Ajker Patrika

খেজুর গুড়ে রং, চিনি, আটা

সনি আজাদ, চারঘাট 
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২১, ১১: ৪১
খেজুর গুড়ে রং, চিনি, আটা

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার মেরামাতপুর, দিড়িপাড়া, পরানপুর, শলুয়া ও নন্দনগাছী গ্রাম। অনেক খেজুরগাছ। গত বুধবার ভোরবেলা। কুয়াশা পড়েছে বেশ। পাখির কিচিরমিচির শোনা যায়। এর মধ্যেই দেখা যায়, গাছে উঠে খেজুরের রস সংগ্রহ করছেন গাছিরা। এই রস তাঁরা বাড়ি এনে মাটির চুলায় বসানো কড়াইয়ে ঢালেন। এরপর জ্বাল দেওয়া হয়।

কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, চুলার কাছেই রাখা আছে চিনি ও আটার বস্তা এবং মানবশরীরের জন্য ক্ষতিকর রং। জ্বাল দেওয়ার একপর্যায়ে রস লাল হয়ে আসে। আর তখনই তাতে মেশানো হয় চিনি। নেড়ে নেড়ে তৈরি করা হয় গুড়। এরপর এই গুড়ে আটা, রং, হাইড্রোজ ও ফিটকিরি মেশানো হয়। এতে গুড়ের রং উজ্জ্বল হয়।

এ উপজেলার খেজুর গুড়ের পরিচিতি আছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে এর চাহিদাও অনেক। এই চাহিদা পূরণে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অল্প খেজুর রসের সঙ্গে ভেজাল মিশিয়ে গুড় তৈরি করছেন। বেশি লাভ করছেন। ভেজাল খেজুর গুড়ে উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে সয়লাব হয়ে গেছে। স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে চলে এ গুড় সরবরাহ করা হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, কেমিক্যাল মেশানো গুড় খেলে পেটের পীড়া হতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের কিডনি, হার্ট, ব্রেন ও লিভার ক্যানসারের মতো ভয়াবহ রোগ হতে পারে।

স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি চিনিরই দাম ৭০-৮০ টাকা। প্রতি কেজি গুড় বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা দরে। এদিকে প্রতি ৬০ কেজি গুড় তৈরির খেজুর রসে মেশানো হচ্ছে ৪০ কেজি চিনি।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের পরানপুর গ্রামের খেজুর গুড় প্রস্তুতকারক মাজদার রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শীত মৌসুমের শুরু থেকেই খেজুরগাছ লিজ নিয়ে গুড় তৈরির কাজ শুরু করেছি। চিনি না মিশালে খেজুর গুড়ের ব্যবসায় লাভ হয় না। চিনি তো খারাপ জিনিস না। উপজেলার কয়েক শ মানুষ এভাবেই গুড় তৈরি করছে।’

উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রামের গাছি মাইনুল ইসলাম বলেন, একসময় শুধু খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করা হতো। ওই গুড়ের গন্ধই আলাদা। স্বাদও অন্য রকম। কিন্তু মুশকিল হলো, শুধু রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করলে পরিমাণে কম হয়। ওই গুড়ের রং এত উজ্জ্বল দেখায় না। চিনি ও আটা মেশালে গুড়ের পরিমাণ বাড়ে। আর কেমিক্যাল মেশানো হলে গুড়ের রং লাল দেখায়। এ কারণে অধিকাংশ গাছি খেজুরের রসের সঙ্গে এসব ভেজাল মিশিয়ে গুড় তৈরিতে ঝুঁকছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আশিকুর রহমান বলেন, কেমিক্যাল ও চিনি মেশানো ভেজাল গুড় দিয়ে তৈরি পিঠা, পায়েস বা অন্য কোনো খাবার খেলে পেটের পীড়াজনিত নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে শিশুরা সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে। তারা কিডনি, হার্ট, ব্রেইন ও লিভার ক্যানসারের মতো ভয়াবহ জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় উপপরিচালক অপূর্ব অধিকারী বলেন, ‘চারঘাটসহ রাজশাহীর কয়েকটা উপজেলাতে শীত মৌসুমে ভেজাল খেজুর গুড় তৈরি হচ্ছে। তা রোধে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দা সামিরা বলেন, উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ভেজাল গুড় তৈরির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত