Ajker Patrika

যুক্তরাষ্ট্র গোয়েন্দা তথ্য বন্ধ করায় কতটা বিপদে পড়বে ইউক্রেন

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৫, ১৩: ০৬
বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র গোয়েন্দা তথ্য বন্ধ করে দিলে রণক্ষেত্রে ইউক্রেনের আকাশে অন্ধকার নেমে আসতে পারে। ছবি: এএফপি
বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র গোয়েন্দা তথ্য বন্ধ করে দিলে রণক্ষেত্রে ইউক্রেনের আকাশে অন্ধকার নেমে আসতে পারে। ছবি: এএফপি

ইউক্রেনে গোয়েন্দা সহায়তা সাময়িকভাবে স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য ইউক্রেনের যুদ্ধ প্রচেষ্টার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা সুস্পষ্ট কারণেই কখনো বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করা হয়নি বা হবেও না। তবে বেশির ভাগ বিশ্লেষক একমত যে, এটি মূলত দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রথমত, এটি ইউক্রেনকে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিকল্পনা তৈরিতে সহায়তা করে। দ্বিতীয়ত, এটি কিয়েভকে আগাম সতর্কবার্তা দেয়, যাতে তারা আসন্ন রুশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি মোকাবিলা করতে পারে।

মার্কিন স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্য এবং সিগনাল ইন্টারসেপ্টের মাধ্যমে ইউক্রেনীয় বাহিনী ফ্রন্টলাইনে রুশ সেনাদের অবস্থান, তাদের গতিবিধি এবং সম্ভাব্য পরিকল্পনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা পায়। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সহায়তা ছাড়া ইউক্রেন কার্যকরভাবে পশ্চিমা দূরপাল্লার অস্ত্র, যেমন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি হিমার্স লঞ্চার বা ব্রিটেন ও ফ্রান্স সরবরাহ করা স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে না।

শুধু সামরিক ব্যবহারের দিক থেকেই নয়, ওয়াশিংটন থেকে আসা ‘রিয়েল-টাইম’ তথ্য প্রবাহ ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী, গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় অবকাঠামো এবং সাধারণ জনগণের জন্যও আসন্ন হুমকির বিষয়েও অগ্রিম সতর্কবার্তা নিশ্চিত করত।

ইউক্রেনের বিমান হামলার সতর্ক সংকেত ও মোবাইল ফোনের অ্যালার্টগুলো কমবেশি সবই যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ‘প্রাথমিক সতর্কবার্তার’ ওপর নির্ভরশীল। এই স্যাটেলাইটগুলো রুশ ভূখণ্ডের গভীরে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ শনাক্ত করতে পারে, যা ইউক্রেনকে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিতে সুযোগ দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সহায়তা যদি দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ থাকে, তবে ইউক্রেনের আত্মরক্ষার সক্ষমতা ভয়াবহ সংকটে পড়তে পারে। বিশেষ করে, যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সহায়তা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কয়েক মাস আগেও ইউক্রেন আশা করেছিল, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও অন্যান্য অতিরিক্ত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ করা হলে তারা আরও বেশি শহর ও বিদ্যুৎকেন্দ্র রক্ষা করতে পারবে। কিন্তু এখন ইউক্রেনের প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। ইউরোপের সাম্প্রতিক প্রতিশ্রুত স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিছু হুমকি প্রতিহত করতে সহায়ক হবে, তবে রাশিয়ার সবচেয়ে বিপজ্জনক হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে কার্যকর হবে না।

এটি স্পষ্ট যে, যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ বন্ধ রেখে এটিকে আরেকটি কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ বলেছেন, ‘যদি ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পরিচালিত কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণে সম্মত হয়, তবে সামরিক সহায়তা পুনরায় শুরু হতে পারে।’

ওয়াল্টজ ফক্স নিউজকে বলেছেন, ‘আমরা যদি এই আলোচনাগুলো চূড়ান্ত করতে পারি এবং আলোচনা এগিয়ে নিতে পারি...তাহলে প্রেসিডেন্ট এই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন।’

এ ছাড়া, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ—এর পরিচালক জন র‍্যাটক্লিফ ফক্স বিজনেসকে জানিয়েছেন, ‘এই স্থগিতাদেশ শিগগিরই উঠে যাবে।’ এটি উঠুক বা না উঠুক, এটা সুস্পষ্ট যে—হোয়াইট হাউস ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কাছ থেকে কী চায়।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত