Ajker Patrika

লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাত ময়দান

উবায়দুল্লাহ বাদল, সৌদি আরব থেকে
আপডেট : ১৫ জুন ২০২৪, ১৭: ৪৩
Thumbnail image

‘লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে আজ শনিবার মুখরিত ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দান। সেখানে সমবেত হয়েছে বিশ্বের ১৬০টি দেশের অন্তত ১৬ লাখের বেশি ধর্মপ্রাণ মুসলমান। মক্কা হতে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে চার বর্গমাইল আয়তনের এই বিশাল ময়দানে সেলাইবিহীন সাদা দুই খণ্ড কাপড় পরে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত হাজির ছিলেন হজযাত্রীরা। মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে হাজিরা দেওয়ার সময় সবার মুখে ছিল ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল-হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়াল-মুলক, লা শারীকা লাক’—অর্থাৎ উপস্থিত ‘হে আমার আল্লাহ, উপস্থিত। উপস্থিত, তোমার কোনো অংশীদার নেই, উপস্থিত। নিশ্চয় সব প্রশংসা ও নিয়ামত তোমার এবং রাজত্ব, তোমার কোনো অংশীদার নেই’। 

ইসলামী রীতি অনুযায়ী, জিলহজ মাসের নবম দিনটি আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে ইবাদতে কাটানোই হল হজ। শ্বেতশুভ্র পোশাকে আবৃত লাখ লাখ হজযাত্রী আরাফাত ময়দানের জাবালে রহমতের পাদদেশ ও মসজিদে নামিরার আশপাশে অবস্থান নিয়ে জীবনের পরম কাঙ্ক্ষিত হজ পালন করেন। জান্নাত থেকে বিতাড়িত বাবা হজরত আদম (আ.) ও মা হজরত হাওয়া (আ.) পৃথিবীতে দীর্ঘদিন একাকী ঘুরতে ঘুরতে এ আরাফাতের ময়দানে এসেই মিলিত হন। ‘রব্বানা যালামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফির লানা লানাকুন্না মিনাল খসিরিন’—এ দোয়া পড়ার পর আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের ক্ষমা করেন এবং দুজনের মিলন ঘটান। তাঁদের মিলনের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতেই আজ বিশ্ব মুসলিমের এই মিলনমেলা প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয়। ১৪০০ বছরের বেশি সময় আগে এখানেই বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (স.) দিয়েছিলেন তাঁর বিদায় হজের ভাষণ। এ কারণে আরাফাতে উপস্থিত না হলে হজের আনুষ্ঠানিকতা পূর্ণাঙ্গ হয় না। 

শুক্রবার রাতেই অধিকাংশ হজযাত্রীকে মোয়াল্লিমরা গাড়িতে করে নিয়ে আসেন আরাফাতে নির্ধারিত তাঁদের তাঁবুতে। অনেকে শনিবার সকালেও আসেন। তাঁরা সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করবেন। এখানে হজযাত্রীদের ফজর ছাড়াও এক আজান ও দুই ইকামতে জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করেন। 

আরাফায় অবস্থিত মসজিদে নামিরা হতে হজের মূল খুতবা দেন মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়খ মাহের বিন হামাদ আল-মুআইকিলি। মক্কা ও মদিনার পবিত্র দুই মসজিদের তত্ত্বাবধানকারী জেনারেল প্রেসিডেন্সি বিভাগ জানায়, এ বছর আরাফার ময়দান থেকে প্রচারিত হজের খুতবার অনুবাদ প্রচারিত হয় বিশ্বের ৫০টি ভাষায়। এবারে হজের খুতবার বাংলা অনুবাদের দায়িত্বে ছিলেন সৌদি আরবে অধ্যয়নরত বাংলাদেশের চার শিক্ষার্থী ড. খলীলুর রহমান, আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান মাক্কী, মুবিনুর রহমান ফারুক ও নাজমুস সাকিব। গত বছরও তাঁরা এ দায়িত্বে ছিলেন। 

সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে মাগরিব না আদায় করেই হজযাত্রীরা যাবেন মুযদালিফার উদ্দেশে। সেখানে যাওয়া মাত্র মাগরিব ও এশা এক আজানে, দুই ইকামাতে আদায় করেন। উন্মুক্ত আকাশের নিচে মাথা খোলা অবস্থায় রাত্রি যাপন করবেন হজযাত্রীরা। পরের দিনগুলোতে জামারাতে নিক্ষেপের জন্য এখান থেকেই পাথর সংগ্রহ করবেন হজযাত্রীরা। এ জন্য বিশেষ ধরনের ছোট ছোট পাথর ছড়িয়ে রাখা হয় পুরো মুযদালিফাজুড়ে। 

প্রতিবছরের মতো এবারও হজের দিন ভোরে কাবা আচ্ছাদিত করা হয় নতুন চাদরে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত