিক্ষার্থীরা অমঙ্গলকে দূর করার জন্য বাঙালির নানা ধরনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক, প্রাণীর প্রতিকৃতি ও মুখোশ নিয়ে শোভাযাত্রা করে। মঙ্গল শোভাযাত্রাকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার আরও যে কয়েকটি কারণ ইউনেসকো উল্লেখ করেছে, সেগুলো হচ্ছে, এই শোভাযাত্রা অশুভকে দূর করা, সত্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রতীক। এই শোভাযাত্রার মাধ্যমে বাঙালির ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, জাতিগত সব ধরনের বৈশিষ্ট্য এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে হস্তান্তরিত হয়।
সত্য এই, যত দিন আমাদের দেশ আমাদের সংস্কৃতি আমাদের জীবন, তত দিন বাংলা, বাঙালির নববর্ষ থাকবে। এর বিনাশ নেই। তবু মাঝে মাঝে আমাদের সমাজে নতুন যত উপদ্রব হাজির হয়। দীর্ঘ সময় ধরে নববর্ষের ভাতা নেওয়া মানুষজনের এক বিরাট অংশ মজে আছে অসাম্প্রদায়িকতা আর উদারতা বিরোধিতায়। এরা কী চায়, তা আমরা বুঝি। কিন্তু রুখে দাঁড়ানোর চেষ্টা নেই বলেই তাদের উগ্র চেহারা দেখতে বাধ্য হয় জাতি। একটি আনন্দমুখর সর্বজনীন দিনকে বিতর্কিত না করলেই কি নয়?
এমনিতেই আমাদের আনন্দ সীমিত হয়ে আসছে। বাঙালির অপরাজনীতি গ্রাস করে নিয়েছে অনেক কিছু। এই নববর্ষ আমাদের আনন্দ, দেশ-বিদেশের বাংলাদেশিদের উৎসব। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃত এই উৎসবকে তার পথে চলতে দিতে হবে। এতেই সবার আনন্দ আর দেশের শান্তি।
বাংলাদেশের বাইরে যে বিশাল বাঙালি ভুবন, তাতেই এর শক্তি নিহিত। একুশ যেমন প্রবাসীদের হাত ধরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি লাভ করেছে, তেমনি নববর্ষও পারবে আপন ঔজ্জ্বল্যে রুখে দাঁড়াতে। প্রয়োজন বাঙালি হওয়ার সাধনা। আশ্চর্যের বিষয় এই, আমরা যারা বাইরের দেশে থাকি, আমরাও গণতান্ত্রিক সমাজে থেকে অগণতান্ত্রিক আচরণে অভ্যস্ত। আজকাল কথায় কথায় মারো-কাটো-ভাঙোর প্রকোপ। এমনটা হলে তো রুদ্ধ হয়ে যাবে এগোনোর পথ। উপায় একটাই— বাইরের নিরাপদ সমাজ ও দেশে একতাবদ্ধ হয়ে লড়াই করা। আজকাল লড়াই ময়দানে হয় না। হয় মগজে, হয় সংস্কৃতি আর শিল্পে। সে জায়গায় আমরা যারা বাঙালি, বাংলা ভালোবাসি, তারা এগিয়ে। আমাদের সঙ্গে আছেন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, লালন, হাসন রাজাসহ অসংখ্য সব গুণী মানুষ। যাঁদের নামই তাঁদের পরিচয়। এই জাতি তাই হারবে না। হারতে পারে না।
নববর্ষ আমাদের সূতিকাগার। জেগে ওঠার এক মন্ত্রণা। যতবার আমরা কঠিন সময়ের মুখোমুখি হই, ততবার সংস্কৃতি আমাদের পথ দেখায়। নববর্ষ মানেই গান, বাজনা, আনন্দ আর শোভাযাত্রা। যাদের তা অপছন্দ বা ভালো লাগে না, তারা আলোবিরোধী। তারা অন্ধকারের প্রাণী। পেঁচার জন্য তো সূর্য মুখ লুকিয়ে থাকবে না। মনে রাখা দরকার, মূল ভূখণ্ড অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষ আজ নানা সংকটে। তাদের শান্তি ও আনন্দ হাতছাড়া হওয়ার পথে। তারুণ্য বিদ্রোহ করতে জানে, প্রাণ দিয়ে একনায়ক বা অচলায়তন হটাতে পারে, কিন্তু অভিজ্ঞতা বা অতীতের কোনো বিকল্প হয় না। যাঁরা প্রবীণ, যাঁরা অভিজ্ঞ তাঁরা চুপ থাকা মানে দেশ ও জাতিকে অতলে ঠেলে দেওয়া।
আমি নিউইয়র্ক তথা আমেরিকা তথা বাইরের বাঙালির শক্তিকে স্বাগত জানাই। বিশ্বাস করি, আমাদের দ্বারা অনেক কিছু সম্ভব। অসম্ভবকে সম্ভব করার মূল মন্ত্রের নাম দেশপ্রেম। যে প্রেমের এক বিমূর্ত রূপ বাংলা নববর্ষ। বাংলা নববর্ষের হাত ধরে জেগে ওঠা বাঙালিকে কেউ রুখতে পারবে না। এটা যাঁরা বিশ্বাস করেন, তাঁদের কাছে বাঙালি অসাম্প্রদায়িক এক বিরল জাতি, যা আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময় দেখেছি। আজ এত বছর পর কেন আমরা তা বিসর্জন দেব? কেন আমাদের অর্জনগুলো হারাব?
খেয়াল করে দেখবেন খুব কম জাতির ভাগ্যেই এমন রমরমা উৎসব থাকে। থাকে এমন প্রীতিময় নববর্ষ। বাদ্য-বাজনা, সংগীত, নৃত্য, কবিতায় নববর্ষ মানেই আমাদের জীবনবোধের বহিঃপ্রকাশ। যা দেখে বিদেশিরাও মুগ্ধ হয়ে যায়। আমি অনেক বিদেশিকে চিনি যারা এমন নববর্ষ ও আনন্দময়তার কারণে বাঙালিকে ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে। এই অর্জন সংহত করার দিকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে দিল নিউইয়র্কের বাঙালি জনগোষ্ঠী। তাদের স্যালুট। সময় থেমে থাকে না। তার কাজ এগিয়ে চলা। প্রজন্মের পর প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে হলে সবাই মিলে কাজ করাই হচ্ছে শক্তি। জয় হোক নববর্ষের, জয় হোক বাঙালির।
লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কলামিস্ট
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর লুইস সেপুলভেদাকে জানাই অসীম কৃতজ্ঞতা। ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের মার্কিন স্বীকৃতি মিলেছে তাঁর কারণে। এটি আমাদের অর্জন। এ বছরের ২২ জানুয়ারি সর্বসম্মতভাবে তাঁর প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। বাংলা নববর্ষের এই স্বীকৃতি ইতিহাসে সোনার আখরে লেখা থাকবে।
কিন্তু আমাদের দেশে মূল ভূখণ্ডে কি ভালো আছে, নিরাপদ আছে নববর্ষ? মনে হয় না। একটা গোষ্ঠী নববর্ষের গায়ে দাগ লাগাতে চাইছে। বরাবরই চায়। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, আমরা আর আগের মতো ঐক্যবদ্ধ নই। মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে, আমরা কি হীনবল হয়ে পড়েছি? আমাদের সব অর্জন কি তাহলে শেষ হতে চলেছে?
আমি মনে করি, এখনো বাংলা নববর্ষ পারে আমাদের জাগিয়ে রাখতে। রাজনীতি না হলেও এই উৎসব সামাজিক রাজনীতির এক বিরাট অংশ। এর সঙ্গে আনন্দ-উৎসব আর আচারের যোগ নিবিড়। নববর্ষ বাঙালির সর্বজনীন অহংকার। তারপরও প্রতিটি দিবস নিয়ে আছে মতভেদ। কথা ছিল একাত্তরে মীমাংসিত এই বিষয়গুলো নিয়ে আর কোনো দিন কোনো কথা উঠবে না। তা কি হয়েছে? বরং যত সময় গেছে, তত দিবসগুলো নিয়ে তর্ক আর ঝগড়া বেড়েছে। শুধু বাংলা নববর্ষের দিনটিই ছিল অপরিবর্তিত, যার ওপর আঁচড় পড়েনি। কিন্তু এবার কি সেই আঁচড় পড়তে যাচ্ছে?
বাংলা নববর্ষ কোনো সাম্প্রদায়িক উৎসব নয়; বরং এর পরতে পরতে আছে বাঙালির প্রাণস্পন্দন। ইতিহাস বলছে, সৌরপঞ্জিমতে বাংলায় ১২টি মাস অনেক আগে থেকেই পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু গ্রেগরীয় পঞ্জিকায় দেখা যায়, এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় এ সৌরবছর গণনা শুরু হতো। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ভারতবর্ষে মোগল সাম্রাজ্য শুরুর পর থেকে আরবি বছর হিজরি পঞ্জিকা অনুযায়ী তারা কৃষিপণ্যের খাজনা আদায় করত। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় কৃষি ফলনের সঙ্গে এর কোনো মিল পাওয়া যেত না। আর তখনই সম্রাট আকবর এর সুষ্ঠু সমাধানের জন্য বাংলায় বর্ষপঞ্জি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সম্রাটের আদেশ অনুযায়ী সে সময়কার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ আমির ফতেহউল্লাহ সিরাজী সৌরবছর ও আরবি হিজরি সনের ওপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম তৈরির কাজ শুরু করেন। বাংলা বছর নির্ধারণ নিয়ে লেখা বিভিন্ন বইয়ের প্রাপ্ত তথ্যমতে, ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১০ বা ১১ মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে পরীক্ষামূলক এ গণনা পদ্ধতিকে কার্যকর ধরা হয় ১৫৫৬ সালের ৫ নভেম্বর থেকে অর্থাৎ সম্রাট আকবরের সিংহাসনে আরোহণের তারিখ থেকে। প্রথমে ফসলি সন বলা হলেও পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিতি পেতে শুরু করে।
বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৪ এপ্রিল নববর্ষ উদ্যাপিত হয়। বাংলা একাডেমি কর্তৃক নির্ধারিত পঞ্জিকা অনুসারে এ দিনকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। বাংলা দিনপঞ্জির সঙ্গে হিজরি ও খ্রিষ্টীয় সালের মৌলিক কিছু পার্থক্য রয়েছে। তা হলো হিজরি সন চলে চাঁদের সঙ্গে আর খ্রিষ্টীয় সাল চলে ঘড়ির সঙ্গে। এ কারণে হিজরি সনের নতুন তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যায় নতুন চাঁদের আগমনের মধ্য দিয়ে, ইংরেজি দিন শুরু হয় মধ্যরাতে আর বাংলা তারিখ শুরু হয় ভোরের সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে।
দুই দশকের বেশি সময় ধরে মঙ্গল শোভাযাত্রা বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের একটি অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মঙ্গল শোভাযাত্রা এখন ইউনেসকো স্বীকৃত। ইউনেসকো তার ওয়েবসাইটে মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস তুলে ধরতে গিয়ে বলেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এই শোভাযাত্রা বের হয়। ১৯৮৯ সালে সামরিক স্বৈরশাসনের হতাশার দিনগুলোতে তরুণেরা এটা শুরু করেছিল। শিক্ষার্থীরা অমঙ্গলকে দূর করার জন্য বাঙালির নানা ধরনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক, প্রাণীর প্রতিকৃতি ও মুখোশ নিয়ে শোভাযাত্রা করে। মঙ্গল শোভাযাত্রাকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার আরও যে কয়েকটি কারণ ইউনেসকো উল্লেখ করেছে, সেগুলো হচ্ছে, এই শোভাযাত্রা অশুভকে দূর করা, সত্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রতীক। এই শোভাযাত্রার মাধ্যমে বাঙালির ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, জাতিগত সব ধরনের বৈশিষ্ট্য এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে হস্তান্তরিত হয়।
সত্য এই, যত দিন আমাদের দেশ আমাদের সংস্কৃতি আমাদের জীবন, তত দিন বাংলা, বাঙালির নববর্ষ থাকবে। এর বিনাশ নেই। তবু মাঝে মাঝে আমাদের সমাজে নতুন যত উপদ্রব হাজির হয়। দীর্ঘ সময় ধরে নববর্ষের ভাতা নেওয়া মানুষজনের এক বিরাট অংশ মজে আছে অসাম্প্রদায়িকতা আর উদারতা বিরোধিতায়। এরা কী চায়, তা আমরা বুঝি। কিন্তু রুখে দাঁড়ানোর চেষ্টা নেই বলেই তাদের উগ্র চেহারা দেখতে বাধ্য হয় জাতি। একটি আনন্দমুখর সর্বজনীন দিনকে বিতর্কিত না করলেই কি নয়?
এমনিতেই আমাদের আনন্দ সীমিত হয়ে আসছে। বাঙালির অপরাজনীতি গ্রাস করে নিয়েছে অনেক কিছু। এই নববর্ষ আমাদের আনন্দ, দেশ-বিদেশের বাংলাদেশিদের উৎসব। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃত এই উৎসবকে তার পথে চলতে দিতে হবে। এতেই সবার আনন্দ আর দেশের শান্তি।
বাংলাদেশের বাইরে যে বিশাল বাঙালি ভুবন, তাতেই এর শক্তি নিহিত। একুশ যেমন প্রবাসীদের হাত ধরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি লাভ করেছে, তেমনি নববর্ষও পারবে আপন ঔজ্জ্বল্যে রুখে দাঁড়াতে। প্রয়োজন বাঙালি হওয়ার সাধনা। আশ্চর্যের বিষয় এই, আমরা যারা বাইরের দেশে থাকি, আমরাও গণতান্ত্রিক সমাজে থেকে অগণতান্ত্রিক আচরণে অভ্যস্ত। আজকাল কথায় কথায় মারো-কাটো-ভাঙোর প্রকোপ। এমনটা হলে তো রুদ্ধ হয়ে যাবে এগোনোর পথ। উপায় একটাই— বাইরের নিরাপদ সমাজ ও দেশে একতাবদ্ধ হয়ে লড়াই করা। আজকাল লড়াই ময়দানে হয় না। হয় মগজে, হয় সংস্কৃতি আর শিল্পে। সে জায়গায় আমরা যারা বাঙালি, বাংলা ভালোবাসি, তারা এগিয়ে। আমাদের সঙ্গে আছেন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, লালন, হাসন রাজাসহ অসংখ্য সব গুণী মানুষ। যাঁদের নামই তাঁদের পরিচয়। এই জাতি তাই হারবে না। হারতে পারে না।
নববর্ষ আমাদের সূতিকাগার। জেগে ওঠার এক মন্ত্রণা। যতবার আমরা কঠিন সময়ের মুখোমুখি হই, ততবার সংস্কৃতি আমাদের পথ দেখায়। নববর্ষ মানেই গান, বাজনা, আনন্দ আর শোভাযাত্রা। যাদের তা অপছন্দ বা ভালো লাগে না, তারা আলোবিরোধী। তারা অন্ধকারের প্রাণী। পেঁচার জন্য তো সূর্য মুখ লুকিয়ে থাকবে না। মনে রাখা দরকার, মূল ভূখণ্ড অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষ আজ নানা সংকটে। তাদের শান্তি ও আনন্দ হাতছাড়া হওয়ার পথে। তারুণ্য বিদ্রোহ করতে জানে, প্রাণ দিয়ে একনায়ক বা অচলায়তন হটাতে পারে, কিন্তু অভিজ্ঞতা বা অতীতের কোনো বিকল্প হয় না। যাঁরা প্রবীণ, যাঁরা অভিজ্ঞ তাঁরা চুপ থাকা মানে দেশ ও জাতিকে অতলে ঠেলে দেওয়া।
আমি নিউইয়র্ক তথা আমেরিকা তথা বাইরের বাঙালির শক্তিকে স্বাগত জানাই। বিশ্বাস করি, আমাদের দ্বারা অনেক কিছু সম্ভব। অসম্ভবকে সম্ভব করার মূল মন্ত্রের নাম দেশপ্রেম। যে প্রেমের এক বিমূর্ত রূপ বাংলা নববর্ষ। বাংলা নববর্ষের হাত ধরে জেগে ওঠা বাঙালিকে কেউ রুখতে পারবে না। এটা যাঁরা বিশ্বাস করেন, তাঁদের কাছে বাঙালি অসাম্প্রদায়িক এক বিরল জাতি, যা আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময় দেখেছি। আজ এত বছর পর কেন আমরা তা বিসর্জন দেব? কেন আমাদের অর্জনগুলো হারাব?
খেয়াল করে দেখবেন খুব কম জাতির ভাগ্যেই এমন রমরমা উৎসব থাকে। থাকে এমন প্রীতিময় নববর্ষ। বাদ্য-বাজনা, সংগীত, নৃত্য, কবিতায় নববর্ষ মানেই আমাদের জীবনবোধের বহিঃপ্রকাশ। যা দেখে বিদেশিরাও মুগ্ধ হয়ে যায়। আমি অনেক বিদেশিকে চিনি যারা এমন নববর্ষ ও আনন্দময়তার কারণে বাঙালিকে ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে। এই অর্জন সংহত করার দিকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে দিল নিউইয়র্কের বাঙালি জনগোষ্ঠী। তাদের স্যালুট। সময় থেমে থাকে না। তার কাজ এগিয়ে চলা। প্রজন্মের পর প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে হলে সবাই মিলে কাজ করাই হচ্ছে শক্তি। জয় হোক নববর্ষের, জয় হোক বাঙালির।
লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কলামিস্ট
বিশ্ববাণিজ্যের বাস্তবতা দিন দিন পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রতিটি দেশের সরকার তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা ও অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আমদানি ও রপ্তানির ওপর বিভিন্ন ধরনের শুল্ক বা কর আরোপ করে থাকে।
৭ ঘণ্টা আগে৫ আগস্টের পর থেকে আমরা ঢাকাসহ সারা দেশেই জাস্টিসের নমুনা দেখেছি। কিছু লোক একত্রে জড়ো হয়ে একটি গুজব ছড়িয়ে, কোনো ব্যক্তির ওপর চড়াও হয়ে তাকে শারীরিকভাবে আঘাত করে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে মেরে ফেলে।
৮ ঘণ্টা আগেসিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিএমইউ) উপাচার্যদের একের পর এক অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা বিশ্ববিদ্যালয়টির ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় উপাচার্যের বিতর্কিত নিয়োগ ও কর্মকাণ্ডের পর বর্তমান উপাচার্যও যেন সেই পথেই হাঁটছেন।
৮ ঘণ্টা আগেগতকাল বিকেল ৪টা ৩৬ মিনিটে দেশের এক প্রভাবশালী নেতার হাঁচি রাজনীতিতে নতুন ঝড় তুলেছে। হাঁচি সাধারণত শারীরিক প্রতিক্রিয়া হলেও, যেহেতু এটি একজন জাতীয় নেতার মুখ থেকে এসেছে...
১ দিন আগে