Ajker Patrika

অতিরিক্ত দামে তেল বিক্রি

শামিমুজ্জামান, খুলনা
আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০২২, ১৪: ১৫
Thumbnail image

ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণের ২০ দিন পার হলেও খুলনার বাজারগুলোতে অতিরিক্ত দামে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। সরবরাহ কম থাকার অজুহাতে ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দামে ভোজ্যতেল বিক্রি করছেন বলে জানিয়েছেন ভোক্তারা। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বাজারে নিয়মিত নজরদারি বা অভিযান চালানো হলেও কাজ হচ্ছে না।

চলতি বছরের ২০ মার্চ সরকার ভোজ্যতেলের মূল্য নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। তখন সরকার এক লিটার সয়াবিন তেলের বোতল ১৬০ টাকা, পাঁচ লিটারের বোতল ৭৬০ ও প্রতিকেজি খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দেয়।

গত শনিবার ও গতকাল রোববার খুলনা মহানগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক লিটার সয়াবিন তেলের বোতল ১৬৫ টাকা, পাঁচ লিটারের বোতল ৭৯০ টাকা এবং প্রতি কেজি খোলা তেল ১৭৫ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।

নগরীর বড় বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী ও রেজা অ্যান্ড ব্রাদার্সের মালিক শাহ আলম সর্দার বলেন, ‘সয়াবিন তেলের সংকট নেই। সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। এখন তো তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কথা নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকার ভোক্তাপর্যায়ে ভ্যাট উঠিয়ে নিলে ১৮০ টাকার তেল ১৫৮ টাকায় নেমে আসে। কিন্তু গত এক সপ্তাহে আবারও এক দফা তেলের দাম বেড়েছে।’ মিল মালিকদের কারসাজিতে এই মূল্য বৃদ্ধি বলে তিনি মনে করেন। বর্তমানে প্রতি কেজি সয়াবিন তেল ১৭০ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি। ঈদের আগে তেলের দাম আরও এক দফা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন এ ব্যবসায়ী।

ব্যবসায়ীরা জানান, সরকার তেলের দাম নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারির পর দামও কিছুটা কমে গিয়েছিল। তা ছাড়া খুলনার এক-চতুর্থাংশ মানুষকে ন্যায্য মূল্যে সরকার টিসিবির মাধ্যমে তেল দিচ্ছে। এ অবস্থায় তেল বাজার অস্থির হয়ে ওঠার বিষয়টি স্পষ্ট নয়। এত দিন সয়াবিন তেলের সংকট দেখিয়ে দাম বৃদ্ধি করা হয়েছিল। এখন তো কোনো সংকট নেই। মিল মালিক ও কোম্পানি প্রতিনিধিরা তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে রাখায় এমনটি হয়েছে।

নগরীর শেখপাড়া কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী মাহমুদ বলেন, ‘বাজারে খোলা তেলের সরবরাহ কম, যে কারণে দাম বেড়েছে।’ তিনি ১৬৫ টাকায় এক লিটার, ৭৯০ টাকায় পাঁচ লিটার ও প্রতি কেজি খোলা সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন।

এদিকে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির বাজারে আলু, পটল, পেঁপে, ঢ্যাঁড়স, টমেটো, করলা, শসার দাম কেজিতে ৫-১০ টাকা কমেছে। তবে বেড়েছে বেগুনের দাম। রমজানের শুরুতে প্রতি কেজি বেগুনের দাম ছিল ৫০-৫৫ টাকা। গতকাল খুলনার বাজারে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হয়েছে ৬০-৬৫ টাকায়।

এদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত তদারকি চালানো হচ্ছে বলেও দাবি করেছেন জেলা বাজার কর্মকর্তা শাহরিয়ার আকুঞ্জি। তিনি বলেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। দোকানগুলোতে মূল্যতালিকা টানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে দাম বেশি নেওয়ায় কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। তারপরও দাম কমছে না।’

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক পবিত্র রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সারা দেশে এক কোটি সীমিত আয়ের মানুষের মধ্যে টিসিবির পণ্যসামগ্রী ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে খুলনা সিটি করপোরেশনসহ জেলার নয়টি উপজেলায় ১০৫ জন ডিলারের মাধ্যমে মোট এক লাখ ৯১ হাজার ৭১৬ জন উপকারভোগীর কাছে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় করা হচ্ছে।

ইতিমধ্যে প্রত্যেক উপকারভোগীর জন্য ফ্যামিলি কার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে এবং পণ্য বিক্রয় কার্যক্রম দুই পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

প্রথম পর্যায়ে গত ২০ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রত্যেক উপকারভোগীর মধ্যে দুই কেজি ডাল, দুই কেজি চিনি এবং দুই লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি করা হয়েছে। ৭ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত অনুরূপভাবে দ্বিতীয় পর্যায়ে উপকারভোগীর মধ্যে দুই কেজি ডাল, দুই কেজি চিনি, দুই লিটার সয়াবিন তেল ও দুই কেজি ছোলা বিক্রি করা হচ্ছে। কার্ডধারী একজন ব্যক্তি প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকা, ডাল ৬৫, ছোলা ৫০ এবং প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১১০ টাকায় কিনতে পারছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত