Ajker Patrika

সর্বজনীন পেনশনে বড় পরিবর্তন, ৬০ বছর হলেই মিলবে এককালীন ৩০ শতাংশ

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ১৫ মে ২০২৫, ১২: ১৮
সর্বজনীন পেনশনে বড় পরিবর্তন, ৬০ বছর হলেই মিলবে এককালীন ৩০ শতাংশ

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাকে আরও বাস্তবমুখী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে একাধিক পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। এখন থেকে কোনো চাঁদাদাতা ৬০ বছর বয়স পূর্ণ করলেই তাঁর জমাকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ এককালীন তোলার সুযোগ পাবেন; এটি প্রথমবারের মতো চালু হলো। পাশাপাশি প্রবাস ও প্রগতি স্কিমে মাসিক চাঁদার ন্যূনতম হার ২ হাজার থেকে কমিয়ে ১ হাজার টাকা করা হয়েছে। অপর দিকে, বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য মাসিক সর্বোচ্চ জমার সীমা ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।

এর পাশাপাশি, আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবা চুক্তির আওতায় কর্মরত সেবাকর্মীদের প্রগতি পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা, আন্তর্জাতিক সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যপদ অর্জনের উদ্যোগ এবং সর্বজনীন পেনশনের ইসলামিক সংস্করণ চালুর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। এই সমন্বিত সংস্কারের মাধ্যমে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর, গ্রহণযোগ্য ও ভবিষ্যৎমুখী কাঠামোতে রূপ দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

গতকাল বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদের দ্বিতীয় সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন পর্ষদের চেয়ারম্যান ও অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সভা শেষে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পাঠানো বিজ্ঞপ্তি এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে একজন চাঁদাদাতা পেনশনযোগ্য বয়সে উপনীত হওয়ার পর চাইলে তাঁর জমাকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ অর্থ এককালীন তুলতে পারবেন। আগে এ ধরনের সুযোগ ছিল না। এ বিষয়ে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন খান বলেন, ‘কেউ চাইলে এককালীন ৩০ শতাংশ তুলতে পারবেন। তবে কেউ যদি তা না তোলেন, তাহলে তাঁর মাসিক পেনশনের অঙ্ক স্বাভাবিকভাবেই বেশি হবে।’

সভার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হচ্ছে, প্রবাস ও প্রগতি স্কিমে অংশগ্রহণকারীদের জন্য চাঁদার হার কমানো। আগে যেখানে এই হার ছিল মাসে কমপক্ষে ২ হাজার টাকা, এখন তা কমিয়ে ১ হাজার টাকা করা হয়েছে। বিশেষ করে প্রবাসী ও স্বল্প আয়ের অংশগ্রহণকারীদের জন্য এটি বড় স্বস্তি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অপর দিকে, প্রগতি স্কিমে অংশগ্রহণকারী উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের জন্য সর্বোচ্চ জমার সীমা ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।

প্রগতি স্কিমের আওতায় এবার আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োজিত সেবাকর্মীরাও যুক্ত হতে পারবেন। ফলে অনেক অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মীও সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আসার সুযোগ পাবেন।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের পথে আরও একটি পদক্ষেপ হিসেবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ এবার ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশনের (আইএসএসএ) সদস্যপদ গ্রহণে আগ্রহ দেখিয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পর্ষদ কর্তৃপক্ষকে অনুমোদন দিয়েছে।

সর্বজনীন পেনশন স্কিমকে আরও ব্যাপকভাবে পরিচিত করতে নেওয়া হয়েছে জোরালো প্রচার কার্যক্রমের সিদ্ধান্ত। ফেসবুক, ইউটিউব, টেলিভিশনের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ও টকশো, আন্তর্জাতিক খেলা সম্প্রচারের সময় এবং জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে স্কিমটির প্রচার জোরদার করা হবে। পাশাপাশি ইসলামিক মূল্যবোধ অনুসারে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের একটি বিকল্প সংস্করণ চালুর সম্ভাব্যতা যাচাই করে পরবর্তী সভায় তা উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সহনশীল কাঠামোয় রূপ দিতে চায় সরকার, যাতে করে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে আশ্বস্ত হতে পারে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফারইস্ট লাইফ ইনস্যুরেন্স থেকে আত্মসাৎ হওয়া সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা উদ্ধারের দাবিতে মানববন্ধন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়ের সামনে আজ রোববার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়ের সামনে আজ রোববার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি থেকে আত্মসাৎ হওয়া প্রায় ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা উদ্ধারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকেরা।

আজ রোববার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও পরিচালক এম এ খালেকের কঠোর শাস্তি দাবি করেন। পরে তাঁরা দুদকে একটি স্মারকলিপি জমা দেন।

ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামরুল হাসান বলেন, ‘আমরা গ্রাহকদের টাকার ন্যায্য প্রাপ্তি চাই। যারা প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’

কোম্পানির রিকভারি সেকশনের ইনচার্জ মাসুদ বলেন, নজরুল-খালেক চক্র নজিরবিহীন লুটপাট চালিয়ে ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। টাকা পাচার করে তারা বিদেশে নিয়ে গেছে। এখন আইনের ফাঁকফোকর গলে বাঁচার চেষ্টা করছে।

গ্রাহকদের অভিযোগ, ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে তাঁদের অবদানে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের তহবিলে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা জমা পড়ে। কিন্তু তৎকালীন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও পরিচালক এম এ খালেক ভুয়া বিনিয়োগ, কাগুজে খরচ ও কারসাজির মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেন। এর বড় অংশ বিদেশে পাচার করা হয়।

বর্তমানে প্রায় ৪০ লাখ গ্রাহক তাঁদের প্রাপ্য অর্থ না পেয়ে প্রতিদিন প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে ঘুরছেন বলে দাবি করেন বিক্ষোভকারীরা।

গত ৩১ জুলাই দুদকের উপপরিচালক সৈয়দ আতাউল কবির বাদী হয়ে নজরুল ইসলামসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলা করেন। গত বৃহস্পতিবার নজরুল ইসলামের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, আসামিরা ঢাকার তোপখানা রোডের একটি স্থাপনা ২০৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকায় অনিয়মের মাধ্যমে কেনাবেচা করে।

এর মধ্যে ৪৫ কোটি টাকা নজরুল ইসলাম, এম এ খালেক ও তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করেন বলে দুদকের তদন্তে উঠে আসে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড বছর পার হতেই আবার খুলে পড়ল কেন, এবার প্রাণহানির দায় কার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৯: ১৭
আজ রোববার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ফার্মগেট স্টেশনের ঠিক পশ্চিম পাশে ৪৩৩ নম্বর পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে একজন নিহত হন। উৎসুক মানুষের ভীড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ রোববার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ফার্মগেট স্টেশনের ঠিক পশ্চিম পাশে ৪৩৩ নম্বর পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে একজন নিহত হন। উৎসুক মানুষের ভীড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

এক বছর পার হতেই বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল লাইনের একই এলাকায় বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে গেল। আগেরবার হতাহতের কোনো ঘটনা না ঘটলেও এবার একজন নিহত হয়েছেন এবং আরো দুজন আহত হয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ এই অবকাঠামোতে একই ধরনের প্রাণহানিকর ঘটনা মেট্রোরেলের মান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। প্রথমবার ত্রুটি ধরার পর মেট্রোরেল কি আদৌ কোনো পদক্ষেপ নিয়েছিল? কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে থাকলে এই প্রাণহানির দায় কার? শুধু ক্ষতিপূরণ দিলেই দায় শেষ করবে কর্তৃপক্ষ?

আজ রোববার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ফার্মগেট স্টেশনের ঠিক পশ্চিম পাশে ৪৩৩ নম্বর পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়েছে। ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, গত বছর যে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়েছিল, সেটি ছিল ৪৩০ নম্বর পিলার। একই জায়গায় না হলেও কাছাকাছি এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। মেট্রোরেলে (মতিঝিল থেকে উত্তরা পর্যন্ত) মোট পিলার আছে ৬২০টি। প্রতিটি পিলারে চারটি করে বিয়ারিং প্যাড আছে। সে হিসেবে মেট্রোরেলে মোট বিয়ারিং প্যাড আছে ২ হাজার ৪৮০টি।

‘বিয়ারিং প্যাড’ হচ্ছে রাবার ও ইস্পাতের মিশ্রণে তৈরি আয়তাকার একধরনের প্যাড, যা ম্যাট্রেসের মতো ব্যবহৃত হয়। মেট্রোরেলের ভায়াডাক্ট বা উড়ালপথের ওপরই রেললাইনসহ যাবতীয় স্থাপনা বসানো হয়। ভায়াডাক্ট বসানো হয় স্তম্ভ বা পিলারের ওপর। এই স্তম্ভকে প্রকৌশলের ভাষায় পিয়ার বলা হয়।

কংক্রিটের তৈরি ৩০ থেকে ৪০ মিটার লম্বা একেকটি স্প্যান জোড়া দিয়ে মেট্রোরেলের উড়ালপথ তৈরি করা হয়েছে। ভায়াডাক্ট ও পিয়ার দুটিই কংক্রিটের হওয়ায় দুটি কংক্রিটের বস্তুর মধ্যে ঘর্ষণ থেকে ক্ষয় ও স্থানচ্যুতি ঠেকাতে ভায়াডাক্ট ও পিলারের মাঝখানে রাবার ও স্টিলের তৈরি বিয়ারিং প্যাড দেওয়া হয়, যা স্থাপনাটির সুরক্ষায় কাজ করে।

দুই পিলারের মাঝখানের প্রতিটি স্প্যানের জন্য চারটি করে বিয়ারিং প্যাড রয়েছে; অর্থাৎ একেকটি পিলারের আছে চারটি করে রাবার প্যাড। এগুলোর স্তরে স্তরে রাবার ও বিশেষ স্টিল দিয়ে তৈরি। প্রায় ১৪০ থেকে ১৫০ কেজি ওজন এই বিয়ারিং প্যাডের। সেটি সরাসরি এক পথচারীর মাথায় পড়লে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। এর আগে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়েছিল। তখনও প্রায় ১১ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে।

বিশ্বের যে কোন দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মেট্রোরেল নির্মাণের খরচ কয়েকগুণ বেশি। এই মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়ের ব্যাখ্যা হিসেবে মেট্রোরেল নির্মাণে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান জাইকা ‘উচ্চ গুণগত মান’ রক্ষার কথা বলেছিল। সংস্থাটি বলেছিল, প্রাথমিক নির্মাণ ব্যয় বেশি হলেও রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতে ব্যয় কম হবে। তাহলে উচ্চ গুণ–মানসম্পন্ন মেট্রোরেল থেকে দ্বিতীয়বার ‘ভবনের ইট খুলে পড়ার মতো’ বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে কেন— সেই প্রশ্ন তুলেছেন প্রকৌশলী কল্লোল মুস্তফা। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা–সমালোচনা হচ্ছে।

ছিটকে নিচে পড়ে যাওয়া মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাডের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, আয়তাকার প্যাডের এক কোণে ভর বেশি ছিল। ছবি: আজকের পত্রিকা
ছিটকে নিচে পড়ে যাওয়া মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাডের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, আয়তাকার প্যাডের এক কোণে ভর বেশি ছিল। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাপানের কোম্পানি উচ্চ গুণ–মানের দাবি করলেও এই ঘটনার পেছনে ‘নকশাগত ত্রুটিকে’ দায়ী করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক ড. হদিউজ্জামান। আগেরবার বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার কারণ সম্পর্কে তিনি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, মেট্রোরেলের যেখান থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে গেছে সেই জায়গাটিতে বাঁক আছে। ট্রেন যখন সেই জায়গাটি অতিক্রম করে তখন লাইনের একপাশে বাড়তি চাপ তৈরি হয়। তখন বিয়ারিং প্যাডের একদিকে বাড়তি চাপ পড়লে অন্য রাবারের বিয়ারিং প্যাড ছিটকে বেরিয়ে আসে।

তিনি বলেন, ‘এসব বাঁকে বাড়তি চাপ মাথায় রেখে লাইনে বিয়ারিং প্যাড ধরে রাখার জন্য সুরক্ষা ব্যবস্থা নিতে হয়। কিন্ত এই মেট্রোরেলের নকশায় বাঁকের মধ্যে বাড়তি চাপের বিষয়টি বিবেচনা না করেই ভায়াডাক্ট বসানো হয়েছে। সেখানে রাবারের বিয়ারিং প্যাডকে ধরে রাখার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। ফলে বাড়তি চাপ নিতে না পেরে রাবারের প্যাড খুলে গেছে।’

মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে উত্তরা অংশের নির্মাণকাজের সঙ্গে এক পূরকৌশলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যে বিয়ারিং প্যাডটি খুলে নিচে পড়ে গেছে, তার পিলার ও ভায়াডাক্টের সংযোগস্থলের সঠিক অবস্থানে সেটা বসানো হয়নি। সুষমভাবে ভরবণ্টন মাথায় রেখে সেটা বসানো ছিল না। ছিটকে পড়ে যাওয়া বিয়ারিং প্যাডের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, আয়তাকার প্যাডের এক কোণে ভর বেশি ছিল।’

আগেরবার ঘটনার পর সমাধান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উপায় হিসেবে পিলার ও ভায়াডাক্টের সংযোগস্থলে বিয়ারিং প্যাড আটকে রাখার ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেই সাথে রাবারের বিয়ারিং বাদ দিয়ে টেকসই ও অধিক চাপ সহনশীল ‘পড বিয়ারিং’ ব্যবহার করার কথাও বলেছিলেন বুয়েটের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হাদী। ওই সময় মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষও ভবিষ্যৎ দুর্ঘটনা এড়াতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছিল।

প্রকৌশলী কল্লোল মুস্তফা ফেসবুকে প্রশ্ন তুলেছেন, এক বছরের বেশি সময় পার করে সেই ফার্মগেট এলাকাতেই আবারও বিয়ারিং প্যাড কেন খুলে পড়ে গেল। বুয়েটের পরামর্শ মতো মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ কি পিলার ও ভায়াডাক্টের সংযোগস্থলে বিয়ারিং প্যাড আটকে রাখার কোনো ব্যবস্থা করেছিল।

ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘এ ব্যাপারে জাপানের জাইকা ও মেট্রোরেলের নকশা ও নির্মাণের সাথে যুক্ত কোম্পানিগুলোই বা কি পদক্ষেপ নিয়েছিল? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া দরকার। সদ্য নির্মিত মেট্রোরেল থেকে এক বছরের ব্যবধানে দুইবার বিয়ারিং প্যাড খুলে যাওয়ার ঘটনা মেট্রোরেলের নিরাপত্তা বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। জাপান বেশি টাকা নেয়ার যুক্তি হিসেবে উচ্চগুণগত মানের যে যুক্তি দিয়েছিলো সেই যুক্তিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।’

তাই শুধু জাপানের উপর ভরসা না করে ‘অবিলম্বে স্বাধীন কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মেট্রোরেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যাচাই করা প্রয়োজন’ বলে এই প্রকৌশলীর দাবি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন গ্রামীণফোনের সিইওসহ ৩ জন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন গ্রামীণফোনের সিইওসহ ৩ জন

সাবেক কর্মীর প্রতারণার অভিযোগে করা মামলায় গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমানসহ তিনজনকে জামিন দেওয়া হয়েছে।

আজ রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রৌনক জাহান তাকি এই আদেশ দেন বলে নিশ্চিত করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী।

তিনি বলেন, আসামি তিনজন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।

জামিন পাওয়া অন্য দুজন হলেন গ্রামীণফোনের ট্রাস্টি বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফজলুল হক ও চিফ হিউম্যান রিসোর্স অফিসার সায়িদা হোসেন।

আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ এনে গত ২৬ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলা করেন গ্রামীণফোনের সাবেক কর্মী রাকিবুল আজম। সেদিন আদালত বাদীর জবানবন্দি নেন।

পরে অভিযোগ আমলে নিয়ে আসামিদের ২৬ অক্টোবর আদালতে হাজির হতে সমন জারি করা হয়।

মামলার অভিযোগ বলা হয়, ২০০৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত গ্রামীণফোন কোম্পানি লিমিটেডে চাকরি করতেন রাকিবুল আজম। চাকরিরত অবস্থায় ২০১০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত আউটসোর্সিংয়ের রক্ষিত টাকা কর্মচারীদের মধ্যে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই আউটসোর্সিংয়ের কাজের জন্য কোম্পানির কাছে বাদীর ৮ লাখ ২৮ হাজার ৯৯৮ টাকা পাওনা হয়।

গত বছরের ১০ নভেম্বর বাদীকে তাঁর পাওনা টাকা দেওয়ার জন্য ডাকা হয়। টাকা আনতে গেলে আসামিরা ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে বাদীর স্বাক্ষর নেন। কিন্তু বাদীর পাওনা টাকা ফেরত না দিয়ে তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করেন আসামি তিনজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভূমিসেবায় সব ডিসি অফিসে হবে নাগরিক সেবাকেন্দ্র

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
রোববার সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে ‘জনবান্ধব ভূমিসেবায় গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনার। ছবি: আজকের পত্রিকা
রোববার সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে ‘জনবান্ধব ভূমিসেবায় গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনার। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভূমি অফিসে গিয়ে মানুষকে এখনো হয়রানি হতে হয় বলে স্বীকার করেছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ। এ জন্য অনলাইনে সব ভূমিসেবা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া জনগণকে সহজে ভূমিসেবা দিতে সব জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ে নাগরিক সেবাকেন্দ্র চালু করা হবে জানিয়েছেন তিনি।

আজ রোববার সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে ‘জনবান্ধব ভূমিসেবায় গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য জানান ভূমিসচিব। বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) উদ্যোগে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অটোমেটেড ল্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এই সেমিনারের আয়োজন করে।

ভূমিসচিব বলেন, ‘ভূমিসেবার বিভিন্ন পর্যায়ে দালাল রয়েছে। কিন্তু ভূমির সব কাজ ভূমি মন্ত্রণালয় করে না, আইন মন্ত্রণালয়ও করে। কিন্তু অভিযোগের তীর আমাদের দিকেই আসে। মানুষ ভূমি অফিসে হয়রানির শিকার হয়—এটা স্বীকার করছি। তাই আমরা ভেবেছি, কীভাবে ঘরে বসে সেবা নিশ্চিত করা যায়। তাহলেই অফিসভিত্তিক হয়রানি কমবে।’

সারা দেশে বর্তমানে ৮১৭টি ভূমিসেবা সহায়তা কেন্দ্র চালু রয়েছে জানিয়ে সালেহ আহমেদ বলেন, ‘নাগরিকের চাওয়া-পাওয়ার অনেকটাই পূরণ হয়েছে। আমরা অনেক কাজ করেছি, তবে এখনো অনেক দূর যেতে হবে। দেশের প্রতিটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নাগরিক সেবাকেন্দ্র চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে জনগণ সহজে ভূমিসেবা পেতে পারেন।’

ভূমিসচিব জানান, সারা দেশে ভূমিসংক্রান্ত প্রায় ১০ লাখ মামলা রয়েছে এবং প্রতিদিন কয়েক হাজার মামলা হচ্ছে। ভূমিসংক্রান্ত মামলার প্রায় ৮০ শতাংশই জরিপকেন্দ্রিক। সিএস জরিপ করতে ৫২ বছর লেগেছিল। এখন জরিপ করতে এত সময় লাগবে না, জোনিং করা হয়েছে। বালুমহালের জন্য আলাদা ইউনিট করা হয়েছে। ফলে বালুমহাল নিয়ে সব অপরাধ বন্ধ না হলেও কমে এসেছে।

সালেহ আহমেদ বলেন, ‘আমরা অ্যাপ চালু করেছি, যার মাধ্যমে পরচা সংগ্রহ, নকশা পাওয়া, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ সবই ঘরে বসে করা যায়। একসময় বালুমহাল নিয়ে বিশৃঙ্খলা ছিল, এখন একটি শাখার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। পুরোপুরি শৃঙ্খলা না ফিরলেও অনেকটাই কমেছে।’

সেমিনারে ভূমিসংক্রান্ত ডিজিটাল সেবার অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এমদাদুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘অটোমেটেড ভূমিসেবার সুফল ইতিমধ্যে দেখা যাচ্ছে। মানুষ এখন ঘরে বসে ভূমি উন্নয়ন কর দিতে পারছেন। ফলে রাজস্ব আদায় বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ৩৭৩ কোটি টাকা আদায় হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২৮৬ কোটি টাকা।’

সেমিনারে জানানো হয়, ১৬১২২ হটলাইনের নম্বরের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা ভূমিসংক্রান্ত সেবা দেওয়া হচ্ছে। এই কল সেন্টার দৈনিক প্রায় আড়াই হাজার কল গ্রহণ করছে। আগের অর্থবছরের থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় ২২ কোটি টাকা বেড়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হয়েছে। আর চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত ৩৭৩ কেটি টাকা ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হয়েছে।

বিএসআরএফ সভাপতি মাসউদুল হকের সভাপতিত্বে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক উবায়দুল্লাহ বাদল সেমিনার সঞ্চালনা করেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সেমিনারে উপস্থিতি ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত