Ajker Patrika

সৈয়দপুর রেলওয়ে: গুটিকয়েক ঠিকাদারই পাচ্ছেন কাজ

রেজা মাহমুদ, সৈয়দপুর (নীলফামারী)
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০: ০২
Thumbnail image

নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেলওয়ে কারখানাসহ অন্যান্য দপ্তরের বেশির ভাগ কাজ ঘুরেফিরে পাচ্ছে গুটিকয়েক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।আবার কিছু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিনা দরপত্রেই কয়েক কোটি টাকার কাজ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে কাজের মান নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠছে, অন্যদিকে বঞ্চিত হচ্ছেন ছোট ও নতুন ঠিকাদারেরা।

সৈয়দপুর রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় রেলওয়ের কাজ সাধারণত উন্মুক্ত দরপত্র ও লোকাল টেন্ডার মেথড (এলটিএম) এ দুই পদ্ধতিতে করা হয়ে থাকে। নিয়ম অনুযায়ী উন্নয়নকাজের একটি প্যাকেজের চুক্তিমূল্য ৩৫ কোটি টাকার বেশি ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের ক্ষেত্রে ১৫ কোটি টাকার বেশি হলে উন্মুক্ত দরপত্রে করা হয়। আর ১৫ কোটি টাকার কম হলে এলটিএম পদ্ধতিতে করা হয়।

সরকারি অর্থে পণ্য, কার্য ও সেবা ক্রয়ে স্বচ্ছতা ও অবাধ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে সরকার ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (পিপি) আইন, ২০০৬’ এবং ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮’ প্রণয়ন করে। সেই আইনে অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত দরপত্র প্রতিযোগিতায় একাধিক মূল্যায়িত সর্বনিম্ন দরপত্রদাতার উদ্ধৃত দরে সমতার ভিত্তিতে সফল দরদাতা নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সৈয়দপুরে রেলওয়ের প্রায় সব কাজই চলে যাচ্ছে গুটিকয়েক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হাতে।

রেলওয়ে সূত্রে পাওয়া তথ্যানুসারে, এখানে তালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আছে ৭৩টি। এর মধ্যে সৈয়দপুরের রয়েছে অন্তত ১২টি।স্থানীয় রেলওয়েতে গত কয়েক বছরে রেলওয়ে কারখানার আধুনিকায়ন, রেলওয়ে স্টেশন উঁচু করা, প্ল্যাটফর্মের শেড পরিবর্তনসহ অন্তত ৫৫০ কোটি টাকার কাজ করা হয়েছে। এ ছাড়া রেলওয়ে বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্রের ভেতর রেলকোচ মেরামত, রেল কারখানার ভেতরে যন্ত্রাংশ (কাঁচামাল) সরবরাহসহ প্রায় ১০০ কোটি টাকার কাজ চলমান। এসবের মধ্যে ৯০ শতাংশ কাজ পাচ্ছে ১০-১২টি প্রতিষ্ঠান।

কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় রেলওয়ের সব কাজ নিয়ন্ত্রণ করছে। কাজ নিয়ে তাদের কেউ কেউ ৫ শতাংশ কমিশনে তৃতীয় পক্ষের কাছে চড়া মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে পেশাদার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানগুলোর যখন আর কাজের চাহিদা কিংবা তাদের নিলাম সক্ষমতা থাকে না, কেবল তখনই ১০ শতাংশের মতো কাজ পাচ্ছে প্রকৃত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এভাবে স্থানীয় রেলওয়ের সিংহভাগ কাজই পাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেটটি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী ঠিকাদার অভিযোগ করে বলেন, ‘মন্ত্রী এবং রেলওয়ের এক বড় কর্মকর্তার ভাতিজা ও ভাগনের পরিচয়ে দুজন এখানকার বড় বড় সব কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন। এ ছাড়া গত এক বছরে অন্তত ৮০ কোটি টাকার কাজ দেওয়া হয়েছে বিনা দরপত্রে।’

রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়ন কারখানা শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ রোবায়েতুর রহমান বলেন, অর্থের বিনিময়ে ও স্থানীয় কয়েকজনের সুপারিশে ঘুরেফিরে একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হচ্ছে। ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো রেলওয়ের কাছ থেকে স্ক্র্যাপ মালামাল (অচল যন্ত্রাংশ) হিসেবে স্বল্প মূল্যে কিনে স্থানীয়ভাবে মেরামত করে রং করে বেশি দামে আবারও রেলের কাছেই বিক্রি করছে।

রোবায়েতুর আরও বলেন, ২০১৭ সালে শেডে নিম্নমানের টিন ব্যবহার করায় এক বছর না যেতেই বৃষ্টিতে সেই টিন চুইয়ে পানি পড়ছে।পাশাপাশি নষ্ট হয়ে গেছে অনেক মেশিন। এ জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করেন তিনি।

গুটিকয়েক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ পাওয়ার এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) সাদেকুর রহমান বলেন, এখানে রেলওয়ের যেসব কাজ ঠিকাদারের মাধ্যমে করা হয়, সেগুলো স্থানীয়ভাবে দরপত্র আহ্বানের সুযোগ নেই। কাজগুলোর দরপত্র সাধারণত ঢাকা ও রাজশাহী থেকে নীতিনির্ধারক পর্যায়ে হয়ে থাকে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত