Ajker Patrika

এমপি আজীমের লাশের হদিস নেই, আসন শূন্য ঘোষণা নিয়ে সংসদে জটিলতা

তানিম আহমেদ ও  এস এম নূর মোহাম্মদ, ঢাকা
আপডেট : ২৬ মে ২০২৪, ১৭: ৩৫
Thumbnail image

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার কলকাতায় খুন হয়েছেন বলে জানিয়েছে ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে এখনো তাঁর মরদেহ পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় তাঁর সংসদীয় আসন শূন্য ঘোষণা নিয়ে কিছুটা জটিলতা দেখা দিয়েছে।

সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, কারও মৃত্যু হলে কিংবা কেউ পদত্যাগ করলে তাঁর সংসদীয় আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়। কিন্তু আনোয়ারুল আজীম ভারতে খুন হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেলেও মরদেহ পাওয়া যায়নি। দেশের আর কোনো সংসদ সদস্যের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা আর ঘটেনি। এ ক্ষেত্রে মরদেহ পাওয়া না গেলেও কীভাবে তাঁর সংসদীয় আসন শূন্য ঘোষণা করা হবে, তা নিয়ে কিছুটা জটিলতা রয়েছে।

সংসদ সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কে এম আবদুস সালাম এ প্রসঙ্গে আজকের পত্রিকাকে বলেন, একটা বিশ্বাসযোগ্য সূত্র থেকে সংসদ সদস্যের মৃত্যুর তথ্যটা পেতে হবে। অনেক সময় মারা গেলে তাঁর দাফন হয়, জানাজা হয়; কিন্তু এ ক্ষেত্রে তো সেটা এখনো হয়নি। তিনি জানান, বিষয়টি আজ রোববার স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে উপস্থাপন করা হতে পারে।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফরহাদ আহম্মদ খান বলেন, সংসদ সচিবালয় থেকে শূন্য ঘোষণা করা হলে সংবিধান অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন হবে ঝিনাইদহ-৪ আসনে।

সংসদের আসন শূন্য ঘোষণার বিষয়ে সংবিধানের ৬৭(১) অনুচ্ছেদে যেসব পরিস্থিতির উল্লেখ আছে, সেগুলো হলো কোনো সংসদ সদস্য (ক) যদি নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে নব্বই দিনের মধ্যে শপথ গ্রহণ বা ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরদান করতে অসমর্থ হন। (খ) সংসদের অনুমতি ছাড়া একাদিক্রমে নব্বই বৈঠক অনুপস্থিত থাকেন। (গ) সংসদ ভেঙে যায়। (ঘ) সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের (২) দফার অধীন অযোগ্য হন। (ঙ) সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বর্ণিত পরিস্থিতির উদ্ভব হয়।

এ ছাড়া সংবিধানের ৬৭(২) অনুচ্ছেদে বলা আছে, কোনো সংসদ সদস্য যদি স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র দেন এবং স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকার যদি তা পান, তখন থেকে আসন শূন্য হবে। তবে কোনো সংসদ সদস্য মারা গেলে বা খুন হওয়ার পর মরদেহ না পেলে কীভাবে সংসদীয় আসন শূন্য ঘোষণা করা হবে, তা সংবিধান বা সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিতে উল্লেখ নেই।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উনি যে খুন হয়েছেন, সেটা সংসদ সচিবালয়ের ব্যাপার না। তাঁর নিহত হওয়ার ব্যাপারটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে লিখিতভাবে সংসদ সচিবালয়কে নিশ্চিত করতে হবে। তারপর সংসদ সচিবালয় আসন শূন্য ঘোষণা করবে।’ তিনি বলেন, যেহেতু বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা কখনো ঘটেনি, তাই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই করণীয় হওয়ার কথা।

সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, আসন শূন্য ঘোষণার জন্য স্পিকারকে মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। এ জন্য মৃত্যুসনদ পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। তবে সেটি না এলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দেওয়া প্রমাণের ভিত্তিতেও আসন শূন্য ঘোষণা করতে আইনগত বাধা নেই। আনার যে খুন হয়েছেন, সেটি ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় প্রমাণিত।

টানা তিনবারের এমপি আনোয়ারুল আজিম ১১ মে কলকাতায় যান। ১৩ মে থেকে তাঁর খোঁজ মিলছিল না। ১৮ মে স্থানীয় থানায় জিডি করেন তাঁর সেখানকার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। পরে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, কলকাতার নিউ টাউনে এক ফ্ল্যাটে হত্যার পর আনোয়ারুলের মরদেহ টুকরা টুকরা করা হয়।

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিরোধীদলীয় উপনেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘সরকারিভাবে ওনার মৃত্যু যতক্ষণ পর্যন্ত ঘোষণা করা না হবে, ততক্ষণ আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হবে না। আর মৃত্যুসনদ লাগবে। সেটা দিলে আসনটি শূন্য হবে।’

কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, আনোয়ারুল আজিমের আসন কীভাবে শূন্য ঘোষণা হবে, সে প্রশ্নের উত্তর স্পিকারই দিতে পারেন। তবে চূড়ান্তভাবে সংসদ যখনই নিশ্চিত হবে তিনি মারা গেছেন, তখনই আসন শূন্য ঘোষণা করা হবে। 

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত