Ajker Patrika

যে যুদ্ধে বারুদের গন্ধ নেই, বিনিয়োগই দেশপ্রেমিকের অস্ত্র

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৫, ২১: ৩৯
ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পর ৪ এপ্রিল চীনের শেয়ারবাজারে বড় ধস হয়। ছবি: এএফপি
ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পর ৪ এপ্রিল চীনের শেয়ারবাজারে বড় ধস হয়। ছবি: এএফপি

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের কথা কখনো ভাবেননি কাও মিনজিয়ে। কিন্তু চীনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্য রকম এক যুদ্ধ দেশপ্রেমিক হিসেবে তাঁকে বিনিয়োগকারীর খাতায় নাম লিখিয়েছে। চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় গুয়াংডং প্রদেশের গৃহসজ্জাবিদ কাওয়ের মতো বহু ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে শেয়ারবাজারে টেনে এনেছে বারুদের গন্ধবিহীন এই যুদ্ধ।

বাণিজ্যযুদ্ধ নামে এর মধ্যেই পরিচিতি পাওয়া এই যুদ্ধের শুরু হল সেদিন, যেদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ববাণিজ্যের ইতিহাসে নজিরবিহীন এক কাণ্ড করে বসলেন! মূলত চীনকে টার্গেট করে কয়েক ডজন দেশের ওপর ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন তিনি। কিন্তু সেটাকে গ্রহণযোগ্য করতে নাম দেন ‘পাল্টা শুল্ক’ এবং ঘোষণার দিন ২ এপ্রিলকে ‘লিবারেশন ডে’ বা মুক্তির দিন ঘোষণা করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বাণিজ্যযুদ্ধ ঘোষণার সেই দিনেই বাজারে ঢোকার সিদ্ধান্ত নেন কাও মিনজিয়ে। দেশের অর্থনীতি বাঁচানোর লড়াইয়ে শামিল হতে প্রতি মাসে দুই হাজার ইউয়ান (প্রায় ২৭৪ ডলার) চীনের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

কাও জানান, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক ঘোষণার পর চীনা শেয়ারবাজারে ধস নামলে তিনি ব্রোকারেজ হাউসে নিজের অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলেন। কাও বলেন, ‘আমার উদ্দেশ্য মুনাফা নয়। এটা আমার দেশের জন্য কিছু করা। এই বাণিজ্যযুদ্ধে প্রতিটি নাগরিকের উচিত শেষ পর্যন্ত দেশের পাশে থাকা।’

ব্যবসায়ী ও ব্রোকাররা বলছেন, জাতীয় চেতনা থেকে হাজারো বিনিয়োগকারী চীনের শেয়ারবাজার রক্ষায় এগিয়ে আসছেন। প্রধানত প্রতিরক্ষা, ভোক্তাসামগ্রী ও সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের মতো চীনের জাতীয় স্বার্থের জন্য উপকারী খাতগুলোতে বিনিয়োগ করছেন তাঁরা।

চীনের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা সাধারণত লাভের আশায় শেয়ারবাজারে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এবার অন্য রকম দেশপ্রেম তাঁদের উদ্বুদ্ধ করছে। এই ‘দেশপ্রেমিক মনোভাব’ চীন সরকারের জন্য স্বস্তির। কারণ, তাঁরা বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে সৃষ্ট আতঙ্ক দূর করে পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখতে চাইছে।

ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পর ৪ এপ্রিল চীনের শেয়ারবাজারে বড় ধস হয়। কিন্তু এরপর বাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা বাজারে ৪৫ বিলিয়ন ইউয়ান নিট বিনিয়োগ করেছেন। আর ঘোষণার আগের ছয় কার্যদিবসে মোট ৯১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ইউয়ান মূলধন হারায় চীনের শেয়ারবাজার।

এর আগে ২০১৫ সালের শেয়ারবাজার ধসের পর প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর সরকারের কড়াকড়ির সময় বেসরকারি ও রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিল। কিন্তু এবার ট্রাম্পের চোখ ধাঁধানো শুল্কের হুমকি তাঁদের এক কাতারে দাঁড় করিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

৭ এপ্রিল চীনের শেয়ারবাজারের সূচকে ৭ শতাংশ পতনের পর রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি করে শেয়ার কেনার অঙ্গীকার করে; শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউসগুলো বাজার স্থিতিশীল রাখার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং অনেক কোম্পানি শেয়ার কিনে নেওয়ার পরিকল্পনা জানায়। গত সপ্তাহেই চীনের প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াং বাজার স্থিতিশীল করতে সরকারি কর্মকর্তাদের আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান।

এপ্রিলের শুরুতে চীনের শেয়ারবাজারের সূচকের পতন হয়ে সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছানোর পর ৮ শতাংশ উঠে দাঁড়িয়েছে। আর এই মাসে দরপতন হয়েছে মাত্র ১ দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যদিকে মার্কিন শেয়ারবাজারে এই সময়ে ৮ শতাংশের বেশি দরপতন হয়েছে।

ইউবিএস সিকিউরিটিজের চীনা শেয়ারবাজারবিষয়ক কৌশলবিদ মেং লেই বলেন, ‘আমরা মনে করি, চীনের এই শেয়ারবাজার এখন কৌশলগতভাবে আরও গুরুত্বপূর্ণ। দেশপ্রেমিক বিনিয়োগগুলো বিনিয়োগকারীদের মনোবল অনেকটাই বাড়িয়েছে।’

শেয়ারবাজার যেভাবে লড়াইয়ের ক্ষেত্র

চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নিংশিয়া অঞ্চলের বিনিয়োগকারী ঝৌ লিফেং শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছেন। এমনকি তাতে লোকসানের আশঙ্কা থাকলেও তিনি পিছু হটবেন না। পর্বতারোহী ঝৌয়ের কাছে এখন দেশপ্রেম মানে ‘শেয়ার ধরে রাখা’। তিনি জানান, ভোক্তা ও প্রতিরক্ষা খাতের শেয়ারে তাঁর ৩০ লাখ ইউয়ান বিনিয়োগ আছে। বিনিয়োগ করার মতো আরো ৭০ লাখ ইউয়ান তাঁর হাতে আছে।

রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী শু হাও বলেন, তিনিও প্রযুক্তি ও ভোক্তা খাতের শেয়ারে কয়েক মিলিয়ন ইউয়ান বিনিয়োগ করেছেন। বাণিজ্যযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানিকারকদের সহায়তায় দেশীয় খুচরা জায়ান্টদের নানা উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসা তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছে।

চীনা রপ্তানিকারকদের জন্য নানা সহায়তা ঘোষণা করেছে জেডি.কম, আলিবাবার মালিকানাধীন ফ্রেশিপ্পো, সুপার মার্কেট চেইন সিআর ভ্যানগার্ড ও ইয়ংহুই সুপারস্টোরস। শু বলেন, মানুষ এখন নানা উপায়ে দেশপ্রেম প্রকাশ করছে।

বিনিয়োগের ক্ষেত্র নির্বাচনেও ফুটে উঠেছে এই দেশপ্রেম। যেসব খাতে বেইজিংয়ের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার লক্ষ্য আছে এবং শুল্কের কারণে যেসব খাতের চীনা কোম্পানি বিশ্ববাজার থেকে ছিটকে পড়ছে, সেসব খাতেই মানুষ অর্থ ঢালছে। ভোক্তা ও চিপসংশ্লিষ্ট শেয়ারগুলোর দাম বেড়েছে। পর্যটন ও কৃষিভিত্তিক শেয়ারগুলোও দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

সাংহাইয়ের একটি ব্রোকারেজ হাউজে বিনিয়োগকারীদের ভিড়। ছবি: এএফপি
সাংহাইয়ের একটি ব্রোকারেজ হাউজে বিনিয়োগকারীদের ভিড়। ছবি: এএফপি

চীনে দ্রুত জনপ্রিয় হতে থাকা এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ডেও (ইটিএফ) অর্থ ঢুকছে। ৭ এপ্রিলের ধসের পর থেকে চীনা ইটিএফে ২৩০ বিলিয়ন ইউয়ানের বেশি বিনিয়োগ এসেছে। এর ফলে এই খাতের আকার প্রথমবারের মতো ৪ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে।

বারুদের গন্ধ নেই, তবু চলছে যুদ্ধ

পেশাদার বিনিয়োগকারীরাও দেশপ্রেমের টানে নতুন করে নিজেদের বিনিয়োগ পোর্টফোলিও সাজাচ্ছেন। হেজ ফান্ড ম্যানেজার ইয়াং টিংউ বলেন, তিনি নিজের পোর্টফোলিওতে বসে থাকা সব অর্থ শেয়ারবাজারে ঢেলে দিয়েছেন। কৃষি, শক্তি, আর্থিক ও প্রতিরক্ষা খাতে তিনি বিনিয়োগ করেছেন।

টংহেং ইনভেস্টমেন্টের পোর্টফোলিও ম্যানেজার ইয়াং বলেন, ‘এটা যুদ্ধ, শুধু বারুদের গন্ধ নেই। এটা শুধু আপনার পোর্টফোলিও নয়, আপনার দেশের ভবিষ্যতের ওপরও বাজি ধরা।’

শাংহাইভিত্তিক মাইনরিটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা লিয়াম ঝৌ জানান, তিনি এক বিলিয়ন ডলারের পুরো পোর্টফোলিও চীনা শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেন।

এই বাণিজ্যযুদ্ধ জিয়াংসু প্রদেশের শিক্ষিকা ন্যান্সি লুর মতো, অনেক চীনা বিনিয়োগকারীকে আবার ‘উগ্র দেশপ্রেমিক’ করে তুলেছে। ন্যান্সি বলেন, ‘আমার পোর্টফোলিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, কিন্তু আমি পরোয়া করি না। যুক্তরাষ্ট্রের দমননীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমি সরকারের পাশে থাকব।’

তিনি বলেন, ‘আমি একটি শেয়ারও বিক্রি করব না। আমি আমার দেশের বাজার রক্ষা করব। একজন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী হিসেবে কখনো এত গর্ব অনুভব করিনি।’ মার্কিন ব্র্যান্ড বয়কটের অংশ হিসেবে আর কখনো কফির জন্য স্টারবাকে যাবেন না বা নাইকি পরবেন না বলে ন্যান্সি লু প্রতিজ্ঞা করেন।

(১ ডলার = ৭.২৯১৭ ইউয়ান)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বন্ডাই বিচের ঘটনায় বদলে যেতে পারে অস্ট্রেলিয়ার অস্ত্র-আইন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নিহতদের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: রয়টার্স
নিহতদের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: রয়টার্স

দেশের সবচেয়ে বড় বন্দুক হামলার একদিন পর সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) কড়া বন্দুক আইন প্রণয়নের ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। শনিবার সিডনির বিখ্যাত বন্ডাই বিচে ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের একটি হানুক্কাহ অনুষ্ঠানে দুই বন্দুকধারীর হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন।

পুলিশ অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ না করলেও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, তাঁদের একজনের নাম সাজিদ আকরাম এবং অন্যজন নাভিদ আকরাম। সম্পর্কে তাঁরা পিতা-পুত্র।

বন্দুকধারীদের গাড়িতে জঙ্গি সংস্থা আইএস-এর দুটি পতাকা পাওয়া গেছে। ২৪ বছর বয়সী অভিযুক্ত নাভিদের বাবা সাজিদ তথা অপর অভিযুক্তের কাছে ২০১৫ সাল থেকে অস্ত্রের লাইসেন্স ছিল এবং তাঁর কাছে ছয়টি নিবন্ধিত অস্ত্র ছিল। এসব অস্ত্র দিয়েই হামলাকারীরা প্রায় ১০–২০ মিনিট ধরে উৎসবে উপস্থিত মানুষদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে নিহত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশুও রয়েছে এবং নিহতদের বয়স ১০ থেকে ৮৭ বছর পর্যন্ত।

রয়টার্স জানিয়েছে, হামলার পর হাসপাতালে নেওয়া ৪০ জনের মধ্যে দুজন পুলিশও ছিলেন। এ ছাড়া ঘটনার সময় হামলাকারী নাভিদ গুরুতর আহত হলেও তাঁর বাবা সাজিদ পুলিশের পাল্টা গুলিতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছেন।

সোমবার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবেনিজ বলেছেন, ‘গতকাল আমরা যা দেখেছি, তা ছিল ধর্মবিরোধী খাঁটি শয়তানদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।’ তিনি ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে বলেন, অস্ট্রেলিয়ার সরকার বন্দুক নিয়ম কঠোর করবে এবং জাতীয় অস্ত্র নিবন্ধন চালু করবে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বন্ডাই বিচে প্রায় ১ হাজার মানুষ ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় হতভম্ব হয়ে দিগ্‌বিদিক পালিয়ে যান। তবে আহমেদ আল-আহমেদ নামে এক বীর নাগরিক খালি হাতে এক হামলাকারীর কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে বহু মানুষের জীবন বাঁচান। এ সময় আল-আহমেদ নিজেও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

বিশ্ব নেতারা এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। এটি অস্ট্রেলিয়ায় এখন পর্যন্ত হওয়া সবচেয়ে গুরুতর বন্দুক হামলার ঘটনা।

উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় দেড় লাখ ইহুদি বসবাস করেন। তাঁদের এক-তৃতীয়াংশই বাস করেন সিডনির পূর্বাঞ্চলে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মুখে ধনকুবের থেকে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের মুখ জিমি লাই

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০১৯ সালে হংকংয়ের রাজপথে সংঘটিত গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে ধনকুবের জিমি লাই। ছবি: বিবিসি
২০১৯ সালে হংকংয়ের রাজপথে সংঘটিত গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে ধনকুবের জিমি লাই। ছবি: বিবিসি

হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের শীর্ষ মুখ ও প্রভাবশালী মিডিয়া উদ্যোক্তা জিমি লাইকে বিতর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা আইনের (এনএসএল) আওতায় বিদেশি শক্তির সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছেন দেশটির আদালত। ৭৮ বছর বয়সী এই ব্রিটিশ নাগরিক ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে কারাবন্দী রয়েছেন। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করলেও আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, তিনি হংকং ও চীনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপে বিদেশি সরকারগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছিলেন। দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আশঙ্কা রয়েছে। আগামী বছরের শুরুতে তাঁর সাজা ঘোষণা হতে পারে।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) রায় ঘোষণার সময় বিচারক অ্যাস্থার তোহ বলেন, চীনের পিপলস রিপাবলিকের প্রতি জিমি লাইয়ের ঘৃণা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, লাই যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোকে হংকংয়ের অজুহাতে চীনের সরকার উৎখাতে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

আদালত আরও রায় দেন, বন্ধ হয়ে যাওয়া দৈনিক ‘অ্যাপল ডেইলি’ পত্রিকার মাধ্যমে লাই রাষ্ট্রদ্রোহমূলক লেখা প্রকাশ করেছিলেন, যা ঔপনিবেশিক আমলের একটি আইনের লঙ্ঘন।

বেইজিং শাসিত হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী জন লি এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন—লাইয়ের কর্মকাণ্ড দেশ ও হংকংবাসীর স্বার্থ ক্ষুণ্ন করেছে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই রায়কে ‘নিষ্ঠুর বিচারিক প্রহসন’ আখ্যা দিয়ে বলছে, বিতর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা আইনটি কার্যত ভিন্নমত দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০১৯ সালে হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভের পর বেইজিং কোনো আইনসভা পরামর্শ ছাড়াই এই আইন প্রণয়ন করেছিল, যা কর্তৃপক্ষকে ব্যাপক ক্ষমতা দিয়েছে।

বিবিসি জানিয়েছে, রায়ের সময় জিমি লাই শান্ত ছিলেন এবং আদালত ছাড়ার সময় পরিবারকে বিদায় জানান। তাঁর স্ত্রী টেরেসা, এক ছেলে ও ক্যাথলিক কার্ডিনাল জোসেফ জেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। লাইয়ের আইনজীবী জানান, দীর্ঘ রায় পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আপিল করা হবে কি না, তা তিনি স্পষ্ট করেননি।

এদিকে লাইয়ের ছেলে সেবাস্তিয়ান লাই যুক্তরাজ্য সরকারকে তাঁর বাবার মুক্তির জন্য আরও সক্রিয় হতে আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্য এই মামলাকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নিপীড়ন’ আখ্যা দিয়ে নিন্দা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে লাইয়ের মুক্তি দাবি করে এলেও চীন ও হংকং সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে।

এক সময়ের সফল ব্যবসায়ী জিমি লাই ১৯৮৯ সালের চীনের তিয়েনআনমেন গণহত্যার পর গণতন্ত্র আন্দোলনে সক্রিয় হন। অনেক হংকংবাসীর চোখে তিনি এখনো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের প্রতীক। তবে এই রায় হংকংয়ের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পেহেলগাম হামলায় এনআইএর চার্জশিট, ৫ ব্যক্তির সঙ্গে এলটিই-টিআরএফও অভিযুক্ত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত ২২ এপ্রিল পেহেলগাম হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের বেশির ভাগ ছিলেন পর্যটক। ছবি: পিটিআই
গত ২২ এপ্রিল পেহেলগাম হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের বেশির ভাগ ছিলেন পর্যটক। ছবি: পিটিআই

জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার প্রায় আট মাস পর চার্জশিট দিয়েছে ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)। চার্জশিটে পাঁচ সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবাসহ (এলইটি) দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামের দুই সশস্ত্র সংগঠনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

গত ২২ এপ্রিল পেহেলগাম হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের বেশির ভাগ ছিলেন পর্যটক।

এনআইএর ১ হাজার ৫৯৭ পৃষ্ঠার চার্জশিটে হামলার পেছনে পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র, অভিযুক্তদের ভূমিকা এবং মামলার পক্ষে থাকা প্রমাণের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পেহেলগাম হামলার পরিকল্পনা, সহায়তা ও বাস্তবায়নে এলইটি-টিআরএফ সরাসরি জড়িত ছিল। হামলার মূল হ্যান্ডলার হিসেবে এলইটির শীর্ষ কমান্ডার সাজিদ জাটের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

চার্জশিটে তিনজনের নাম রয়েছে, যাঁদের পাকিস্তানের সন্ত্রাসী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন সুলেমান শাহ, হাবিব তাহির ওরফে জিবরান ও হামজা আফগানির। চলতি বছরের জুলাইয়ে শ্রীনগরের কাছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে তাঁরা নিহত হন।

এলইটি ও টিআরএফের পাশাপাশি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা ২০২৩-এর (বিএনএস) অস্ত্র আইন (১৯৫৯) ও বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনের (১৯৬৭) বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এনআইএ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ‘ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার’ ধারাও যুক্ত করেছে।

এ ছাড়া আরও দুজন এই মামলায় চার্জশিটভুক্ত হয়েছেন। পারভেজ আহমদ ও বশির আহমদকে গত ২২ জুন এনআইএ গ্রেপ্তার করেছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা তিন সন্ত্রাসীকে আশ্রয় দিয়েছিলেন।

পারভেজ আহমদ ও বশির আহমদ জিজ্ঞাসাবাদে পেহেলগাম হামলায় জড়িত তিন সন্ত্রাসীর পরিচয় প্রকাশ করেন এবং নিশ্চিত করেন যে, তাঁরা পাকিস্তানের নাগরিক এবং লস্কর-ই-তাইয়েবার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

কে এই সাজিদ জাট

সাজিদ জাট একাধিক ছদ্মনামে পরিচিত। তাঁর পরিচিত নামগুলোর মধ্যে রয়েছে সাইফুল্লাহ, নুমি, নুমান, ল্যাংড়া, আলি সাজিদ, উসমান হাবিব ও শানি। ২০২২ সালের অক্টোবরে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনের (ইউএপিএ) আওতায় তাঁকে ‘ব্যক্তিগত সন্ত্রাসী’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

প্রসঙ্গত, ইন্ডিভিজুয়াল টেররিস্ট (Individual Terrorist) বলতে এমন একজন ব্যক্তিকে বোঝানো হয়, যিনি কোনো বড় সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না থেকেও একা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেন। তাঁরা লোন উলফ নামেও পরিচিত। কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত না থাকায় সহজে তাঁদের খুঁজে পাওয়া যায় না।

ভারতীয় তদন্ত সংস্থাগুলোর ধারণা, সাজিদ জাট পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অবস্থিত লস্করের সদর দপ্তর থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তিনি শুধু টিআরএফের অপারেশনাল প্রধানই নয়, কাশ্মীর উপত্যকায় সন্ত্রাসী নিয়োগ, অর্থায়ন ও অনুপ্রবেশের দায়িত্বেও রয়েছেন।

সাজিদ জাটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে—২০২৩ সালের ধাংরি গণহত্যা (যেখানে তিনি ছিলেন মূল ষড়যন্ত্রকারী), ২০২৪ সালের মে মাসে পুঞ্চে বিমানবাহিনীর কনভয়ে হামলা এবং ২০২৪ সালের জুনে রিয়াসি বাস হামলা।

এ ছাড়া হাইব্রিড সন্ত্রাসীদের লজিস্টিক ও অপারেশনাল সহায়তা দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ভারতীয় তদন্ত সংস্থাগুলোর মতে, কাশ্মীরে সক্রিয় সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সবচেয়ে ভয়ংকর মুখ হলেন এই সাজিদ জাট।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হিমালয়ে হারিয়ে যাওয়া পারমাণবিক যন্ত্র ৬০ বছর পরও গঙ্গার জন্য ঝুঁকি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত নন্দা দেবীর চূড়ায় পারমাণবিক শক্তিচালিত নজরদারিযন্ত্রটি বসানো হয়েছিল। ছবি: এএনআই
ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত নন্দা দেবীর চূড়ায় পারমাণবিক শক্তিচালিত নজরদারিযন্ত্রটি বসানো হয়েছিল। ছবি: এএনআই

প্রায় ৬০ বছর আগের ঘটনা, তখন স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। চীনকে টেক্কা দিতে উঠেপড়ে লেগেছে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থা মিলে নামে এক গোপন অভিযানে। কিন্তু অভিযানে নেমে বৈরী আবহাওয়ার কারণে হারিয়ে যায় নজরদারির কাজে ব্যবহৃত পারমাণবিক শক্তিচালিত একটি যন্ত্র, যেটি আজও হিমালয় পর্বতের বরফের নিচে চাপা পড়ে আছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভারতের নন্দা দেবী পর্বতের কাছে হারিয়ে যাওয়া ওই পারমাণবিক শক্তিচালিত যন্ত্রটি গঙ্গা নদীর জন্য নানান ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

ঘটনার সূত্রপাত ১৯৬৫ সালে, চীনের সদ্য গড়ে ওঠা পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ও ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) যৌথভাবে এক গোপন অভিযানে নামে। লক্ষ্য ছিল—ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত নন্দা দেবীর চূড়ায় একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত নজরদারিযন্ত্র বসানো।

ওই যন্ত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল একটি রেডিওআইসোটোপ থার্মোইলেকট্রিক জেনারেটর (আরটিজি)। এটি কয়েক কেজি প্লুটোনিয়াম দিয়ে চালিত হতো। এর মাধ্যমে স্থাপিত সেন্সরগুলো দিয়ে সীমান্তের ওপারে চীনের ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক পরীক্ষার তথ্য সংগ্রহ করার কথা ছিল। কিন্তু ভয়াবহ তুষারঝড়ের কবলে পড়ে অভিযানে অংশ নেওয়া দল যন্ত্রটি পাহাড়ে রেখে পিছু হটতে বাধ্য হয়। পরের মৌসুমে ফিরে গেলে দেখা যায়—আরটিজি ও এর প্লুটোনিয়াম-কোর আর সেখানে নেই। ধারণা করা হয়, তুষারধসের কারণে সেটি ভেসে গেছে অথবা গভীর হিমবাহের নিচে চাপা পড়েছে।

আরটিজি কী

আরটিজি বা রেডিওআইসোটোপ থার্মোইলেকট্রিক জেনারেটর হলো এমন একটি যন্ত্র, যা তেজস্ক্রিয় পদার্থের তাপ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। ওই পদার্থ ধীরে ধীরে ক্ষয় হওয়ার সময় তাপ তৈরি হয় আর সেই তাপ বিদ্যুতে রূপান্তরিত হয়।

এই প্রক্রিয়ায় কোনো চলমান যন্ত্রাংশ থাকে না। তাই আরটিজি দীর্ঘদিন কাজ করতে পারে। সাধারণত মহাকাশ অভিযান বা এমন দুর্গম এলাকায় এগুলো ব্যবহার করা হয়।

আরটিজি কোনো পারমাণবিক বোমা নয় এবং এটি বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে না। তবে যন্ত্রটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিকিরণজনিত ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

হারানো যন্ত্রটি এখন কোথায়

পরবর্তী কয়েক দশকে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একাধিকবার ওই যন্ত্রের সন্ধানে অভিযান চালালেও সফল হয়নি। দুই দেশের কেউই নিশ্চিত করে বলেনি, যন্ত্রটির পরিণতি কী হয়েছে।

কিছু কর্মকর্তা ও লেখকের মতে, ভারতীয় কোনো দল নীরবে যন্ত্রটি উদ্ধার করে থাকতে পারে। আবার অনেকের ধারণা, এটি এখনো নন্দা দেবী এলাকার অস্থির বরফ ও পাথরের স্তরের নিচে আটকে আছে।

১৯৭৮ সালে ভারতের পরমাণু শক্তি কমিশনের এক জরিপে স্থানীয় নদীগুলোতে কোনো প্লুটোনিয়াম দূষণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে জরিপটি যন্ত্রটির অবস্থানও নির্দিষ্ট করতে পারেনি। ফলে বিষয়টি আজও অমীমাংসিত রয়ে গেছে।

গঙ্গায় তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ঝুঁকি

নন্দা দেবীর হিমবাহ থেকে উৎপন্ন রিষিগঙ্গা ও ধৌলিগঙ্গা নদী মিলিত হয়ে অলকানন্দায় প্রবাহিত হয়। পরে অলকানন্দা ও ভাগীরথী একত্রে গঙ্গা নদীর জন্ম দেয়। এই নদীই নিচের দিকে কয়েক শ কোটি মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি রেডিওআইসোটোপ থার্মোইলেকট্রিক জেনারেটরটি অক্ষত অবস্থায় বরফের গভীরে চাপা পড়ে থাকে, তাহলে তাৎক্ষণিক ঝুঁকি তুলনামূলক কম। কিন্তু সময়ের সঙ্গে এর আবরণ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তেজস্ক্রিয় পদার্থ গলে বরফের পানির সঙ্গে মিশে নদীতে প্রবেশ করতে পারে।

এই সম্ভাবনাকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন—সম্ভাবনা কম, কিন্তু প্রভাব ভয়াবহ। উত্তরাখন্ডে প্রতিবছর বন্যা, তুষারধসের ঘটনা ঘটলে এই আশঙ্কা নতুন করে সামনে আসে।

নতুন করে উদ্বেগ কেন

হিমালয়ে হিমবাহ গলার গতি বেড়ে যাওয়া, ২০২১ সালের চামোলি বন্যার মতো দুর্যোগের পুনরাবৃত্তি এবং পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল এলাকায় পুরোনো সামরিক ও পারমাণবিক কর্মকাণ্ড নিয়ে বাড়তি নজরদারির প্রেক্ষাপটে নন্দা দেবীর এই হারানো যন্ত্রটি আবার আলোচনায় এসেছে।

এখন পর্যন্ত কোনো তেজস্ক্রিয় বিকিরণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে বিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তা—তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও হিমবাহ সরে যাওয়ার ফলে ভবিষ্যতে আরটিজির অবশিষ্টাংশ উন্মুক্ত বা নড়াচড়া করতে পারে।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডে ও নিউইয়র্ক টাইমস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত