Ajker Patrika

সরকারি চাকরির নিয়োগে রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাওয়া হবে না

  • কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার
  • প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়সহ দুই মন্ত্রণালয়কে বাস্তবায়নের দায়িত্ব।
  • কোনো কর্মচারী কোনো পদে বেতন স্কেলের শেষ ধাপে পৌঁছালে করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত অর্থ বিভাগের প্রতিবেদনের আলোকে।
বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৫, ১১: ০৩
সরকারি চাকরির নিয়োগে রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাওয়া হবে না

চাকরিতে নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাওয়ার বিধান বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়ার সভাপতিত্বে সম্প্রতি এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাঠানো ওই সভার কার্যবিবরণী থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

কার্যপত্রে বলা হয়েছে, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী চাকরিতে নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাওয়ার বিধান বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ-পদোন্নতিতে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে প্রার্থীর রাজনৈতিক পরিচয় জানা হয়। এতে অনেকে নিয়োগের সুপারিশ পেয়েও পুলিশ ভেরিফিকেশনে নেতিবাচক মন্তব্যের কারণে নিয়োগবঞ্চিত হন। একই কারণে যোগ্য হয়েও পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন অনেকে। এ নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও প্রথাটি চলেছে বছরের পর বছর।

অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রার্থীর রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাওয়ার প্রথা বাতিলের সুপারিশ করে।

কোনো কর্মচারী কোনো পদে পদোন্নতির সর্বোচ্চ ধাপে পৌঁছার পর তাঁর বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) স্থগিত হলে এবং তিনি বিভাগীয় মামলায় গুরুদণ্ডে দণ্ডিত না হলে, তাঁকে দুই বছর পর পরবর্তী বেতন স্কেল দেওয়ার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন।

সভার কার্যপত্রে বলা হয়েছে, পরবর্তী পে কমিশনের মাধ্যমে এই সুপারিশ বাস্তবায়ন করা সমীচীন বলে অর্থসচিব মত দেন। সভায় আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়েছে, এই সুপারিশ বাস্তবায়নে আর্থিক সংশ্লেষ থাকায় বিস্তারিত পর্যালোচনা করে অর্থ বিভাগ ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে একটি প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠাবে। সেই প্রতিবেদনের আলোকে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।

সাধারণত পাঁচ বছর পরপর নতুন বেতনকাঠামো ঘোষণা করত সরকার। কিন্তু ২০১৫ সালে নতুন বেতন স্কেল ঘোষণার পর আর কোনো বেতনকাঠামো ঘোষণা করা হয়নি। ফলে অনেক সরকারি কর্মচারীর বেতন পে স্কেলের শেষ ধাপে পৌঁছে যাওয়ায় বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত হয়েছে।

সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিসের বাইরে ৫ শতাংশ পদে পার্শ্ব নিয়োগে সংস্কার কমিশন যে সুপারিশ করেছে, তা বাস্তবায়নে ভূমি মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবদের নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে একটি কমিটি করতে বলা হয়েছে। কমিটি বিষয়টি বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেবে।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী স্থায়ী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ এবং আইন ও বিচার বিভাগের সচিবদের নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে একটি কমিটি করতে বলা হয়েছে।

ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মহাসড়কে পেট্রলপাম্পগুলোয় ২০ জুলাইয়ের মধ্যে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা আলাদা স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন টয়লেটের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। পেট্রোবাংলা, বিপিসি এবং বিস্ফোরক পরিদপ্তর নিজ নিজ অধিক্ষেত্রের পেট্রলপাম্প ও সিএনজি স্টেশনে ২০ জুলাইয়ের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নির্দেশনা জারি করবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সব জেলা প্রশাসককে চিঠি দেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) উপজেলা পরিষদের অধীনে ন্যস্ত না রেখে তাঁকে শুধু সংরক্ষিত বিষয় ও বিধিবদ্ধ বিষয় যেমন আইনশৃঙ্খলা, ভূমি ব্যবস্থাপনা, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। এ ছাড়া একজন সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে উপজেলা পরিষদের সচিব নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে বলে মত দেয় সংস্কার কমিশন। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং অর্থ বিভাগের সচিবদের নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে একটি কমিটি করতে বলা হয়েছে। কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে কমিটি প্রতিবেদন দেবে।

কার্যপত্র থেকে জানা যায়, সরকারি দপ্তরগুলোকে মন্ত্রণালয়-বিভাগ, দপ্তর-অধিদপ্তর ও মাঠপর্যায়ের শ্রেণিতে ভাগ করে ওয়েব পোর্টালগুলোর ইন্টারফেস পরিবর্তনসহ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এসব ওয়েবসাইটকে ডায়নামিক করার নির্দেশনা দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।

সেবা গ্রহণে নাগরিকদের সমস্যা, অভিযোগ-অনুযোগ শোনার জন্য সব সরকারি দপ্তরে নির্দিষ্ট বিরতিতে গণশুনানি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য ২০১৪ সালের এ-সংক্রান্ত পরিপত্র সংশোধন করে ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে সংশোধিত পরিপত্র জারির সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত