Ajker Patrika

গাজা নিয়ে ভোল পাল্টাল যুক্তরাষ্ট্র, এখন মুখে যুদ্ধবিরতির কথা 

আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮: ১৭
গাজা নিয়ে ভোল পাল্টাল যুক্তরাষ্ট্র, এখন মুখে যুদ্ধবিরতির কথা 

এতদিন বিরোধিতা করে এলেও এখন গাজায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সংস্থা নিরাপত্তা পরিষদে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব তুলতে প্রস্তুতিও শুরু করেছে দেশটি। প্রস্তাবটি এখনও খসড়া পর্যায়ে রয়েছে এবং সেটির একটি অনুলিপি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে পৌঁছেছে। 

খসড়াটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গাজা উপত্যকায় শিগগিরই অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি, হামাসের কবজায় থাকা জিম্মিদের মুক্তি এবং উপত্যকায় মানবিক সহায়তা ও ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানোর ক্ষেত্রে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা তুলে নেওয়া—এই ৩টি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সেখানে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন প্রশাসনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা গতকাল সোমবার বলেছেন, ‘যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভোট দেওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো “তাড়াহুড়ো” নেই, বরং আলোচনার জন্য সময় দিতে চায়।’ 

যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস করতে কমপক্ষে নয়টি ভোট প্রয়োজন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রিটেন, রাশিয়া বা চীনের কোনো ভেটো প্রয়োগ করা যাবে না। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খসড়ায় বলা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাফাতে একটি বড় স্থল আক্রমণের ফলে আরও বেশি বেসামরিক নাগরিকেরা হতাহত হবে এবং বাস্তুচ্যুত হয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে তাঁরা ঢুকে পড়ার চেষ্টা করবে। এতে আঞ্চলিক অস্থিশীলতা আরও বাড়বে। 

এদিকে আজ মঙ্গলবার আলজেরিয়ার খসড়া প্রস্তাবে ভেটো দিয়ে ইসরায়েলকে বাঁচানোর কথা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। সেদিনই যুক্তরাষ্ট্রের এমন খসড়া প্রকাশ্যে আসার পর ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইউএন ডিরেক্টর রিচার্ড গোয়ান বলেছেন, ওয়াশিংটনের খসড়া দেখে ইসরায়েল এবার মহা দুশ্চিন্তায় পড়বে। এটি সোজা কথা যে, নেতানিয়াহুকে সতর্ক করতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই খসড়া উপস্থাপন করছে। ইসরায়েলের প্রতি এ পর্যন্ত জাতিসংঘে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো সবচেয়ে কঠিন সতর্কবার্তা এটি। আমেরিকান কূটনৈতিক সুরক্ষার ওপর ইসরায়েল যে চোখ বন্ধ করে রাখতে পারে না তারও নিদর্শন। 

মার্কিন প্রশাসনের একজন দ্বিতীয় সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘মার্কিন খসড়া কোনো নির্দিষ্ট পক্ষের সম্পর্কে কিছু প্রস্তাব করে না, সেটা ইসরায়েলি বা আমাদের অন্য কোনো অংশীদার হোক না কেন।’ 

প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা গাজার উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জন মানুষকে হত্যার পাশাপাশি ২৪০ জন ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে ধরে নিয়ে যায়। অভূতপূর্ব সেই হামলার পর সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। 

চার মাসেরও বেশি সময় ধরে চলমান সেই অভিযানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন ২৯ হাজারেরও বেশি মানুষ, আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭০ হাজার। এ ছাড়া ইসরায়েলি বাহিনীর গোলায় বাড়িঘর হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন আরও লাখ লাখ ফিলিস্তিনি। 

ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরুর প্রায় এক মাস পর গত অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রথম প্রস্তাবটি নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে তুলেছিল রাশিয়া; কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের তাতে ভেটো বা আপত্তির কারণে তা পাস হতে পারেনি। 

তারপর আরও দুই দফায় নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ওঠার পর গত নভেম্বরে অস্থায়ী মানবিক বিরতিতে সম্মত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। মূলত কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতার কারণেই সম্ভব হয়েছিল এই বিরতি। সে সময় নিজেদের কবজায় থাকা দুই শতাধিক জিম্মির মধ্যে অর্ধেক জিম্মিকে ছেড়ে দিয়েছিল হামাস, বিনিময়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন কারগারে বন্দী দেড় শতাধিক ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছিল ইসরায়েলও। 

 ২৫ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী হওয়া সেই বিরতির পর ফের যুদ্ধ শুরু হয় ইসরায়েলি বাহিনী ও হামাসের মধ্যে। তার পরেও গত ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে একাধিকবার গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উঠেছে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে; সর্বশেষ প্রস্তাবটি উঠেছিল গত সপ্তাহের মঙ্গলবার। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তির জন্য কোনো প্রস্তাবই আলোর মুখ দেখেনি। সেই যুক্তরাষ্ট্রই এবার গাজায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। 

আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, আগের অবস্থান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের এভাবে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাওয়ার প্রধান কারণ গাজার রাফাহ শহরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের পরিকল্পনা। 

রাফায় ব্যাপক সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল। তবে এই শহরটি মিসরের সীমান্তবর্তী হওয়ায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে মিসরের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে মিসর যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রদের মধ্যে অন্যতম। 

অনেকে আবার যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে ইসরায়েলের প্রতি সতর্কবার্তা হিসেবেও দেখছেন। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সবচেয়ে বিশ্বস্ত মিত্র এবং ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাষ্ট্রটিকে বিভিন্ন সময়ে সামরিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও গোয়েন্দা সহায়তা দিয়ে আসছে ওয়াশিংটন। 

এই যুদ্ধের শুরু থেকে ইসরায়েলকে সমর্থন জানিয়ে আসছে হোয়াইট হাউস। সেই সঙ্গে গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের নিহতের হার হ্রাস করা, অভিযানকে আরও নিখুঁতভাবে পরিচালনা করা, উপত্যকায় ত্রাণ সরবরাহ নিয়মিত করার পরামর্শও দিচ্ছে; কিন্তু ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা এসব পরামর্শ কানে তুলছে না। সম্প্রতি বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েল দ্বিরাষ্ট্র সমাধানে বিশ্বাসী নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত