Ajker Patrika

রাশিয়ায় পারমাণবিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ন্যাটো: রুশ জেনারেল

আপডেট : ২৯ মে ২০২৪, ১৭: ৩৯
রাশিয়ায় পারমাণবিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ন্যাটো: রুশ জেনারেল

রাশিয়ার এক শীর্ষ জেনারেল সতর্ক করে বলেছেন, তাঁর দেশে পারমাণবিক হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ন্যাটো দেশগুলো। রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিসের (এফএসবি) প্রথম উপপ্রধান ও দেশটির বর্ডার গার্ড সার্ভিসের প্রধান জেনারেল ভ্লাদিমির কুলিশভ রুশ সংবাদ সংস্থা রিয়া নভোস্তিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছেন। 

রাশিয়ার বর্ডার গার্ড সার্ভিস ও এফএসবি সীমান্ত এলাকায় ন্যাটোর গোয়েন্দা কার্যক্রমের বাড়বাড়ন্ত হওয়ার প্রমাণ পেয়েছে উল্লেখ করে জেনারেল কুলিশভ গতকাল মঙ্গলবার বলেছেন, ‘রুশ সীমান্তের কাছাকাছি ন্যাটোর গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ছে। জোটের বাহিনী সামরিক প্রশিক্ষণ জোরদার করছে—যাতে তারা আমাদের ভূখণ্ডে পারমাণবিক হামলাসহ রাশিয়ান ফেডারেশনের বিরুদ্ধে সামরিক পটভূমি তৈরি করতে পারে।’ 

জেনারেল কুলিশভ আরও বলেন, ‘এই অবস্থায় আমাদের সীমান্ত সুরক্ষিত করতে আমাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে বাধ্য করেছে।’ এ সময় তিনি জানান, রাশিয়ার বর্ডার গার্ড সার্ভিস ব্রায়ানস্ক, কুরস্ক, বেলগরদ অঞ্চল ও ক্রিমিয়ায় ইউক্রেনীয় নাশকতাকারীদের প্রবেশে বাধা দেওয়ার মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। 
 
রাশিয়ার এই জেনারেল আরও জানান, ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী ও চরমপন্থী সংগঠন এবং ইউক্রেনের বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা ও সামরিক বাহিনী সদস্যরা রাশিয়ায় সাড়ে পাঁচ হাজার বার অনুপ্রবেশের প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। যা রাশিয়ার গোয়েন্দা ও বর্ডার গার্ড সার্ভিস ঠেকিয়ে দিয়েছে। 

কুলিশভ এমন একসময়ে এই মন্তব্য করলেন, যার মাত্র এক দিন আগে ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ ন্যাটো দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন দেশগুলো ন্যাটোর দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ায় হামলা অনুমতি দেয়। প্রসঙ্গত, কুলিশভ উল্লেখ করেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে ইউক্রেনের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অত্যন্ত বেড়ে গেছে। 

রুশ কর্মকর্তারা এর আগে ন্যাটোর পারমাণবিক অস্ত্র ভাগাভাগি পরিকল্পনার সমালোচনা করেছেন। এই পরিকল্পনার অধীনে বেলজিয়াম, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, তুরস্কসহ পরমাণু অস্ত্রধর দেশ নয়, এমন দেশে কিছুসংখ্যক আমেরিকান পারমাণবিক অস্ত্র সংরক্ষণ করা হয়েছে। মস্কো বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন যে এই দেশগুলো কীভাবে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। 

রাশিয়া–ইউক্রেনে চলমান সংকটের জন্য ইউরোপে ন্যাটোর সম্প্রসারণবাদী মনোভাব এবং ইউক্রেনে এর ক্রমবর্ধমান উপস্থিতিকে দায়ী করেছে। দেশটির অভিযোগ, মার্কিন নেতৃত্বে পশ্চিমাবিশ্ব ইউক্রেনে মস্কোর বিরুদ্ধে একটি প্রক্সি যুদ্ধ পরিচালনা করছে। 

রুশ কর্মকর্তারা বলেছেন, ওয়াশিংটন ও এর মিত্ররা কিয়েভকে যেভাবে সামরিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে, তাতে কেবল চলমান সংকট অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকবে এবং একপর্যায়ে পশ্চিমাবিশ্ব রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন মস্কোর অধিকর্তারা।

এর ধারাবাহিকতায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চলতি মাসের শুরুতে রাশিয়ার অকৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য একটি মহড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। দেশটি এই পদক্ষেপকে পশ্চিমাদের বৈরী বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সেনাবাহিনীর বেতন দিতে ট্রাম্পকে ১৩০ মিলিয়ন ডলার অনুদান, রহস্যময় দাতাটি কে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর এক বন্ধু তাঁকে ১৩০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছেন যাতে, মার্কিন সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের বেতন দেওয়া যায়। কারণ, মার্কিন সরকারে শাটডাউন তথা অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। ফলে, সরকার রাষ্ট্রীয় কোনো কাজের ব্যয় নির্বাহের জন্য অর্থ বরাদ্দ করতে পারছে না। তবে কে এই অর্থ দিয়েছেন তাঁর পরিচয় প্রকাশিত হয়নি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবর বলা হয়েছে, মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা দানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, এই অর্থ ১৩ লাখ ২০ হাজার সেনাসদস্যের বেতন প্রদানে ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে। তবে প্রতিরক্ষা দপ্তর দাতার পরিচয় প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে এ নিয়ে উঠেছে নৈতিকতার প্রশ্ন।

শনিবার ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ওই দাতা ‘আমার বড় সমর্থক’ এবং ‘মার্কিন নাগরিক।’ তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে সরকার কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে, কারণ কংগ্রেস এখনো বাজেট অনুমোদনে ব্যর্থ। গত সপ্তাহে প্রশাসন সাময়িকভাবে সেনাদের বেতন দিয়েছে, সামরিক গবেষণার বাজেট থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার সরিয়ে এনে। তবে মাসের শেষের বেতন দিবসে কী হবে, তা এখনো অনিশ্চিত।

রোববার অচলাবস্থার ২৫ তম দিন পার হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দীর্ঘতম অচলাবস্থাগুলোর একটি হতে যাচ্ছে। প্রতিরক্ষা দপ্তরের মুখপাত্র শন পারনেল শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই দান এমন শর্তে দেওয়া হয়েছে যে তা সেনাসদস্যদের বেতন ও ভাতার খরচ মেটাতে ব্যবহার করা হবে।’ তিনি জানান, দপ্তরের ‘সাধারণ উপহার গ্রহণের নীতিমালা’ অনুযায়ী এই অর্থ গ্রহণ করা হয়েছে।

ট্রাম্প গত বৃহস্পতিবারই দানের বিষয়টি আভাস দিয়েছিলেন, তবে তখনো দাতার নাম গোপন রেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘তিনি স্বীকৃতি চান না।’ শনিবার এশিয়া সফরে রওনা হওয়ার আগে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনি এক অসাধারণ ভদ্রলোক, এক দেশপ্রেমিক, এক মহান পৃষ্ঠপোষক। তিনি প্রচারবিমুখ।’

ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি চান না তাঁর নাম বলা হোক—যা আমার পরিচিত রাজনীতির জগতে বেশ অস্বাভাবিক। সেখানে তো সবাই চায় তাদের নাম উচ্চারিত হোক।’ তিনি আরও বলেন, ‘তিনি ১৩০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছেন যেন সেনারা বেতন পায়। এটা বিশাল অঙ্কের অর্থ। তিনি আমার বড় সমর্থকও বটে।’

এই অর্থ সেনাপ্রতি প্রায় ১০০ ডলারের সমান। গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউস প্রতিরক্ষা বাজেট পুনর্বিন্যাস করে বেতন দিতে পেরেছিল, কিন্তু ৩১ অক্টোবরের পরবর্তী বেতন দিবসে কী হবে, তা অনিশ্চিত রয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত কংগ্রেস এমন কোনো বিল পাস করতে পারেনি যা সেনাদের বেতন নিশ্চিত রাখবে।

অচলাবস্থার কারণে অধিকাংশ সরকারি কর্মী ছুটিতে আছেন বা বেতন ছাড়াই কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রতিরক্ষা দপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী, ১০ হাজার ডলারের বেশি দান নৈতিকতা পর্যালোচনার আওতায় আসে, যাতে নিশ্চিত করা যায় দাতার কোনো ব্যবসায়িক দাবি, মামলা, বা প্রতিরক্ষা দপ্তরের সঙ্গে কোনো স্বার্থ সংঘাত নেই।

বিদেশি নাগরিকের দান হলে তা আরও কঠোর যাচাইয়ের প্রয়োজন হয়। যদিও পেন্টাগন মাঝে মাঝে দান গ্রহণ করে, সাধারণত সেই অর্থ স্কুল, হাসপাতাল, লাইব্রেরি, জাদুঘর বা সমাধিক্ষেত্রের মতো নির্দিষ্ট প্রকল্পে ব্যয় হয়। তবে এবার সেনাবাহিনীকে বেতন দিতে নাম-গোপন দান গ্রহণে সমালোচনা উঠেছে।

সিনেটের প্রতিরক্ষা বরাদ্দ উপকমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য, ডেলাওয়্যারের সিনেটর ক্রিস কুনস বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনীকে নাম-গোপন দানের অর্থে চালানো এক ভয়াবহ নজির। এতে আশঙ্কা তৈরি হয় যে আমাদের সৈন্যরা বিদেশি শক্তির হাতে ‘কেনা সৈন্যে’ পরিণত হচ্ছে কি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টের নাগরিকত্ব বাতিল করল মাদাগাস্কার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ক্ষমতাচ্যুত মাদাগাস্কারের সাবেক প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা। ছবি: সংগৃহীত
ক্ষমতাচ্যুত মাদাগাস্কারের সাবেক প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা। ছবি: সংগৃহীত

গত সপ্তাহে মাদাগাস্কারে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন সাবেক প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা। এবার তাঁর নাগরিকত্ব বাতিল করেছে দায়িত্ব নেওয়া নতুন সরকার।

নতুন প্রধানমন্ত্রী হেরিনৎসালামা রাজাওনারিভেলো স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, স্থানীয় আইন অনুযায়ী, যারা বিদেশি নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন তাঁরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাদাগাস্কারের নাগরিকত্ব হারাবেন।

প্রায় এক দশক আগে ফরাসি নাগরিকত্ব লাভ করেন ৫১ বছর বয়সী রাজোয়েলিনা। এ কারণে ২০২৩ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কয়েক মাস আগে তিনি ফরাসি নাগরিকত্বের কথা প্রকাশ করেন। সন্তানদের ফ্রান্সে পড়াশোনার সুবিধার জন্য এই নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন বলে যুক্তি দেখান তিনি। সে সময় নির্বাচনে তাঁর প্রার্থিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তবে সেই দাবি উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নেন তিনি এবং জয়ী হন।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বিদ্যুৎ ও পানির সংকট নিয়ে ‘জেন জি মাদা’ নামে তরুণদের ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজোয়েলিনা প্রথমে তাঁর জ্বালানি মন্ত্রীকে বরখাস্ত করেন, পরে পুরো মন্ত্রিসভাকেই ভেঙে দেন। কিন্তু তাতেও তাঁর পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলন থামেনি।

বিক্ষোভকারীরা আশা করেছিলেন, রাজোয়েলিনা পদত্যাগ করবেন, যাতে দেশটি একটি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথে এগোতে পারে।

কিন্তু তিনি ক্ষমতা ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। শেষ পর্যন্ত কর্নেল মাইকেল রান্ড্রিয়ানিরিনার নেতৃত্বে সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশটির ক্ষমতা দখল করা হয়। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান রাজোয়েলিনা।

গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাজোয়েলিনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, তিনি একটি ‘নিরাপদ স্থানে’ আছেন এবং দেশের নিয়ন্ত্রণ তাঁর হাতেই আছে। তখন গুঞ্জন ওঠে, তিনি ফরাসি একটি বিমানে পালিয়ে গেছেন। বর্তমানে দেশটির অধিকাংশ নাগরিকের বিশ্বাস, রাজোয়েলিনা দুবাইয়ে আত্মগোপনে আছেন।

এই ভিডিওর ঘণ্টাকয়েক পরেই পার্লামেন্ট তাঁকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেয়। এরপর সেনারা প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে হামলা চালিয়ে সিনেট, সাংবিধানিক আদালত ও জাতীয় নির্বাচন কমিশন ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। কেবল জাতীয় সংসদকে রেখে অন্য সব প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত করা হয়।

বর্তমানে রান্ড্রিয়ানিরিনা শপথ গ্রহণ করেছেন এবং নতুন সরকার গঠন করেছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশে নির্বাচন আয়োজন করা হবে।

১৯৬০ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকে মাদাগাস্কার অভ্যুত্থানের ইতিহাসে ভরা। ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্টবিরোধী আন্দোলনের পর সেনাবাহিনীর সহায়তায় রাজোয়েলিনাকে ক্ষমতায় আনা হয়। তিনি তখন মাত্র ৩৩ বছর বয়সী এক সাবেক ডিজে। পরে সেনাবাহিনী গঠিত একটি ট্রানজিশনাল কাউন্সিল তাঁকে অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপ্রধান ঘোষণা করে। ২০১৮ সালে বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের বর্জিত এক ‘নির্বাচনে’ তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলায় ‘অনন্ত যুদ্ধ শুরুর কৃত্রিম পরিস্থিতি’ তৈরি করছে যুক্তরাষ্ট্র

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার ভেনেজুয়েলায় স্থল অভিযানের ইঙ্গিত দিয়েছেন। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার ভেনেজুয়েলায় স্থল অভিযানের ইঙ্গিত দিয়েছেন। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তাঁর এবং তাঁর দেশের বিরুদ্ধে এক ‘যুদ্ধ শুরুর কৃত্রিম পরিস্থিতি’ সাজাচ্ছে। তিনি এমন এক সময়ে এই কথা বললেন, যার আগে ওয়াশিংটন বিশ্বের সবচেয়ে বড় যুদ্ধজাহাজটি পাঠিয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশের দিকে। একই সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভেনেজুয়েলায় ‘স্থল অভিযানের’ ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছেন।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, এই যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর বিষয়টি লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতির বাড়ানোর মাধ্যমে বড় ধরনের উত্তেজনা উসকে দেওয়ার পরিস্থিতি নির্দেশ করছে। জল্পনা চলছে—ওয়াশিংটন হয়তো ভেনেজুয়েলার সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা করছে।

স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে জাতীয় টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে মাদুরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ‘এক নতুন চিরস্থায়ী যুদ্ধ তৈরি করছে।’ আর ঠিক তার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। এই রণতরী একসঙ্গে ৯০টি বিমান ও অ্যাটাক হেলিকপ্টার বহন করতে পারে।

ট্রাম্প কোনো প্রমাণ না দিয়েই মাদুরোকে ভেনেজুয়েলাভিত্তিক অপরাধচক্র ত্রেন দে আরাগুয়ার নেতা হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন। জবাবে মাদুরো বলেন, ‘তারা এক বিকৃত জাল গল্প বানাচ্ছে—একটি অশালীন, অপরাধপ্রবণ ও সম্পূর্ণ ভুয়া বর্ণনার গল্প। ভেনেজুয়েলা এমন একটি দেশ, যেখানে কোকা পাতা উৎপন্নই হয় না।’

ত্রেন দে আরাগুয়া মূলত ভেনেজুয়েলার একটি কারাগার থেকে গড়ে ওঠা অপরাধী চক্র। বৈশ্বিক মাদক পাচারে এই গ্যাংয়ের কোনো ভূমিকা নেই; বরং এটি খুন, চাঁদাবাজি ও মানবপাচারের মতো অপরাধে জড়িত।

গত বছর ভেনেজুয়েলায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে মাদুরোকে ব্যাপকভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক দেশ তার পদত্যাগের দাবি তুলেছে। এদিকে, অঞ্চলজুড়ে উত্তেজনা বাড়ছে। ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, তিনি ভেনেজুয়েলায় সিআইএ-এর অভিযান অনুমোদন করেছেন এবং দেশটিতে অবস্থিত কথিত মাদকচক্রের বিরুদ্ধে স্থল অভিযান বিবেচনা করছেন।

গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী দশটি নৌকায় বোমা হামলা চালিয়ে ধ্বংস করেছে। এর মধ্যে আটটি হামলা হয়েছে ক্যারিবীয় সাগরে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এসব নৌকা দেশে মাদক পাচারে জড়িত ছিল। এসব হামলায় অন্তত ৪৩ জন নিহত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদরিনো লোপেজ শনিবার জানান, দেশটি উপকূল রক্ষার জন্য সামরিক মহড়া পরিচালনা করছে, যাতে কোনো ‘গোপন অভিযান’ প্রতিহত করা যায়। তিনি বলেন, ‘আমরা ৭২ ঘণ্টা আগে শুরু করা উপকূল প্রতিরক্ষা মহড়া চালাচ্ছি—যাতে আমরা শুধু বড় সামরিক হুমকি নয়, মাদক পাচার, সন্ত্রাসবাদ ও অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা তৈরির গোপন অভিযান থেকেও নিজেদের রক্ষা করতে পারি।’

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে, ভেনেজুয়েলার সৈন্যরা নয়টি উপকূলীয় রাজ্যে মোতায়েন রয়েছে এবং মাদুরোর বেসামরিক মিলিশিয়ার এক সদস্যের হাতে রুশ তৈরি ইগলা-এস কাঁধে বহনযোগ্য বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। পাদরিনো বলেন, ‘সিআইএ শুধু ভেনেজুয়েলায় নয়, সারা বিশ্বেই সক্রিয়। তারা যেকোনো অঞ্চল থেকে অসংখ্য সিআইএ-সম্পৃক্ত ইউনিট পাঠাতে পারে, কিন্তু তাদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে।’

গত আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র আটটি নৌযান, দশটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান এবং একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন মোতায়েন করেছে কথিত মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে। তবে কারাকাসের দাবি, এই কর্মকাণ্ড আসলে সরকার উৎখাতের ছদ্মবেশী পরিকল্পনা।

শনিবার মাদুরো জানান, তিনি বিরোধী রাজনীতিক লিওপোলদো লোপেজের নাগরিকত্ব বাতিল ও পাসপোর্ট জব্দের জন্য আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। তাঁর অভিযোগ, লোপেজ দেশটিতে বিদেশি আগ্রাসনকে উৎসাহিত করছেন। ২০২০ সাল থেকে স্পেনে নির্বাসিত লোপেজ প্রকাশ্যে ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ পাঠানো এবং মাদকবাহী জাহাজে হামলার সমর্থন করেছেন।

২০১৪ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ার পর লোপেজ তিন বছরের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন। পরে তাকে ১৩ বছরেরও বেশি কারাদণ্ড দেওয়া হয় ‘ষড়যন্ত্র ও সহিংসতা উসকে দেওয়ার’ অভিযোগে। পরে তাঁকে গৃহবন্দী করা হয়, এবং ২০২০ সালে সামরিক সহায়তায় মুক্তি পেয়ে দেশত্যাগ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আরও এক শান্তিচুক্তির সাফল্য ট্রাম্পের, এবার থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ট্রাম্পের উপস্থিতিতে বর্ধিত শান্তিচুক্তিতে সই করেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল (মাঝে) ও কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত  (বামে)। ছবি: এএফপি
ট্রাম্পের উপস্থিতিতে বর্ধিত শান্তিচুক্তিতে সই করেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল (মাঝে) ও কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত (বামে)। ছবি: এএফপি

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতে একটি বর্ধিত যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। ট্রাম্প এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অবতরণ করেন আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দিতে এবং এর পাশাপাশি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য বৈঠকও তত্ত্বাবধান করবেন তিনি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল ও কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত ‘Delivering Peace’—লেখা একটি ব্যানারের সামনে শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এটি তিন মাস আগে হওয়া এক যুদ্ধবিরতি চুক্তির ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে নতুন এক সমঝোতা। এ সময় সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পও উপস্থিত ছিলেন।

হুন মানেত বলেন, ‘এই ঘোষণা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে এটি স্থায়ী শান্তির ভিত্তি তৈরি করবে। কিন্তু আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো—এটি দুই দেশের সম্পর্ক মেরামতের প্রক্রিয়া শুরু করবে। আমাদের সীমান্তের মানুষগুলো দীর্ঘদিন ধরে সংঘাতে বিভক্ত, আর নিরীহ বেসামরিক নাগরিকেরা ভীষণ ক্ষতির মুখে পড়েছে।’

গত জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দুই দেশের তৎকালীন নেতাদের ফোন করে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান এবং সতর্ক করেন—যুদ্ধ চলতে থাকলে ওয়াশিংটনের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত হতে পারে। ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশের সঙ্গে শক্তিশালী বাণিজ্য ও সহযোগিতা চালাবে, যতক্ষণ তারা শান্তিতে থাকে।’

দুই পক্ষই একে অপরকে অভিযুক্ত করছে রকেট ও ভারী গোলা বিনিময়ের দায়ে। এই সংঘাতে অন্তত ৪৮ জন নিহত ও প্রায় তিন লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যা সাম্প্রতিক ইতিহাসে দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাত।

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অনুতিন আরেকটু হলেই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত হতে যাচ্ছিলেন। কারণ, গত শুক্রবার দেশটির সাবেক রানি মা সিরিকিতের মৃত্যু হয়। তবে পরে তিনি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অনুতিন বলেন, ‘দুই দেশই সীমান্ত এলাকা থেকে ভারী অস্ত্র সরিয়ে নেবে, যাতে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।’ একই সঙ্গে থাইল্যান্ড ১৮ জন আটক কম্বোডিয়ার সেনাকে মুক্তি দেবে বলেও ঘোষণা দেন অনুতিন।

মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর ট্রাম্পকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঐতিহ্যবাহী নৃত্যশিল্পীরা তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। ট্রাম্প লালগালিচায় তাঁদের সঙ্গে নাচেন, এক হাতে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা এবং অন্য হাতে মালয়েশিয়ার পতাকা তুলে ধরেন। এরপর আনোয়ারের সঙ্গে তিনি লিমুজিনে করে শহরে প্রবেশ করেন।

ট্রাম্প যখন অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করছিলেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য প্রতিনিধিরা সমান্তরাল বৈঠকে বসেন চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তেজনা প্রশমনে। গতকাল শনিবার শুরু হওয়া বৈঠকে ‘রেয়ার আর্থ’ খনিজের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বাণিজ্য আলোচক জেমিসন গ্রিয়ার বলেন, আলোচনায় বিস্তৃত বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল, যার মধ্যে বাণিজ্য শুল্কে যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর প্রসঙ্গও ছিল। গ্রিয়ার বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে নেতাদের বৈঠকটি খুব ফলপ্রসূ হতে যাচ্ছে।’

বিশ্বজুড়ে ‘রেয়ার আর্থ’ খনিজের ওপর চীনের নিয়ন্ত্রণ এই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। ওয়াশিংটন সরবরাহ শৃঙ্খল বৈচিত্র্যময় করতে চায়। যুদ্ধবিরতি অনুষ্ঠানে ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্র খুব শিগগিরই থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ খনিজসম্পদ বিষয়ে চুক্তি করবে। পাশাপাশি কম্বোডিয়ার সঙ্গে একটি বৃহত্তর বাণিজ্য চুক্তির কথাও চলছে।

রোববার পরে তিনি ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দ্য সিলভার সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলে জানা গেছে। লুলা যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্ককে ‘ভুল সিদ্ধান্ত’ বলে আখ্যা দিয়ে তা কমানোর অনুরোধ জানাবেন। তাঁর দাবি, গত ১৫ বছরে ব্রাজিলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ৪১০ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকটি বাতিল হয়েছে। ট্রাম্প শনিবার ঘোষণা দেন, কানাডার পণ্যের ওপর বিদ্যমান শুল্কের অতিরিক্ত আরও ১০ শতাংশ বাড়ানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত