মো. আরমান বিন আজিজ
চোখে ছানি পড়া বয়স বাড়ার সঙ্গে একটি স্বাভাবিক পরিবর্তন। অবশ্য বিভিন্ন কারণে যেকোনো বয়সেই চোখে ছানি পড়তে পারে। তবে সাধারণত বয়স্কদের এই রোগ বেশি হয়ে থাকে। যখন চোখে ছানি পড়বে তখন আপনার চারপাশের সবকিছুই ম্লান হয়ে আসবে, সবকিছুই অস্পষ্ট বা কুয়াশাচ্ছন্ন দেখবেন। সাধারণত আমরা যাকে চোখে পর্দা পড়া বলে থাকি, প্রকৃত অর্থে তা হচ্ছে চোখে ছানি পড়া।
চোখে ছানি পড়া
সারা বিশ্বে অন্ধত্বের প্রধান কারণ চোখে ছানি পড়া। চোখের ভেতরের স্বচ্ছ প্রাকৃতিক লেন্সটি বিভিন্ন কারণে ঘোলা হতে থাকে। ঘোলা হতে হতে যখন দৃষ্টি শক্তিতে সমস্যা দেখা দেয়, তখন সেটিকেই ছানি পড়া হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অনেকের ধারণা, বৃদ্ধ বয়সে চোখে ছানি পড়ে। আসলে এটা ভুল ধারণা। যেকোনো বয়সেই চোখে ছানি পড়তে পারে। চোখের যত্নে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করলে এ ধরনের সমস্যা থাকে না বরং চোখ সুস্থ ও সুন্দর থাকে।
চোখে ছানি পড়া কত প্রকার
১. অর্জিত (Acquired) ২. জন্মগত (Congenial)
অর্জিত ছানির কারণ
⦁ ধুলোবালুতে থাকলে চোখে ময়লা পড়ে জমা হওয়া
⦁ প্রতিদিন চোখ পরিষ্কার না করা বা চোখের যত্ন না নেওয়া
⦁ চোখে কোনো ধরনের আঘাত পাওয়া
⦁ দীর্ঘদিন স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ সেবন করা
⦁ দীর্ঘমেয়াদি ডায়াবেটিস রোগ থাকা
⦁ বয়সজনিত কারণ। এ কারণে বৃদ্ধ বয়সে ৮০ মানুষের চোখে ছানি পড়া রোগ হয়।
চোখে ছানি পড়ার লক্ষণ
⦁ দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমে আসা
⦁ কোনো দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর লাল নীল অথবা রঙিন দেখা যাওয়া
⦁ কোনো কিছু ঝাপসা ঝাপসা দেখা
⦁ চোখের কালো মণি ধূসর বা সাদা হওয়া
⦁ চশমা ব্যবহার করলে তার পাওয়ার পরিবর্তন হওয়া
⦁ একটি জিনিসকে দুই বা ততোধিক দেখা
⦁ দৃষ্টি সীমানায় কালো দাগ দেখা
⦁ আলোতে চোখ বন্ধ হয়ে আসা ইত্যাদি চোখে ছানি পড়া রোগের লক্ষণ হতে পারে।
চোখে ছানি পড়া রোগের কারণ
বয়সজনিত লেন্সের গঠনগত পরিবর্তন হলো ছানি রোগের প্রধান কারণ। এ ছাড়াও চোখের আঘাত, ঘন ঘন চোখের প্রদাহ, অপুষ্টি, অনিয়ন্ত্রিত স্টেরয়েড বা হরমোন থেরাপি, ধূমপান এবং অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ইত্যাদি কারণেও ছানি রোগ হতে পারে।
চোখে ছানি পড়া রোগের চিকিৎসা
আমাদের চোখে স্বচ্ছ একটি লেন্স রয়েছে। যার ভেতর দিয়ে আলো চোখের পেছনের রেটিনায় বা দৃষ্টি সংবেদনশীল অংশে গিয়ে পড়ে এবং দৃষ্টির অনুভূতি তৈরি হয়। কাচ যেমন অস্বচ্ছ হয়ে গেলে তার ভেতর দিয়ে কোনো কিছু দেখা যায় না, তেমনি চোখের লেন্স অস্বচ্ছ হয়ে গেলে চোখের দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকে। চোখের ছানি পড়া রোগ হলো আমাদের দেশের রিভারসিবল বা নিবারণযোগ্য অন্ধত্বের প্রধান কারণ।
চোখে ছানি পড়া রোগের একমাত্র চিকিৎসা হচ্ছে অস্ত্রোপচার বা অপারেশন করা। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অস্বচ্ছ লেন্সের বদলে কৃত্রিম লেন্স বসিয়ে দেওয়া হয়। সময় মতো অস্ত্রোপচার না করলে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে অন্ধ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণে ছানি অপারেশন এখন অনেক কম সময়ে এবং সেলাইবিহীন উপায়ে করা সম্ভব। সেসব উপায়ের একটি হলো স্মল ইনসিশন ছানি অপারেশন যা এসআইসিএস (SICS) নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে মাত্র ৫-৬ মিলিমিটার কেটে তার ভেতর দিয়ে ছানি অপসারণ ও কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন করা হয়। অন্যটি হলো ফ্যাকো ইমালসিফিকেশন (Phaco) টেকনিক। এটি আরও আধুনিক প্রক্রিয়া, যাতে আরও অল্প কেটে তার মাধ্যমে ফ্যাকো মেশিন ব্যবহার করে ছানি অপসারণ ও কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। ফ্যাকো সার্জারির সুবিধা হলো, রোগী অনেক দ্রুত অপারেশন পরবর্তীতে তাঁর স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরে যেতে পারেন এবং অপারেশনের পর চশমার পাওয়ার পরিবর্তন অনেক কম হয়।
কোন বয়সে চোখে ছানি পড়া রোগ হয়
সাধারণত বয়স্ক লোকের চোখে ছানি পড়ে। তবে ওপরে উল্লিখিত কারণে যে কোনো বয়সে চোখে ছানি পড়া রোগ হতে পারে। পারিবারিকভাবে এ রোগের ইতিহাস থাকলে এবং গর্ভাবস্থায় জীবাণুর সংক্রমণ ঘটলে জন্মগত ছানি নিয়েও শিশুর জন্ম হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে চোখে ছানি পড়া রোগের কারণে চোখ ট্যারা (Squint) হয়ে যেতে পারে।
চোখে ছানি পড়া রোগ প্রতিরোধে করণীয়
যেহেতু বয়সজনিত পরিবর্তনের কারণে চোখে ছানি পড়া রোগ হয় তাই বয়সজনিত ছানি রোগ প্রতিরোধে তেমন কিছু করার নেই। তবে নিয়মিত পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস, ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ, চোখের প্রদাহের দ্রুত চিকিৎসা, অনিয়ন্ত্রিত হরমোন জাতীয় ওষুধ ও ধূমপান বর্জনের মাধ্যমে চোখে ছানি পড়া রোগের আশঙ্কা কমিয়ে আনা সম্ভব।
চোখে ছানি পড়া দূর করার সহজ উপায়
চোখের ছানি ধীর গতিতে বাড়ে। যখন এটা তীব্র ও অসহনীয় আকার ধারণ করে তখন মানুষ এর প্রতিকারের উপায় খুঁজতে থাকে। চোখের ছানি অপারেশন করে ভালো ফল পাওয়া যায়। যদিও অনেকেই জানেন না যে সহজ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতেও চোখে ছানি পড়া রোগ ঠিক করা যায়। তবে চোখের ছানি যদি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে তাহলেই কেবল প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে এর প্রতিকার করা সম্ভব। প্রাকৃতিক পদ্ধতি অনুসরণের পূর্বে একজন চক্ষু চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে যে আপনার সমস্যাটি প্রাথমিক পর্যায়ে আছে কি না।
চোখের সার্বিক সুস্থ থাকা কিছু পুষ্টির ওপর নির্ভর করে। যেমন ভিটামিন এ এবং সি, ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যারটিনয়েড, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। খাবারে থাকা এ উপাদানগুলো আপনার চোখের দৃষ্টি সাবলীল রাখতে সাহায্য করবে। খাদ্যাভ্যাসে কিছু পুষ্টিকর খাবার রাখলে তা দীর্ঘ সময়ের জন্য আপনার চোখের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারবে।
চোখে ছানি পড়া দূর করতে যা খাবেন
আগেই বলা হয়েছে, পুষ্টিকর খাবার খেলে তা আপনার চোখের বিভিন্ন সমস্যাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য দূরে রাখবে। চোখে ছানি পড়া দূর করতে যে খাবারগুলো খেতে হবে, সেগুলো হলো:
রসুন
রসুনের গুনাগুণ বর্ণনাতীত। চোখে ছানি পড়া রোগের জন্য রসুন জাদুর মতো কাজ করে। চোখের লেন্সটি সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে নিলে যে রকম পরিষ্কার মনে হবে, রসুন ঠিক সেই কাজটি করে থাকে। তাই প্রতিদিন রসুনের ২-৩টি কোয়া খেতে হবে।
কাঁচা সবজি
কাঁচা সবজি পুষ্টিকর। বিশেষ করে ভিটামিন এ-এর উৎস হিসেবে পরিচিত খাবারগুলো চোখের স্বাস্থ্যকে পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করে। তাই আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় লেবুর রস ও অলিভ অয়েল মিশ্রিত সালাদ রাখুন। বিভিন্ন রঙের সবজি চোখে ছানি পড়া সমস্যা সমাধানের জন্য উপকারী।
সবুজ শাক ও সবজি
আমাদের দেশের বিভিন্ন রকম সবুজ শাক পাওয়া যায়। যেমন, পালং, পুঁই শাক, কচু শাক, সরিষা শাক, লাউ শাক ইত্যাদি। এসব সবুজ শাকে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। সেই সঙ্গে এগুলো ম্যাংগানিজের খুব ভালো উৎস। এগুলো চোখের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি থেকে চোখের রেটিনাকে রক্ষা করতেও সাহায্য করে সবুজ শাক। দৃষ্টিশক্তি ভালো করতেও সাহায্য করে এগুলো। শাক বিটা ক্যারোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা চোখে ছানি পড়া রোগ প্রতিরোধ করে। তাই প্রতিদিন কোনো না কোনো শাক খেতে হবে।
দৃষ্টি শক্তি উন্নত করতে হলে প্রতিদিন সবুজ শাকের সঙ্গে সবুজ অন্যান্য সবজিও খেতে হবে। যেমন, পাতা কপি, শালগম, বরবটি, পেঁপে ইত্যাদি। সবুজ শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, লুটেইন এবং ম্যাংগানিজ থাকে যা চোখের জন্য অনেক উপকারী।
পালংশাক
পালংশাকে প্রচুর ভিটামিন এ রয়েছে যা চোখের কর্নিয়া রক্ষা করে। এতে থাকা লুটেইন সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে চোখ রক্ষা করে এবং ম্যাংগানিজ চোখের দৃষ্টি উন্নয়নে সাহায্য করে। বেশি উপকারিতা পেতে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস পালংশাকের জুস খাওয়া খেতে পারেন। এ ছাড়া পালংশাক বিভিন্ন সালাদে দিয়ে অথবা রান্না করেও খাওয়া যেতে পারে।
দুধ ও কাজুবাদাম
চোখে ছানি পড়লে চোখ জ্বালা পোড়া করে এবং লাল হয়ে যায়। বিশুদ্ধ দুধের মধ্যে সারা রাত কাজুবাদাম ভিজিয়ে রেখে সেই দুধ যদি চোখের পাতায় লাগানো হয় তাহলে চোখের জ্বালা পোড়া করা এবং লাল হয়ে যাওয়া কমে যায়।
গ্রিন টি
চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় গ্রিন টি চমৎকার কাজ করে। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা চোখকে সজীব রাখে।
গম ঘাস
গম ঘাস বা গমের কচি চারা চোখে ছানি পড়া রোগ দূর করতে সক্ষম। এ জন্য প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় গম ঘাসের জুস রাখুন।
জাম বা বেরি জাতীয় ফল
জাম জাতীয় ফল বিশেষ করে ব্লু বেরি এন্থোসায়ানসাইড সমৃদ্ধ। এর ফ্লাভনয়েড চোখের রেটিনা ও লেন্সকে জারণ এর হাত থেকে রক্ষা করে।
পেঁপে
পেঁপের মধ্যে যে এনজাইম থাকে তা প্রোটিন জাতীয় খাবার হজমে সহায়তা করে। চোখে ছানি আছে এমন অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তাঁদের প্রোটিন হজমে সমস্যা থাকে। এই প্রোটিন চোখের লেন্সে গিয়ে জমা হয়ে ছানি তৈরি করতে পারে। তাই ছানি প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত পেঁপে খাওয়া উচিত।
ভিটামিন সি
কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হলো, শরীরের অন্যান্য অঙ্গের চেয়ে চোখের লেন্স ভিটামিন সি বেশি ধারণ করে। যদি চোখে ছানি হয়ে থাকে তাহলে চক্ষু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে সম্পূরক ভিটামিন সি গ্রহণ করুন।
লেখক: চিকিৎসক এবং সাবেক ফ্যাকাল্টি মেম্বার ও প্রশিক্ষক, চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
চোখে ছানি পড়া বয়স বাড়ার সঙ্গে একটি স্বাভাবিক পরিবর্তন। অবশ্য বিভিন্ন কারণে যেকোনো বয়সেই চোখে ছানি পড়তে পারে। তবে সাধারণত বয়স্কদের এই রোগ বেশি হয়ে থাকে। যখন চোখে ছানি পড়বে তখন আপনার চারপাশের সবকিছুই ম্লান হয়ে আসবে, সবকিছুই অস্পষ্ট বা কুয়াশাচ্ছন্ন দেখবেন। সাধারণত আমরা যাকে চোখে পর্দা পড়া বলে থাকি, প্রকৃত অর্থে তা হচ্ছে চোখে ছানি পড়া।
চোখে ছানি পড়া
সারা বিশ্বে অন্ধত্বের প্রধান কারণ চোখে ছানি পড়া। চোখের ভেতরের স্বচ্ছ প্রাকৃতিক লেন্সটি বিভিন্ন কারণে ঘোলা হতে থাকে। ঘোলা হতে হতে যখন দৃষ্টি শক্তিতে সমস্যা দেখা দেয়, তখন সেটিকেই ছানি পড়া হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অনেকের ধারণা, বৃদ্ধ বয়সে চোখে ছানি পড়ে। আসলে এটা ভুল ধারণা। যেকোনো বয়সেই চোখে ছানি পড়তে পারে। চোখের যত্নে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করলে এ ধরনের সমস্যা থাকে না বরং চোখ সুস্থ ও সুন্দর থাকে।
চোখে ছানি পড়া কত প্রকার
১. অর্জিত (Acquired) ২. জন্মগত (Congenial)
অর্জিত ছানির কারণ
⦁ ধুলোবালুতে থাকলে চোখে ময়লা পড়ে জমা হওয়া
⦁ প্রতিদিন চোখ পরিষ্কার না করা বা চোখের যত্ন না নেওয়া
⦁ চোখে কোনো ধরনের আঘাত পাওয়া
⦁ দীর্ঘদিন স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ সেবন করা
⦁ দীর্ঘমেয়াদি ডায়াবেটিস রোগ থাকা
⦁ বয়সজনিত কারণ। এ কারণে বৃদ্ধ বয়সে ৮০ মানুষের চোখে ছানি পড়া রোগ হয়।
চোখে ছানি পড়ার লক্ষণ
⦁ দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমে আসা
⦁ কোনো দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর লাল নীল অথবা রঙিন দেখা যাওয়া
⦁ কোনো কিছু ঝাপসা ঝাপসা দেখা
⦁ চোখের কালো মণি ধূসর বা সাদা হওয়া
⦁ চশমা ব্যবহার করলে তার পাওয়ার পরিবর্তন হওয়া
⦁ একটি জিনিসকে দুই বা ততোধিক দেখা
⦁ দৃষ্টি সীমানায় কালো দাগ দেখা
⦁ আলোতে চোখ বন্ধ হয়ে আসা ইত্যাদি চোখে ছানি পড়া রোগের লক্ষণ হতে পারে।
চোখে ছানি পড়া রোগের কারণ
বয়সজনিত লেন্সের গঠনগত পরিবর্তন হলো ছানি রোগের প্রধান কারণ। এ ছাড়াও চোখের আঘাত, ঘন ঘন চোখের প্রদাহ, অপুষ্টি, অনিয়ন্ত্রিত স্টেরয়েড বা হরমোন থেরাপি, ধূমপান এবং অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ইত্যাদি কারণেও ছানি রোগ হতে পারে।
চোখে ছানি পড়া রোগের চিকিৎসা
আমাদের চোখে স্বচ্ছ একটি লেন্স রয়েছে। যার ভেতর দিয়ে আলো চোখের পেছনের রেটিনায় বা দৃষ্টি সংবেদনশীল অংশে গিয়ে পড়ে এবং দৃষ্টির অনুভূতি তৈরি হয়। কাচ যেমন অস্বচ্ছ হয়ে গেলে তার ভেতর দিয়ে কোনো কিছু দেখা যায় না, তেমনি চোখের লেন্স অস্বচ্ছ হয়ে গেলে চোখের দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকে। চোখের ছানি পড়া রোগ হলো আমাদের দেশের রিভারসিবল বা নিবারণযোগ্য অন্ধত্বের প্রধান কারণ।
চোখে ছানি পড়া রোগের একমাত্র চিকিৎসা হচ্ছে অস্ত্রোপচার বা অপারেশন করা। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অস্বচ্ছ লেন্সের বদলে কৃত্রিম লেন্স বসিয়ে দেওয়া হয়। সময় মতো অস্ত্রোপচার না করলে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে অন্ধ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণে ছানি অপারেশন এখন অনেক কম সময়ে এবং সেলাইবিহীন উপায়ে করা সম্ভব। সেসব উপায়ের একটি হলো স্মল ইনসিশন ছানি অপারেশন যা এসআইসিএস (SICS) নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে মাত্র ৫-৬ মিলিমিটার কেটে তার ভেতর দিয়ে ছানি অপসারণ ও কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন করা হয়। অন্যটি হলো ফ্যাকো ইমালসিফিকেশন (Phaco) টেকনিক। এটি আরও আধুনিক প্রক্রিয়া, যাতে আরও অল্প কেটে তার মাধ্যমে ফ্যাকো মেশিন ব্যবহার করে ছানি অপসারণ ও কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। ফ্যাকো সার্জারির সুবিধা হলো, রোগী অনেক দ্রুত অপারেশন পরবর্তীতে তাঁর স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরে যেতে পারেন এবং অপারেশনের পর চশমার পাওয়ার পরিবর্তন অনেক কম হয়।
কোন বয়সে চোখে ছানি পড়া রোগ হয়
সাধারণত বয়স্ক লোকের চোখে ছানি পড়ে। তবে ওপরে উল্লিখিত কারণে যে কোনো বয়সে চোখে ছানি পড়া রোগ হতে পারে। পারিবারিকভাবে এ রোগের ইতিহাস থাকলে এবং গর্ভাবস্থায় জীবাণুর সংক্রমণ ঘটলে জন্মগত ছানি নিয়েও শিশুর জন্ম হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে চোখে ছানি পড়া রোগের কারণে চোখ ট্যারা (Squint) হয়ে যেতে পারে।
চোখে ছানি পড়া রোগ প্রতিরোধে করণীয়
যেহেতু বয়সজনিত পরিবর্তনের কারণে চোখে ছানি পড়া রোগ হয় তাই বয়সজনিত ছানি রোগ প্রতিরোধে তেমন কিছু করার নেই। তবে নিয়মিত পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস, ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ, চোখের প্রদাহের দ্রুত চিকিৎসা, অনিয়ন্ত্রিত হরমোন জাতীয় ওষুধ ও ধূমপান বর্জনের মাধ্যমে চোখে ছানি পড়া রোগের আশঙ্কা কমিয়ে আনা সম্ভব।
চোখে ছানি পড়া দূর করার সহজ উপায়
চোখের ছানি ধীর গতিতে বাড়ে। যখন এটা তীব্র ও অসহনীয় আকার ধারণ করে তখন মানুষ এর প্রতিকারের উপায় খুঁজতে থাকে। চোখের ছানি অপারেশন করে ভালো ফল পাওয়া যায়। যদিও অনেকেই জানেন না যে সহজ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতেও চোখে ছানি পড়া রোগ ঠিক করা যায়। তবে চোখের ছানি যদি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে তাহলেই কেবল প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে এর প্রতিকার করা সম্ভব। প্রাকৃতিক পদ্ধতি অনুসরণের পূর্বে একজন চক্ষু চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে যে আপনার সমস্যাটি প্রাথমিক পর্যায়ে আছে কি না।
চোখের সার্বিক সুস্থ থাকা কিছু পুষ্টির ওপর নির্ভর করে। যেমন ভিটামিন এ এবং সি, ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যারটিনয়েড, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। খাবারে থাকা এ উপাদানগুলো আপনার চোখের দৃষ্টি সাবলীল রাখতে সাহায্য করবে। খাদ্যাভ্যাসে কিছু পুষ্টিকর খাবার রাখলে তা দীর্ঘ সময়ের জন্য আপনার চোখের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারবে।
চোখে ছানি পড়া দূর করতে যা খাবেন
আগেই বলা হয়েছে, পুষ্টিকর খাবার খেলে তা আপনার চোখের বিভিন্ন সমস্যাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য দূরে রাখবে। চোখে ছানি পড়া দূর করতে যে খাবারগুলো খেতে হবে, সেগুলো হলো:
রসুন
রসুনের গুনাগুণ বর্ণনাতীত। চোখে ছানি পড়া রোগের জন্য রসুন জাদুর মতো কাজ করে। চোখের লেন্সটি সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে নিলে যে রকম পরিষ্কার মনে হবে, রসুন ঠিক সেই কাজটি করে থাকে। তাই প্রতিদিন রসুনের ২-৩টি কোয়া খেতে হবে।
কাঁচা সবজি
কাঁচা সবজি পুষ্টিকর। বিশেষ করে ভিটামিন এ-এর উৎস হিসেবে পরিচিত খাবারগুলো চোখের স্বাস্থ্যকে পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করে। তাই আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় লেবুর রস ও অলিভ অয়েল মিশ্রিত সালাদ রাখুন। বিভিন্ন রঙের সবজি চোখে ছানি পড়া সমস্যা সমাধানের জন্য উপকারী।
সবুজ শাক ও সবজি
আমাদের দেশের বিভিন্ন রকম সবুজ শাক পাওয়া যায়। যেমন, পালং, পুঁই শাক, কচু শাক, সরিষা শাক, লাউ শাক ইত্যাদি। এসব সবুজ শাকে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। সেই সঙ্গে এগুলো ম্যাংগানিজের খুব ভালো উৎস। এগুলো চোখের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি থেকে চোখের রেটিনাকে রক্ষা করতেও সাহায্য করে সবুজ শাক। দৃষ্টিশক্তি ভালো করতেও সাহায্য করে এগুলো। শাক বিটা ক্যারোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা চোখে ছানি পড়া রোগ প্রতিরোধ করে। তাই প্রতিদিন কোনো না কোনো শাক খেতে হবে।
দৃষ্টি শক্তি উন্নত করতে হলে প্রতিদিন সবুজ শাকের সঙ্গে সবুজ অন্যান্য সবজিও খেতে হবে। যেমন, পাতা কপি, শালগম, বরবটি, পেঁপে ইত্যাদি। সবুজ শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, লুটেইন এবং ম্যাংগানিজ থাকে যা চোখের জন্য অনেক উপকারী।
পালংশাক
পালংশাকে প্রচুর ভিটামিন এ রয়েছে যা চোখের কর্নিয়া রক্ষা করে। এতে থাকা লুটেইন সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে চোখ রক্ষা করে এবং ম্যাংগানিজ চোখের দৃষ্টি উন্নয়নে সাহায্য করে। বেশি উপকারিতা পেতে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস পালংশাকের জুস খাওয়া খেতে পারেন। এ ছাড়া পালংশাক বিভিন্ন সালাদে দিয়ে অথবা রান্না করেও খাওয়া যেতে পারে।
দুধ ও কাজুবাদাম
চোখে ছানি পড়লে চোখ জ্বালা পোড়া করে এবং লাল হয়ে যায়। বিশুদ্ধ দুধের মধ্যে সারা রাত কাজুবাদাম ভিজিয়ে রেখে সেই দুধ যদি চোখের পাতায় লাগানো হয় তাহলে চোখের জ্বালা পোড়া করা এবং লাল হয়ে যাওয়া কমে যায়।
গ্রিন টি
চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় গ্রিন টি চমৎকার কাজ করে। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা চোখকে সজীব রাখে।
গম ঘাস
গম ঘাস বা গমের কচি চারা চোখে ছানি পড়া রোগ দূর করতে সক্ষম। এ জন্য প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় গম ঘাসের জুস রাখুন।
জাম বা বেরি জাতীয় ফল
জাম জাতীয় ফল বিশেষ করে ব্লু বেরি এন্থোসায়ানসাইড সমৃদ্ধ। এর ফ্লাভনয়েড চোখের রেটিনা ও লেন্সকে জারণ এর হাত থেকে রক্ষা করে।
পেঁপে
পেঁপের মধ্যে যে এনজাইম থাকে তা প্রোটিন জাতীয় খাবার হজমে সহায়তা করে। চোখে ছানি আছে এমন অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তাঁদের প্রোটিন হজমে সমস্যা থাকে। এই প্রোটিন চোখের লেন্সে গিয়ে জমা হয়ে ছানি তৈরি করতে পারে। তাই ছানি প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত পেঁপে খাওয়া উচিত।
ভিটামিন সি
কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হলো, শরীরের অন্যান্য অঙ্গের চেয়ে চোখের লেন্স ভিটামিন সি বেশি ধারণ করে। যদি চোখে ছানি হয়ে থাকে তাহলে চক্ষু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে সম্পূরক ভিটামিন সি গ্রহণ করুন।
লেখক: চিকিৎসক এবং সাবেক ফ্যাকাল্টি মেম্বার ও প্রশিক্ষক, চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
উন্নত দেশগুলো, এমনকি উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও টাইফয়েড এখন খুব কম দেখা যায়। কিন্তু প্রাচীন এই রোগের ফলে আধুনিক বিশ্ব তো বটেই, দুনিয়াজুড়ে বেশ বিপজ্জনক হয়ে উঠছে আবারও। হাজার বছর ধরে মানুষের প্রাণ হন্তারক হিসেবে ‘খুনির’ কাজ করে এসেছে এর জীবাণু। সাম্প্রতিক এক গবেষণা দেখিয়েছে, টাইফয়েডের জন্য দায়ী
২ দিন আগেআমাদের অনেকের প্রায় অনেক সময় নাক খোঁটানোর অভ্যাস আছে। আপাতদৃষ্টে বিষয়টি খুব সাধারণ মনে হলেও গবেষকেরা বলছেন, নাক খোঁটানোর বিষয়টি মোটেও নিরাপদ নয়। ২০২২ সালে বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল নেচারে প্রকাশিত এক গবেষণায় নাক খোঁটার সঙ্গে স্মৃতিভ্রংশ বা ডিমেনশিয়ার ঝুঁকির ক্ষীণ কিন্তু সম্ভাব্য যোগসূত্রের কথা বলা হয়েছে।
২ দিন আগেদীর্ঘদিন ধরে নারীদেহের এক প্রত্যঙ্গকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলে মনে করা হতো। তবে নতুন এক গবেষণায় জানা যায়, এই প্রত্যঙ্গটিই নারীর ডিম্বাশয়ের বিকাশ ও প্রজনন ক্ষমতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩ দিন আগেনানা কারণে ঘুম নেই, মেজাজ খিটখিটে, অতিরিক্ত রাগ আর কোনো কিছুতেই প্রশান্তি নেই। এসব কারণে ইদানীং মানসিক সমস্যার প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। মানসিক সমস্যা মানুষেরই হয়। বিশেষ করে যুবসমাজ এ সমস্যায় ভুগছে মারাত্মকভাবে। যে কারণেই হোক না কেন, মানসিক সমস্যা রোগী নিজে বুঝতে পারে না। তাকে বলাও যায় না...
৫ দিন আগে