Ajker Patrika

কারখানার তরল বর্জ্য বাড়িতে

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২২, ১৩: ৫৪
Thumbnail image

পোশাক কারখানার ময়লা তরল বর্জ্য ফেলা হয় নালায়। প্রায়ই সে বর্জ্য নালা উপচে ঢুকে পড়ে বসতবাড়িতে। গত শুক্রবারও ঘটেছে এমন ঘটনা। এরপর থেকে নিষ্কাশন হয়নি সে বর্জ্য। এমন দুর্ভোগে পড়েছেন গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ছাপিলা পাড়ার হ্যামস গার্মেন্টস মোড় এলাকার বাসিন্দারা।

তবে ভোগান্তি আর দুর্ভোগের ঘটনা এভাবে ঘটলেও এর জন্য দায়ী পৌরসভার উত্তর ভাংনাহাটি এলাকার সওফটেক্স নামের পোশাক কারখানা কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পৌরসভার পক্ষ থেকেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে—অভিযোগ তাঁদের।

ভুক্তভোগীরা জানান, হ্যামস গার্মেন্টস মোড় থেকে একটি ইটের সলিং রাস্তা আনছার রোড-শ্রীপুর মাস্টারবাড়ি আঞ্চলিক সড়কে সংযুক্ত হয়েছে। সওফটেক্সের ডায়িং বিভাগসহ সব রাসায়নিক ও বর্জ্যমিশ্রিত পানি এ সড়কের তলদেশ দিয়ে নালার মাধ্যমে পাশের ছোক্কার খালে ফেলা হয়। তাদের নালার ব্যবস্থা বেশ নাজুক। প্রায় সময় নালা উপচে দুর্গন্ধযুক্ত তরল বর্জ্য পানি সড়কে উঠে আসে। এতে এ সড়কে চলাচলকারীরা পড়েন দুর্ভোগে।

তাঁরা জানান, প্রায় সময়ই ময়লাপানি বের হয়ে চলে আসে সড়ক ও বাসাবাড়িতে। দীর্ঘদিন এমন ভোগান্তিতে মানুষ নাকাল হলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ ব্যাপারে পৌরসভা কর্তৃপক্ষও উদাসীন।

স্থানীয় বাসিন্দা আলী হোসেন বলেন, ‘গত শুক্রবার সকালে ঘুম ভাঙতেই চমকে উঠি। একেবারে বাড়ির উঠানে ময়লা ও রাসায়নিক মিশ্রিত পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। এরই মধ্যে ভাড়াটিয়ারাও উঠে দেখে ঘরের সামনে ময়লাপানি। দুর্গন্ধে নাকাল হতে হয়েছে আমাদের।’

জসিম উদ্দীন নামের আরেকজন বলেন, ‘শুক্রবার খুব সকালে এক ভাড়াটিয়া ফোনে জানান, বাসার উঠানে ময়লাপানি জমেছে। দ্রুত এসে দেখি কারখানার কালো ময়লাযুক্ত পানিতে উঠান থইথই। পরে বিভিন্নভাবে কারখানায় যোগাযোগ করা হলেও কেউ ভোগান্তি লাঘবে এগিয়ে আসেনি।’

শেফালি আক্তার নামের এক পোশাকশ্রমিক বলেন, ‘শুক্রবার আমরা একটু সময় করে সপ্তাহের আটকে পড়া কাজগুলো সারতে চেষ্টা করি। হাটবাজারসহ ছোট ছোট কাজ করি। কিন্তু সকালে উঠে দেখি বাসা থেকে বের হওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। কারখানার ময়লাপানি বাসার উঠানে। আর পানির কী যে দুর্গন্ধ, তাতে বাসায় বসাও দায়।’ 
পথচারী আজহার মিয়া বলেন, ‘এ পথে অন্তত কয়েক হাজার শ্রমিক নিয়মিত চলাচল করেন। আমিও প্রতিদিন বাড়ি ফিরি এ পথ দিয়েই। কালও নোংরাপানি বেয়ে বাড়িতে আসতে হয়েছে। গা ঘিনঘিন করেছে। এ পানিতে অনেকে মলমূত্র ছেড়ে দিয়েছে। নিরুপায় হয়ে বাড়িতে এসে গোসল করার প্রয়োজন পড়েছে।’

সওফটেক্স পোশাক কারখানার পরিচ্ছন্নতাকর্মী রৌশন মিয়া বলেন, ‘শুক্রবার সকালে আমাকে ডেকে জানানো হয় নালায় জ্যাম বেঁধেছে। সড়কে পানি উঠে গেছে। আমি আগের দিনও ডিউটি করেছি, তাই আসতে দেরি হয়েছে। দুপুরের পরে একটু স্বাভাবিক হয়েছে পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা। পানি সড়ক থেকে বাসাতেও উঠে গিয়েছিল।’ 
সওফটেক্স পোশাক কারখানার নিরাপত্তা কর্মকর্তা আবু জাফর বলেন, রাতের কোনো একসময় হয়তো নালার পানি জমে সড়কে চলে আসে। খবর পেয়ে যত দ্রুত সম্ভব পানি সরানোর চেষ্টা করা হয়েছে।’

সওফটেক্স পোশাক কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা (প্রশাসন) এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘রোববার সড়ক থেকে ময়লা সরানো হয়েছে। আমাদের এ নালার একটি স্থায়ী ব্যবস্থা শ্রীপুর পৌরসভা করে দেবে বলে বলেছে। আমরাও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

এ বিষয়ে শ্রীপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. কামরুজ্জামান মণ্ডল বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি সিলেটে ছিলাম। রোববার রাতে এলাকায় এসে সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত