ফজলুল কবির
নাগরিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ঠিক যে যে কারণে নাগরিকেরা নানাভাবে অর্থের জোগান দিয়ে রাষ্ট্রের চাকা সচল রাখে, তার অন্যতম হচ্ছে এই কর্মসংস্থান। অথচ এই কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে যেকোনো অগ্রগতিকেই যেকোনো রাষ্ট্র বেশ বড় করে দেখাতে উদ্গ্রীব থাকে। একে তারা অনেকটা নিজেদের বদান্যতা হিসেবে দেখাতে তৎপর। তা না হয় দেখাল, কিন্তু তখনই মুশকিল হয়, যখন কর্মসংস্থানের অপেক্ষায় থাকা জনগোষ্ঠীকে সহায়তার বদলে রাষ্ট্রীয় কাঠামোটি তাঁকে নাজেহালই বেশি করে।
শিক্ষাজীবন শেষে একজন তরুণের পরিচয় রাতারাতি বদলে গিয়ে হয়ে যায় চাকরিপ্রার্থী। প্রত্যেক তরুণই চায় এই পরিচয় তাঁর গা থেকে খসে পড়ুক। কারণ, এই পরিচয়ের দীর্ঘস্থায়ী হওয়াটা সময়ের সঙ্গে সামাজিক গঞ্জনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেকে হয়তো বলবেন, সবাইকে চাকরি করতে হবে কেন? উদ্যোগও তো নিতে পারে। কিন্তু মুক্তবাজারের এই যুগে উদ্যোক্তা হওয়াটা যেমন সহজ, তেমনি কঠিন। কারণ, একজন তরুণকে উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে হলে শুরুতেই চাই যেমনই হোক একটা পুঁজি, যা অনেকেরই থাকে না। আবার অনেকে এতটা সৃষ্টিশীলও নয় যে, যা আছে, তাই নিয়ে একটা কোনো উদ্যোগ শুরু করে দেবে। অনেকে উদ্যোক্তা হওয়ার পথে থাকা ঝুঁকিগুলো নিতে চায় না। চায় একটা নিরাপদ ও নিশ্চিত আয়ের সুযোগ।
বাংলাদেশের মতো দেশে শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে চাকরি খোঁজার চলটাই তাই বেশি। এর নানা সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণ আছে। সে আলোচনা পাশ কাটিয়ে তাকানো যাক এই তরুণ চাকরিপ্রার্থীদের দিকে। দেশের বর্তমান বাস্তবতায় এটা অস্বীকারের উপায় নেই যে, চাকরির বাজারে সবচেয়ে লোভনীয় হচ্ছে সরকারি চাকরি। এটি অনেকটা সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। সবাই চায়, এই সোনার হরিণ ধরা দিক। কিন্তু প্রতিবছর খুব অল্পসংখ্যক তরুণের ভাগ্যেই এই শিকে ছেঁড়ে। বাকিরা আরও একটি, তারপর আরও একটি বছরের জন্য অপেক্ষা করে। প্রতিযোগিতা এত বেশি যে, একটি সরকারি চাকরি পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর তাই তরুণেরা যত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়, তার সবগুলোতেই সাড়া দেওয়ার চেষ্টা করেন।
গোল বাধে ঠিক এই জায়গাতেই। একের পর এক চাকরির বিজ্ঞপ্তি তো প্রকাশ হচ্ছে। চাকরিপ্রার্থীরাও আবেদন করছেন। সেই সঙ্গে তাঁদের ট্যাকও খালি হচ্ছে। অর্থাৎ সরকারের দপ্তরগুলো তরুণদের চাকরির নিশ্চয়তা দিতে পারুক না পারুক, আবেদন ফির নামে টাকা তুলে নিচ্ছে বেকার তরুণ-যুবাদের পকেট থেকে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরির আবেদনে একেকজন প্রার্থীর কাছ থেকে নেওয়া হয় ৫০০-৭০০ টাকা করে। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো কোনোটি আবার ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আবেদন ফি হিসেবে নেয়।
এই অর্থ তাঁদের কাছ থেকেই নেওয়া হয়, যাঁদের কোনো উপার্জন নেই, যাঁরা উপার্জনের উপায় খুঁজছে। হ্যাঁ, এর মধ্যে সবার আর্থিক সংগতি যে খারাপ, তা নয়। কিন্তু একটি বড় অংশ আছে, যাদের পক্ষে আবেদন ফির এই টাকা জোগাড় করাই ভয়াবহ এক চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে। কেউ কেউ ধারদেনা করে এই টাকা জোগাড় করেন। এটি এক সূক্ষ্ম বৈষম্যের সমীকরণের জন্ম দিচ্ছে, যেখানে শুধু আবেদন ফি নামের পাহাড়টি টপকাতে না পারায় অনেকেই হারিয়ে যাচ্ছে মাঝপথে। অনেকে তো পৃথিবী থেকেই হারিয়ে যাচ্ছে। সমাজ ও রাষ্ট্রের এই অবহেলা নিতে না পেরে অনেকে বেছে নিচ্ছে আত্মহননের পথ। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এ ধরনের বেশ কিছু খবরের দেখা চাইলেই মিলবে।
২০২০ সালের মার্চ থেকে করোনার প্রকোপের কারণে দেশে সরকারি চাকরির পরীক্ষাগুলো বন্ধ ছিল। আবার করোনার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের জেরে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। সরকারি চাকরির বয়স পেরিয়ে যাওয়া এই সব চাকরিপ্রার্থীর একমাত্র ভরসা বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রগুলো। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও বেকার হয়ে পড়া দক্ষ ও আধা-দক্ষ শ্রমশক্তিকে নিজেদের পছন্দমতো বেতন-ভাতায় নিযুক্ত করার একটি সুযোগ পায়। এটি একই সঙ্গে তরুণদের জন্য তাঁদের দরজাটি প্রায় বন্ধ করে দেয়। অভিজ্ঞতা বেশি মূল্যবান হয়ে ওঠে। আর বাজারে অভিজ্ঞ কিন্তু বেকার শ্রমশক্তির অভাব নেই এখন। এ অবস্থায় সরকারি চাকরির ক্ষেত্রগুলোর প্রতি তরুণদের আকর্ষণ আরও বেড়েছে। কিন্তু লকডাউন ওঠার পর কী হচ্ছে?
একই দিনে পাঁচ-সাতটি এমনকি ২১টি পর্যন্ত চাকরির পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এটি রীতিমতো চাকরিপ্রার্থীদের নিয়ে তামাশা করার শামিল। চাকরিপ্রার্থীদের প্রায় সবাই একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন করেছেন। এ জন্য তাঁরা যেভাবেই হোক টাকা জোগাড় করে আবেদন ফি নামের বস্তুটিও পরিশোধ করেছেন। অথচ চাকরির পরীক্ষার আয়োজনের সময় তাঁরা দেখলেন—প্রতিষ্ঠানগুলো তাঁদের কথা একবারের জন্যও ভাবেনি। যে পরীক্ষার আসনটি তারা টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছিল, সেখানে তাদের বসতে দেওয়া হয়নি। এটা অনেকটা টাকা নিয়ে পণ্য বা সেবা দিতে না চাওয়ার মতো ব্যাপার। এটি চূড়ান্ত অসততা। এই অসততা যেন জাতীয় প্রবণতায় পরিণত হয়েছে।
ই-কমার্স নিয়ে দেশে যে তোলপাড় হচ্ছে, তার কেন্দ্রে কিন্তু রয়েছে এই প্রবণতা। ইভ্যালির কথাই ধরা যাক। ইভ্যালির মতো ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো নিয়ে মূল সমালোচনা কী? পণ্যের দাম ক্রেতার কাছ থেকে নিয়ে তা সরবরাহ না করা বা সরবরাহ করতে এক অনির্দিষ্ট সময় কাটিয়ে দেওয়া। অর্থাৎ, পণ্যের দাম পরিশোধের পরও ক্রেতাকে পণ্য পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় রাখাটাই এই প্ল্যাটফর্মগুলো নিয়ে যাবতীয় অভিযোগের কেন্দ্রে। পরে না হয়, তদন্ত সাপেক্ষে নানা অভিযোগ উঠে আসছে। মিলছে অর্থ পাচারসহ নানা ঘটনার দেখা। কিন্তু মূলের দিকে তাকালে চাকরির আবেদন বাবদ টাকা নিয়ে, তার পরীক্ষায় বসতে না দেওয়ার মতো সিদ্ধান্তের সঙ্গে এর তো কোনো তফাত দেখা যায় না।
একজন চাকরিপ্রার্থী সবগুলো পরীক্ষায় বসেও হয়তো চাকরি না পেতে পারেন। কিন্তু যে আসনটি তিনি অর্থমূল্যে কিনেছেন, তাতে বসতে পারার নিশ্চয়তা তিনি অনায়াসে দাবি করতে পারেন। এটা তাঁর অধিকারের পর্যায়ে পড়ে, যা পুরোপুরি অগ্রাহ্য করা হচ্ছে। বিনা ফিতে চাকরির আবেদন করা বা এর পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ব্যবস্থা থাকার যে আদর্শ কাঠামো, তার কথা এখানে অবান্তর। কারণ, সেই মানবিক ও আদর্শ অবস্থান থেকে আমরা অনেক আগে থেকেই সরে গেছি। এখন তাই শুধু অর্থমূল্যে কেনা অধিকারটি নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে।
ইভ্যালিসহ নানা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের ক্ষেত্রে যেমন ক্রেতাদের কাছ থেকে পণ্য বাবদ নেওয়া টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে, ঠিক তেমনি চাকরি পরীক্ষার আসন ক্রয় বাবদ দেওয়া অর্থ চাকরি প্রার্থীদের ফেরত দেওয়া নিয়েও আলোচনা হওয়া উচিত। কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াই আবেদন ফি বাবদ নেওয়া এই টাকা ফেরতের বা এ বিষয়ে অন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন শুক্র ও শনিবার চাকরির পরীক্ষা না নেওয়ার একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি একটি অগ্রগতি। কিন্তু আরও নানা দপ্তর রয়েছে। তাদের মধ্যে একটি সমন্বয় হওয়াটা ভীষণভাবে জরুরি। কারণ, তরুণ জনশক্তিকে নাজেহাল করে আর যাই হোক এগোনো যায় না।
লেখক: ফজলুল কবির সহকারী বার্তা সম্পাদক,আজকের পত্রিকা
নাগরিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ঠিক যে যে কারণে নাগরিকেরা নানাভাবে অর্থের জোগান দিয়ে রাষ্ট্রের চাকা সচল রাখে, তার অন্যতম হচ্ছে এই কর্মসংস্থান। অথচ এই কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে যেকোনো অগ্রগতিকেই যেকোনো রাষ্ট্র বেশ বড় করে দেখাতে উদ্গ্রীব থাকে। একে তারা অনেকটা নিজেদের বদান্যতা হিসেবে দেখাতে তৎপর। তা না হয় দেখাল, কিন্তু তখনই মুশকিল হয়, যখন কর্মসংস্থানের অপেক্ষায় থাকা জনগোষ্ঠীকে সহায়তার বদলে রাষ্ট্রীয় কাঠামোটি তাঁকে নাজেহালই বেশি করে।
শিক্ষাজীবন শেষে একজন তরুণের পরিচয় রাতারাতি বদলে গিয়ে হয়ে যায় চাকরিপ্রার্থী। প্রত্যেক তরুণই চায় এই পরিচয় তাঁর গা থেকে খসে পড়ুক। কারণ, এই পরিচয়ের দীর্ঘস্থায়ী হওয়াটা সময়ের সঙ্গে সামাজিক গঞ্জনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেকে হয়তো বলবেন, সবাইকে চাকরি করতে হবে কেন? উদ্যোগও তো নিতে পারে। কিন্তু মুক্তবাজারের এই যুগে উদ্যোক্তা হওয়াটা যেমন সহজ, তেমনি কঠিন। কারণ, একজন তরুণকে উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে হলে শুরুতেই চাই যেমনই হোক একটা পুঁজি, যা অনেকেরই থাকে না। আবার অনেকে এতটা সৃষ্টিশীলও নয় যে, যা আছে, তাই নিয়ে একটা কোনো উদ্যোগ শুরু করে দেবে। অনেকে উদ্যোক্তা হওয়ার পথে থাকা ঝুঁকিগুলো নিতে চায় না। চায় একটা নিরাপদ ও নিশ্চিত আয়ের সুযোগ।
বাংলাদেশের মতো দেশে শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে চাকরি খোঁজার চলটাই তাই বেশি। এর নানা সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণ আছে। সে আলোচনা পাশ কাটিয়ে তাকানো যাক এই তরুণ চাকরিপ্রার্থীদের দিকে। দেশের বর্তমান বাস্তবতায় এটা অস্বীকারের উপায় নেই যে, চাকরির বাজারে সবচেয়ে লোভনীয় হচ্ছে সরকারি চাকরি। এটি অনেকটা সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। সবাই চায়, এই সোনার হরিণ ধরা দিক। কিন্তু প্রতিবছর খুব অল্পসংখ্যক তরুণের ভাগ্যেই এই শিকে ছেঁড়ে। বাকিরা আরও একটি, তারপর আরও একটি বছরের জন্য অপেক্ষা করে। প্রতিযোগিতা এত বেশি যে, একটি সরকারি চাকরি পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর তাই তরুণেরা যত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়, তার সবগুলোতেই সাড়া দেওয়ার চেষ্টা করেন।
গোল বাধে ঠিক এই জায়গাতেই। একের পর এক চাকরির বিজ্ঞপ্তি তো প্রকাশ হচ্ছে। চাকরিপ্রার্থীরাও আবেদন করছেন। সেই সঙ্গে তাঁদের ট্যাকও খালি হচ্ছে। অর্থাৎ সরকারের দপ্তরগুলো তরুণদের চাকরির নিশ্চয়তা দিতে পারুক না পারুক, আবেদন ফির নামে টাকা তুলে নিচ্ছে বেকার তরুণ-যুবাদের পকেট থেকে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরির আবেদনে একেকজন প্রার্থীর কাছ থেকে নেওয়া হয় ৫০০-৭০০ টাকা করে। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো কোনোটি আবার ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আবেদন ফি হিসেবে নেয়।
এই অর্থ তাঁদের কাছ থেকেই নেওয়া হয়, যাঁদের কোনো উপার্জন নেই, যাঁরা উপার্জনের উপায় খুঁজছে। হ্যাঁ, এর মধ্যে সবার আর্থিক সংগতি যে খারাপ, তা নয়। কিন্তু একটি বড় অংশ আছে, যাদের পক্ষে আবেদন ফির এই টাকা জোগাড় করাই ভয়াবহ এক চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে। কেউ কেউ ধারদেনা করে এই টাকা জোগাড় করেন। এটি এক সূক্ষ্ম বৈষম্যের সমীকরণের জন্ম দিচ্ছে, যেখানে শুধু আবেদন ফি নামের পাহাড়টি টপকাতে না পারায় অনেকেই হারিয়ে যাচ্ছে মাঝপথে। অনেকে তো পৃথিবী থেকেই হারিয়ে যাচ্ছে। সমাজ ও রাষ্ট্রের এই অবহেলা নিতে না পেরে অনেকে বেছে নিচ্ছে আত্মহননের পথ। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এ ধরনের বেশ কিছু খবরের দেখা চাইলেই মিলবে।
২০২০ সালের মার্চ থেকে করোনার প্রকোপের কারণে দেশে সরকারি চাকরির পরীক্ষাগুলো বন্ধ ছিল। আবার করোনার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের জেরে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। সরকারি চাকরির বয়স পেরিয়ে যাওয়া এই সব চাকরিপ্রার্থীর একমাত্র ভরসা বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রগুলো। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও বেকার হয়ে পড়া দক্ষ ও আধা-দক্ষ শ্রমশক্তিকে নিজেদের পছন্দমতো বেতন-ভাতায় নিযুক্ত করার একটি সুযোগ পায়। এটি একই সঙ্গে তরুণদের জন্য তাঁদের দরজাটি প্রায় বন্ধ করে দেয়। অভিজ্ঞতা বেশি মূল্যবান হয়ে ওঠে। আর বাজারে অভিজ্ঞ কিন্তু বেকার শ্রমশক্তির অভাব নেই এখন। এ অবস্থায় সরকারি চাকরির ক্ষেত্রগুলোর প্রতি তরুণদের আকর্ষণ আরও বেড়েছে। কিন্তু লকডাউন ওঠার পর কী হচ্ছে?
একই দিনে পাঁচ-সাতটি এমনকি ২১টি পর্যন্ত চাকরির পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এটি রীতিমতো চাকরিপ্রার্থীদের নিয়ে তামাশা করার শামিল। চাকরিপ্রার্থীদের প্রায় সবাই একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন করেছেন। এ জন্য তাঁরা যেভাবেই হোক টাকা জোগাড় করে আবেদন ফি নামের বস্তুটিও পরিশোধ করেছেন। অথচ চাকরির পরীক্ষার আয়োজনের সময় তাঁরা দেখলেন—প্রতিষ্ঠানগুলো তাঁদের কথা একবারের জন্যও ভাবেনি। যে পরীক্ষার আসনটি তারা টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছিল, সেখানে তাদের বসতে দেওয়া হয়নি। এটা অনেকটা টাকা নিয়ে পণ্য বা সেবা দিতে না চাওয়ার মতো ব্যাপার। এটি চূড়ান্ত অসততা। এই অসততা যেন জাতীয় প্রবণতায় পরিণত হয়েছে।
ই-কমার্স নিয়ে দেশে যে তোলপাড় হচ্ছে, তার কেন্দ্রে কিন্তু রয়েছে এই প্রবণতা। ইভ্যালির কথাই ধরা যাক। ইভ্যালির মতো ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো নিয়ে মূল সমালোচনা কী? পণ্যের দাম ক্রেতার কাছ থেকে নিয়ে তা সরবরাহ না করা বা সরবরাহ করতে এক অনির্দিষ্ট সময় কাটিয়ে দেওয়া। অর্থাৎ, পণ্যের দাম পরিশোধের পরও ক্রেতাকে পণ্য পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় রাখাটাই এই প্ল্যাটফর্মগুলো নিয়ে যাবতীয় অভিযোগের কেন্দ্রে। পরে না হয়, তদন্ত সাপেক্ষে নানা অভিযোগ উঠে আসছে। মিলছে অর্থ পাচারসহ নানা ঘটনার দেখা। কিন্তু মূলের দিকে তাকালে চাকরির আবেদন বাবদ টাকা নিয়ে, তার পরীক্ষায় বসতে না দেওয়ার মতো সিদ্ধান্তের সঙ্গে এর তো কোনো তফাত দেখা যায় না।
একজন চাকরিপ্রার্থী সবগুলো পরীক্ষায় বসেও হয়তো চাকরি না পেতে পারেন। কিন্তু যে আসনটি তিনি অর্থমূল্যে কিনেছেন, তাতে বসতে পারার নিশ্চয়তা তিনি অনায়াসে দাবি করতে পারেন। এটা তাঁর অধিকারের পর্যায়ে পড়ে, যা পুরোপুরি অগ্রাহ্য করা হচ্ছে। বিনা ফিতে চাকরির আবেদন করা বা এর পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ব্যবস্থা থাকার যে আদর্শ কাঠামো, তার কথা এখানে অবান্তর। কারণ, সেই মানবিক ও আদর্শ অবস্থান থেকে আমরা অনেক আগে থেকেই সরে গেছি। এখন তাই শুধু অর্থমূল্যে কেনা অধিকারটি নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে।
ইভ্যালিসহ নানা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের ক্ষেত্রে যেমন ক্রেতাদের কাছ থেকে পণ্য বাবদ নেওয়া টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে, ঠিক তেমনি চাকরি পরীক্ষার আসন ক্রয় বাবদ দেওয়া অর্থ চাকরি প্রার্থীদের ফেরত দেওয়া নিয়েও আলোচনা হওয়া উচিত। কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াই আবেদন ফি বাবদ নেওয়া এই টাকা ফেরতের বা এ বিষয়ে অন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন শুক্র ও শনিবার চাকরির পরীক্ষা না নেওয়ার একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি একটি অগ্রগতি। কিন্তু আরও নানা দপ্তর রয়েছে। তাদের মধ্যে একটি সমন্বয় হওয়াটা ভীষণভাবে জরুরি। কারণ, তরুণ জনশক্তিকে নাজেহাল করে আর যাই হোক এগোনো যায় না।
লেখক: ফজলুল কবির সহকারী বার্তা সম্পাদক,আজকের পত্রিকা
গত সংখ্যায় লিখেছিলাম, এখন আর ছাত্র খুঁজে পাওয়া যায় না, চারদিকে পরীক্ষার্থী। কিন্তু দ্রুতই দেখা যাচ্ছে, ছাত্র এবং পরীক্ষার্থী কাউকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ছাত্রদের একটা বৃহদাংশ রাজনীতিবিদে পরিণত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, তাদের অঙ্গুলি হেলনে বড় বড় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও হয়ে যাচ্ছে। ভেবেছিলাম প্রাথমিক শিক্ষা
১৭ ঘণ্টা আগেবিজ্ঞানীরা বিংশ শতাব্দীজুড়ে বহির্জাগতিক প্রাণ অনুসন্ধানের চেষ্টা চালিয়েছেন। খুঁজেছেন কার্বনভিত্তিক, সিলিকনভিত্তিক বা অ্যামোনিয়া যৌগনির্ভর প্রাণ। এটা আমাদের জানা জরুরি যে প্রাণের প্রকৃতি, আর অন্য জায়গায় প্রাণ আছে কি না, তা আসলে একই প্রশ্নের দুটো দিক। তা হলো, ‘কেন আমরা এখানে?’ বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে,
১৭ ঘণ্টা আগেপরিবার হলো মূলত রক্ত-সম্পর্কিত ব্যক্তিদের সংগঠন, যেখানে সব সদস্যের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, নিরাপত্তা এবং বিনোদনের আয়োজন হয়ে থাকে। পরিবার কখন কী কারণে গড়ে উঠেছে, তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। বেশির ভাগের মত হলো, মানুষ সমতলে বসবাস করার সময় কৃষিকাজ শিখে ফেলে। কৃষিজাত পণ্য সংরক্ষণের জন্য গোলাঘর
১৭ ঘণ্টা আগেনিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেশি, এ কথা নতুন নয়। এবং এ ব্যাপারে প্রমাণের অভাব নেই। একটা কিছু নিষিদ্ধ করলেই যে তা ব্যবহার করা বন্ধ হয়ে যাবে, এমন ভাবাটাই ভুল। ধরুন, একটি রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলে সেই দলটি যে ছদ্মবেশে বা তলে তলে রাজনীতি করবে না, সেই গ্যারান্টি কে দিতে পারে? তেমনি কেউ
১৭ ঘণ্টা আগে